STORYMIRROR

Prakriti kundu

Romance Tragedy Inspirational

3  

Prakriti kundu

Romance Tragedy Inspirational

উষ্ণ আলিঙ্গনে

উষ্ণ আলিঙ্গনে

9 mins
494

" কে কে ছাড়ুন আমায়! ছাড়ুন বলছি!"


এক বৃষ্টিমুখর দিনে ক্লান্ত চোখে বাস যাত্রালয়ের বাইরে তাকিয়ে আছে শ্রাবনী। ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। রাতের আঁধার নেমে এসেছে বেশ খানিকক্ষণ হলো। মেঘেরা গর্জন করছে। মেঘের আড়াল থেকে বিদ্যুৎ এর ঝলক নজরে পড়ছে। মেঘের আজ বিদ্রোহ করছে। শ্রাবনী আজ খানিকটা বাধ্য হয়েই বাড়ি ফিরছে। শহরে নিতান্তই নতুন। চাকরি পেয়ে এখানে একটা মেয়েদের হোস্টেলে উঠেছে। কিন্তু মায়ের শরীরটা বড্ড অসুস্থ যে!


কেউ যেন হটাৎ করেই যেন ওর শরীরের উপর এসে পড়লো। এই হিম শীতল বৃষ্টিমুখর দিনে এক উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলো শ্রাবনীকে। ভয় পেল শ্রাবনী। খুব ভয়! শ্রাবনীর নারীসুলভ হৃদয় বুঝে নিল আলিঙ্গন টা কোনো পুরুষের। শ্রাবনী কেমন যেন থমকে গেল। হুস জ্ঞান হারিয়েই যেন সেই যুবকের পিঠের দিকে শার্ট খামচে ধরে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলো কিন্তু সেই যুবক আরো শক্ত বন্ধনের আবদ্ধ করলো শ্রাবনীকে। শ্রাবনী আরো বেশি ভয় পেল।

হুট করেই যুবকটি ছেড়ে দিল শ্রাবনীকে। শ্রাবনী একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রাগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই যুবকটি বলে উঠলো," সরি আমি …"

কথাটা বলেই যুবকটি আর কয়েক মুহূর্ত দাঁড়ালো সেখানে। সেই মুহুর্তেই মেঘের আড়াল থেকে এক ঝলক আলো এসে সেই যুবকের মুখে পড়লো। শ্রাবনী স্পষ্ট দেখতে পেল যুবকের মুখটি। আলোর রেশ কমে যেতেই যুবকটিও যেন কোথায় হাওয়া হয়ে গেল। শ্রাবনী আর অনুভব করতে পারলো না। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো শ্রাবনী এই আঁধারে!

সকাল বেলায় শ্রাবনীর হাঁটতে যাওয়া স্বভাব। এই শহরের বুকে এসেও নিজের স্বভাব ছাড়তে পারেনি। কিন্তু এই কদিন বেশ ভয়ে আছে। শ্রাবনীর বারবার মনে হয় যেন ওকে কেউ ফলো করে। কিন্তু কে করতে পারে! ভেবে পায় না শ্রাবনী। কোনো বখাটে ছেলে কি ওকে ভয় দেখাতে চাইছে। ওর ভাবনার মাঝেই ও অনুভব করে আজ ও যেন ওর পেছনে কেউ।

শ্রাবনী দাঁড়িয়ে পড়লো একটু। আড়চোখে পেছনে তাকিয়ে দেখলো সেই ছায়াটাও দাঁড়িয়ে পড়েছে। আবার চলতে শুরু করলে সে যুবক ও চলতে শুরু করলো। শ্রাবনী বেশ ভীত হলো। ভাবলো এই পরিস্থিতি থেকে যে করে হোক ওকে বাঁচতে হবে।

একটু কৌশল করেই শ্রাবনী একটা গাছের আড়ালে গেল যুবকটির চোখের আড়ালে। যুবকটি তখন চেনা পরিচিত কারোর সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত। কথা বলেই যখন সামনে দেখলো তখন শ্রাবনীকে সামনে দেখতে পেল না। নিঃসন্দেহে হতাশ হলো। খারাপ লাগলো খুব। আরেকটু এগিয়ে দেখতে চাইলো। হটাৎ করেই শ্রাবনী ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। যুবক থতমত খেয়ে গেল। নিজের হতভম্ব ভাবটা যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে চাইলো।

শ্রাবনী এতো কিছু দেখলো না। যুবকের দিকে ভালো করে না তাকিয়েই কঠিন কিছু কথা শুনিয়ে দিল। হটাৎ করেই যুবকটি বলে উঠলো,

" আমার কাঠগোলাপ…"

শ্রাবনী হতভম্ব হয়ে গেল। কন্ঠটা ভারী চেনা লাগলো। এই কন্ঠটা আজ কতদিন ধরেই ওর কানে বেজে চলেছে যেন। যুবকটিকে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো। সেই যুবক! হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। অস্ফুটে বেরিয়ে এলো," আপনি!!"

যুবকটি স্মিত হাসলো। চিত্ত উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। বলে উঠলো," মনে পড়েছে? চিনতে পারছো? দেখো আমি তোমাকে তুমি করেই বললাম কিছু মনে করো না। তুমি আমাকে নাই চিনতে পারো তবে আমি তোমাকে চিনি। তুমি আমার কাঠগোলাপ। আমার মন খারাপের ডায়রির এক মাত্র আনন্দের ঝলক। আমার আঁকার পাতায় পাতায় ভরে এক টুকরো কাঠগোলাপ। আমার কাঠগোলাপ। আমার আবিষ্কার তুমি, আমার কল্পনার বাস্তব প্রেয়সী তুমি। আমিও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি জানোতো যে আমার কল্পনা আদৌও কখনো বাস্তব রুপ পাবে কিন্তু নিজের চোখের সামনে দেখে অবিশ্বাস্য হয়না! "


যুবকটির কথা সবেই শ্রাবনীর মাথার উপর যায়। কি বলছে যুবকটি? পাগল নাকি? এতো কথা বলে কেন? বলতেই বা কিভাবে? বিরক্ত হয় শ্রাবনী। বলে," আপনি সাইক্রিয়াটিস্ট দেখান!"

যুবক চমৎকার হাসে। বলে," জানি আপনি বিশ্বাস করবে না। তাই তো আপনার নিমন্ত্রন রইল আমার হৃদয়ে। যেদিন তোমার হৃদয়ে আমার ছবি আঁকা থাকবে সেইদিন সব বিশ্বাস করবে।"


তিতিবিরক্ত হয়ে শ্রাবনী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ততক্ষণে যুবকটি বলে," আমি অঙ্কন। আমার আঁকায় তুমি আমার কাঠগোলাপ। " কথাটা বলেই চলে যায় যুবক। শ্রাবনী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে থাকে।

" কি চান বলুন তো আপনি?"

" আমার কাঠগোলাপকে চাই "

আবারও একি উত্তর! এই কয়েকদিনে এই উত্তর অঙ্কনের কাছে কতবার শুনেছে জানা নেই শ্রাবনী, হয়তো অগুনতি বার। ছেলেটাকে কিছু বলতেও পারেনা। কেমন যেন বড়োই আপন মনে হয়। ছেলেটার পাগলামি গুলো যেন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। ছেলেটিও স্থান পেয়েছে শ্রাবনীর ডায়রির ভাঁজে। আগে শ্রাবনীর একা থাকতে কষ্ট হতো কিন্তু এখন যেন সময় কেটে যায়। এই পাগলাটে ছেলেটাকে ভালোবেসে ও আজীবনের জন্য যেন পাগল হতে চাই।

" আপনার কাঠগোলাপকে এখানে পাবেন কি করে? "

" আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। "

" আমি কিভাবে তার উত্তর এখনৌ দিলেন না কেন তাহলে?"

অঙ্কন স্মিত হাসে। বলে," যেদিন কাঠগোলাপ আমাকে স্বীকৃতি দেবে।

শ্রাবনী উপরে বিরক্ত হলেও মনে মনে উৎফুল্ল হয়। চিত্ত ক্রমশ যেন মেতে ওঠে এই লুকোচুরি তে।

" আপনি যতদিন না এই রহস্যের কারন বলবেন ততদিন পর্যন্ত আমি আপনাকে স্বীকৃতি দেবো না। "

অঙ্কন আনমনেই হাসে। শ্রাবনীর সামনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে ঝুঁকে পড়ে। পকেট থেকে একটা হাত বের করে শ্রাবনীর নাকে টোকা দেয়। বলে," তুমি পাগল হয়েছে। তুমি স্বীকৃতি দিয়েছো কিন্তু স্বীকার করতে চাও না। "

শ্রাবনী রাগ দেখাতে গিয়েও হেসে ফেলে। খানিকটা পিছিয়ে যায়। পেছনে ফিরে চলে যেতে যায়। খানিকটা দূরে গিয়ে পেছনে ফিরে। অঙ্কনের দিকে মুচকি হাসে। এগিয়ে আসে অঙ্কনের দিকে। অঙ্কনের শার্টের কলারটা ঠিক করে দেয়। বলে," কাল রবিবার। সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা আপনার জন্য বরাদ্দ। আপনি কাল আমাকে যেভাবে চাইবেন সেভাবেই পাবেন। "


সামনের আঁকা রঙ তুলির রঙিন ক্যানভাসের দিকে তাকিয়ে আছে শ্রাবনী। চোখ ফিরিয়ে নেওয়া বড়োই কষ্ট যেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অঙ্কনের দিকে তাকায়। অঙ্কন হাসে। শ্রাবনী ধীর পায়ে এগিয়ে চিত্রের দিকে। চিত্রটি দেখে ওই প্রেমে পড়তে বাধ্য। বাস্তবের কাঠগোলাপের থেকেও যেন অধিক সৌন্দর্য বহন করছে ক্যানভাসটি। শ্রাবনী আবারও তাকায় ক্যানভাসের আসল চিত্রকরের দিকে। চিত্রকরটি তার মনের সমস্ত মাধুর্য দিয়ে ছবিটি যেন অপ্সরায় পরিনত করেছে। শ্রাবনী অগোছালো নিজের মতন নেয়না তেমন ভাবে কিন্তু অঙ্কন যেন পরম যত্ন দিয়েই ছবিটি এক অনন্য রুপ দিয়েছে।


শ্রাবনী আরো জানে ছবিটির অবয়ব আজ প্রায় পাঁচবছর ধরে আঁকতে চেষ্টা। চেয়েছিল কোনো কাল্পনিক নারীকে নিজের চিত্রে স্থান দিতে ‌কিন্ত কাল্পনিক নারী কি আদৌও হয়? তাও চেষ্টা করতে বাদ দেয় না। একসময় ছবিটি একে ফেললেও মুখের অবয়ব আঁকতে পারে না। ঠোঁট, চোখ, নাক, এর রুপ কিছুতেই দিতে পারছিল না। কিন্তু অবশেষে দেয় তার পরের দিনেই শ্রাবনীকে রাস্তায় দেখে। শ্রাবনীকে কয়েক মুহূর্ত থমকে দাঁড়িয়েছিল। নিজেকেই মনে হয়েছিল কোনো কল্পনার রাজ্যে বিচরন করছে। নিজেকে বারবার ভুল মনে হয়েছিল। তাই তো ওই বৃষ্টির দিনে এমন একটা কাজ করেছিল। খানিকটা ছেলেমানুষী!



শ্রাবনী আরো বেশি অবাক হয়। অঙ্কনের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে। অঙ্কনের বাবা মা নেই। অনাথ আশ্রমে মানুষ। ছোট থেকেই ছবি আঁকার হাত তুখোড়। তাই ওকে বেশি অসুবিধাই কখনোই পড়তে হয়নি। কলেজে পড়াকালীন কলেজের একটা আঁকা প্রতিযোগিতা প্রথম স্থান অধিকার করে জেলা স্তরে গিয়েছিল তারপর রাজ্য। সেখান থেকে পিছু ফিরে দেখতে হয়নি তাঁকে। তবে আঁকার রাজ্যে বিচরন করতেই সারাটা সময় কেঁটে যায়। আপনজনের বড়োই অভাব।

শ্রাবনী সেদিন বলে," তুমি ছবিটা কোনো এক্সহিভিসনে দাও তাহলে তোমার জনপ্রিয়তা দেখতে হবে না। "

অঙ্কন হেসে বলে সেদিন," জীবনে তো বহু ছবি এঁকেছি বহু ছবি বিক্রি করেছি এবং ভবিষ্যতেও সেটাই করবো কারন এটাই আমার পেশা। কিন্তু একটা চিত্র না হয় এই চিত্রকর নিজের জন্য আঁকলো। সেটা না হয় আজীবনের জন্য থেকে যাক আমার কাঠগোলাপ রুপে। "

অবাক হয়েছিল শ্রাবনী। অঙ্কনকে আরো উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেছিল।

" তোমার ভালোবাসা কি কখনোই পাবো না শ্রাবনী?"

