বিয়ের পরে
বিয়ের পরে
দু বছরের সম্পর্কে কনয় আজও প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠতে পারলো না। একটা সম্পর্ককে সুন্দর, সুষ্ঠভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে দুজন মানুষকেই পরিশ্রম করতে হয় সেটা কনয়ের অজানা। সৌজন্যা বুঝলেও কনয় অবুঝ হয়ে নিজেকে জাহির করে; নিত্যনৈমিত্তিক ঝগড়া, অশান্তি, মন খারাপ লেগেই থাকে ওদের মধ্যে।
এইতো সেই দিনের ব্যাপার। কনয়ের ফিরতে একটু রাত হয়ে গেছিল। প্রায় এগারোটা। সৌজন্যাকে ও ফোন করে বলেও নি। এদিকে মেয়েটা ওর জন্য অপেক্ষা করে করে খাবার টেবিলেই মাথা রেখে ঘুমের দেশে চলে গেছিল, কনয় বাড়ি ফিরে এসে যখন সৌজন্যকে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাতে দেখে, তখন ওর খুব খারাপ লাগে, বুঝে উঠতে পারে না কি করবে, শেষ-মেষ সৌজন্যার পিঠে আলতো করে হাত রেখে দেখেছিলো কনয়, "সৌ! এই সৌ!"
ঘুমন্ত চোখ মেলে কনয়কে দেখে সেদিন কোনো ভাবান্তর হয়নি সৌজন্যার, শুধু গলা যতটা সম্ভব নামিয়ে প্রশ্ন করেছিল, "কোথায় ছিলে? এতো রাত হল!"
সৌজন্যার পাশে চেয়ার টেনে বসে কনয় বলেছিলো, "সরি রে, আজ অফিসে একটু বেশীই কাজ ছিল"
কিছু আর বলেনি সৌজন্যা, অযথা অশান্তি করে লাভ নেই।
"ঠিক আছে খেয়ে নাও এবার, তোমার জন্য খাবার তৈরী করে রেখেছি"
"তুই খেয়েছিস?"
"হ্যাঁ খেয়েছি"
মিথ্যে কথা বলেছিলো সৌজন্যা। আসলে ওর খেতে ইচ্ছে করছিলো না, কি একটা কাঁটা মনের ভিতর আটকে দিচ্ছিলো ওর দম বন্ধ করে । দিনের পর দিন এমন জিনিস কার আর ভালো লাগে!
খেয়ে-দিয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েছিল কনয়, আর সৌজন্যা রাত একটা অবধি জেগে বিছানায় ওরই পাশে বসেছিল, দেখছিলো কনয়কে, কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ও!
এখন আসল সমস্যাটা হয়েছে বাচ্চাকে কেন্দ্র করে। বিয়ের দুবছর পরেও কনয় আর সৌজন্যা নিঃসন্তান। অনেক ডাক্তার দেখিয়েও কোনো লাভ হয়নি। প্রত্যকেই জানিয়ে দিয়েছে, সৌজন্যা আর মা হতে পারবে না।
খবরটা দুটো বাড়িতে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করে কনয় আর সৌজন্যার। জল এতোদূর গড়ায় যে শেষ-মেষ ডিভোর্স পর্যন্ত এগিয়ে যায়। সন্তান না হাওয়া যে এতো বড়ো পাপের একটা কাজ সেটা প্রথমে বোঝেনি সৌজন্যা। ভেবেছিলো ওর শারীরিক যতই ত্রুটি থাকনা কেন কনয় ওকে কোনোদিনও ভুল বুঝবে না, কিন্তু সেই কনয়-ই যখন পাকাপাকি ভাবে আলাদা থাকার কথা বললো তখন আকাশ থেকে পড়েছিল সৌজন্যা। ভাবতে পারেনি কনয় এই কথাটা বলবে। ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে সব কিছু আশা করা যায় কিন্তু অবহেলা আশা করা যায় না।
আজ সেই তারিখ, আজ কনয় আর সৌজন্যার ডিভোর্স। মানসিক ভাবে ওরা বিচ্ছিন্ন তো হয়েই গেছিল, এখন আইনি ভাবেও হয়ে গেল।
দুটো পরিবারকে সাক্ষী রেখে যেমন বিয়ের আগে পাকা কথা হয়, তেমনি নিজেদের পরিবারকে সাক্ষী রেখে কনয় আর সৌজন্যা সাইন করে দিলো ডিভোর্স পেপারে।
"ভালো থেকো কনয়, আর একজন মেয়েকে খুঁজে নিয়ো।", বলে এগিয়ে যাচ্ছিলো সৌজন্যা, হঠাৎ পিছনে ঘুরে কনয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, "ও হ্যাঁ, এবার বিয়ের আগে মেয়েকে জিজ্ঞেস করে নিয়ে যে মা হতে পারবে কিনা, ঠিক আছে!"
