বিন্দুমাসির আত্মসম্মান
বিন্দুমাসির আত্মসম্মান
অভিরূপ অফিস ফেরত পথে চপ কিনতে গেলো। বাংলা ও বাঙালীর জাতীয় খাদ্য মুড়ি ও চপ। দোকান বন্ধ। এরকম তো হয় না। বিন্দু মাসি কখনো দোকান বন্ধ রাখে না। অভিরূপদের অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ চপের দোকান হল- "বিন্দু মাসির চপ কারখানা।" বিন্দুমাসির আসল নাম বিন্দি। একবার বিন্দুমাসির হাতের চপ খেলে স্বাদ ভোলা মুশকিল। অভিরূপ জানতে পারলো বিন্দুমাসি অসুস্থ। পনেরো দিন ধরে দোকান বন্ধ। সবাই জানে। অভিরূপ বাইরে ছিলো বলে জানতে পারেনি। সেই কবে থেকে বিন্দুমাসির হাতের চপ খাচ্ছে। চপের সাথে সাথে বিন্দুমাসিকে ভালোবেসে ফেলেছে অভিরূপ। হাতের রান্না ভালো হলে রাঁধুনিকে ভালোবাসতে সবাই বাধ্য হয়, পাড়ার সবাই বিন্দুমাসিকে ভালোবাসে।
বিন্দুমাসি সংসারে একা মানুষ। অভিরূপ প্রথম দিন থেকেই বিন্দুমাসিকে বৃদ্ধা অবস্থায় দেখছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, বিন্দুমাসির আসল নাম কেউ সহজে বলতে পারবে না, সবাই বিন্দুমাসি বলে। সন্ধ্যে হয়ে গেছে, না হলে এখনই অভিরূপ বিন্দুমাসির বাড়ি যেতো। অভিরূপ জানে বিন্দুমাসি দমদম দুর্গানগর রেল লাইনের পাশের বস্তিতে থাকে। অভিরূপ পরিকল্পনা করলো আগামীকাল সকালে বিন্দুমাসির বাড়ি যাবে।
অভিরূপকে সকালবেলায় খুব বেশি খোঁজাখুঁজি করতে হল না কারণ বিন্দুমাসির ঘর সবাই চেনে। বিন্দুমাসির ঘরে গিয়ে বসলো অভিরূপ। কয়েকদিন আগে হাসপাতাল থেকে এসেছে বিন্দুমাসি, শরীর দুর্বল, এই অবস্থায় রান্না ঘরে গেল, অভিরূপকে চা করে খাওয়াবে। অভিরূপ বারংবার অনুরোধ করলো কিছুতেই কোন কথা শুনলো না। অবশ্য ভালোবাসার সামনে মাথা নত করা ছাড়া অন্য পথ থাকে না।
চা পান করতে করতে অভিরূপ জিজ্ঞাসা করলো "দোকান তো বন্ধ, তোমার চলছে কিভাবে ?"
বিন্দুমাসি হেসে উত্তর দিলো "এখন অন্য কাজ করছি, ভাড়ার দোকান ছেড়ে দিয়েছি, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আওতাভুক্ত হয়ে বলপেন তৈরি করছি, আর কোনদিন চপ ভাজতে পারব না, ডাক্তার মানা করেছে।"
বিন্দুমাসি ঘরের ভিতর থেকে বলপেনের প্যাকেট নিয়ে এলো। বিন্দুমাসি আরও জানালো "বসে বসে কাজ অসুবিধা হয় না, যতদিন পারবো কাজ করবো। একদম অক্ষম হয়ে গেলে তখন ভিক্ষে করবো, তার আগে নয়।"
অভিরূপ হাজার খানেক টাকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হেসে ফেরত দিল বিন্দুমাসি।
অভিরূপের মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করে বললো "এখন না বাবা, যেদিন দেহ আর পারবে না সেদিন তো ভিক্ষে করতেই হবে, তখন সানন্দে নেবো।"
অভিরূপ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে বললো "এটাকে ভিক্ষা মনে করছো কেন মাসি ?"
বিন্দুমাসি হাসতে হাসতে বললো "কাজ না করে কিছু পাওয়াকে ভিক্ষেই বলে। আমার কাছে লক্ষী ভান্ডার প্রকল্পও ভিক্ষাসম, আমি সেটাও গ্রহণ করিনি।"
অভিরূপ চমকে উঠলো, অভিরূপের এই মূহুর্তে নিজেকে ভিক্ষুক মনে হচ্ছে। প্রশাসনের ভালো পদে থেকে মোটা মাইনে পাওয়া সত্ত্বেও হাত পেতে ঘুষ নেয় অভিরূপ। যে নিজেই ভিক্ষুক, সে কিভাবে অন্যকে সাহায্য করবে ?
ভিক্ষুক কি কখনো দান করতে পারে ?
