Ahana Dasgupta

Romance Tragedy Fantasy

3.5  

Ahana Dasgupta

Romance Tragedy Fantasy

বাস্তবের মার

বাস্তবের মার

3 mins
428


এক


“মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুমটা ভাঙল তনুজার। রাত্রি তিনটে পনেরোয় চৈতির ফোন! ঘুমচোখে রিসিভ করল, “কী রে! এত রাতে ফোন কেন?” বিপরীতে ভেসে আসা কথাগুলো শুনে মুহূর্তের জন্য ওর পায়ের তলার মাটিটা যেন সরে গেল! তনুজা কি সব ঠিক শুনলো? ও কি স্বপ্ন দেখছে? চিমটি কেটে দেখলো, না: এটা স্বপ্ন নয়। মেরুদন্ড দিয়ে যেন এক ছলকা কষ্টের ঠান্ডা শিউড়ন বয়ে গেলো। নানাবিধ চিন্তা বুকের কাছে পাথর হয়ে জমতে থাকলো, চোখের জলের সাথে সেই চিন্তা দলা পাকিয়ে গাল বেয়ে নেমে এলো। আকাশপাতাল চিন্তার ঘোরে তনুজা কোনোরকমে মানিব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে দু-কামরার ফ্লাট থেকে ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে এলো। পার্কিং লটে পৌঁছে সে তার গাড়িতে কোনোরকমে উঠে অনভিজ্ঞের মতো গাড়ি চালাতে শুরু করলো। কলকাতার শহর হওয়া সত্ত্বেও রাত্রি তিনটে আঠাশ মিনিটে রাস্তা একেবারে পাণ্ডববর্জিত। তনুজার গাড়ি দমকা হাওয়ার মতো রাত্রির অন্ধকার চিরে ছুটে চললো একটি প্রাইভেট কোম্পানির গোপন সাইন্স ল্যাবে। গাড়িতে এসি চলা সত্ত্বেও কপালে জমা বিন্দু বিন্দু ঘামকে তনুজা অনুভব করছিল। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যে তনুজা একজন জীববিজ্ঞানী।


দুই


"চৈতি" গলা ছাড়িয়ে তনুজা চিৎকার করে উঠলো, "তুই কোথায়? আমি এসে গিয়েছি..... " "তনুজা, আমি চৈতি বলছি ", করিডোরের স্পিকারে বেজে উঠলো " তুই তাড়াতাড়ি এম-এম-ওয়ান-সেভেন রুমে চলে আয়, আমি এখানেই রয়েছি, এই ইনস্টিটিউটের অন্যান্য সদ্যসরাও এই ঘরেই রয়েছে ।" দ্বিতীয় চিন্তা না করেই তনুজা তাড়াতাড়ি পা চালালো উল্লিখিত ঘরের দিকে। অজস্র ভাবনায়ে তার ক্ষেপে ক্ষেপে গা কাঁটা দিয়ে উঠছে, অবশ হয়ে আসছে তার শরীর। মিনিট এক হাঁটার পর সে ঘরটিতে পৌঁছালো। চৈতি সেখানেই অপেক্ষা করছিল। চৈতি এবং গোটা টিমকেই বেশ কর্মব্যস্ত দেখাচ্ছে,এবং সেইটাই স্বাভাবিক। ঘটনাটা সংক্ষেপে বললে এই দাড়ায় যে শহরের এক বড়ো শিল্পপতির ছোট মেয়ে কিছুদিন আগে মারা যেতে বসে। ডাক্তারেরাও জবাব দিয়ে দিয়েছিলো। একদিকে সন্তানের প্রতি মায়া , অপরদিকে ধনের অহংকারে এই গোপন বিজ্ঞানসংস্থার সাথে যোগাযোগ করে সেই শিল্পপতি তার মেয়েটিকে বাঁচিয়ে তোলার আর্তি জানায়। এই সংস্থা প্রথমে নারাজ থাকলেও নানারকম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর টাকার প্রয়োজনে রাজি হয়ে যায়। তনুজা নিজের চাকরি বাঁচানোর দায়ে এই অদ্ভুত পরীক্ষায় সামিল হয়। এতদিন পরীক্ষার ধন্নাত্মক ফল পাওয়া যাচ্ছিলো, কৃত্তিম পদ্ধতিতে তার শরীরে সংবহন চালানো হচ্ছিলো । কিন্তু আজ হঠাৎ অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। মেয়েটির ব্লাড স্যাম্পলে দেখা যাচ্ছে যে ওকে ইমিউনিটি প্রদানকারী কোষেরা একে ওপরের সাথে বিক্রিয়া করছে, যার ফলে মেয়েটির আর বাঁচার সম্ভবনা নেই। তনুজার কেমন যেন এক মায়া পড়ে গিয়েছিলো এই মেয়েটির প্রতি। মেয়েটি ক্ষীণদৃষ্টিতে তনুজার কাছে যেন তাকে মরতে দেবার আবেদন জানাতো। "তাহলেতো এবার আমাদের এই দুঃখের কাজ সম্পন্ন করতে হবে" ভাঙা গলায় চৈতি বলে উঠল, "মেয়েটির অন্তত শান্তিতে মরে যাবার অধিকার আছে"। "ওর শরীরে তাহলে নিউরোজিন ওষুধটা ইঞ্জেক্ট করতে হবে" ধরা গলায় তনুজা বলে উঠল, "মরার আগে নিউরোট্রান্সমিটারের সাহায্যে ওর জীবনের সুখের মুহূর্তগুলো মনে পড়বে, এবং ও বোঝার আগেই ওর মৃত্যু হবে "। "ওর পরিবারের কাছ থেকে সম্মতি নেওয়া হয়ে গেছে, তারা তাদের আদুরে মেয়ের ট্রাজিক পরিণতি দেখতে চাননা ", কাঁপা হাতে ওষুধ পুশ করতে করতে চৈতি বলে উঠল। মিনিট সাতেক পরেই মেয়েটির মুখ থেকে ছিটকে একদলা জমাটবাঁধা রক্তপিন্ড বেরিয়ে এলো এবং সে শেষ নিঃশাস ত্যাগ করলো। কয়েকফোঁটা রক্ত তনুজার মুখমণ্ডলে ছিটকে এসেছে, কয়েক ফোঁটা কাঁচের জানলায়। জানলায় তখন এক নতুনদিনের সূর্যের আলো এসে পড়েছে। কয়েকফোঁটা রক্তই যেন তনুজা, চৈতি ও পুরো টিমের মুখে বাস্তবের থাপ্পড় মেরে গেলো।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance