Subrata Das

Drama

3  

Subrata Das

Drama

দুষ্ট ছেলে

দুষ্ট ছেলে

4 mins
8.7K


আমার ছোট্টবেলার এক বন্ধু , সুবিনয়, ডাক নাম লাট্টু। যেমন নাম তেমন কাজ ,..... স্থিরতা ওর কুষ্টিতে ছিল না , যেন সাইক্লোন লগ্নে ওর জন্ম ,...... আর সত্যিই তাই , এক কালবৈশাখী ঝড়ের রাতে ও জন্মেছিল।

ওরকম দুরন্ত এবং বুদ্ধিমান ছেলে আমি খুব কম দেখেছি ,...... এক অদম্য সাহস ছিল ওর ।

চার বছর বয়সে আমাদের পাড়ার সবচেয়ে হিংস্র কুকুর ভুলো এর হাত থেকে একবার একটা বিড়াল ছানাকে বাঁচিয়েছিল রীতিমতো লড়াই করে ।

..... আমি অবশ্য cynophobic ছিলাম , অর্থাৎ কুকুরের প্রতি ভয় , তাই রাস্তায় বেরলে "কুকুর হইতে সাবধান" বাণীটি আমি প্রতি পদে পদে অনুভব করতাম ।

আমি সেই ছোট্ট বয়স থেকেই তাই লাট্টুকে মন থেকে একটু বেশি শ্রদ্ধা করতাম যদিও আমি ওর থেকে দু বছরের বড় , .....আর শুধু ওর রসবোধ দেখে অবাক হতাম ..... ভাবতাম এমনও মানুষ হতে পারে !!!!! .... কেননা আমি আমার চারপাশে এবং স্কুলে ওর মতো দুষ্ট বুদ্ধিযুক্ত রসিক কিন্তু খোলা মনের ছেলে আর একটিও দেখিনি ।

দশ বছর বয়সে , রাগী কেলো কাকার সাইকেলের হওয়া ছেড়ে দেয়া , বুলটিদি দের বাগানের আম, পেঁপে, পেয়ারা চুরি করে পাশের বস্তি পাড়ায় গিয়ে ঠাকুরের প্রসাদ বলে সেগুলোকে বিলনো , ....

আর শনি মন্দিরের প্রসাদ লুকিয়ে নিয়ে পাগলাবাবার ঠেকে গিয়ে ওগুলো ওখানকার পাগলগুলোকে বিয়ে বাড়ির খাবার বলে দিয়ে আসা , ...... এসবই ছিল ওর রোজকার রুটিন।

ওর এই ডানপিটে স্বভাবের জন্য বাড়িতে মারও পড়ত রোজ একেবারে নিয়ম করে। ওর জয়েন্ট ফ্যামিলির কাকু , দিদিমা, পিসো সবাই খুব চটে থাকতো ওর উপর , আর ওর মা ওকে মারধর করার পর রোজ ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করতো যেন এই ছেলে একটু শান্ত সুস্থির হয় ।

লাট্টু কে ভালোবাসার মধ্যে শুধু ওর ঠাকুরদা ছিল ..... তিনি লাট্টুর মাকে শুধু বলতেন আর কয়েকটা বছর সহ্য কর মা দেখবি তোর এই ছেলে এরকম থাকবে না , তখন কিন্তু এই দস্যিপনা টাকেই ফিরে পেতে চাইবি আর এই ছোট্ট মুখের সরল শয়তানি হাসি টাকে একটু দেখার জন্য আকুল হয়ে উঠবি, ..... দেখে নিস, এই আমি বলে দিলাম ।

ওর মা এসব কথায় পাত্তা না দিলেও আমি কিন্তু সেই কয়েকটা বছেরর অপেক্ষায় ছিলাম ..... আমার প্রবল ইচ্ছে ছিল যে লাট্টু পাক খেয়ে ঠিক কোথায় গিয়ে থামবে সেটা দেখার ।

এই ভাবে আরও দু তিন বছর কেটে গেল , এদিকে লাট্টু খেলা ধুলো তে খুব পারদর্শী হয়ে উঠছে , পাড়ায় এবং স্কুলে এই দুরন্ত খেলা ধুলোর জন্য খ্যাতিও হয়েছে বেশ ..... কিন্তু ওর সেই ছোট্টবেলার দুরন্তপনা এখনো একই আছে ।

সব মানুষ ওর এই দুরন্তপনার জন্য অসন্তুষ্ট হলেও সবাই কিন্তু মন থেকে ওর প্রশংসাই করতো কারণ লাট্টুর মন টা যে খুব খাঁটি ছিল ।

এত সবকিছুর মাঝে লাট্টু কিন্তু পড়াশোনাতে বেশ পারদর্শী ছিল , কখনো ক্লাসে প্রথম না হলেও বেশ ভালোই ফল করতো কিন্তু পড়াশোনা তেমন করতোই না ...... , সারাক্ষন লোকের পেছনে লাগা আর খেলাধুলোই ছিল ওর প্রানরস ।

