Subhadip Chakraborty

Drama Crime Thriller

3  

Subhadip Chakraborty

Drama Crime Thriller

বাতাসে বারুদের গন্ধ

বাতাসে বারুদের গন্ধ

3 mins
338



এঁদো গলির মুখ থেকে ডান দিকে ঘুরেই রাই হঠাৎ লক্ষ্য করলো রোজকার মতো আজও ছেলেটা ওর পিছু নিয়েছে। এই নিয়ে টানা এক সপ্তাহ হল, যখনই রাই কলেজে যাবার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে গলি থেকে বড় রাস্তায় ওঠে, তখনই রোগা ছিপছিপে চেহারার ছেলেটা ওর পিছু নেয়। দু একবার, রাই এর নাম ধরে ডাকাডাকিও করেছে ছেলেটা। রাই মাঝেমধ্যে পাড়ার মোড়ে বিমলদার চায়ের দোকানেও ছেলেটাকে বসে থাকতে দেখেছে।

আজ ছেলেটা রাই এর একেবারে গায়ের উপর উঠে আসতে চাইছে। তাই খানিকটা বাধ্য হয়েই বিগত সাত দিনের ট্রেন্ড ভেঙে দু'তিন সেকেন্ডে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াল রাই।

- কি ব্যাপার আপনার? কয়েকদিন ধরেই দেখছি, রোজ আমার পেছনে আসছেন। কিছু বলার থাকলে সরাসরি বলুন। এইভাবে পিছু নেওয়ার অর্থ কি?

কিছুটা ঝটকা খেয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে ছেলেটি বলল,"আমি বিশাল রায়। আদর্শ পল্লীতে থাকি। তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে তাই বন্ধুত্ব করতে চাই।"

- প্রথমত অচেনা একজন মেয়েকে প্রথম সাক্ষাতে 'আপনি' না বলে 'তুমি' বলাটা আমি একদমই পছন্দ করছি না। দ্বিতীয়তঃ আপনার সাথে আমার বন্ধুত্ব করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। আমি মনে করি বন্ধুত্বের তাগিদটা দুই পক্ষেরই থাকা দরকার, তবেই বন্ধুত্ব সম্ভব হয়।

- ছোটবেলা থেকেই আমি যা চেয়েছি, যখন চেয়েছি, সেটা আদায় করে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না।

এই বলে বিশাল, রাই এর দিকে একটা কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি ছুঁড়ে দিয়ে বড় রাস্তায় উঠে নিমেষে অদৃশ্য হয়ে গেল।

কলেজের কোনো ক্লাসেই আজ আর মনটা বসাতে পাড়লো না রাই। থেকে থেকেই, ছেলেটার অসভ্য ইঙ্গিতটা চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকলো। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ঋতুকেও ঘটনাটা বলবে বলবে করেও বারবার কোন একটা অদৃশ্য দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে ওকে।

-কি রে তোর কি হয়েছে? ঠিক মতো কথা বলছিস না। ক্লাসেও অন্যমনস্ক হয়ে আছিস।

ঋতুর কথার কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না, রাই। মনের কোণে অচেনা একটা রাগ কোত্থেকে নেমে এসে একরাশ বিরক্তির জন্ম দিয়েছে।

কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরেই ঘটনাটা বাবাকে খুলে বলল রাই। রাই এর বাবা রাকেশ সামন্ত। বাড়ির পাশেই ওনার মুদির দোকান। শান্ত, ভদ্র, মিশুকে স্বভাবের রাকেশ বাবুকে পাড়ার সবাই খুব ভালোবাসে ও মান্যিগন্যি করে।

মেয়ের কথায় খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন বছর ষাটেকের বৃদ্ধ। দিনকাল যে মোটেই ভালো নয়, তাই দেরি না করে সন্ধ্যেবেলায় মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন রাকেশ বাবু। গন্তব্য, বারুইপুর থানা। থানায় গিয়ে বিশালের নামে এফআইআর করে বাবা ও মেয়ে যখন থানা থেকে বাইরে এসেছেন তখন অন্ধকার নেমে এসেছে।

নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে ওরা বড় রাস্তার একটা ধার দিয়ে ধীর পথে হেঁটে হেঁটে বাড়ির দিকে এগিয়ে চললো। রাস্তার এই দিকটা আজ যেন একটু বেশিই থমথমে আর কোলাহলহীন। রাই ও রাকেশ বাবু দুজনই নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে এগিয়ে চলেছে। হঠাৎ পেছন থেকে সাদা রঙের একটা অল্টোগাড়ি এসে ওদের অতিক্রম করে ঠিক ওদের সামনে পথ আটকে দাঁড়ালো। গাড়ি থেকে কালো মুখোশ পরা বছর কুড়ির দুটো ছেলে নেমে এলো। গাড়ি থেকে নেমেই তারা জোর করে রাইকে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করতে লাগলো। রাই এর চিৎকারে ততক্ষণে চারপাশের থমথমে ভাবটা মুহুর্তের মধ্যে পাল্টে গিয়েছে। রাকেশ বাবু, ছেলে দুটোর হাত থেকে মেয়েকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু বছর ষাটের একজন বৃদ্ধ, বছর কুড়ির যুবকের সাথে অসম এই যুদ্ধে কি করে পেরে উঠবে?

'গুরুম্'।

হঠাৎ একটা গুলির শব্দ। রাকেশ বাবুর রক্তাক্ত প্রাণহীন দেহটা গাড়ির পাশেই রাস্তার উপর লুটিয়ে পড়লো। বাবাকে ওইভাবে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে দেখে রাই নিজেকে আর সামলাতে পারল না। ছেলেদুটো ওকে জাপ্টে ধরে জোর করে গাড়িতে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছে। ওরা যখন টানতে টানতে রাইকে গাড়ির ভিতরে ধাক্কা দিতে যাবে, ঠিক সেই মুহুর্তে আরেকটি গুলির শব্দ।

দুজন মুখোশঢাকা অচেনা ছেলেদের মধ্যে রোগা ছিপছিপে গড়নের ছেলেটির রক্তাক্ত দেহ তখন মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। একটু ছটফট করে শান্ত হয়ে গেল ছেলেটি। মুখের কালো মুখোশটা কিছুটা আলগা হতেই রাস্তার বাতি স্তম্ভের আলোতে বিশালের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। দ্বিতীয় জন ততক্ষনে গাড়িতে উঠে চম্পট দিয়েছে। রাই এর হাতে তখন বিশাল এর থেকে ছিনিয়ে নেওয়া পিস্তলের মুখ দিয়ে বারুদের গন্ধ বেরোচ্ছে। সদ্য বাবা হারানো মেয়ের চিৎকারে চারিদিকের থমকে থাকা অন্ধকার ক্রমশঃ ফিকে হয়ে আসছে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama