The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Zarifah Zahan

Romance Tragedy Others

5.0  

Zarifah Zahan

Romance Tragedy Others

বৃষ্টিদিন

বৃষ্টিদিন

4 mins
1.5K



দুপুর থেকেই আজ অঝোর বৃষ্টি যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছে নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করেই। এদিকে হাফ ডে লিভ অ্যাপ্লাই করেছিল অনীক। নতুন ওয়ান বিএইচকের ফ্ল্যাটটা রংঢং করিয়ে কাজ পুরো কমপ্লিট। কন্ট্রাক্টর রমজান আলী কাল থেকে দু'মিনিটের গ্যাপে মোট ৮ বার মিসড কলে জানিয়ে ছেড়েছে নতুন ভাড়াটিয়া জোগাড়ের কথা। অগত্যা মাস গেলে কড়কড়ে উপরি ইনকামটিকে চাক্ষুষ দেখার আশায় ছুটি নিয়েই নেয় অনীক। লাঞ্চের পর কলের গেরোয় বেরোনোটা চটকে চুয়াল্লিশ হলেও ভেবেছিল শেষ বিকেলে ম্যানেজ করে নেবে। কিন্তু এই বৃষ্টি! পাক্কা ঘন্টাখানেক দুয়ো দিল। অগত্যা বৃষ্টিদেব ধোঁয়াশা থেকে মুখ ফিরিয়ে খানিক থিতু হতেই অনীক বাইক ছুটিয়ে ভোঁ।


-সর‍্যি স্যার! আপনি এসে গেছেন! ....ইয়ে মানে....আসলে ভাড়াটিয়াটাকে না করে দিয়েছি স্যার। উনি চারের বেশি দেবেন না।

- চার? কাল যে বললে ছয়ে রাজি হয়েছে?

-হ্যাঁ। তা তো বলেছিল। কিন্তু আজ ফোন করে বলেছে চারের বেশি পোষাবে না।

-খুব ভাল, না করেছো। তা আমায় আগে ফোন করতে কী হয়েছিল? বৃষ্টির মধ্যে ছুটি ম্যানেজ করে তাহলে আসতাম না। এখন আসার পর বলছ! বরং কাল তো হরির লুঠের মতো ফোন করে মাথা খাচ্ছিলে।

- বেশি রেলা দেখাবেন না স্যার! ভদ্দর ভাবে কথা বলতে পারলে বলুন নইলে ফোটুন! ফোন করলে ধরতে পারেন না এদিকে বৃষ্টিতে দুনিয়া এক্কাট্টা হয়ে গেলেও যে এসে পড়বেন, সেটা কী করে বুঝব।

(শালা, ঢ্যামনার গাছ...যত্তসব পয়সার কাঙাল বড়লোকি শুয়োর....বিড়বিড় করতে থাকে রমজান আলী)


বিছুটি ঘষার মতো মেজাজটা সপ্তমে উঠলেও সামলে নিল অনীক। একে রাগালে অন্য ভাড়াটিয়া জোটাতে আরও দেরি হবে। অ্যাড দাও রে, ফোনকলে জনে জনে একই কথা মুখস্থ বলে যাও রে, বহুৎ হ্যাপা। তার চেয়ে এই সই।


বাইক নিয়ে বাড়িমুখো হল অনীক। একটা সফ্টওয়‍্যার কোম্পানিতে কাজ করছে সে বছর পাঁচেক। বেসরকারি কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ক্যাম্পাসিঙের চাকরি। এডুকেশন লোন মিটিয়ে বছরখানেকের টাকায় শেষ অব্দি এই ফ্ল্যাটটা কিনে উঠেছে। পুরোনো স্মৃতি আগলে যদ্দিন বাঁচা যায়...মাকে অনেক বলেও ফ্ল্যাটে নতুন সংসার পাততে রাজি করাতে পারেনি অনীক; ঠাকুরদার আমলের নোনা-লাগা বাড়িটায় এখন শুধু ও আর মায়ের ঝক্কিবিহীন জীবন।


স্টার্ট বন্ধ করে হেলমেট নামিয়ে চুল মুছতে মুছতে অনীক ঢুকে পড়ল বিশুদা'র চায়ের দোকানে। পাড়ার গলির ঠিক আগের বাঁ হাতের বড় রাস্তা থেকে মিনিট তিনেক ডানদিকে গেলেই বিশুদা'র দোকান। একটু আগে অফিস থেকে ফিরলেই আড্ডা মারে জগা, শ্যামল, কল্যাণদের সাথে।না হলে শনি রবি তো আছেই। কল্যাণের একটা বাপ-দাদার সূত্রে পাওয়া কাপড়ের দোকান আছে বাজারে। কানাইলাল বস্ত্রালয়। নামে কানাই হলেও জিনিসপত্রে দিব্যি টেক্কা দিতে পারে নিউ মার্কেটের সাথে। শ্যামল, এই মাস দুয়েক হল এলআইসির এজেন্ট এর রুটিনে সড়গড় হচ্ছে। আর জগা ব্যাটাটা শুধরাল না। এদিক ওদিক স্কুল থেকেই মাস্তানির প্রতিভায় ডিপ্লোমা করে এখন মোড়ের পার্টি অফিসে ঘুরঘুর করে। 

