অ্যাক্সিডেন্ট
অ্যাক্সিডেন্ট


বাড়ি ফিরতে একটু দেরী হয়ে গেল কাল। মা সেই নিয়ে অনেকক্ষণ রাগারাগি করে গেল! আমি তো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি। এরকম ওভাররিয়্যাক্ট করার কী আছে! পেট ভারী ছিল এমনিতেই। অফিসে একটা ছোট্ট পার্টি ছিল তাই। হালকা একটু ওয়াইন খেয়েছিলাম। তবে ওটুকুতে আমার কিছুই নেশা হয়না কখনো। তবুও মা রাগ করবে তাই নিজেই খাবার বেড়ে খাওয়াদাওয়া করে ঘুমোতে গেলাম তাড়াতাড়ি। আজ মা'কে নিয়ে শপিং যাওয়ার কথা।
সকাল সকাল বাড়িতে একটা ফোন এলো। একটা লাশ পাওয়া গেছে। সবাই বলছে নাকি এই বাড়ির কেউ! এই বাড়ির কেউ মানে? তাহলে কি গ্রাউন্ড ফ্লোরের ভাড়াটেদের কেউ? ছুটে গেলাম মায়ের কাছে। মা বললো, "এক্ষুণি বেরিয়ে পড়ছি। এই মোড়ের মাথায় হয়েছে অ্যাক্সিডেন্ট। পুলিশের থেকেও বড় কথা হলো ওরা আমাদের পরিবারের মতো।" হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পড়লাম দুজনে।
চৌমাথার মাঝখানে স্ট্যাচুটার চারদিকে রেলিং দিয়ে ঘেরা। সেখানেই একটা সাদা রঙের গাড়ি ভেঙে বেশ খানিকটা ঢুকে গেছে। আমার গাড়ির মতো সেম মডেল! চারদিকে লোকজন জমে আছে। পুলিশ গাড়িগুলোকে অন্যদিক দিয়ে পাশ করাচ্ছে। আমরা আসতেই সবাই আমাদের দিকে অদ্ভুতভাবে তাকালো! ভিড় খানিকটা ফাঁক হয়ে আমাদেরকে ভিতরে যাওয়ার রাস্তা করে দিল। আমরা এগিয়ে গেলাম ভিতরের দিকে। লোকে আমাদের দিকে ভুত দেখার মতো তাকিয়ে রইল!
চারদিক হঠাৎ নিস্তব্ধ হয়ে গেলো! একটা স্ট্রেচারের উপর শোয়ানো একটা রক্তমাখা মৃতদেহ। ছোপ ছোপ রক্ত পড়ে আছে এখানে সেখানে। একটা পা অদ্ভুতভাবে ভেঙে উল্টে আছে। মুখটা বীভৎসভাবে থেঁতলে গেছে। মা মুখে কাপড় চাপা দিলো। আমার চোখ তার মাথা থেকে গলা বুক হয়ে হাতের দিকে নেমে এলো। আঙুলে লাগানো হুবহু আমার মতো একটা আংটি। মা ফ্যাকাশে চোখে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো, "খোকা!" আমি বললাম, "মা..." মা আমার দিকে ঘুরেও তাকালো না!
ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে বিছানায় উঠে বসে পড়লাম আমি। বাবা ডাকছে। "বাবা, সাড়ে ন'টা বাজে। তোর মা সেই সাতসকালে পাঁচুকে নিয়ে পুজো দিতে বেরিয়েছে। এখনো ফিরে এলো না। ফোন রিসিভও করছে না! একটা কল করে দ্যাখ না।" বললাম, "করছি বাবা।" বাথরুমে গিয়ে চোখেমুখে জল দিচ্ছি। হঠাৎ ঘরের ল্যান্ডফোনটা বেজে উঠলো...