সাল 2007 , আমি সেবার মাধ্যমিক দিলাম ।

লাট্টুর ঠাকুরদা মারা গেলেন , .... আমি শুধু কষ্ট পেলাম এই ভেবে যে তিনি তার লাট্টু কে নিয়ে করা ভবিষৎ বাণীটি নিজে দেখে যেতে পারলেন না ,.... কিন্তু আমি কিন্তু অপেক্ষায় ছিলাম ।

সেই বছরই লাট্টুর বাবার বদলি হলো ,

লাট্টু লাট্টুর মা আর বাবা চলে গেলেন হুগলিতে ।

আমাদের ছোট্টবেলার বন্ধুত্ব যে শেষ হতে চলেছে তা বেশ আন্দাজ করতে পারলাম । আর সত্যি তাই হলো , পড়াশোনা আর ভবিষ্যতের চিন্তায় ধীরে ধীরে যোগাযোগ প্রায় বন্দ হয়ে গেল আমাদের ।

প্রায় দশ বছর কেটে গেছে , আমরা এখন আর বন্ধু নই , তবে মুখ চিনি, আর কে কি করছি সেটা ওই ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়ার তরফ থেকে জানা , আর দু একবার যখন ওরা আগের বাড়িতে আসত তখন যা ওই মেলামেশা হতো তাও যেন এক সাজানো বন্ধুত্ব আপন নয়।

এর পর আমি চাকরি পেলাম , সেটা কাকতলীয় ভাবে লাট্টুর বাবার অফিসেই । ঘরকুনো শুঁয়োপোকা ঘরের পর্দা চিরে বাস্তবে নামলো এবার। আর আমার থাকার জায়গা হলো লাট্টুর বাড়ির ঠিক পাশেই ।

যেন ছোট্টবেলার সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো আবার ফিরে পেলাম । মনে হতো এই বুঝি লাট্টু এসে ডেকে নিয়ে যাবে , বলবে চো, পাশের বাড়ির দাদুর গাছের আম গুলি পেড়ে পাশের পাড়ার বস্তির ছেলে গুলোকে দিয়ে আসি , ...... কিংবা চো, একটু খেলে আসি আর সঙ্গে ওই পাড়ার বুড়োগুলোকে একটু খেপিয়ে আসি।

কিন্তু না , এমনটা আর হলো না ।

এরমধ্যে একদিন লাট্টুর মা এসেছিল আমার ঘরে , ........

লাট্টুর মায়ের মুখে শুনলাম লাট্টু নাকি আর ঘর থেকে খুব একটা বেরোয় না ..... শুধু ওই কলেজে যায় আর সেখান থেকে সোজা বাড়ি ।

ওর নাকি এখন আর কোনো বন্ধু নেই ,

আর সবচেযে অবাক কথা যেটা শুনলাম সেটা হলো লাট্টু আর খেলেনা ..... ও আর খেলতে ভালো বাসেনা ।

বাড়িতে কোনো লোকজন এলে নাকি মুখ লুকিয়ে পালায় ।

আর কষ্ট হলো শুনে , লাট্টু এখন আর হাসে না ।

যে ছেলে কে আমি ছোট্ট বেলায় অদম্য সাহসী ভেবে অবাক হতাম সেই ছেলে নাকি এখন লোকজনকে নিজের মতামত টুকুও জানাতে ভয় পায় ।

এখন ও শুধু পড়াশোনা করে । খুব ভালো ছাত্র নাকি , ....... স্বল্পভাষী আর চেহারায় বুদ্ধিদীপ্ত হাবভাব কিন্তু মুখে কোনো হাসি নেই ।

লাট্টুর মা আরও বললো যে , ওর এই অবস্থা দেখে তিনি নাকি সারাক্ষন ঠাকুর কে ডাকেন আর বলেন তার ছেলে যেন একটু হাসিখুশি থাকে , যেন লোকের সাথে একটু মেসে একটু সেই ছোট্টবেলার সরল শয়তানি হাসি টা দেয় , ..... কতদিন ও হা হা করে অট্টহাসিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েনি ।

আমি শুধুই নির্বাক রইলাম , কিছু বলার মতো ছিল না আমার কাছে , ........ শুধু লাট্টুর ঠাকুরদার কথাটা মনে পড়লো .... ওনার সেই ভবিষৎবাণী ।

আর ভাবতে লাগলাম কি এমন হলো যে ওরকম একটা খোলা মেলা স্বতঃস্ফূর্ত হৃদয়ে হৃদরোগ দেখা দিল ? ......ওরকম দুরন্ত হৃদয়ের স্পন্দন এতটা কিভাবে কমে গেলো ?..... এভাবেও হার্ট এট্যাক হয় !!!!!!!! ??????


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama