Rituparna Rudra

Inspirational

2  

Rituparna Rudra

Inspirational

প্রথম প্রেম

প্রথম প্রেম

2 mins
645


ছোটোবেলায় আমি স্কুল পালিয়েছিলাম, তখন আমার চার বছর বয়স, আগের বাড়ি ছেড়ে একদম অন্য জায়গায়, নতুন পাড়ায় এসেছি আমরা, সদ্যজাত ভাইকে নিয়ে। পড়াশোনায় অসম্ভব ভীতি, মাও সময় দিতে পারছেন না, এমন অবস্থায় বাড়ির থেকে কিছু দুরে একটি স্কুলে বাবা আমাকে ভর্তি করে দিলেন, আমি কেঁদে কেটে বিদ্রোহ জানালাম কিন্তু কেউ সে কথা শুনলো না বলাই বাহুল্য। দু তিন দিন গেলাম, ক্লাসে দিদিমনি কী পড়াচ্ছেন কিছুই মাথায় ঢুকত না, কেবল কাঁদতাম, আমাকে সারাজীবন পড়াশোনা করতে হবে বলে বুঝতাম কিন্তু মুক্তির উপায় জানা ছিল না। 


দিন তিনেক পরে একদিন সুযোগ বুঝে টিফিন টাইমে স্কুল থেকে পালালাম। পথ চিনি না, ঘুরতে ঘুরতে একটা বাজার মত জায়গায় এসে পড়লাম। আপন মনে হাঁটছি, বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে নেই, কিছুতেই পড়া করব না। খানিক বাদে কিন্তু খিদে পেয়ে গেল, ভয়ও করতে লাগল কিন্তু পথ তো জানা নেই। এমন সময়ে এক ভদ্র মহিলা একটি ছোটো স্কুল পোষাক পরা বাচ্চা কে দেখে অবাক হয়ে এসে কথা বললেন, কিন্তু আমি নতুন বাড়ির ঠিকানা জানতাম না। নাম আর বাবার নাম বললাম। তিনি তখন আমাকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন কাছাকাছি সব রাস্তা দেখালেন, দোকানে জিজ্ঞেস করলেন, অবশেষে বাড়ির রাস্তার কাছে এসে চিনতে পারলাম। প্রায় ঘন্টা খানেক উনি আমাকে নিয়ে ঘুরেছিলেন। আজকের দিন হলে কী হোত কে জানে। বাড়ি পৌঁছে মা এর প্রভূত ধন্যবাদের উত্তরে উনি বলেছিলেন, আমার মনে হয় আপনার মেয়ের লেখাপড়া হবে না, ওকে জোর করবেন না, কখন কী বিপদ হয়, ঘরের কাজ শেখান, মেয়ে তো, বড় হলে বিয়ে হয়ে যাবে। 


সে বছর আর আমাকে স্কুল পাঠানো হয় নি। বাড়িতেই শুরু হোল পড়া। বাবা কবিতা পড়ে শোনাতে লাগলেন। সহজ পাঠের ছড়া, সুকুমার রায়ের আবোলতাবোল, আস্তে আস্তে ভীষণ ভালো লাগল। বইয়ের প্রতি ভীতি কোথায় হারিয়ে গেল। অ আ শিখলাম পরে, তার আগেই মুখস্থ কবিতা, কথা ও কাহিনী, সঞ্চয়িতা আর বিকেলে মা এর কাছে শিখতে লাগলাম গান, শুরু করলাম জানতে রবীন্দ্রনাথ বলে সেই আশ্চর্য মানুষটিকে। 


আজ এত বছর পরেও আমার সেই প্রথম প্রেম বিদ্যমান, দিনে দিনে আরোও নির্ভর করেছি ওঁর ওপরে, আমার সব আনন্দে খুশিতে দু:খে বেদনায় ছুটে গেছি তাঁরই কাছে, না উনি ফেরাননি কখোনও, শিশুর মত আশ্রয় দিয়েছেন।  এখনও মন খারাপে আর মন খুশী তে রবীন্দ্রনাথএর গান আমার সঙ্গী, গান গেয়ে, গান শুনে, গীতবিতান পড়েই কাটিয়ে দিতে পারি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আরেকটু বড়ো বয়েসে দেখলাম ওঁর আঁকা ছবি, জীবনে বহু চিত্রশিল্পী এবং ভাস্করের কাজ সামনে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার, কিন্তু এত প্রিয় বোধহয় আর কিছু না।


আমাদের বাড়ির রবীন্দ্র রচনাবলীর বাঁধাই খারাপ হয়ে গেছে, প্রধানত আমারই জন্য এত বার পড়েও আমার শান্তি নেই। শুধু একটা ইচ্ছে পূর্ণ হয় নি, ওনাকে একবার দেখার একটা তীব্র ইচ্ছে হয় আমার, হায় যদি একবার প্রণাম করার সুযোগ হোত, কিন্তু এ জীবনে ওঁর সৃষ্টি থেকে বঞ্চিত তো হলাম না, সেটাই বা কম কী।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational