STORYMIRROR

Sourav Halder

Thriller Others

4  

Sourav Halder

Thriller Others

এক অভিশপ্ত মুখোশ

এক অভিশপ্ত মুখোশ

5 mins
45

মুখোশটা আমি কিনেছিলাম রুবিকে ভয় দেখানোর জন্য। রুবি, আমার বউ। ভীষণ ভীতু। ভূতকে ও জন্মের মতো ভয় পায়। অথচ ও কখনো।সত্যিকারের ভূত দেখেনি, ভূত দেখার অভিজ্ঞতা কেবল মুভিতে দেখা ভূতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।


তবুও ও সারাদিন ভূতের মুভি দেখে। বাংলা, ইংলিশ, টার্কিশ, কোরিয়ান সব ধরনের ভূতের মুভি ওর দেখা শেষ। তারপরও বারবার দেখে। দেখে আর ভয় পায়। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে। আমার তখন বিরক্ত লাগে, চরম বিরক্তিতে বলে ফেলি, 'এত ভয় লাগলে ভূতের মুভি দেখো কেন?'


ও লাজুক হেসে বলে, 'ভালো লাগে।'


ওর লাজুক মুখ দেখে আমি আর কিছু বলি না। ও তো জানে না, ওর লাজুক মুখখানা কি ভীষণ সুন্দর লাগে দেখতে।


এরপরও ওকে ভয় দেখানোর জন্য আমি ভূতের মুখোশটা কিনেছি। ওকে এখন ভয় দেখানো দরকার। ওর একটা শিক্ষার দরকার আছে।


শিক্ষার দরকার থাকবেনা কেন বলেন? বোকার মতো কাজ করে, তার জন্য আবার আমাকেই বকাঝকা করলে ভালো লাগে? ওর বান্ধবীর বিয়ে। ডিনার সেট গিফ্ট করবে।


আমি বললাম, 'এসব জিনিস এখন আর কেউ গিফ্ট করে না। তার চেয়ে পার্সেল করে কিছু টাকা দিয়ে দিই।'


রুবি রেগে গিয়ে বললো, 'এই, এটা কেমন কথা বললে? পার্সেল করে টাকা দেবো মানে? আমি কি দান করছি?'


'আজব, দান হবে কেন? এখন অনেকেই এভাবে টাকা গিফ্ট দেয়।'


'এসব কথা বাদ দিয়ে ডিনার সেট নিয়ে আসো, যাও।'


কি আর করার। ঘুরে ঘুরে বাজেটের মধ্যে ভালো একটা ডিনার সেট নিয়ে এলাম। ও সেটা দেখে রেগে টং হয়ে বললো, 'এইটা কি আনতে? এটা কোনো ডিজাইন হলো? পুরান আমলের দিদা-ঠাকুমাও তো এরচেয়ে ভালো ডিজাইনের থালা বাসন ব্যবহার করতো।'


'কিছু করার নেই, এই দামে এরচেয়ে ভালো ডিনার সেট নেই।'


'নেই তো দাম একটু বাড়াতে। এতো কিপ্টামো করো কেন? বান্ধবীর বিয়েতে একটা জিনিস দিবো, তাতেও এতো কিপ্টামি? আমার ভালো লাগে না আর এসব।'


ডিনার সেট পছন্দ হলো না দেখে রুবি আর বান্ধবীর বিয়েতেই গেল না। মাঝখান দিয়ে আমার ডিনার সেট কেনার টাকাটা অপচয় হল।


এরপর আমি ঠিক করলাম ওকে একটু দেওয়া দরকার। প্রায়ই এমন করে ও। ওর শিক্ষাটা দিতে হবে মোক্ষম, যেন ভবিষ্যতে আর এমন ঝামেলা না করে। আর ভূতের ভয় দেখানোর মতো ভালো শিক্ষা আর হয় না।


দোকানে গিয়েই ভূতের মুখোশটা পছন্দ হয়েছিল। Advert Munch-এর আঁকা বিখ্যাত ছবি 'The Screem' এর সেই ভয়ঙ্কর মুখটার আদলে বানানো হয়েছে মুখোশটা। দেখেই ভয় লাগে। ঠিক করলাম, এটা দিয়েই রুবিকে ভয় দেখাবো। ভয় দেখানোর দামটা বেশি ছিল। পাঁচশো টাকা নিলো মুখোশটা।


দোকানদার পান চিবাতে চিবাতে বলল, 'বাতিল মাল কিনলেন। সবাই এটা কিনা ফেরত দিয়ে দেয়। আপনিও ফিরত দিয়ে যাবেন এটা আমি নিশ্চিত। তখন কিন্তু এক পয়সাও ফেরত পাবেন না।'


আমি বললাম, 'এবার এটা ফেরত আসবে না।'


দোকানদার পিচিক করে পানের পিক ফেলে বলল, 'আচ্ছা।'


ঘরে এসে একটা ধাক্কা খেলাম। মুখোশটা নেই। অথচ আমার ঠিক মনে আছে, দোকানদারের কাছ থেকে নিয়ে ব্যাগের সেকেন্ড পকেটে রেখেছিলাম। এখন নেই। কোথায় গেল ওটা? দোকানদারকে টাকা দিতে যখন মানিব্যাগ ঘাটছি, তখনই কি আস্তে করে সরিয়ে নিয়েছিল? এটাই হতে পারে। ব্যাটাটাকে দেখেই কেমন যেন লাগছিল। কালকে গিয়ে ধরতে হবে।


আজকে রুবি কেন যেন বেশ খুশি খুশি। রাতে শুতে গিয়েই সে বলল, 'চলো আজকে Hereditary দেখবো। এই মুভিটার রেটিং খুব ভালো।'


আমরা 'Hereditary' দেখলাম। খুব আহামরি মুভি না, কিন্তু দু-তিন জায়গায় কেমন যেন আমার গা ছমছম করে উঠলো। যেমন লাইট নিভানোর পর মৃত মাকে দেখতে পাওয়ার ব্যাপারটা।


রুবি বলল, 'ভালো লাগছে। আজ বেশ ভালো একটা মুভি দেখলাম।'


আমি কিছু না বলে বাথরুমে গেলাম। ওকে বুঝতে দেওয়া যাবে না যে আমি ভয় পেয়েছি। বাথরুম থেকে বের হবো, দেখলাম রুম অন্ধকার। বাথরুম থেকে বেরোতেই আমাদের ড্রয়িং রুমটা পড়ে। আমার খুব মনে আছে, বাথরুমে ঢোকার আগে ওখানে লাইট জ্বালিয়েছিলাম। তাহলে লাইটটা নেভালো কে? রুবি?


অন্ধকারে হঠাৎ একটা মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। মুখ নয়, মুখোশ। সেই, 'The Screem' মুখোশটা, যেটা আমি কিনে এনেছিলাম। কিন্তু এটা এখানে এলো কিভাবে?


মুখোশটা চুপচাপ শূন্যে ঝুলছে। তখন আমার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। আমি চিৎকার করতে যাবো, তার আগেই মুখোশটা আমার দিকে আরেকটু এগিয়ে আসলো। আমি দেখলাম, একটা ভুল হয়েছিল আমার। মুখোশটা শূন্যে ভেসে নেই। ওর পিছনে একটা শরীর আছে। কালো কাপড়ে ঢাকা শরীর। কালো রঙটা অন্ধকারের সাথে মিশে গিয়েছিলো, শরীরটা প্রথমে দেখতেই পাইনি। তাই মনে হচ্ছিলো, মুখোশটা শূন্যে ভাসছে।


সেই শরীরের দুপাশ থেকে দুখানা হাত বেরিয়ে এসে মুখোশের দুপাশ চেপে ধরলো, যেন মুখ চেপে ধরে চিৎকার করছে মুখোশটা। ঠিক 'The Screem' পেইন্টিংটার মতো।


আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। এক দৌঁড়ে ঘরে চলে গেলাম। আমাকে দেখেই রুবি খিলখিল হাসিতে ফেটে পড়লো। হাসতে হাসতেই বললো, 'কি? মজা টের পেয়েছো?'


আমি হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম, 'কি মজা?'


'ভূত দেখোনি?'


'মানে? ঐটা তোমার কাজ?'