নিতান্তই হাসে শ্রাবনী। কি চমৎকার হাসি! মেয়েটার জীবনে এতো দুঃখ অথচ মেয়েটার মুখ থেকে হাসি মুছে যায়নি।

শ্রাবনীর হাসি দেখে নবম যা বোঝার বুঝে যায়। শ্রাবনীর বাবার বাল্যবন্ধুর ছেলে এই নবম। নবমের সাথে ছোট থেকেই শ্রাবনীর বিয়ে ঠিক করা ছিল কিন্তু এসবের থেকে অজানা ছিল শ্রাবনী। বাবার বিশ্বাস ছিল শ্রাবনী জীবন এমন কিছু করবে না যাতে ওনার মান সম্মান খুন্ন হয়। তাই তো বন্ধুকে কথা দিয়েছিল। কিন্তু এটা ভাবেনি শ্রাবনীর নিজের একটা মতামত থাকতে পারে। নবম জানতো এই কথা গুলো ছোট থেকেই তাই তো নবম ভালোবাসতো শ্রাবনীকে। ওর ভালোবাসায় কোনো খুঁত ছিল না। কিন্তু শ্রাবনীর মন যে বাঁধা পড়েছিল অন্য জায়গায়।

শ্রাবনী বাবার অমত করতে পারেনি বাবার ভরসা ভাঙতে পারেনি তবুও বলেছিল মাকে। কিন্তু মা দিব্যি দিয়েছিল কোনোভাবে যেনো বাবাকে না জানাই আর নবমকেই বিয়ে করে।

অসহায় শ্রাবনী নবমকেও জানিয়েছিল কিন্তু নবম নিজের ভালোবাসা হারাতে পারবে না জানিয়েছিল। বরং বিয়ের ডেট আরো এগিয়ে এনেছিল যাতে শ্রাবনী কিছু করতে না পারে। কেউ কি নিজের ভালোবাসা ছেড়ে দিতে চাই?

শ্রাবনী তখন মৃতপ্রায়। কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতো সব কিছু। ওর চোখের সামনেই আশির্বাদ হয়েছে সেটা দেখেছে। অঙ্কনকে সব জানাতে অঙ্কন কেমন ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু কখনোই বলেনি শ্রাবনী তুমি চলে আসো আমার কাছে। বাবা মা ছাড়া সন্তানের জীবন কেমন হয় ও জানে? ওদের পরিচয় ভালোবাসা দুইবছরের কিন্তু মা বাবার সাথে সম্পর্ক জন্ম থেকেই। কিভাবে বাবা মাকে ছেড়ে আসতে বলতে পারে অঙ্কন? এটা খুব বেশিই স্বার্থপরতা হয়ে যাবে না?

শেষবারের মতোই শ্রাবনী অঙ্কনের বুকে মাথা রেখে কেঁদেছিল। বলেছিল,

" আমাকে ভুলতে বলবো না অঙ্কন শুধু বলবো তুমি ভালো থেকো ভালো রেখো। অন্য কোনো নারীকে স্থান দিও তোমার জীবনে। না না আমার স্থান দিতে হবে না তাকে তার স্থান দিও। আর থেকে যেও আমাকে তোমার কাঠগোলাপ করে। তোমার হাতের রেখায় আমাকে রেখে দিও। তোমার আঁকার আর্ট পেপারে আমাকে রেখে দিও। ওই স্থানটা আমি কাউকে দিলাম না। ওটা একমাত্র আমার স্থান। "

এরপরের চারটে বছর কেটে গিয়েছিল। সময় নিজের গতিতে এগিয়েছিল। চাকরি ছেড়ে দিয়ে শ্রাবনী নিজেকে নিজের মতো করে ছেড়ে দিয়েছিল। যে যা বলতো তাই করতো। নিজের ইচ্ছা বলতে কিছুই ছিল না শুধু নিজের বলতে একটাই জিনিস ছিল তার হলো ঠোঁটের কোনে হাসিটা। এই হাসিটা কেউ কেড়ে নিতে পারেনি ওর থেকে।

আজ ও নবমের কথায় হাসে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আজ ও এক বৃষ্টিমুখর দিন। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবনী নবম। নবম একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রাবনীর দিকে। আচ্ছা ও কি কিছু ভুল করেছে? ওর তো চেয়েছিল নিজের ভালোবাসা নিজের কাছে ধরে রাখতে!

" আমি তোমার ভালোবাসা পাবার জন্য আরো কতদিন অপেক্ষা করবো শ্রাবনী?"

নবমের কথার প্রত্তুত্যরে শ্রাবনী বাইরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উত্তর দেয়," তোমার হৃদয় যেদিন বলবে। আমি তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছি নবম। যখন ইচ্ছা কাছে টেনে নিতে পারো আমি কখনো বাঁধা দিয়েছি?"

নবম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে শ্রাবনীর দিকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে," আমি তোমার শরীর চাইনি ভালোবাসা চেয়েছি। "

শ্রাবনী নবমের কথায় ওর দিকে তাকায়। এই ছেলেটার চোখের শ্রাবনী অবিরাম ভালোবাসা দেখতে পায়। যে ভালোবাসা পেলে যে কোনো নারী নিজেকে ধন্য মনে করবে। কিন্তু শ্রাবনীর কাছে এটা বিষের থেকেও ভয়ঙ্কর লাগে।

" তাহলে তো জানি না। আমি আবদ্ধ এক চিত্রে। আমি সেখানেই অমর হয়ে আছি সেখানেই বেঁচে আছি। আমার অস্তিত্ব সেখানেই। আমার অস্তিত্ব একজনের উষ্ণ আলিঙ্গনে... "

আর শুনতে পারে না‌ নবম। দৌড়ে ঘরের মধ্যে চলে যায়। ঘরের ভেতরে থাকা ছোট্ট দুইবছরের পুতুল টাকে জড়িয়ে ধরে। নাম চিত্রা। শ্রাবনী নবমের মেয়ে। আজ থেকে প্রায় দুইবছর আগে রাস্তায় কুড়িয়ে পায় নবম। তখন এসে শ্রাবনীর কোলে দিয়েছিল বাচ্চাটাকে। নবম জানতো না ওদের কখনো বাচ্চা হবে কিনা তবুও শ্রাবনীর মন জেতার চেষ্টা করেছে অনেক এমনকি এখনো করে যাচ্ছে। নবম তবে আজ পর্যন্ত কখনোই শ্রাবনীকে স্পর্শ করেনি। নিজেকে সংযত করে রেখেছে। ছেলেটার দোষ নেই কোনো কিন্তু নিজের ভালোবাসাকে নিজের কাছে জোর করে আটকে রাখার শাস্তি সে পাচ্ছে! সারাজীবন হয়তো খেসারদ দিতে কিন্তু তবুও যেন মানসিক শান্তি পায়। মেয়েটা ওর কাছে আছে।‌ সকাল থেকে সন্ধ্যা সারাটা মেয়েটাকে দেখতে পায়। শারিরীক দুরত্ত্ব না থাকলেও মানসিক ভাবে শ্রাবনী ওর কাছে নেই সেটা ভেবেও যেন কষ্ট পায়। তবুও পাত্তা দেয় না।

শ্রাবনী নবমের দিকে শীতল থাকলেও চিত্রার দিকে শীতল থাকতে পারেনি। চিত্রার নামটা শ্রাবনীই রেখেছিল পরম আদরে। মাতৃসত্ত্বার এক উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেছিল।

শ্রাবনী সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। ঠোঁটের কোনে তখন হাসিলেগে রয়েছে। ভুল ঠিক দোষ গুণ কিছু জানে না। মৃত্যুর পরে নরকের ও ভয় নেই। বেঁচে থাকতেও অনুশোচনার ভয় নেই। কোনো কিছুই টানে না।

বাইরে আকাশের দিকে তাকায়। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে কি গর্জন সেই বৃষ্টির! শব্দটা কানে এসে ঠেকছে। কতো উষ্ণ স্মৃতি মনে পড়ছে। মনে পড়ছে সেই প্রথম উষ্ণ আলিঙ্গনের কথা। মনে বলে যাচ্ছে….


হয়তো প্রিয় হতে পারিনি তোমাতে আবদ্ধ…

শুধু আজীবন থেকেই যাবো তোমারই উষ্ণ আলিঙ্গনে…




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance