একটুকরো মূল্যবোধ
একটুকরো মূল্যবোধ


কলিং বেলের আওয়াজ শুনে ছোট্ট তুর্ণী এক ছুটে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে কাকাই কে , পাঁচ বছরের আধো গলায় বলতে থাকে জানো কাকাই মাম্মা হসপিটাল থেকে আমার জন্য একটা ছোট্ট ভাই এনেছে, এত্তটুকুন, এসো দেখবে চলো।জানো তো কাকাই ভাই কি সুন্দর করে চোখ পিটপিট করে আমায়।
কাকাই - হ্যাঁ মা চলো তোমার ভাই কে দেখবো তো।
তোমাকেও যখন মাম্মা নিয়ে এসছিলো এই বাড়িতে তখন তুমিও ভাইয়ের মত একটুখানি ছিলে।তোমাকেও একদম পুতুলের মত লাগতো, মাথা ভর্তি চুল, ছোট্ট ছোট্ট হাত পা, ছোট্ট চোখে তুমিও এমন করেই দেখতে আমাদের।
আচমকাই ঠাম্মি বলে ওঠে আহ্ তুর্নী ভাই ভাই করিসনা তো ,ভাই তো হাঁটতে পারবে কিনা তার ঠিক নেই তোর মা ও যেমন ওই বিকলাঙ্গ বাচ্চাটাকে নিয়ে সারাদিন আদিখ্যেতা করে যাচ্ছে, তোকেও সেগুলোই শেখাচ্ছে। আর পারিনা বাপু কি যে পাপ ঘরে এনে তুলেছিল বাবু সাত বছর আগে এখন তার ফল ভোগ কর।তখন পইপই করে বলেছিলাম এই মেয়ে বিয়ে করিসনা কে শোনে কার কথা। সংসারটা আমার খেয়ে নিলো একাই।তখন কত করে বলেছিলাম আমার বান্ধবী রমার দিদির মেয়েটা কত লক্
ষ্মীমন্ত ছিলো, আমার কত পছন্দের ছিলো, সেতো বাবু কানেই নিলোনা।এখন আমার হয়েছে কপাল, এক লক্ষ্মীছাড়া বৌ এসে কপালে জুটলো, আর এখন দেখো কি যে হবে এই পঙ্গু বাচ্চাটাকে নিয়ে আর ভাবতে ভালো লাগেনা।এই বসে বসে দেখার চেয়ে মরন হওয়া ঢের ভালো।
হঠাৎ ছোট্ট তুর্ণী বলে ঠাম্মি জানো আমাদের হেড মিস বলেছে খোড়াকে খোড়া বলতে নেই, বোবাকে বোবা বলতে নেই । ওদের মনটাও না আমাদের মতই, ওরাও আমাদের মতই ভগবানের সন্তান ।ওরা একটু সাহায্য পেলে আমাদের মতই অনেক বড় হয়। আর জানতো স্কুল এর হেড মিস বলে কাউকে কষ্ট দিলে নিজেকেও কষ্ট পেতে হয়। ঠাম্মি তুমি আর কক্ষনো এরকম বলবেনা ।আমরা যে তোমাকেও খুব ভালোবাসি, তুমি কষ্ট পেলে আমরাও যে কষ্ট পাবো। জানতো আমি দেখেছি মাম্মা যখন কাঁদে বাবান মাম্মাকে বলে মা এর কথায় কেঁদোনা, মা এর বয়স হয়েছে তো কি বলতে কি বলে ফেলেছে।
তুমি মনে হয় এগুলোও ভুলে গেছো তাই না ঠাম্মি আসলে তোমার বয়স হয়েছে তো।
তুমি আমায় প্রমিস করো আর কখনো এরকম বলবেনা।তুর্ণী ঠাম্মি র হাতটা ধরে বলে বলো পাক্কা প্রমিস।