STORYMIRROR

Sad love

Romance

4  

Sad love

Romance

দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার সংসার

দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার সংসার

7 mins
929


আমি - তুমি সুন্দর। কিন্তু ক্রাশ খাওয়ার মতসুন্দর না

মিম - তাই? তাহলে আমার পিছনে লাইনমারতা কেন?

আমি - আমি কই লাইন মারতাম? তুমিই তো আমার ইনবক্সে এসে নক করতে

মিম - সেটাই আমার ভুল ছিল

আমি - শুধু ভুল না মহা ভুল

মিম - আমি বলেই তোমার মত ইয়ে ছেলেকে বিয়ে করছি

আমি - ওই ইয়েটা কিয়ে?

মিম - এক চিলতে হাসিতে বললো জানি না যাও তো

আমি - উহু বলই না

মিম - ঝগাড়াটে পোলা

আমি - ও আমিই শুধু ঝগড়া করি? আর আপনি নজরুল সঙ্গীত চর্চা করেন?

মিম - জ্বি না। আমি একটা কিউট লক্ষ্মী একটা মেয়ে

আমি - হয়েছে একহাতে যে তালি বাজে না। নিশ্চই জানো?

মিম - একটু রেগে মানে কি? তুমি বলতে চাও আমি ঝগড়া করি?

আমি - চোরের মায়ের বড় গলা

মিম - এই শুনেন আপনার সাথে আর কথা নাই। আর কথাই বলবনা। হুহ

আমি - দেখাই যাবে

মিম - কি??

আমি - হুম। মার্কেট করতে গেলে ঠিকই আমার কথা মনে পরবে। তখন কই যাবে কথা না বলে?

মিম - পকেট কাটবো

আমি - পকেটমারের জায়গা নাই আমার বিছানায়


মিম - কি বললা? তোমার বিছানা? সারাদিন কে এত সুন্দর পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখে? আমার বিছানা হু

আমি - এহ! এবাড়ির সবই আমার। বিছানাও আমার


এবারে মীম অভিমানী মুখ করেভারী গলায় বলল,"হ্যা তাইতো। সবই তো আপনার। আমি এবাড়ির কে? আমার তো কোনঅধিকার নেই এসবের উপর। সরিমিস্টার রানা । আমি আসলে ভুলেগিয়েছিলাম আমি কে! মাফ করবেন 


বলেইড্রেসিংটেবিলের সামনে ধপ করেবসে পরলো


আসলে আমি বুঝতে পারি নি মজার ছলে পাগলীটার মন খারাপ হয়ে যাবে


আমি বুঝলাম মহারাণী বেশ অভিমান করেছে। মহারাণী হয়তো জানেইনা যে অভিমানী মুখে তাকে কতটা সুন্দর লাগে।


আমি দেখলাম হঠাৎ করে চোখদিয়ে টুপ করে এক ফোটা বৃষ্টি পরলো। বুঝলো মহারাণী কষ্টও পেয়েছে।


কি নিষ্পাপ বাচ্চাদের মতো করে রেখেছে মুখটা। এখনি অভিমানভাঙাতে হবে মহারাণীর।

.

আমি - এই শুনো না

মিমের মুখে কনো কথা নেই। চোখ দিয়ে বৃষ্টি পরছেই


আমি আরদ করতে করতে ডাকতে লাগলাম 

জানু

বাবুই পাখিটা?

এই যে সোনাপাখিটা

আমি বুঝলাম এভাবে হবে না


আমি - জান আমার ময়নাটা শুনো না। তোমাকে না কাঁদলে কেমন বাচ্চাবাচ্চা লাগে নিষ্পাপ লাগে


আমি পাগলীটাহ হাত ধরে বললাম ।


উহু বাবুই কথা বলো। সরি আর এমন বলবো না। শুনো! একটু কথাতো বলো

পাগলীটার হাত ধরতেই বারুদ বিস্ফোরণ করলো। ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে বললো

কাঁদাতে ভাল লাগে তোমার। তাই না? কথা নাই তোমার সাথে কোন। কাঁদাও যত খুশি


আমি - এই শুনো কেদোনা আর। কাঁদলে তোমার ওই চোখের কাজল লেপ্টে পেত্নীর মত লাগে দেখতে

মিম - এখন তো পেত্নীই লাগবে তাইনা? পুরোনো হয়ে গেছি তো

আমি - ছি ছি কি বলে আমার জান? তুমিতো আমার একমাত্র মহারাণী। তোমাকে অনেক ভালবাসি। সারাজীবন বাসবো

মিম - হু কচু। সবই ঢং। কিছুক্ষণ পর এসবের কিছুই খুজে পাওয়া যাবে না

আমি - উহু সত্যি খুব ভালবাসি। চলো তোমার কাজল মুছে গেছে লাগিয়ে দেই


আমার হাতের তালুর মধ্যে শার্টেরহাতা গুটিয়ে ওর লেপ্টে যাওয়া কাজল মুছে দিয়ে নিজ হাতে কাজল লাগিয়ে দিলাম। যদিও খুব ভালভাবে দিতে পারেনি । তবুও মীমেরকাছে এটাই সবচেয়ে আনন্দের বড় পাওয়া মীম আনন্দ মনে চেপে রেখে কঠোর গলায় বললো

কাজল লাগিয়ে দিয়েছো বলে ভেবো না আমি গলে গেছি


আমি - আবার কি হলো?

মিম - কই কি হলো? আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য শাস্তি পেতেই হবে আপনাকে

আমি - যথা আজ্ঞা মহারাণী

মিম - আজকে রাতের খাবার বন্ধ থাকবে তোমার

আমি - কি বলো তুমি? জানো না আমার ক্ষুধার সময় না খেলে বুক ব্যাথা করে?

মিম - তাতো আর আমি জানিনা মীম নির্লিপ্ত স্বরে জবাব দিল


আমি - হুহ্ পারো আর কি? এই রান্নাটাই জেনে এত তালুকদারি!

মিম - বেশ তো কে মানা করছে তোমায় তালুকদারি করতে। একটা ডিম ও তো ভাজতে পারো না। অকর্মার ঢেঁকী

আমি - এখনি দেখাবো কে অকর্মার ঢেঁকী

মিম - না লাগবে না। আমি জানিতো তুমি অনেক পারো সব পারো

আমি - না দেখাতে হবে তো পারি না পারিবলেই আমি রান্না ঘরে গেলাম ডিমভাজি করতে।


একটু পর পরই রান্নাঘর থেকেএটা কই ওটা কই বলে চিৎকার দিচ্ছি 


আমি - ডিমটা কোথায় গো?

মিম - ফ্রিজে

আমি - পিয়াজ?

মিম - কুচি করা আছে ফ্রিজে

আমি - কড়াই?

মিম - আছে পাশেই দেখো

আমি - দিয়াশলাই?

মিম - উপরেই দেখো

আমার একের পর এক প্রশ্নের জবাবদিচ্ছে আর মিটিমিটি মুখ টিপে হাসছে


হঠাৎ মৃদু একটা আতর্নাদ ভেসে গেলো মিমের কানে এলো মেলো হয়ে আছে রান্নাঘর মিম শুবার ঘর থেকে।দৌড়ে এসে দেখলো আমার ডান হাত পুড়ে গেছে মিম এলোমেলো ঝাঁকাচ্ছে আমার হাতটা ধরে।



তারাতারি আমার হাতের আঙুল মুখে নিয়ে নিল মীম। চোখ ভরা শাসন নিয়ে তাকিয়ে আছে পাগলীটাহ আমার দিকে।

আমিও ভয়ার্ত

চোখে তাকিয়ে আছি মিমের দিকে।.


একটু পর আমি ভয় কাটিয়ে মিমের ভুবন জয়করা একটা হাসি দিলাম । মিম সাথে সাথে ছেড়ে দিল আমার হাতট।


মিম - শয়তানটা আবার হাসে

আমি - কি করবো বলো

মিম - যদি বেশি কিছু হতো তবে কিহতো ভাবছো?

