বলতে পারলাম না, প্রিয়তমা!!!
বলতে পারলাম না, প্রিয়তমা!!!
"শোন, কাল সন্ধ্যে ছটার মধ্যে দেখা করবি। সারপ্রাইজ আছে।"- অজয়
"কিসের সারপ্রাইজ রে?"- নীলা
"আছে, আছে"- অজয়, "আর এই নে, এইটা পড়ে আসবি।"(একটা হলুদ আর গোলাপী পারের শাড়ি এগিয়ে দিয়ে)
অজয় আর নীলা। দুইজনেই একই কলেজে পড়ে। ওরা একই এলাকাতেও থাকে। তাই ছোটবেলা থেকেই ওদের দুজনের মধ্যে গাঢ় বন্ধুত্ব। কিন্তু এই বন্ধুত্ব যে কখন বসন্ত হয়ে অজয়ের জীবনে আসবে, সেটা অজয় বুঝতেই পারেনি। কাল সরস্বতী পুজো। অর্থাৎ ভ্যালেন্টাইনস ডে। তাই অজয় ভেবেছে কালকেই প্রথম বারের জন্য ওর প্রিয়তমা, নীলাকে কথাটা বলবে। দেখা করবে বাগবাজারের গঙ্গার ঘাটে।
পরের দিন...
নীলা সুন্দর করে মায়ের থেকে চেয়ে একটা গোলাপী রঙের সাথে গোল্ডেন জরীর কাঁচ করা একটা ব্লাউজ পড়েছে। তার উপর শাড়িটা দারুন মানিয়েছে। কানে একজোড়া অক্সিডাইজড দুল, ডান হাতে এক্সিডাইজড ব্রেসলেট আর বাম হাতে ঘড়ি। খুব সুন্দর লাগছে ওকে।
রাস্তায় বেরিয়েছে নীলা। ওদের এলাকা থেকে বাগবাজারের গঙ্গার ঘাট হাটা পথে মিনিট দশেক লাগে। ওরা দুইজনেই থাকে হাতিবাগানের দত্ত কলোনিতে।
রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নীলা অজয়ের কথাই ভাবছিল। ও কি বলবে? কেনো ওকে ডেকেছে? এইসব। হঠাৎ একটা চার চাকা গাড়ির সাথে নীলা সজোড়ে ধাক্কা খায়। ওর মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে। এক্সিডেন্টটা যেখানে হয়েছে, তার থেকে হাত দশেকের দূরত্বেই গঙ্গার ঘাট। অজয় সেখানে আগের থেকেই দাড়িয়ে ছিল। হঠাৎ লোকেদের হৈচৈ শুনে, ও এগিয়ে গেল। ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই অজয় থ হয়ে যায়। ওর সামনে অচেতন, রক্তারক্তি অবস্থায় পড়ে আছে নীলা। সঙ্গে সঙ্গে নীলার মাথাটা কোলে নিয়ে অজয় কাঁদো কাঁদো গলায় বলে- "এই নীলা ওঠ না। এই নীলা। নীলা!!!" বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে অজয়।
দ্রুত নীলাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট শুরু করে। কিন্তু!!!!! শেষ রক্ষা হয়না! অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং আঘাতে ব্রেইন পুরোপুরি ড্যামেজ হওয়ার জন্য, নীলা না ফেরার দেশে চলে যায়। নীলার বাবা মা এসেছেন। সাথে এসেছেন অজয়ের বাবা মাও। নীলার মা বাবা কেঁদে ভাসাচ্ছেন। অজয় পাথরের মতো হয়ে গেছে। একটা শব্দ বেরোচ্ছে না ওর মুখ থেকে।।
বারো বছর পর...
একটা ছেলে বাগবাজারের গঙ্গার ঘাটে বসে আছে। পরনে ময়লা কাপড়, চুল গুলো জট পেঁচিয়ে আছে। চেহারা রুগ্ন।
সন্ধ্যে ছটা...
সেই ছেলেটি: "বলতে পারলাম না প্রিয়তমা, তোমায় আমি ভীষণ ভালবাসি।" বলে ছেলেটি নদীর জলে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে অনন্তে ভাসিয়ে দিল।।
~সমাপ্ত~

