Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Rituparna Rudra

Romance

5.0  

Rituparna Rudra

Romance

এই যে তোমার প্রেম

এই যে তোমার প্রেম

7 mins
1.0K


এই যাহ, বেলা এগারোটা নাগাদ ঘুম ভেঙে মোবাইল খুলে মোহর দেখলো চারটে মিসড কল, তিনটে রানার আর একটা সোমকের। জ্বর ভাবটা এখোনো রয়েছে, মা তাই ডাকে নি। এখন উঠেছে দেখে চা নিয়ে এল। চা খেতে খেতে মোহর ভাবছে কি করা যায়, কাকে আগে ফোন করে।

"মোহর, তোকে রানা ফোনে না পেয়ে আমায় করেছিল, আমি বলেছি তুই শুয়ে আছিস জ্বর হয়েছে।" মা এর গলায় বিরক্তি। 

"আর সোমক? ও করেছিল?"

"না ও করেনি তো।”

ভেবেচিন্তে, সোমককেই আগে ফোন করলো ও। দু চার মিনিট কথা হোল, জ্বর হয়েছে শুনে খুব মিষ্টি করে বলল "বড্ড অনিয়ম করো তুমি। রেস্ট নাও তুমি, খাওয়াদাওয়া করবে ঠিক করে কেমন।"

এবার রানা। যথা নিয়মে ফোন তুলেই বকুনি শুরু হয়ে গেল। কী করে জ্বর হোল, নিশ্চয় বৃষ্টি ভিজেছে, কী ওষুধ খাচ্ছে সব বলার পর শুনল রাতে অফিস ফেরত ওকে দেখে যাবে। এর মধ্যে যেন কোন অনিয়ম আর মোহর না করে। প্রমাদ গুনলো মোহর, এই মরেছে, যদি সোমকও আসে তাহলে? সোমককে নিয়ে কোন সমস্যা নেই, ও জানে রানার সাথে যোগাযোগের কথা, দেখলেও কিছু বলবে না, যদিও খুবই অস্বস্তিকর হবে মোহরের জন্য।

কিন্তু রানা কিছু জানেই না সোমকের কথা, জানলে যে কি হবে মা গঙ্গাই জানে। 

"এবার রানাকে সব বলে দে মোহর, আর ওর সাথে যোগাযোগ কমা।" মা চুল আঁচড়ে দিচ্ছে আর বলে চলেছে। "স্নান সেরে নে যা, তারপরে ঝোল ভাত খাইয়ে দেব" এই হোল মা। মোহরের একটু জ্বর হোল কি না, মা ছুটি নিয়ে বাড়িতে, সব করে দেবে, তাই বোধহয় এত বয়স পর্যন্ত ও আর বড় হোল না, নিজে সংসারের খুঁটিনাটি বোঝে না, রান্না পারে না কিচ্ছু না।

বিয়ের পরে এই নিয়ে কত কথা যে শুনতে হয়েছে, স্কুলের চাকরি আর যাতায়াত করেই আর কিছু তেমন পেরে উঠতো না ও, স্বামীরা হয়তো আশা করে সব বৌদের মত তার বৌও বাইরের কাজ সেরে ঘরে এসেই আবার সব নিপুণ ভাবে করে ফেলবে, ঘর বাড়ি গোছানো থাকবে, ভাল ভাল রান্না করবে। সেরকম পেরে উঠতোনা ও, বরং অগোছাল ঘরে ও নিজেই কিছু খুঁজে পেতনা। যতদিন শাশুড়ি ছিলেন একরকম চলে যেত, উনি বেশ স্নেহ করতেন মোহরকে, ওর ভীতু ছেলেমানুষ মনকে। বছর দু এক আগে উনি মারা যাবার পরে খুব গণ্ডগোল লাগল। রোজ অশান্তি, রোজ ঝগড়া, সে দিকে মোহর তেমন পটু নয়, ও চুপ করে বসে কাঁদতো আর ভাবতো দৌড়িয়ে মা এর কাছে চলে যাই। এই যে অন্য মেয়েরা কেমন গুছিয়ে সংসার করে, রান্নাবান্না, ঘর গুছনো, শপিং, এসব ওর দ্বারা হোত না।