এটা অনেক বড়ো অপমান কনয়ের কাছে। কিন্তু কিছু বলার নেই ওর। ও জানে সৌজন্যা যেটা বলছে ঠিকই বলছে। তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে সৌজন্যার প্রস্থানটাই শুধু দেখলো কনয়; রাগে ওর ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেল।
বাড়িতে ফিরে সোজা নিজের ঘরে চলে গেল কনয়। বাবা-মায়ের সাথে কোনো কোথায় বললো না। ওর মা সবচেয়ে বেশী দুঃখ পেয়েছেন এই ঘটনাতে, চেষ্টা করেও কিছু করতে পারেননি। কি আর করবেন, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ে নিজেদের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিয়েছে, এতে কি বাবা-মায়ের হাত থাকতে পারে? আসলে ছেলে-মেয়ে বড়ো হলে, সাবলম্বী হলে কোথাও তাদের জীবনের একটা বিরাট অংশ থেকে বাবা-মা অনুপস্থিত হয়ে যান, তখন বাবা-মায়ের গুরুত্বটা যায় কমে।
নিজের ঘরে এসে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো কনয়। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত হয়ে বসে পড়লো বিছনায়। নিজের ভুলের জন্য নিজের উপরই প্রচুর রাগ হল ওর। মনে মনে ভাবলো, "এটা কি করলাম আমি? সৌজন্যাকে ছাড়া আমি বাঁচবো কি ভাবে!"
ভাবতে ভাবতে মুখে দুহাত চাপা দিয়ে কেঁদেই ফেলল কনয়। ওর চোখে জল যেন মনের গহীন অরণ্য থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইলো, চেষ্টা করেও থামাতে পারলো না কনয়।
কাঁদতে কাঁদতেই ঘর থেকে সোজা গ্যারেজে হেলমেট না পরেই বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো কনয়। পিছনে ওর মা জিজ্ঞেস করলেন, "কোথায় যাচ্ছিস কনয়? কিরে?"
কনয় কিছুই শুনতে পেলো না। সোজা বাইক ছোটালো সৌজন্যাদের বাড়ির দিকে। ওকে যত তাড়াতাড়ি হোক পৌঁছাতেই হবে সৌজন্যাদের বাড়ি। মস্ত বড়ো ভুল করে ফেলেছে কনয়, সৌজন্যাকে কষ্ট দিয়েছে, দিনের পর দিন ওর সাথে দুর্ব্যবহার করেছে। ওকে যেমন করে হোক সৌজন্যার কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে, সেটা পা ছুঁয়ে হলেও, ও কুণ্ঠাবোধ করবে না।
সৌজন্যা বলেছিলো আজ নাকি ওরা দিল্লি চলে যাবে। ওরা বেড়োনোর আগেই পৌঁছাতে হবে কনয়কে, না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। নিজের জিনিস হাতছাড়া হওয়ার জ্বালা যে কতটা ভয়ানক সেটা কনয় এখন বুঝছে। মানুষ যেমন দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝে না, কনয়ও তেমনি সৌজন্যা থাকতে বোঝেনি ওর মর্যাদা, আজ ও দূরে চলে যেতে বুঝতে পারছে, সৌজন্যা না থাকলে ও অর্ধমৃত।
রাসবিহারী ক্রসিং থেকে গড়িয়াহাটের দিকে যেতে গিয়েই বিপত্তিটা ঘটলো। তাড়াতাড়ি পৌঁছানোর চক্করে ডিসব্যালান্স হয়ে স্লিপ খেয়ে রাস্তায় পরে গেল কনয়। ছিটকে গেল কনয়। ওর বাইক সোজা গিয়ে লাগলো একটা ল্যাম্পপোস্টে আর কনয় আছাড় খেতে খেতে ফুটপাতের ধারে লুটিয়ে পড়লো। আশপাশ থেকে লোকজন এসে জড়ো হয়ে ঘিরে দাঁড়ালো কনয়কে। সামনের গড়িয়াহাট থানায় খবর দেওয়া হল। পুলিশ এসে হসপিটালে নিয়ে গেল ওকে।
ছেলের চিন্তায় সুতপা অস্থির হয়ে এদিক-ওদিকে পায়চারি করছিলেন, হঠাৎ ফোনের শব্দে তাঁর চমক ভাঙলো। তাড়াতাড়ি এসে ফোন ধরে বললেন, "হ্যালো"
ওপাশ থেকে এক অচেনা কন্ঠস্বর বললো, "আমি গড়িয়াহাট থানা থেকে বলছি! আপনি কি মিঃ কনয় বোস-য়ের বাড়ির লোক?"
"হ্যাঁ, আমি ওর মা, কিছু হয়েছে ইন্সপেক্টর?"
"আপনার ছেলে পিজি হসপিটালে ভর্তি। কিছুক্ষন আগে ওর গুরুতর একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে, আপনারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখানে চলে আসুন।"
"হোয়াট!", চিল্লে ওঠেন সুতপা। নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাড়াতাড়ি ফোন রেখে ডাকেন স্বামীকে।
"ওগো শুনছো, তাড়াতাড়ি পিজি হসপিটালে চলো। কনয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে।"
রজতাভ সোফায় বসে পেপার পড়ছিলেন, ছেলের এক্সিডেন্ট হয়েছে শুনে ওনার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। তাড়াতাড়ি একটা ফুলপ্যান্ট আর পাঞ্জাবী গলিয়ে সুতপাকে নিয়ে টেক্সসি করে রওনা দিলেন পিজির উদ্দেশ্যে।
"সৌজন্যাকে একটা ফোন করবো নাকি বলো তো", টেক্সিতে বসে রজতাভ স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন।
কাঁদতে কাঁদতে সুতপা মাথা গরম
করে বলেই দিলেন, "কোনো দরকার নেই, ওই মেয়েটার জন্যই আমার ছেলেটা আজ হসপিটালে ভর্তি। সব দোষ ওর। একদম ফোন করবে না। আমি আমার ছেলের ধারে কাছেও ওকে দেখতে চাই না।"
"বাচ্চাদের মতন করো না সুতপা। ওরা দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক, সিদ্ধান্তটা ওদের দুজনের ছিল। সৌজন্যাকে একা দোষ দিয়ে লাভ নেই। তাছাড়া সৌজন্যা কনয়ের স্ত্রী, ওর অধিকার আছে সব কিছু জানার"
"স্ত্রী ছিল, এখন আর নেই। ভুলে গেছো ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছে?"
"না ভুলি নি, কিন্তু সৌজন্যার জানাটা জরুরি, আমি ফোন করছি ওকে"
সুতপার কোনো কথা না শুনেই রজতাভ ফোন করলেন সৌজন্যাকে। চারবার রিং হওয়ার পর ফোনটা তুললো সৌজন্যা।
"হ্যালো বাবা! কেমন আছো তুমি?", সৌজন্যা কাঁদো কাঁদো হয়ে প্রশ্ন করে ফোনের ওপাশ থেকে। সৌজন্যার সাথে কনয়ের সম্পর্ক যেমনই হোক না কেন, কনয়ের বাবা-মাকে সৌজন্যা নিজের বাবা-মায়ের চেয়েও বেশী ভালোবাসে। ওদের সঙ্গে সৌজন্যার সম্পর্ক অত্যন্ত সুন্দর ও মসৃণ।
"ভালো নেই রে মা, তুই আমাকে ছেড়ে চলে গেলি, কি ভাবে ভালো থাকবো বল।"
কিছুক্ষন চুপ করে থাকে সৌজন্যা, তারপরে জিজ্ঞেস করে, "হঠাৎ ফোন করলে?"
"তোকে একটা খবর দেওয়ার আছে"
"কি?"
"কনয়ের গুরুতর এক্সিডেন্ট হয়েছে কিছুক্ষন আগে, ও হসপিটালে ভর্তি, আমি আর তোর মা যাচ্ছি পিজিতে, তুই পারলে চলে আয়ে, বুঝলি......"
কনয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে শুনে সৌজন্যা ভেঙে পরে, ফোন না রেখেই ছুটে বেড়িয়ে যায় নিজের ঘর থেকে।
বাইরে ওর মা-বাবা দিল্লি যাওয়ার জন্য লাগেজ গাড়িটা তুলছিলেন, সৌজন্যাকে ওভাবে আসতে দেখে দুজনেই রীতিমতো ঘাবড়ে যান। মায়ের কাছে এসে, জড়িয়ে ধরে, অঝোরে কেঁদে ফেলে সৌজন্যা। মেয়ের এমন অবস্থা দেখে ওর মা জিজ্ঞেস করেন, "সৌ! কি হয়েছে? এভাবে কাঁদছিস কেন মা?"
কান্নাভেজা কণ্ঠস্বরে সৌজন্যা বলে, "কনয়ের মেজর এক্সিডেন্ট হয়েছে মা, হসপিটালে ভর্তি ও"
ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে ওর মা জিজ্ঞেস করেন, "সর্বনাশ, কি করে? কোন হসপিটালে ভর্তি কনয়?"
"পিজি-তে"
বলে আবার মাকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে সৌজন্যা।
মেয়ের অবস্থা দেখে মনে মনে কষ্ট পায় ওর মা। স্বামীকে বলেন, "চলো না আমরা একবার ছেলেটাকে দেখে আসি"
"তোমার মেয়েকে যেই ছেলেটা এতটা কষ্ট দিয়েছে, আজ তার এক্সিডেন্ট হয়েছে শুনে তাকেই দেখতে যেতে চাও?"
"দেখো এখন এসব ভাবার বা বলার সময় নেই, কনয় আমাদের জামাই, আর তার চেয়েও বড়ো কথা সৌ ওকে পাগলের মতন ভালোবাসে, নিজের মেয়ের জন্য অন্তত চলো।"
"তোমরা প্রত্যেকে মিলে আমাকে পাগল করে দেবে, ঠিক আছে চলো।"
সৌজন্যারা সকলে মিলে গাড়ি নিয়ে রওনা দিলো কনয়কে দেখতে পিজি হসপিটালে।
কুঁড়ি মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেল সৌজন্যারা। হসপিটালের সামনে আসতেই দরজা খুলে ছুট মারলো সৌজন্যা কনয়কে দেখতে। সকলকে পাস কাটিয়ে দৌঁড়াতে গিয়ে আর এক বিপত্তি, সৌজন্যার পা গেল মুচকে। তীব্র যন্ত্রনা হতে থাকলো ওর, কিন্তু তবুও মনের জোরে, কনয়ের চিন্তায় উঠে খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়ে হাজির হল আই.সি.ইউ-র সামনে। দূর থেকে দেখতে পেল কনয়ের মা-বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। হাঁটতে খুব অসুবিধা হচ্ছে, তবুও কোনো ক্রমে ওদের সামনে গিয়ে ডাকলো সৌজন্যা, "বাবা!"
সৌজন্যার গলার আওয়াজ পেয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন রজতাভ, সৌজন্যার অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, "সৌ! কি হয়েছে তোর? খোঁড়াচ্ছিস কেন? পা লেগেছে নাকি? দেখি দেখি"
"ও কিছু না। কনয় কেমন আছে?"
"অপারেশন চলছে, কিন্তু একি তোর পা তো ফুলে লাল হয়ে গেছে, তুই এখানে বস আগে, সুতপা দেখো মেয়ের কান্ড, পায়ের ব্যথা নিয়ে তোমার ছেলেকে দেখতে এসেছে।"
এতক্ষন সুতপা কোনো কথা বলেননি, অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কিন্তু এবার সৌজন্যার দিকে ঘুরে ওর পায়ের দিকে তাকিয়ে রাগী রাগী হয়ে বললেন, "দেখি কি হয়েছে!"
সৌজন্যার পা বেশ ভালো ভাবেই মুচকেছে, ফুলে লাল হয়ে গেছে পুরো। ওর পায়ের দিকে তাকিয়ে খুবই কষ্ট হল সুতপার, যতই হোক সুতপাও সৌজন্যাকে নিজের মেয়ের মতন ভালোবাসেন। সৌজন্যার পাশে বসে সুতপা বললেন, "নিজের যত্ন রাখতে পারিস না, কনয়ের যত্ন কি ভাবে রাখবি?"
সুতপাকে পাস থেকে জড়িয়ে ধরে সৌজন্যা জিজ্ঞেস করে, "রেগে আছো মা আমার উপর?"
"হ্যাঁ, তোদের দুজনের উপরেই রেগে আছি"
কথাবার্তার মাঝে সৌজন্যার মা-বাবাও চলে আসেন ওখানে, রজতাভকে সৌজন্যার মা জিজ্ঞেস করেন, "কেমন আছে কনয়?"
"অপারেশন চলছে, কিন্তু মেয়ের অবস্থা দেখুন পা মুকিয়ে লাল করে ফেলেছে।"
"কিছু হয়নি আমার মা, বাবা এমনিই বলছে"
সৌজন্যার পাশে বসেন ওর মা। ডানপাশে ওর গর্ভধারিনী মা আর বাঁপাশে ওর শাশুড়ি মা। রজতাভ আর সৌজন্যার বাবা দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রত্যকেই অপেক্ষারত, ভাবতে থাকেন, "কখন বেড়োবেন ডাক্তার!"
আধঘন্টা পর নিভে যায় আই.সি.ইউ-র বাইরে জ্বলা লাল রঙের আলো। ডাক্তার বেড়িয়ে আসেন বাইরে। রজতাভ আগে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, "ডক্টর কেমন আছে কনয়?"
"হি ইস ফাইন, ডানহাত আর বাঁ পা ভেঙে গেছিল আর ব্রেইনের একটা জায়গায় আঘাত লেগে রক্ত জমাট বেঁধে গেছিল, আমরা সার্জারি করেছি এন্ড হি ইস ফাইন নাও।"
ডাক্তারের কথা শুনে হাফ ছেড়ে বাঁচলেন সকলে। অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে সৌজন্যা প্রশ্ন করলো, "আমি কি ওকে এখন দেখতে পারবো ডাক্তার?"
সৌজন্যার পা-য়ের অবস্থা দেখে আগে ডাক্তার বললেন, "একি আপনার পা-য়ের একি অবস্থা!"
পাশে দাঁড়ানো সিস্টারকে বললেন, "এনাকে এখুনি জেনারেল ওয়ার্ডে এডমিট করে দিন"
"আমাকে নিয়ে ভাববেন না, আপনি বলুন আমি কি আমার স্বামীকে দেখতে পারবো এখন?"
"আপনি ওনার স্ত্রী?"
"হ্যাঁ", গর্বের সঙ্গে বলে ওঠে সৌজন্যা।
অনেক কষ্টে আসতে আসতে এগিয়ে যায় আই.সি.ইউ-র সামনে, কাছের ভিতর দিয়ে দেখতে পায় বেডে শুয়ে আছে কনয়। হাতে, পায়ে প্লাস্টার, মাথায় ব্যাণ্ডেজ, মুখে অক্সিজেন মাস্ক, স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। কাঁচের দরজার উপর হাত রেখে নিজের অজান্তেই চোখ থেকে দু-চার ফোটা জল পারে যায় সৌজন্যার। অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। ভাবতে থাকে কনয়ের সাথে কাটানো সেইসব মুহূর্তগুলোর কথা। হঠাৎ-ই গা গুলিয়ে ওঠে সৌজন্যার, বমি-বমি ভাব অনুভূত হয়।
সুতপা সামনে এসে জিজ্ঞেস করেন, "সৌ! কি হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে?"
"বমি পাচ্ছে মা, বাথরুমে নিয়ে চলো আমায়"
সুতপা আর সৌজন্যার মা মিলে সৌজন্যাকে বাথরুমে নিয়ে চলে যায়। রজতাভ আর সৌজন্যার বাবা দাঁড়িয়ে শুধু দেখতে থাকেন ওদের কান্ড। দুজনের মুখেই হালকা হাসির রেখা ফুটে ওঠে, মনের ভিতরে খুশির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ওনারা জানেন এর মানে কি। তাহলে কি শেষ-মেষ মা হতে চলেছে সৌজন্যা? তাহলে কি আবার মিলন হবে কনয় আর সৌজন্যার? সময়-ই বলে দেবে।