Toufik Laskar

Drama

3  

Toufik Laskar

Drama

রেশ রেখে যাও

রেশ রেখে যাও

2 mins
16.9K


জানলা খোলা। সারারাতের বৃষ্টিভেজা শিরশিরানো হাওয়া থামেনি এখনও। এই অগোছালো বিছানা। ক্লান্ত ল্যাপটপ। দোর খোলা আলমারি। ছুঁড়ে ফেলা জামা, গেঞ্জি, মেরুদন্ডের ব্যথা, বিছানার চাদর, বইপত্র সব মিলেমিশে একটা নিজস্বতা তৈরি হয়েছে যেন। এককালে ঘুম আসত না এই ঘরে। মানুষ কতকিছু সময়ের সাথে সাথে আপন করে নেয়।

আসন্ন ভোরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সিগারেটের প্যাকেটের দিকে হাত গেলো। শেষ। সুতরাং বেরোতে হবে। একটা পড়ে থাকা গেঞ্জি গলায় গলিয়ে, চাবি, হেলমেট হাতে দরজা খুলি। হুহু করে হাওয়া লাগে গায়। লাইটের সুইচ বন্ধ করতেই নীলচে হয়ে ওঠে ঘর। আকাশটায় যেন উড়ন্ত মেঘের স্ক্রীনসেভার আটকে গেছে কেউ।

ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে হল দিয়ে হাঁটতে থাকি লিফটের দিকে। একটা মৃদু হাসি আসে মনে। এক বান্ধবী যতবার এসেছে এখানে, প্রতিবার বলেছে, "সত্যি? এটাই সেই জায়গা? এখানেই সেই বাচ্চা মেয়েটিকে মাঝরাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়?" আমি বলি, "হ্যাঁ।" লিফটের দরজা খুলে যায়। ঘুমন্ত সিক্যুরিটির লোকটার দিকে দেখে মায়া হয়। পার্কিং এর দিকে এগিয়ে যাই তারপর। কী মহিমায় কেজানে এই জায়গাটায় সবসময় এত হাওয়া আসে! তালগাছের মতো দেখতে ছোট ছোট গাছগুলো অবিরাম পাতা নাড়িয়ে নাড়িয়ে অদ্ভুত এক সুর তোলে। কৈশোরে এক হাদীসে পড়েছিলাম জান্নাতে গাছের পাতারা একধরণের সুর তুলে চিত্ত বিনোদন করবে।

শুধুমাত্র এই সময়গুলোতে আমার বাইকের শব্দটা ভালো লাগে না। একটু নিস্তব্ধ কিছু যদি থাকতো... কিন্তু ভাবলে দেখা যায় সারাটা মানবজাতির ইতিহাসে এমনটাই হয়েছে। একটা সবুজ, নিস্তব্ধ পৃথিবীর মাঝে মানুষেরা একে একে শব্দ গড়েছে, শান্তি ভেঙেছে আর অভ্যস্ত হয়েছে নিজেরাই। আমিও একদিন অভ্যস্ত হয়ে যাব।

একটা ভাঙাচোরা, জল জমা, এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে বাইক নিয়ে এগিয়ে চলি। ফ্লাইওভার ক্রস করার সময় তীব্র হাওয়া এসে গায়ে লাগে। একটু শীত শীত ভাব করে যেন। অদ্ভুত এই জায়গাটা। একদিকে একটা শহর তীব্র গর্জনে বেড়ে উঠছে ক্রমশঃ। আরেকদিকে বর্ষায় ফুলে ফেঁপে ওঠা সবুজ জুড়িয়ে দিচ্ছে চোখ। দুটো রাস্তা এসে একে অপরকে ছুঁয়ে এখান থেকে চলে গেছে নিজের নিজের মতো। হয়তো যখনই দুটো জীবনপথ একে অপরকে ছুঁয়ে যায়, তখন চারপাশ এমনই সবুজ হয়।

এই ভেজা ভেজা কালচে রাস্তা। আবার ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হচ্ছে। বাকিটা জোরে চালিয়ে পৌঁছুই কাকার চায়ের দোকানে।

"কাকা, একটা চা আর একটা মার্লবোরো দিন।"

"বাবা এখন বাড়ি যাচ্ছ? সারারাত কাজ ছিল নাকি?"

"কাজ ছিল। তবে বাড়িতেই। সেখান থেকে এলাম।"

"আচ্ছা, এই নাও।"

বৃষ্টিটা বেশ জোরেই এল এবার। ত্রিপলের ছাউনির ভিতর দিয়ে জল পড়ছে টপটপ করে। মনটা একটু ভারী হয়ে এলো। আসার সময় সবুজের মাঝে রাস্তার ধারে দেখলাম বোর্ড টাঙানো: "দিস সাইট হ্যাজ বিন অ্যালোকেটেড টু পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক।" আরো এরকম বেশ কয়েকটা। ভেঙে পড়ছে পুরোনো কংক্রীট। গড়ে উঠছে নতুন। মাঝখান থেকে সবুজগুলো চলে যাচ্ছে সব। প্রতিবারের মতো এবারও বলতে ইচ্ছা হলো, "প্রিয়তমা, স্মৃতি রেখে যাও।"

"প্রিয়তমা, রেশ রেখে যাও।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama