Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Zarifah Zahan

Romance Tragedy

4.9  

Zarifah Zahan

Romance Tragedy

গানের ওপারে

গানের ওপারে

5 mins
383



বিরহ যেন সুখী গৃহকোণের বালিজমা চরে হিংসুটে ঝিনুক। আগুনে টানে, সুর ভাঁজে জোয়ারজলে। তারপর গল্প লেখে একান্ত একাকী। সারাদিন জমা যেসব শব্দরা মাথা কুটে মরে, একান্তে প্রিয়জনের কাছে আত্মহত্যা করবে বলে, কোনো এক জমাটি কষ্টে তারা আবার ফিরে আসে আঙুলে, বুকে।


রিয়ার বালিশে ঘষা সমস্ত কান্নার নকশারা কোলে নিশ্চিন্তে মাথা রাখে তখন। হারমোনিয়ামের রিডে এক বিকেলে ধুন তুলেছিল রিয়া

'যাতে যাতে উও মুঝে আচ্ছি নিশানি দে গ্যয়া

উমর ভর দওউরাঙ্গা অ্যায়সি কাহানি দে গ্যয়া..'


কাঁধের পেছনে গরম নিঃশ্বাসে এক মুহূর্ত চুপ হয়ে গেলো রিয়া। সাম্য ফিরেছে। ঘাড়ে আঙুল ছুঁয়ে খিলখিলিয়ে বলল, "আমি তো যাইনি তোমায় ছেড়ে। তবে এত বিরহ কীসের?" রিয়া হাসল। কেমন শেষ বিকেলের সূর্যের মতো নিস্তেজ সে হাসি। বুকে জমা কালবৈশাখীর সবটুকু উজাড় করে দিল বেলোয়। কড়ি মা তে ছুল আঙুল,


'উসসে ম্যায় কুছ পা সাকু অ্যায়সি কাঁহা উম্মিদ থগাম ভি উও শায়াদ বাড়ায়ে মেহেরবানী দে গ্যয়"


ধুৎ! এত দুঃখকে ঘুম পাড়াও তো গানের খাতায়। আমি থাকলে গাইবে শুধুই প্রেম, মিষ্টি, একগুঁয়ে, ব্যাকরণ না মানা, আলসেমির...রিয়া হারমোনিয়াম সরিয়ে রাখলো একপাশে। ডানহাতের দুই আঙুলে সাম্যর চুলে বিলি কেটে বলল, "আচ্ছা? তাহলে তুমি কেন গুনগুনিয়ে ওঠো মাঝে মাঝে- দর্দ বড়া তড়পায়েগা, তুমহে আয়েগা না চ্যান কাহি"


কাঁধ ঝাঁকিয়ে এক ঝটকায় সাম্য টেনে নিল রিয়াকে, ডান গালে মুখ ঘষে বলল, "সে তো অনেক পুরোনো গান। ছেলেবেলার বড় হওয়ার স্মৃতি। তাই মাঝেমধ্যে গ্রামোফোন থেকে ধুলো সরানোর মতো একটু সুর ছুঁইয়ে দিই ওতে, যাতে হারিয়ে না যায়।"


রিয়া উত্তর দিল না। ও জানে এসব মিথ্যে। সাম্য নিশ্চয়ই মুনের কথা ভাবে। মুন, সু এর প্রথম প্রেম। প্রথম প্রেম এত সহজে দেখে না সিন্দুকের অন্ধকার। কেউ দেখে ফেলার ভয়ে যেমন ছোটবেলার পুতুল, টফি, কৈশোরের ডায়েরি সবাই খুব যত্নে রেখে দেয় এক কোণে, তারপর একলা হলেই রাখে ওতে আদরের ফুলঝুরি...প্রথম প্রেমও তেমনি নরম, বিনিসুতোয় সে দিব্যি জড়িয়ে থাকতে পারে বুকের কলঘরে, সারাটা জনম।


আচ্ছা, রিয়াও তো ভুলতে পারেনি আশিক কে, ওর প্রথম প্রেম। তবে, সু এর বেলা ও কেনো এত পজেসিভ হয়ে পড়ে? ওদের তো বিয়ে হয়ে গেছে দু'বছর। তারও বছর তিনেক আগে ব্রেক-আপ হয়েছে রিয়ার, আশিকের সাথে। তবু এত বিরহ কেন আঁধার করে ওর মনের ঘরে!


হাত ছড়িয়ে নিল রিয়া।

"চা খাবে, সু?"

"কেনো? একটু বসো না,। চা আমি খাওয়াচ্ছি আজ।"

শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল রিয়া। ওর ইচ্ছা করছে না কথা বলতে, সৌম্যর গায়ের গন্ধ নিতে। মাঝে মাঝেই এমন হয়। রাগ হলো রিয়ার, নিজের উপর। কী করেনা সু ওর জন্য। যখন যা চায়, দেয়, না চাইলেও দেয়। সু কখনো রিয়ার ব্যাংক ব্যালেন্স চেক করেনা, ও কী কেনে, বাড়িতে কত দেয়, গয়না, শাড়ি, বই...কোনকিছুর হিসেব নেয় না। রিয়া জামাকাপড় কী পরবে, কেনো পরবে, কিছুতে আপত্তি নেই। রিয়ার জামা, রিয়ার ইচ্ছা, তাতে সু ফতোয়া জারি করার কে। জন্মদিন, পুজোর ছুটি, হুটহাট উইকএন্ডে ঘুরতে নিয়ে যায় রিয়াকে। কখনো গোয়া, কখনো সিঙ্গাপুর। তাও এরকম একেকদিন আসে, রিয়ার খুব রাগ হয়। সু বুকে টানলেই রিয়ার গা গুলিয়ে ওঠে। কাঠ হয়ে যায়, নিস্তেজ জড়পদার্থ যেন।


আশিকের সাথে রিয়ার প্রেম ছিল প্রায় বছর দুয়েক। কলেজের সেকেন্ড ইয়ার থেকে যে ছেলেমানুষি লিংক-আপ নিয়ে সবাই ক্যান্টিনে আড্ডা জমাতো সেটাই কিছু বুঝে ওঠার আগে সত্যি হয়ে যায় রিয়ার সাথে। যে ছেলেটা টপার হওয়ার গর্বে অতিরিক্ত অহংকারী , পেন চেবান দাঁতের ফাঁকে একটা হিসহিসে অবজ্ঞা ছুঁড়ে দেয় রিয়ার নাম শুনলেই, সে ছেলেটাই একদিন প্রপোজ করে রিয়াকে, কলেজ ফেরত মাঠে। রিয়া নিজেও জানেনা, ঘেন্নার আড়ালে কখন ভালো লাগা জন্ম নিয়েছে চোরাদীঘির শালুক হয়ে। সময় গড়িয়েছে রূপকথায়, ওদের প্রেমও। মাস্টার্স কমপ্লিট হয়ে দু'জন আলাদা চাকরি পেলেও, কাহিনীতে কোনো উৎরাই আসেনি কাঁটা হয়ে। গন্ডগোল বাধে এরপর। বিয়ের ফুল ফোটানোর চেষ্টা এর আগে বার তিনেক হলেও রিয়ার জেদের কাছে সে চেষ্টা একবাক্যে আছাড় খেয়েছে। চতুর্থ বার সরঞ্জাম নিয়ে চেষ্টার পসরা সাজানোর তোড়জোড় হলে রিয়া বাড়িতে জানায়। আশিকও।


"ওমা, এ কী কতা !!!আল্লাপাক না করুক, ওমন অলুক্ষুনে বেজাতের মেয়ে ঘরে তুলবি ক্যানে! লোকেরা সুমুখে হাসবে রে বাপ ! রহিমা বিবির ভাতার মেইরে ফেলে চাড্ডি হাড় চিবুয়ে হয়নিকো, পোলার মাতাও খাইচে! পেটে ছাওয়াল আনসিলাম এর লগে!"

বাবা মারা যাওয়ার পর মুদিখানা দোকানের মালকিন মা এরপর সুগার ড্রপ করে দিনকয়েক শয্যাশায়ী হলে আর রিয়ার প্রসঙ্গ তোলেনি আশিক।


বলা বাহুল্য, সৌম্যর সাথে রিয়ার বিয়েটা অ্যারেন্জ্ঞড ম্যারেজ। বিয়ের পিঁড়িতে বসার চারদিন আগে একবার বন্ধুদের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে দু মিনিট পনেরো সেকেন্ডের একটা হিস্ট্রি তৈরি করেছিলো কললগে। ব্যাস, ওটুকুই। সৌম্য কেমন, কী পছন্দ করে, কী চায়...কিচ্ছু জানতে চায়নি রিয়া। ইচ্ছেই হয়নি। কয়েকবার ঘুমের ওষুধ কেনার চেষ্টা আর গুগলে সুইসাইড করার সহজ উপায় দেখে ছাদের কোণে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার বাইরে এই যে অন্য রুটিন আনার তোড়জোড় সবার, রিয়ার জীবনে, এতেই ওর আকাশ দেখার জানলাটা মনে হতো বেহিসেবী খিল এঁটে পাড়ি দিয়েছে ঘুমের দেশে।

মনে আছে ওই দু মিনিট পনেরো সেকেন্ডে সৌম্য বলেছিলো, ওর আগের প্রেমিকার নাম। মুন।


জিজ্ঞেস করেছিল রিয়াকে, ও কখনো প্রেম করেনি? কেনো বলবে রিয়া? কে সু? ওর স্বপ্নের মালিকের হকিকত জানার কী অধিকার তার? ফোন রেখে দিয়েছিল সেদিন। বিয়ের পর কথায় কথায় রিয়া শুনেছিল সু-মুন এর গল্প। সেবার বিয়েতে আপত্তি মেয়ের বাড়িতে। অগত্যা সু এর দেবদাস পর্ব পালন শেষ হলে এবং বহু মাছ ছিপে গাঁথার চেষ্টায় ব্যর্থ হলে একটা আপাত ভালোমানুষের বায়োডাটা নিয়ে বিজ্ঞাপন নিজের। বিয়ের পর দু-একবারের পর একদিন মুনের নাম শুনে চেঁচিয়েছিল রিয়া। বিরক্ত লাগে ওর, যেন অষ্টপ্রহর এক সতীনের চোখ গিলে খাচ্ছে ওকে, সুযোগ পেলেই বুঝি ওর আয়ুর ইতিকথায় শেষ চালটা দেবে। অথচ আস্তে আস্তে বন্ধু হয়ে ওঠা সুকে রিয়া পারেনি আশিকের কথা বলতে। চেষ্টা করলেই মনে হয়, কেউ যেন গলার শিরা খামচে ধরেছে প্রাণপণ। ভুলেও যদি বেরিয়ে পড়ে জমা অতীত, ওকে দলার মতো ছুঁড়ে ফেলবে নিশ্চয়ই সু। দু'দু বার প্রত্যাখানের ভয় আরও গিলে খায় রিয়ার মন।


গত সপ্তাহে অফিস থেকে ফেরার পথে অটোর ধাক্কায় ডান হাতের কব্জির হাড় ভেঙেছে রিয়ার।বহু ছোটাছুটি, এ ডাক্তার, সে হসপিটাল এর পর আজ বাড়ি ফিরেছে রিয়া। এই সাতদিন ঠাকুরের বাহন হয়ে সব সামলেছে সু। দুপুরের খাওয়ার পরের ওষুধটা নিয়ে এসে রিয়ার পাশে বসলো সৌম্য। ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা। এত পাগলি...অজান্তেই চিলতে হাসি চিবুকে ছবি আঁকে স্নেহের। কানের পাশের চুল সরিয়ে বাঁ গালে চুমু খায় রিয়ার। হাল্কা ঘাড় নাড়ে রিয়া। স্বপ্নের সুরে রিয়া বিভোর, সু এর রাজ্যপাটে গানের কলি:

'হোঁঠো সে ছু লো তুম, মেরা গীত আমর কার দো

বান যাও মিত মেরে মেরি প্রীত আমর কার দো'




Rate this content
Log in