'হুম, ভীতু বর। ব্যাগে মুখোশ ভরে এনেছো, ব্যাগে চাপ খেয়ে যে মুখোশটা বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে, টের পাওনি? আমি বলি, কিরে, ব্যাগে এমন মানুষের মুখ দেখা যাচ্ছে কেন? তুমি বাথরুমে ঢুকতেই ব্যাগ ঘেটে পেলাম মুখোশটা। ব্যস, বুঝে গেলাম এটা তুমি আমাকে ভয় দেখাতে নিয়ে এসেছো। তখনই মাথায় প্ল্যানটা এলো। মুখোশটা দিয়ে তোমাকেই যদি উল্টে ভয় পাইয়ে দিই, তাহলে কেমন হয়? দেখলে, নিজের খোঁড়া গর্তে নিজেই পড়ে গেলো।'


আমি রেগে গিয়ে বললাম, 'না বলে কারো ব্যাগ ঘাঁটা কি ঠিক? তার উপর আরেকজনকে নিয়ে এসেছো ভয় দেখাতে। কার মুখে মুখোশটা পরিয়ে রেখেছো, বলোতো?'


'কি, কি বলো? মুখোশ কার মুখে পরাবো? আমি তো কেবল তুমি বাথরুমে ঢোকার পর ড্রয়িংরুমের লাইট বন্ধ করে, মুখোশটা বাথরুমের দরজার সামনে সুতো দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম।'


'তাহলে মুখোশের শরীর, হাত, ওগুলো এলো কোত্থেকে?'


'কি বলো আবোলতাবোল? ভয়ে কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?'


রুবির কথা শেষ হয়নি, তার আগেই আমরা দরজায় সেই মুখোশ পরা মানুষটা দেখলাম। সেই একই ভঙ্গিতে মুখে হাত চাপা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুবি ওটা দেখেই চিৎকার করে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, 'ওটা কি?'


আমি কি এর উত্তর জানি? রুবির সাথেই ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে লাগলাম।


মুখোশধারী হঠাৎ এক ভয়ানক চিৎকার করে উঠলো। এমন ভয়ঙ্কর আর্তনাদ আমি আর কখনও শুনিনি। সেই আর্তনাদের সাথে সাথেই মানুষটা উধাও হয়ে গেল। মুখোশটা খসে পড়লো মেঝেতে।


সেই রাতে, আমার বা রুবির, কারোরই ঘুম এলো না ভয়েতে। মুখোশটা সেভাবেই দরজার কাছে পড়ে রইলো ভোর পর্যন্ত, কারো আর ওটা ওঠানোর মতো সাহস রইলো না।


সকাল হতেই আমি মুখোশটা ফেরত দিতে গেলাম দোকানে। দোকানদারটা মুখোশটা ফেরত নিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো, 'বলেছিলাম না, আপনিও ফেরত দেবেন?'


'ফেরত না দিয়ে কি করবো? একটা অভিশপ্ত ভূতধরা মুখোশ দিয়েছো আমাকে।'


'কি বললেন? এটা ভূতেধরা মুখোশ? এতদিন আছে দোকানে, আমার কিছু হল না। খালি আপনাদের কাছেই ভূত আসে?'


'এই মুখোশ তুমি কোথা থেকে পেয়েছো?'


'কোথা থেকে পেয়েছি মানে? ফরেন মাল, ডাইরেক্ট জার্মানি থেকে এনেছি। প্রথমে এসেছিল তিন হাজার টাকা, এরপর বারবার কিনতে আর ফেরত নিতে নিতে দাম পাঁচশো রেখেছি।'


'প্রথমে এই মুখোশটা কে কিনেছিল?'


'এক বয়স্ক মহিলা নিয়েছিল। ওনার একটু মাথা খারাপ ছিল, মুখোশ পরে চিৎকার করতে করতে ছেলের বউকে ভয় দেখাতেন মাঝরাতে। উনি মারা যাওয়ার পর ছেলেটা মুখোশটা ফেরত দিয়ে দেয়। এরপর থেকেই মুখোশটা বিক্রি করলেই ফেরত চলে আসে। এখন যান আমার অনেক কাস্টমার আছে, গল্প করার সময় নেই।' বলেই তিনি অন্য কাস্টমারদের দিকে মন দিলেন।


(সমাপ্ত)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller