এক্সিডেন্ট
এক্সিডেন্ট
রক্ষা বন্ধন মানে এমন একটা উত্সব যেইতে আমরা ওদের সম্মান করি যারা আমাদের রক্ষক । আর আমার ক্ষেত্রে আমি আমার দিদি কে এই সম্মান টা দিচছি। কেন দিচ্ছি তা এই নিম্নলিখিত গল্প র দ্বারা জানাচ্ছি।
এক্সিডেন্ট
সেদিন আমি অফিস থেকে ফিরছিলাম। সময় বিকেল পাঁচটা। মাথায় একটা চিন্তা নিয়ে বেশ তাড়াতাড়ি বেরিয়েছি। চিন্তা বলতে কয়েক দিন ধরে চলছে যে মাথায় , 'টাকা কোথায় থেকে যোগাড় হবে?' ' এতো টাকা আসবে কোত্থেকে ? '
এই যে হঠাৎ টাকার প্রয়োজন টা আর যোগাড় করার কথা টা উঠলো কারণ আমার হঠাৎ পাত্রী দেখা এবং বিয়ে ঠিক হলো।ঘরের অবস্থা যেমন তাতে নিজের যা যমা টাকা না দিলে হবে কি করে ।একা দিদি র ঘাড়েই যে সব পড়বে । বাবা তো কয়েক শ' টাকা পেনসন প্রাপ্তি মানুষ। আর মা তো অসুস্থ গৃহিণী। তাই নিজের মিউচুয়াল ফান্ড গুলো ভাঙ্গার জন্য সেদিন একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়েছি।
ওই অফিস টা ৬' টায় বন্ধ হয়ে যায়। মাথায় চিন্তা নিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি । আমার যাওয়াতে দেরি হচ্ছে না তো । জিগ্যেস করলাম অফিসের এক কর্মী কে আর জানা গেল যে ওরা আছে ৬' টা অবধি।
চিন্তার জন্য শরীর টা অসুস্থ বোধ করছি । গাড়ি চালাতে পারছি না। কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। ওইখানে কাল যাব না আজ , কোন রাস্তা টা ধরব ভাবতে - ভাবতে একটা পাথরের সাথে ধাক্কা খেলাম।
তার পর কি হলো ঝাপসা মনে পড়ে। তবু ও পুরোপুরি নয়। কারণ গাড়ি সমেত পড়েছি। হেলমেট একদিকে আমি এক দিকে । কারণ টা ও যে শুধু মাত্র ধাক্কা তাও ঠিক করতে পারছি না। আমার হুশ সেরকম ছিল না। কি হচ্ছে না হচ্ছে জানতাম না। আমি বাঁচব কি না তাও জানতাম না। রাস্তায় কয়েকটা লোক আমার সাহায্য করার চেষ্টা করে। তাদের মধ্যে থেকে এক জন আমার ফোন বের করে আমাকে জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করে যে কাকে ফোন করবে। ওই অর্ধ চেতনা র অবস্থায় আমার মুখ থেকে যার নাম টা সর্বপ্রথম বের হলো ওই টা হচ্ছে দিদি র।
ওরা দিদি কে ফোন করল । দিদি কি বললেন তা আমার মনে নেই। তবে এই টুকু মনে পড়ে ওরা আমাকে ধরে কোনো রকমে ঘরে ছেড়ে দিয়ে এলো। আমি ঘর পৌঁছে একটু চেতনায় ফিরি।আর ফিরে যা দেখি তা এই যে আমার শরীরে আঘাত খুব লেগেছে। এপাশ - ওপাশ ঘা , মুখে ও তাই। গাড়ি র কাঁচ ভেঙ্গেছে । দিদি র দেওয়া সার্ট টা ছিঁড়ে গেছে।
এই কষ্ট নিয়ে ভাবছিলাম তখন দিদি র ফোন আসে । ও বলল চিন্তা না করতে । আমরা ডাক্তারের কাছে যাব । এই দু' পদ শুনে একটু চিন্তা মুক্ত বোধ করলাম। সত্যি আমরা যত বড় হয়ে যাই না কেন বড়দের জন্য যে আমরা সেই বাচ্চা হয়ে আজীবন থাকি তা কখনো ভুল হয়ে।আর দিদি - দাদাদের তো কথাই আলাদা । ওরা বড় এবং দরকার পড়লে সঙ্গি সাথীর অভাব টা বোধ করায় না। তাদের জন্য আমরা সেই ছোট্ট আদুরে হয়ে থাকি। আর বয়স বাড়লেও ওদের থেকে আদর পাওয়া টা যা ভালো লাগে সে বললে বোঝাই কি করে।
দিদি এল । দিদি র গাড়ির আওয়াজ শুনেই আমি অনেকটা চিন্তা মুক্ত হলাম। আর বরং আরো মুক্ত করে এই বলে যে এখন কোনো কাজ করতে হবে না আমাকে । অফিস ও যেতে হবে না। ওই যা করার করবে।
আমাকে নিয়ে ডাক্তার কে দেখালো, ওষুধ কিনে দিলো। টাকা র কথা চিন্তা করতে মানা করলো। সবাই কার ভার এখন দিদি র উপর। তবু ও দিদি চায় যেন আমি ঠিক মতন সুস্থ হয়ে উঠি। সত্যি আমাদের মধ্যে যত ই ঝগড়া , ভাব - আড়ি হোক তবে বন্ধুত্ব এবং রক্তের সম্পর্ক টা এরকম যে কারুর কিছু হলে আমরা কেমন যেন রোজ বেঁচে থাকার সম্পর্ক টা কে জীবন্ত করে তুলি।
আমি আজ ও ভাবি যদি আমার সেদিন কার এক্সিডেন্ট টার থেকে ফেরা না হতো তবে ওই দিদির কি অবস্থা হতো যার সাথে আমি ছোট বেলায় ঝগড়া করতাম , যে আমার স্বর্ণ পদক পাওয়াতে এতো খুশি হয়ে ছিল যে চোখে জল চলে এসেছিল। এখন দিদি আমার কাছে থাকেনা। তবে এই দুরত্ব টা ওর কাছে থাকা টা মনে করিয়ে দেয় আর তার মধ্যে এই উপরোক্ত ঘটনা টা অন্যতম। দিদি ও যে আমার রক্ষক হবে তা এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়েছে।