রানা রোজ বাড়ি ফিরে দেখতো ও মগ্ন হয়ে টিভি দেখছে বা স্কুলের খাতা, বা ফোনে কথা বলছে, রান্নার লোক এসে ফিরে গেছে, কিছু ছিল না ফ্রিজে সে রাঁধবে কি! বা আসেইনি সেদিন। মোহরেরও কিছু খেয়াল নেই। সে আপন মনে কবিতা পড়ছে, বা ঘুমিয়ে পড়েছে। ব্যাস শুরু হয়ে যেত অশান্তি। রানাকেই কিছু করে নিতে হোত, মোহরও সাহায্য করতো অবশ্য। কোনদিন খিচুড়ি করা হোত, কখনও পাড়ার দোকানের রুটি তড়কা খাওয়া হোত। তারপর সাময়িক শান্তি। রানা কিন্তু খুব ভালোবাসত, খুব আদর করতো তাকে, সে সব ঠিক ছিল তাদের মধ্যে, কিন্তু মোহর এর এই অগোছাল স্বভাবটাই বিপদ ডেকে আনছিল। কোনদিন হয়তো মা এর বাড়ি গিয়ে বা পিসিমার বাড়ি গিয়ে থেকে গেছে মোহর, রানাকে বলতেই ভুলে গেছে। 

একবার দুপায়ে দুরকম চটি পরে রানার অফিস পার্টিতে চলে গিয়েছিল, এই নিয়ে বিস্ফোরণ, রানার দোষ নেই ও নিয়মে চলা মানুষ। আসলে দুজনের মিলমিশ হচ্ছিল না একদমই। অথচ নিজেরাই বিয়ে করেছিল তারা। তখন কি প্রেম! সংসার আর প্রেম দুটো আলাদা এখন বেশ জানে মোহর, কিন্তু জানলেও বড্ড দেরি হয়ে গেছিল।



তারপরে একদিন সেই মোক্ষম কথাটা বললো রানা। সেদিন পোড়া রুটি আর কাঁচা বেগুনভাজা খেয়ে খুব শান্ত ভাবে রানা বললো মনে হয় আমাদের ডিভোর্স করা উচিৎ, এইভাবে আর চলে না। সিডিতে আমজাদ আলি খানের শরদ চালিয়ে শেষের কবিতা পড়ছিল মোহর, কথাটা শুনে হাত থেকে বইটা পড়ে যায়। কিন্তু তর্ক বিতর্ক, জোরে কথা বলা এইসব ও পারেনা। দুদিন ধরে ভেবেছিল তারপর মোহর কেন যেন ওর মনে হয়েছিল রানা বোধহয় ঠিকই বলছে, ওর দরকার একজন ঠিকঠাক বউয়ের। পরের দিন মা এর কাছে ফিরে আসে ও, মাস খানেক বাদে মিউচুয়াল ডিভোর্স এর জন্য কোর্টে আবেদন করা হয়। মাও এটা মেনে নেয়। মায়ের প্রথম থেকেই ধারণা ছিল রানা মোহরের জন্য ঠিক নয়।

"রানার সাথে তোর ডিভোর্স হয়ে যাক, আমি দেখেশুনে তোকে ভাল বিয়ে দেব মোহর" মায়ের কথা চোখে জল এলেও বাধ্য মেয়ে মাথা নাড়ে। তবুও এক অজ্ঞাত কারণে রানার সাথে তার যোগাযোগটা থেকেই গেল। এখন সংসার নেই, তাই সাংসারিক অশান্তিও নেই, দিব্বি সপ্তাহান্তে সিনেমা যায় তারা, বাইরে খেতে যায়। সেই আগের মত, দুজনেই বেশ খুশি খুশি, রানার শাসনও চলতে থাকে। বছর খানেকের সেপারেশন, তারপর ডিভোর্স, তাও মাস তিনেক হ’ল। অথচ সেদিনও কোর্টে রানার কাছে বকুনি খেয়েছে মোহর।

"এই গরমে একটা কালো জামা কী করে পরে এসেছো বলোতো, তোমার কি কোনদিন বুদ্ধি হবে না? এই নাও রুমালটা নিয়ে ঘামটা মোছ।" জজ সাহেব সুযোগ দিলেন তাদের, বললেন আর এক বার চেষ্টা করে দেখুন আপনারা, কোথাও বেড়াতে যান। মোহর দেখল তীব্র ভাবে মাথা নাড়ছে রানা। দেখাদেখি সেও মাথা নাড়ল। রানার সাথে বেড়াতে যাবার একটা অদম‍্য ইচ্ছে তার হচ্ছিল ঠিক‌ই, কিন্তু উলটো কথা বললে রানা যদি বকে এই ভয়ে ও আর কিছু বলেনি। বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি ডেকে তাকে আর মাকে উঠিয়ে দিল রানা। বাড়ি আসতেই ফোন, ঠিক মত পৌঁছল কিনা তার খোঁজ, এভাবেই চলল বেশ কয়েক দিন। 

ইতিমধ্যে মাস ছয়েক আগে, কাগজ দেখে সোমকের সাথে ওর সম্বন্ধ করেছে মা। সোমক, মা এর মতে একদম যোগ্যতম পাত্র মোহরের জন্য। সোমক অনেক বয়স পর্যন্ত অবিবাহিত আছে, ওর টিবি হয়েছিল একসময়, সেই জন্য প্রায় দু বছর ও খুব কষ্ট পেয়েছে, মৃত্যুর দোরগোড়ায় গিয়ে ফিরেছে। বিয়ে করবেই না ভেবেছিল, এখন কিছুটা জোর করেই ওকে রাজি করিয়েছে ওর বোন। মোহরের ডিভোর্স বা রানার সাথে এখোনো যোগাযোগ নিয়ে কিছুই বলে না সোমক। বড্ড ভালবাসে ও মোহরকে , কখনো বকে না, বলে জীবনকে ছেড়ে যেতে গেলে বোঝা যায় জীবন কত সুন্দর। তুমি কখোনো আমায় ছেড়ে যেও না যেন, কেমন? আর রান্না বান্না নিয়ে বেশি ভেবো না, এসব তুচ্ছ ব্যাপার, তাছাড়া আমিও ভাল রান্না জানি। বিয়েটা অবশেষে ঠিক হয়ে গেল, আর মাত্র দু মাস বাদেই, কিন্তু মহা মুশকিল এই রানা কে নিয়ে। 

সোমক সারাদিন খুব ব্যস্ত থাকে, রাতের বেলায় মোহরের সাথে একটু চ্যাটে আসতে চায়, কিন্তু হলে কী হবে সে গুড়ে বালি। অমনি রানা ওদিক থেকে বলবে, "এত রাতে কার সাথে কথা বলছো, রাত জাগলেই তোমার শরীর খারাপ হয়, কাল তো স্কুল আছে। যাও ঘুমিয়ে পড় এখন।" মোহরের ইচ্ছে করে বলতে যার সাথে ইচ্ছে তোমার তাতে কী? কিন্তু বদলে সোমককে বলে "আমার আবার কাল স্কুল আছে, খুব ঘুম পাচ্ছে কেমন। আসলে সকালে উঠতে হয় তো।" নিজের ওপরই খুব রাগ হয়, কেন ও রানাকে আজও সোমকের কথা বলে উঠতে পারে না। 


সেদিন সোমকের সাথে ওর সিনেমা যাওয়ার কথা, বিকেলে ফোন করে রানা বলল,

"মোহর চোখে একটা ইনফেকশন হয়েছে, বাঁ চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছি না, ডাক্তারের কাছে যাব, একটু সাথে যাবে আমার?"

