তফাৎ
তফাৎ
স্কুল ছুটির পর সব পক্ষকে নিয়ে মিটিং শেষে সিদ্ধান্ত হল — শারীরিক নির্যাতনের অপরাধে সুদীপের আশি হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হল, নগদে ছাত্রের বাবার হাতে তুলে দিতে হবে।
পরের দুদিন স্কুলে যায়নি সে। বাড়ি থেকেও বের হতে পারেনি। সে বাড়িতে বসে মনের সাথে দিনরাত লড়াই করেছে। মা বারেবারে বলতো — স্কুলে কারও গায়ে হাত তুলতে যাসনা যেন। বাবা বলতো — শোন্ মাথা দিয়ে মাষ্টারী করবি, হৃদয় দিয়ে পড়ানোর সময় এখন আর নেই। কিন্তু সুদীপ কোনদিন শিক্ষকতাকে নিছক চাকরি বলে ভাবতে পারেনি, তাই মাথা গরম করে ফেলেছিল।
দুদিন ঘরবন্দী থেকে আজ সুদীপ একটু ব্যাঙ্কের কাজ সারতে বেরিয়েছে। সেখানে হঠাৎ তার মাষ্টারমশায়ের সাথে দেখা। এগিয়ে গিয়ে স্যারকে প্রণাম করলো। কিন্তু স্যারের চোখের দিকে মুখ তুলে তাকাতে পারলো না। সস্নেহে স্যার পিঠের উপর হাত রেখে বললেন — আমি সবই শুনেছি। দুঃখ করো না। কষ্ট হচ্ছে জানি, আমারও হচ্ছে, কেন জানো? ঠান্ডা মাথায় একটি শিক্ষকের মনটাকে খুন করা হলো বলে।আচ্ছা সমাজ তার এত বড়ো ক্ষতিটা কি কোন দিন বুঝবে না! ছাত্রের দুচোখ লাল, স্যারের গলাও ভারি হয়ে এলো। স্যার আবার বললেন — আমরা মানে পুরোনোরা এটা নিশ্চিত জানি, আমারা বেঁচে রয়েছি এবং থাকবো তোমাদের মধ্যে। আর এটা আমাদের পরম শান্তি। কিন্তু তোমরা... তোমরা কী নিয়ে বাঁচবে?