বিশুদা'কে তিন কাপ চা বসাতে বলেই একটা সিগারেট নিল অনীক। এই ওয়েদারে একটু পেয়াঁজি-আলুর চপ হলেই আড্ডা জমে ক্ষীর, যাকে বলে উত্তম-হেমন্ত জুটি। মুখ থেকে খোয়াইশ খসে পড়ার আগেই শ্যামল তেলেভাজা নিয়ে হাজির। 

আলুর চপে কামড় বসিয়েই কল্যাণ বলল,

-কী বস? মালটাকে বাগে আনলি? 

- কোন মাল, ভাই?

-শালা! কটা মাল লাগে তোর? আরে আমার দোকানে আসে যে ফর্সা মাগীটা। তোকে ছিপ ধরতে বলেছিলাম। চিকন মাল এক্কেবারে, শর্মি না কি নাম যেন।

-ওহঃ! সৌমী...। কী আর হবে! কিছুই হয়নি।

অনীকের সুর শুনে আর বাকিরা ঘাঁটালো না।


'চুক চুক চুক'......

ভোলা এসে ল্যাজ নাড়ছে। শ্যামল বিস্কিটের প্যাকেটটা খুলে একটা বিস্কিট ছুঁড়বে কি ছুঁড়বে না ওমনি কুঁই কুঁই করতে করতে ভোলা ছিটকে গেলো। অনীক গায়ে গরম চা ঢেলেছে। আশ্চর্য!

রোজ শ্যামল বিস্কিট খাওয়ায় ভোলাকে। বাকিরা কিছু বলেনা, কাছেও ঘেঁষে না কেউ। আজ কী হলো!


কত আহ্লাদ! সৌমী বলে কিনা আমি কুকুরের চেয়েও অধম! সম্মান আবার কী? মেয়েছেলের সম্মান শালা হাতের মোয়া! নিজেরা রঙে মুখ ডুবিয়ে পেছন দোলাবে আর আমরা শালা গান গাইলেই 'শ্লীলতাহানি'! মাগী আবার ফেসবুকে নারীবাদী সেন্টু নিয়েছে এসব বলে! অফিসে পাঁচ বছরেও শালা অনসাইট নেই, প্রোমোশন না দিয়ে খিল্লি করে হারামিগুলো , বলে -"কুত্তার লাক!"

অনীক বিড়বিড় করেই চলে। ওর কুকুর দেখে রাগ হয়। নিজেকে ঐ ভাগাড়ে খুঁটে পাওয়া খাবারের গন্ধ ধরা আঁশটে মাংসের দলা মনে হয়। ল্যাজ নাড়িয়ে পা চাটে না বলে কেউ ভালোবাসে না ওকে। যে ফ্যাকাশে রংটা দেখলেই ওর ভয় লাগে, তার সাথে ভোলারই তো মিল। 

চা কেন, আরো পুড়িয়ে দেওয়া দরকার কুত্তাটাকে। মেরেই ফেলব শালাকে। এদের জন্যই দাগড়া দাগড়া ফোস্কা নিয়ে মুখ লুকিয়ে থাকতে হয় ক্ষতের রসে। কী ঝাঁঝ! মিশমিশে কষাটে একটা পশুর জগতেও অনীক কি নগণ্য! ওকে বাঁচতে দেওয়া যায় না। মাটি শুঁকে শুঁকে ল্যাজ দোলালেই খাবার পায়। ডিসগাস্টিং।


-কী করছিসটা কি? বৃষ্টি ধরে এসছে, বাড়ি যাবি না?

 জগার কথায় হুঁশ ফেরে অনীকের। হাতঘড়িতে চোখ বুলায় আলতো করে। রাত এগারোটা।

হৃদয়পুরের ছেলেবেলায় উঠোনে মেঘ দেখলেই বলতো অনীক, লেবুপাতা করমচা, দূরের বৃষ্টি দূরে যা! লেবুপাতা করমচা, দূরের বৃষ্টি দূরে যা! মা দেখতো আর হাসত খিলখিলিয়ে। 


কাল ২২ শে আষাঢ়। অনীকের জন্মদিন।ছাব্বিশ বছর আগে এই দিনই শেয়ালকুলের বনে শুকনো ঘাসের ফাঁকে মাটির দলার মতো কুঁকড়ে পড়েছিলো এক মানুষের বাচ্চা। কোনো এক ভোলা তাকে আগলে রেখেছিল, দিনের আলো ফোটা অব্দি। সেদিন সূর্য উঠেছিল, গাছপাতা চিকমিক করছিলো রোদের গরমে। বড় ঐ বটগাছটার নিচে কেউ বুঝি বলছিলো 'লেবু পাতা করম চা, দূরের বৃষ্টি দূরে যা!'


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance