সরষে ফুল
সরষে ফুল
অবশেষে আসে সেই বহু প্রতীক্ষিত মহোৎসব;
শহরটাকে হঠাৎ ভীষণ জ্যান্ত মনে হয়,
পুজারি ঘর ঘর এসে নৈবেদ্য দিয়ে যায়
রঙের মাখামাখিতে শহরটা অচেনা লাগে।
কাছে-দূরে ডায়ে-বায়ে মাইক বেজে ওঠে,
ঢাক পিটিয়ে যায় ভন্ড রাজার নষ্ট সিপাই;
আরো একবার বস্তাপচা দূষিত প্রবাদে
আমাদের দুই কানে তালা ধরে।
তারপর মহাসমারোহে পুজো শুরু হয়,
মাথার উপর শরতের নীল সাদা আকাশ;
তারাজ্বলা রাতে চাষী-মজুরদের হাসি শোনা যায়,
পুজোর থালিতে রাখা হয় একশো আটটা ফুল।
মণ্ডপে মণ্ডপে কৃতাঞ্জলি মানুষের ভিড়
আর সেই একই আবহমান মন্ত্রপাঠ।
তুমি-আমি-সবাই চরণামৃত ভালোবাসি তাই
হাত পেতে চরণামৃত খেয়ে মাথায় হাত মুছি;
তারপর আমাদের চোখ ভার হতে থাকে,
ক্রমশ অন্ধকার হয়ে আসে চারিদিক।
যখন আমাদের ঘুম ভাঙে তখন মধ্যরাত্রি।
আকাশে আলো নেই, দীঘিতে শাপলা নেই,
বাতাসে নেই শিউলি ফুলের গন্ধ।
আমরা সদলবলে শুয়ে থাকি সর্ষে ক্ষেতে;
মাথার উপর আর শরতের আকাশ নেই,
চাঁদ নেই, তারা নেই, এগিয়ে ধরা হাত নেই,
নেই কাশফুল ঘাসফুল কোনোখানে;
কেবলই আমাদের চোখ ঢেকে যায়
সর্ষে ফুলের পীতবর্নের হাহাকারে।