শুনেই খুব কষ্ট হোল মোহরের।

"তুমি অফিসেই থাকো আমি আসছি তোমাকে নিতে, গাড়ি অফিসে থাক, আমি ট্যাক্সি করে তোমায় নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাব। ট্যাক্সিতে উঠে সোমককে ফোন করে সব সত্যি কথা বললো মোহর, সোমক বুঝলো।

"কিছু ভেবোনা মোহর তুমি যাও, দরকার বুঝলে আমায় ফোন কোরো। এই মুভিটা আমরা কাল দেখে নেব। সাবধানে যেও।" অমনি মোহরের মন সোমকের জন্য হায় হায় করে উঠল। কি ভাল ও, কি ভাল কাটতে পারতো আজ সন্ধ্যেটা সোমকের সাথে। মাঝে মাঝে মোহরের মনে হয় দুজনের সাথেই কেন থাকতে পারবে না ও? এই যে ও মা এর সাথে আছে আর দুজনেই বন্ধু ওর, এটাই মন্দ কি। ভীতু মোহরের সব কথা মনের মধ্যেই, এইসব বললে মাও যে বকবে ওকে।


দিন এগিয়ে আসছে, রানাকে সব বলতেই হবে এবার। কী করি কী করি ভাবতে গিয়ে মোহর দেখলো রানার ফোন আসছে। এখন ওর অফ পিরিয়ড, রানার সব মুখস্ত, ঠিক সময়েই ফোন করে ও। বরাবরের মত আজও ফোন ধরতে গিয়ে বুক কেঁপে উঠল মোহরের। ধরা গলায় বলল

"বলো।"

"কাল সন্ধ্যেবেলা আমার সাথে একটু ডিনারে যাবে মোহর? একটু কথা আছে তোমার সাথে।"

এই রে, কাল ওর আর সোমকের একসাথে বেরিয়ে কেনাকাটা করার কথা। কিন্তু মোহর শুনলো ও বলছে

"কোথায় দাঁড়াবো?

"যেখানে দাঁড়াতে, আর কাল সেই নীল শাড়িটা পরে এসো প্লিজ।"

নীল শাড়ি পরে চুপ করে বসে আছে মোহর, আজ রানাও চুপ, কি যেন ভাবছে। তারপর স্তব্ধতা ভাঙলো, 

"তোমার বিয়ের খবর পেলাম, সোমক বাবু চমৎকার মানুষ, ভাল রাখবেন তোমায়"

চমকে উঠেছে মোহর। কি করে জানলো!

খুব ভাল ডিনার খাওয়ালো তাকে রানা আজ, বকেনি একবারও। তারপর একটা মস্ত ভারি বাক্স ওর হাতে তুলে দিল, তোমার বিয়ের উপহার মোহ"। কতদিন বাদে এই নাম, ও জানে এর মধ্যে ওর শাশুড়ির সব গয়না আছে, আপত্তি করা উচিৎ বোধহয়, কিন্তু রানার কাছে ওর কোন আপত্তি আর কবে থেকেছে। খাওয়ার পরে ওকে বাড়িতে ছাড়তে এল রানা, নামার সময় হাতটা ধরলো, 

"আমি ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিল্লি চলে যাচ্ছি মোহ, ওখানে ট্রান্সফার নিলাম, কলকাতায় আর ফেরার ইচ্ছে নেই। তোমার জামাকাপড় অনেক রয়ে গেছে এখনও। আর কিছু নিতে হলে এর মধ্যে একদিন নিয়ে এসো, চাবি তো তোমার কাছে আছেই। ভাল থেকো।

গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল রানা। 

সোমকের ফোন বাজছে, ধরে কেঁদে ফেলল মোহর।

কি হয়েছে মোহর?

বড্ড মন খারাপ করছে।

সোমক বুঝলো। 

"আমি শুনেছি তোমার মা এর কাছে, উনি চলে যাচ্ছেন, কষ্ট তো হবারই কথা এতদিনের সম্পর্ক। কেঁদে নাও তুমি, একটু একা থাকো, যখনই ইচ্ছে হবে ফোন কোর আমায়। ইচ্ছে না হলে নাও করতে পারো। আমরা দুজনেই নাহয় রইলাম তোমার হৃদয়ে, তাতে কিছু হয় না। আমরা দুজনেই অনেক কষ্ট পেয়েছি জীবনে, সেই কষ্ট গুলো থাক, দেখবে যখন একসাথে থাকবো আর বেশি কষ্ট হবে না আমাদের। এবার শুয়ে পড় তুমি।"

শুয়ে পড়ে মোহর, কাঁদেও কিন্তু কি জানি কেন মনে হয় এমন দুজন মানুষকে ভালবাসতে পারাও ওর কম ভাগ্য নয়। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance