💔বিয়ের চিঠি💔

"বল্লে না তো সুমিত একবারও , ভালোবাসি বলে, আর আজ দেখো?"-- চুলের খোঁপা ঠিক করতে করতে তৃষা বলে উঠলো।

আজ তৃষার বিয়ে। পাত্র বেশ অবস্থাসম্পন্ন ঘরের। দেখতে টেখতেও খারাপ নয়। তৃষার প্রথমে মত ছিলো না একদমই, কিন্তু কিছুটা বাবা মায়ের চাপে, আর অনেকটাই সুমিতের উদাসীনতার কারণে বাধ্য হয়ে হ্যাঁ করেছে।

সুমিত আর তৃষা কলেজ একসাথেই। খুব ভালো ছাত্র ছিল সুমিত। আর তৃষা যাকে বলে পুরো উলটো, খালি ক্লাস পালানোর ছলে থাকতো। যাইহোক, তৃষা ছিলো ডাকসাইটে সুন্দরী, তার সাথে অত্যন্ত ধনী। তো এই তৃষার সাথে সুমিতের হটাতই বন্ধুত্ব, নবীনবরণ উৎসবে ডুয়েট গাইতে গিয়ে। তৃষার "সেদিন দুজনের" সাথে সুমিতের গিটার যেনো অব্যেক্ত ছন্দে মিশে গিয়েছিল সেদিন। তারপর কলেজ ক্যান্টিন, একসাথে বাসে আশা যাওয়া, পিকনিক-- আসতে আসতে এইভাবেই প্রগাঢ় হলো বন্ধুত্ব।

তৃষা তো কবেই সুমিতকে মন দিয়েই আছে, বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু সুমিত নির্বিকার। তার একটাই লক্ষ্য, কলেজ পাশ করে চাকরি, আর তারপর মায়ের হার্টের অপারেশন।

তৃষার বিয়েতেও আসতে চায়নি সুমিত। তবুও এলো। কারণ যেদিন হটাৎ তৃষার বিয়ের চিঠি পেলো সুমিত, হটাতই গুমরে উঠল যেনো বুকটা। তৃষা চলে যাবে অন্য কারো ঘর, হয়ে যাবে সে চিরদিনের মত পর। আর রাতে মন খারাপ লাগলে ঘেনঘেন করতে তৃষাকে ফোন করতে পারবেনা, আর তাকে নিয়ে চিনার পার্কের ফুচকা খেতে পারবেনা, আর অন্যদের নিয়ে খিল্লি ওড়াতে পারবে না -- আমি কি তৃষাকে ভালোবেসে ফেলেছি, মনে মনে ভাবে সুমিত। ইচ্ছে হয় তৃষাকে বলতে, দাড়া তৃষা, তুই আমার, সবসময় সব ভাবে , সব কাজে আমার, আমার মন খারাপের ঠিকানা তুই, মন ভালোরও তুই। বিয়ের চিঠিতে ভুল নাম লিখেছিস, পাল্টা, তাতে আমার নাম হবে। পরক্ষনেই নিজের ঘরের দিকে তাকায়,চাঁদের পলেস্তারা খসে পরবে , পুরো রড বেরিয়ে আছে, ঘর সব কিরকম ভিজে স্যাঁতসেঁতে, মার হার্টের অবস্থাও ভালো না, ডক্টর অবিলম্বে অপারেশন করতে বলেছেন, বাবাও বয়সের ভারে ন্যুব্জ। দুজনেই কেমন সারাদিন জুলজুল চোখে সুমিতের দিকে তাকিয়ে থাকে, যেনো এই আশায়, যে ছেলে তাদের সব ঠিক করবে, ভালো রাখবে। সেই ডাক কি উপেক্ষা করতে পারে সুমিত? তার উপর সে নাহয় সহ্য করে নেবে কষ্ট, পারবে কি তৃষাকে এই কষ্টের ভাগীদার করতে, না কখনোই না, কোনোদিনই না। দাঁতে দাঁত চেপে, চোখের জল আটকিয়ে বিয়ের চিঠিটা জ্বালিয়ে দেয়, সেই জ্বলার সাথে নিজেরও ভালোবাসা জ্বালায়।

আজ তৃষা সামনে। সুমিতের হটাতই কেমন দুর্বল লাগে নিজেকে। মনে হয় জড়িয়ে ধরে একবার, আপন করে , বুকের মাঝে। মনে হয় তৃষার ফর্সা মুখটাকে আলতো করে , তার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে ," ভালোবাসি, হ্যাঁ তৃষা, তোমাকে আমি ভালোবাসি", ইচ্ছে করে তৃষার কানে আলতো করে লাগিয়ে দেই সে তার ভালোবাসার গোলাপ। ইচ্ছে করে তৃষার নরম গোলাপী ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে, আয় আমার কাছে আয়, আমার বুকে আয়, আমার সাথে আয়, আমার হাতটা ধর, আমার চোখে তাকা। দেখ , আর শুষে নে আমার নিঃশ্বাস - দেখ আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে উচ্চারিত হচ্ছে তোর নাম -- বলছে তৃষা , আমি তোমাকে ভালোবাসি।

সামলায় সুমিত নিজেকে। তাকায় তৃষার দিকে, বলা ভালো তৃষার সিথির দিকে। এখনো যে খালি, কিন্তু সময়ও আর নেই। জীবন নির্মম।

তবুও হেসে বলে " কেনো বলিনি ভালোবাসি, তা যদি বুঝতি, তাহলে জুলিয়েট হতি, তৃষা না।" বলে হেসে উঠে। তৃষা ও হাসে।

"এই তৃষা মা, কোথায়, লগ্নর সময় হয়ে আসছে, আয়, এই যে সুমিত, এসেছো বেশ, তা তুমিই নিয়ে আসো বাবা তোমার বান্ধবীকে। আমি একটু ওদিকটায় দেখি, এই তোরা সব কোথায়? এই? কই গো তুমি? " -- তৃষার বাবা একশ্বাসে কথাগুলো বলে চলে যায়।

" এই ধর, আমাকে " বলে তৃষা একটানে সুমিতের হাত ধরে এগিয়ে যায়। হালকা কাঁপে সুমিতের বুক।

 মণ্ডপের কাছে বরের হাতে তৃষার হাত দেয় সুমিত। হটাতই দেখে তৃষা আনমনে তার দিকে তাকিয়ে আছে ।

 সুমিত : "কিছু বলবি আর? এখন তো শোনার লোক ওদিকে "?

তৃষা (হালকা হাসি দিয়ে) " খেয়ে যাস কিন্তু ভালো করে" -- বলে বরের হাত ধরে মুখ ঘুরিয়ে নিল।

মুখ ঘুরিয়ে নিল সুমিতও। খেয়ে তো সে যাবেই। বিয়ের আসরে, বিয়ের চিঠিতে সে তো নিমন্ত্রিত।

আর জীবনের লড়াইয়ে আমন্ত্রিত।