আমি - কিছু হয়নি তো চিন্তা করো না

মিম - আমি কিন্তু একদিক থেকে খুশি হইছি

আমি - কি? আমার কষ্টে তুমি খুশি?

মিম - হুম। কারন এখন আর কাজের শেষে

 ফেরার সময় কেরাম খেলতে পারবে না। তারাতারি বাসায় চলে আসবা। আমার বাসায় একা থাকতে বুঝি ভয় করেনা রাত করে আসো?


আমি - থাক তুমি খুশি তো তাতেই ভালো

মিম - আহারে বাবুটা রাগ করছে মনে হয়। চলো ভাত খাবে চলো

আমি - যাবো না। ক্ষুধা নেই।

মিম - আমি বলছি যাবে হাতে ব্যাথাতো

আমি - অসুবিধা নাই। চামিচ দিয়ে খাবো আমাকে হাত ধরে তুলে নিয়ে গেল মিম


আমি ভাবছিল পাগলীটাহ নিজ হাতে খাইয়ে দিবে। না তাহলো না।।

মিম - খাবার টেবিলে আছে খেয়ে নাও 

আমি - আচ্ছা

মিম - কিছুখন পর হইছে থাক। অনেক হইছে। দেখি এদিকে আসো। হা করো খাইয়ে দিচ্ছি।

আমার থেকে একটু বেশি আদায় করে নিতে এসব করো। বুঝিতো সব আমি


আমি - ক্ষতি কি তাতে?

মিম - আমাকে এতো কষ্ট দিয়ে কী পাও তুমি ?

আমি - উহু। সরি। নাও এবার তুমি একটু খাও

মিম - এই কি করো? জ্বলবে তো

আমি - কিচ্ছু হবে না। তুমি মিষ্টি দিয়েদিবা তখন

মিম - যাহঃ পাজি বদ দুষ্ট কোথাকার

আমি - শুধুই তোমার

মিম - ঢং

আমি - ঢং!! ভালবাসি তো

মিম - কচু বাসো। শুধু আমিই বাসি

আমি - আমি বাসি না?

মিম - দেখি নি তো কখনো কিছু করতে

আমি - কি করতে হবে?

মিম - ভালই বাসো নি কখনো। কি করবা?

আমি - তাই?

মিম - হুম


আমি - একটা গল্প শুনবা তাহলে?

মিম - হুম বলো

আমি - একটা মেয়ে ছিল

মিম - কি?

আমি - না না। শুধু মেয়ে না ছেলেও ছিলো

মিম - তারপর?

আমি - মেয়েটা ছিল ছেলেটার ফেইসবুক ফ্রেন্ড ।

মিম - চেনা মনে হচ্ছে গল্পটা একটু একটু


আমি - শুনবে তো আগে মেয়েটা প্রতিদিন আমাকে ইনবক্সে নক দিতো


মিম - কি করবে বলো? ছেলেটা তো গাধা ছিল। মস্ত বড় গাধা। তাই নিজ থেকেই মেয়েটা লাইন দিতো



আমি - হুম প্রতিদিনই নক দিতো

মিম - ঠ্যাকা পরছে আমার? হুহ্

আমি - আহা শুনোই না

মিম - কি শুনবো? ভালইতো বাসো নি কখনো। বলদ কোথাকার 

আমি - এইযে আমি মোটেও বলদ নই হুমম

মিম - দেখলাম ই তো যখন আলভির সাঙ্গপাঙ্গরা এলো। ভয়ে ভো দৌড় দিলে

আমি - হু হু জানতান এটাই বলবা

মিমি - নাতো কি? ভাগ্যিস শা'ওনক কেফোন দিয়েছিলাম নাহয় সে যে কি হত কল্পনার বাহিরে

আমি - হুহ্ হিরো এলো তারপর কি করলো? ধুমধাম দিয়ে হিরোয়িন কে উদ্ধারকরলো

মিম - আরে নাহ্ ওরা তো শা'ন বেবিটাকে দেখেই পালালো

আমি - হ্যা খুব ভাল। ভেবে ছিলে তখন চলে গেছে বলে আর করবে না? শোন ওরা তোমাদের অনেক আগে থেকেই পিছু নিতো। তাইনা?

