মর্মান্তিক
মর্মান্তিক
ধুসর কুহেলিকায় আচ্ছন্ন একটা আস্ত শহর,
ডিসেম্বরের শীত যখন কালক্রমে ঘনীভূত হতে থাকে,
কত নিগৃহীত মানুষ প্রানত্যাগ করে গৃহহীন প্রান্তরে।।
তারপর স্রোতোশ্বিনী সময়ের ক্রুড় আলিঙ্গনে,
ভেসে যায় তারা তমসাচ্ছন্ন গহবরে।
একে একে কিছু উষ্ণ কলেবর তুষারখন্ডে পরিনত হয়।।
একি তবে কর্মফল নাকি নিঠুর বিধাতার ক্রুড় আহ্বান?
প্রশ্নটা বারংবার আমার আহত মনকে আরো ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করেছে,
তবু এই ঝুল বারান্দায় উপবেশন করে কাব্যবান নিক্ষেপ করাই আমার প্রতিবাদের ভাষা।।
অপর প্রান্তে মুখোশধারি মাতব্বরদের অলীক ভাষ্যপাঠ,
শ্রবণ করিবামাত্র যেন হৃদ যন্ত্রে এক লেলিহান শিখার উৎপত্তি ঘটে,
তবু পৃষ্ঠামাঝে আমর্ষে পরিপুর্ণ শব্দবানে তাদের জর্জরিত করা ভিন্ন উপায় নেই।।
এক চিলতে বাসোস্থান, একটি কাজ, দুবেলা আহারের নিশ্চয়োতা,
খুব বেশি কি? অবৈধ প্রাচুর্যের শিখরে উপবিষ্ট কিছু কলুষিত মানুষ,
না, অবশ্য মানুষ শব্দের ব্যাখ্যা না করলেই বোদহয় মঙ্গল হবে।
কখনও ফুটপাথে আবর্জনার মত পড়ে থাকা মানুষ গুলোকে দেখেছেন?
হ্যাঁ, আপনাকেই জিজ্ঞেস করছি। কখনো কল্পনার বালুচরে,
তাদের একজন হিসেবে নিজেকে ভেবেছেন? উত্তরটা অবশ্যই "না"।।
এই প্রাচীন ধর্মে সুসজ্জিত দেশে আজ শত বর্ষেও এই পটচিত্র অপরিবর্তিত এক কাহিনী,
অর্থবান মানুষের পদতলে অবহেলিত এক শ্রেনী, যেন দারিদ্র্যতার হিংস্র দংশনে কাতর।
হে দয়াময় বিধাতা! তব অবগুণ্ঠীত চরনে কবে মিলিবে শত শহস্র মানুষের বান্ছিত পরিত্রান?
চারিদিকে হাহাকার! অভাব ও খুধা হতে নিংসৃত অন্ধকার যখন সহনীয় প্রায়,
যখন অবহেলার যন্ত্রনা প্রাক্তন প্রেমিকের মতো খানিক ধুসর,
তখন এক দৈত্যাকার অতিমারি তার হেমলক মিশ্রিত ফনা তোলে মানব সভ্যতার শিয়রে।।
বারংবার তার হিংসাত্মক ছোবলে শত অংশে খণ্ডীত হয় সমকালীন সভ্যতার পাঁজর,
আর কত? হ্যাঁ, আমি প্রতিনিয়ত প্রতখ্য করেছি তার উগ্র তাণ্ডব লীলা।
দরিদ্র নর নারীর মর্মান্তিক আর্তনাদ, কর্মহীন খাদ্যহীন এক কঠোর সংগ্রাম।।
মৃত্যুর আহ্বান যেন অতর্কিতে নেমে এসেছে এক গুচ্ছ লাঞ্ছিত মানুষের দ্বারে,
তার ভয়াবহ আনন যেন অবলীলায় গ্রাস করেছে লক্ষাধিক পরিবারকে।
দিকে দিকে মৃতদেহগুলো যেন চিৎকার করে চেয়েছে শুধু এক চিলতে সন্মান।।
কিন্তু ক্ষুব্ধ বসুন্ধরা যেন তাদের খোলা হস্তে করেছে সুতিব্র প্রত্যাখ্যান,
হে দেবতা! আজ এক সাহিত্যিকের প্রশ্নবান তব সম্মুখে উদীয়মান,
উত্তর চাই!! উত্তর চাই!! কি দোষ করেছে এই ক্ষুধার্ত মানুষ? উত্তর চাই।।
