কাকের ভয় আয়নাতে
কাকের ভয় আয়নাতে
একদিন এক ফেরিওয়ালা এক গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। তার মাথায় ঝুড়ি ভর্তি বিভিন্ন ধরণের কসমেটিক্স সহ মেয়েদের নানা প্রকার সাজসজ্জার জিনিসপত্র। সে একটি কাঁচা সরু রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো এবং ভাবতে লাগলো এমন দুপুরে যদি কোনো হোটেল বা খাবার দোকান পায় তবে কিছু কিনে খাবে। এই ভেবে যেতে যেতে হঠাৎ সামনে দেখলো একটি দাঁড়-কাক তার পিছন পিছন উড়াউড়ি করতে লাগলো এবং তাকে ইচ্ছা মতো বিরক্ত করতে লাগলো। হঠাৎ ফেরিওয়ালা কাকের দিকে মন যাওয়ায় রাস্তার উপরে গেড়ে থাকা একটি মাটির চাকের সাথে হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পরে তার ঝুড়ি ভর্তি জিনিসসহ যা আছে সব মাটিতে পড়ে ভেঙে ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার হয়ে গেলো।ফেরিওয়ালা পায়ের মধ্যে বেজায় ব্যথা পেয়েছে বটে, আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়িয়ে একাধারে গালমন্দ করতে করতে নিচে থেকে ঢিল কুড়িয়ে কাকটির দিকে ছুড়ে মারতে লাগলো। কিন্তু কাকটিও বেশ বেহায়া। পাশের কড়াই গাছে বসে কা-কা-কাও-কাও শব্দ করছে অথচ একচুলও জায়গা থেকে নড়ছে না। তখন ফেরিওয়ালার রাগ দেখে কে!জিনিসপত্র কিছুই না গুছিয়ে লেঙচিয়ে লেঙচিয়ে লুঙ্গিতে গোছ মেরে সোজা গাছ বেয়ে উঠতে লাগলো।এই সুযোগে কাকটি উড়ে গিয়ে তার ঝুড়িতে গিয়ে বসলো এবং ঝুড়ির ভিতর আটকে থাকা একটি মরা ইঁদুরের লেজ ধরে টেনে বের করলো-আর হঠাৎ কাকটি ভয়ে ডানা ঝাপটিয়ে দিগ্বিদিক ডিগবাজি খেয়ে অতি দ্রুত উড়ে পালিয়ে গেলো এবং ঠোঁট থেকে মরা ইঁদুরটি মাটিতে পরে গেলো। ফেরিওয়ালা দ্রুততম ঘটনাটি দেখে অবাক হলো।এভাবে ডানা ঝাপটাতে শুরু করলো? কি অবাক কান্ড! তখন ফেরিওয়ালা আগ্রহের সাথে ঝুড়িটির কাছে গিয়ে দেখলো শুধু দু-খন্ড ভেঙে যাওয়া আয়না পড়ে ছিল। আর বাকি সবকিছু ঝুড়ির বাইরে এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রইলো। তখন ফেরিওয়ালা দুই হাত দিয়ে আয়নার ভাঙা বড় অংশ হাতে নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে কি যেন ভেবে নিলো। এর দুই এক মিনিট পর সে মাটি থেকে সব জিনিস সামগ্রী কুড়িয়ে ঝুড়িতে নিয়ে আবার সামনের দিকে রওনা হলো। ঝুড়ি মাথায় নিয়ে হাটতে হাটতে এক সময় দেখলো একটি কাক গাছের মগ ডালে নীরবে বসে ডাকাডাকি করছে। ঐ মুহূর্তেই ফেরিওয়ালা মাথা থেকে ঝুড়ি নামিয়ে আয়নার বড় ভাঙা অংশটি বের করে কাক বরাবর তাক করে নাড়াচড়া করলো। কাকটি যখন আয়নার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তখন তার দৌড় দেখে কে?আর এক মুহূর্তও গাছে না থেকে প্রচন্ড ভয়ে দ্রুত উড়াল দিয়ে পালাল। তখন ফেরিওয়ালা একগাল হেসে নিলো যেন মহান কিছু আবিষ্কার করেছে। তৎক্ষণাৎ সে ঐ স্থান থেকে প্রস্থান করলো। তার দুই দিন পর বিকালের দিকে এক স্থান দিয়ে যাওয়ার সময় ফেরিওয়ালা দেখলো অনেকগুলো কাক গাছের ডালে বসে কা-কা করতে করতে যেন পরিবেশ বিস্বাদময় করে তুললো। তখন সে তার ঝুড়ি থেকে আয়নাটি বের করে কাকগুলোর দিকে তাক করে নাড়াচড়া করতেই এক নিমেষেই সব কাকগুলো যেন পালিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচিয়েছে। আশেপাশের যাতায়াতরত মানুষগুলো ফেরিওয়ালার দিকে তাকিয়ে -থ- হয়ে তাকিয়ে রইলো। যেন মহা দুর্লভ কিছু দেখেছে। তখন ফেরিওয়ালার হাসি আর পেটে থাকে না। ফেরিওয়ালার হাসি দেখে মানুষগুলো যেন মূর্তিতে প্রাণ পেলো। এক-আধপাকা চুলের এক বৃদ্ধ এসে মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলো,-বাজান এইডা কি মন্ত্রপূত আয়না?-না চাচা এইডা এমনি আয়না। -তাইলে কাক গুলা এমন ভয় পেয়ে পালাইলো কেন?-না না চাচা, কাক গুলোত এমনি আয়নারে দেখলে ভয় পায়। -ও.... এইডা তুমি কেমনে জানলা বাজান? আমাগো বাপ-দাদারাও এ রকমের বুদ্দি জানত না...-হ চাচা এইডা আমি আবিষ্কার করছি।তারপর ফেরিওয়ালা ওই ঘটনার বিস্তারিত সব ঘটনা খুলে বললো। বৃদ্ধ তো ঘটনা শুনে হাসতে লাগলো। এতক্ষনে যাতায়াতকৃত মানুষগুলোর ভিড় এমন হলো যেন সাপুড়ে সাপের খেলা দেখালো। বৃদ্ধ লোকটিসহ আরো বেশ কয়েকজনে ফেরিওলাকে বাহবা দেয়ার সাথে অভিনন্দন জানালো। সেই দিন থেকে আবিষ্কৃত হলো "কাকের ভয় আয়নাতে"।