মিম - হুম 

আমি - যানো আমি পরেরদিন কলেজ যাওয়ার আগে ওরা রাস্তায় ছিল। তখন কানের গোড়ায় দিয়ে বলে দিয়েছি "ওটা আমার বা পাজোরের হাড়। একদম যেন না দেখি আর আশে পাশে ঠিক আছে?

মিম - তাই বলি পরেরদিন থেকে ওরা আপু আপু করে ডাকে কেন?

আমি - হু সব তো বেবির ক্রেডিট। অন্যদিকে ঘুরে মন খারাপ করে বললো রানু

আমি - সরি বাবু। কে বলছে এই গাধা ভীতু?সে হিরো মীমের পৃথিবীর একমাত্র হিরো। আই লাভ হিম সো মাচ

মিম - ঢং করতে হবে না।

আমি - সে কি তুমি ভালই বাসোনি কখনো।

মিম - থাক আর ভালবাসা প্রকাশ করতে হিরোগিরি দেখাতে

হয় না ? 

আমি - ভালতো

মিম - না। অনেক ভালবাসো তো তুমি। তাই তো আমার কপালে ভূতটার নজর পরে আজ আমার এই দশা

আমি - এক্সকিউজ মি...! আমি নজর দেইনি। একটা পেত্নী নজর দিয়েছে। আর আমার কপাল। একটা মেয়েও পটাতেপারলাম না

মিম - লজ্জা করেনা? বউয়ের সামনে আরেক মেয়ের নাম? লুচু কোথাকার

আমি - আমি লুচু? প্রকৃত লুচু তো সে ই যে আশেপাশের সবাইকে লুচু ভাবে

মিম কে লুচু জানাই আছে। অফিসের প্রত্যেকটা মেয়ে কলিগ কে লাইন মারতে না?

আমি - একদম না।

মিম - কথা লুকাবে না। গাছের ও খাবে আবার তলায় ও কুড়োবে লুচু লুচু

আমি - একটুও না। শুধু তোমারই আমি

মিম - কচু

আমি - সত্যি তুমিই আমার পৃথিবী


কথাগুলি ক্রমশ সিরিয়াস হচ্ছে দুজনেই জানে। মাত্র এক মাস হলো বিয়ের। দুজনই দুজনকে খুব ভালবেসে ফেলছি। সারাদিনই দুষ্টুমি, ঝগড়া, মান অভিমান লেগে থাকে দুজনার মাঝে। কিন্তু দিন শেষে দুজনেই হয়ে ওঠে দুজনার পৃথিবী। চির পরিচিত এই দিনগুলির শুরু সেই কলেজ থেকে। তবে এই ঝগড়া,

রাগ, মান অভিমান যেন চিনি ছাড়া চায়ের মতো।


মিম - আর আমি? তোমার মাঝেই যে পৃথিবী খুজে বেড়াই জানো না?

আমি - হুম জানি তো তবু ঝগড়া করা লাগবেই?

মিম - শুধু তো তোমার সাথেই করি। অন্যকারো সাথে তো নয়

আমি - চল নিচে চল। ঠান্ডা খুব আজ

মিম - আমার না পায়ে ব্যাথা

আমি - সে কি! নিজেই তো হেটে এলে উপরন্তু আমায় টেনে নিয়ে এলে

মিম - কেন যে এই ভূতটার নজরে পরলাম। বোকা ভূত কিচ্ছু বুঝেনা। (অভিমান করে বললো মিম)



আমার আর ইঙ্গিত বুঝতে বাকি রইলো না আমি। হঠাৎ মিমকে কোলে তুলে নিলাম । আর বলতে লাগলাম "ভূত নজর দেইনি। বরং পেত্নী নজর পরছে বলেই আজ আটার বস্তা তুলতে হচ্ছে"

মিম - তাই না? বলেই আমার বুকে মুখ

লুকিয়ে ডিসুম ডুসুম দুষ্টুমিষ্টি আদর দিতে লাগলো 


লেখক বালুচর রানা


        দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার

              সংসার


             ( সমাপ্ত ) 


Rate this content
Log in