সর্ষে বাটা ইলিশ - নুসায়বা আহমেদ
সর্ষে বাটা ইলিশ - নুসায়বা আহমেদ
শ্রীকান্ত আজ ও পড়া শিখে আসেনি । স্কুলের ইংরেজি স্যার এতো গুলো গুলো পড়া দিচ্ছেন আগামীদিনের জন্য । শ্রীকান্ত অপেক্ষা করে যাচ্ছে স্কুল কবে ছুটি হবে , তার মন যে অন্য দিকে পরে আছে ।
মা ওহ ! মা , খাবার তৈরি হয়ে গেছে , কিন্তু জল খাবার খেয়ে নিতে পারবে । তা তো খাবো , কিন্তু তোর বিয়েটা যে কখন খাবো কে জানে ? মা তুমি ও না বড্ড বারাবরি করছো , আমি যদি বিয়ে করি তাহলে তোমায় আর এই সংসার কে দেখবে , বলো শুনি । এই বলে কনক অন্য ঘরে গেল । মা একটু বেশি চিন্তা করে আমাকে , নিয়ে আমি সংসার এর হাল ধরেছি ঠিক, কিন্তু আমাকে কেন যানি না অন্য রকম করে দেখে । আজ যদি আমি সময় মতো বিয়ে করতাম , তাইলে স্বামী নিয়ে সংসার করতাম। তাতে কি হয়েছে আমি এমন ঠিক আছি ।
শ্রীকান্ত স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে , যাওয়ার সময় ফুলকী সাথে দেখা । ফুলকী বলছে এই শ্রীকান্ত দাঁড়াও না , আজ স্কুলে কি কি পড়িয়াছে ? শুধু কি পড়িয়েছেন শাস্তি ও দিয়েছেন মাস্টার মশাই । ওমা এ কি বলো শুনি , না বাবা না আমি আজ যাই নি ভালোই হয়েছে । কি আর ভালো অপেক্ষা করো , স্কুল থেকে চিঠি আসবে না আসার কারনে । আ্যহ কি বলো , এখন কি হবে আমাদের ? আমাদের নয় শুধু তোমার বলো , আমি তো স্কুলে গিয়ছি আজকে । বাড়িতে চিঠি আসলে কি জবাব দিবে তার চিন্তা করো । এই বলে শ্রীকান্ত হাঁটা শুরু করলো বাড়ির উদ্দেশ্যে । আয়কে পা এগোতে তার নাকে সুমধুর হাওয়ার মতো সরিষার তেলের সুগন্ধ আসছে। দৌড়ে চলে গেলো কাঁকন এর হেঁসেল এর জানালার দিকে । বেশি দূর এগোতে না এগোতে শ্রীকান্ত বন্ধু বলে বসল , কি রে ! বন্ধু কোই যাস ? শুনতে পাচ্ছি না , আহা! কি সুন্দর সুঘ্রাণ বের হচ্ছে , মনে হচ্ছে ঝাঁজে ডুবে আছে । দুর , পাগল এভাবে কারো বাড়িতে উঁকি মারতে নেই খারাপ ভাববে । এই বলে দুজনই চলে গেল বাড়ির উদ্দেশ্যে ।
শ্রীকান্ত স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর , বার বার তার মনে একটা খচখচ করছিলো । সে বারবার বলে চলছে , যদি সর্ষে বাটা ইলিশ খেতে পারতাম তাহলে কতোই না মজা হতো । আফসোস খেতে পারলাম না । এই ভেবে সে খাবার ঘরে গেল আর বললো মামনি জল খাবার কি আজ পাবো না নাকি ? বড্ড খিদে পেয়েছে , দাও না জল খাবার । আহা এতো চেচাসিস কেন দিচ্ছি তো খাবার । খাবার টেবিলে বসতে যাবে , তখন মনে পরলো কাঁকন দের বাড়িতে তো সর্ষে ইলিশ রান্না হয়েছে আমি যেয়ে নিয়ে আসি গিয়ে মাছটাকে । মাছ আনতে দৌড়ে চলে গেলো শ্রীকান্ত । মা খাবার টেবিলে খাবার রেখে বলছে , কিরে শ্রীকু ! বাবা কোই তুই ? এ যাহা ! চলে গেল , আমাই জল খাবার আনতে বলে চলে গেলো । খাবার যে ঠান্ডা হয়ে গেল , আসুখ আজ পেয়েছি আমি তাকে । শ্রীকান্ত , কাঁকনদের জানালা দিয়ে উঁকি মারছে বরাবরই , তখন কাকনের মা বলে উঠলো , কে রে ! কে রে! কে ওখানে ? কাঁকন বলে আমি দেখছি মা । ওমা তুমি কে গো ? আমি আহহহহ আসলে , কাকনের মা বলছে এতো আমতা আমতা না করে বলো কি চাই কি এখানে ? না আসলে আমরা পাশের বাড়িতে থাকি দোতালায় । আসলে আমার মা না অসুস্থ , তাই আজকে রান্না করতে পারে নি । আপনাদের কাছে কি তরকারি হবে ? কেন আমাদের কাছ থেকে তরকারি কেন? তোমাদের বাড়িতে বুঝি আর কেউ নেই ? মা বললো । শ্রীকান্ত বরাবর মিথ্যে কথা বলে যাচ্ছে , না গো ! মাসিমা আমি আর , আমার মা ছাড়া কেউ নেই বাড়িতে । অনেক কষ্টের জীবনযাপন করছি তো । আচ্ছা ঠিক আছে বাটি খানা তো দাও । বাটি কিসের বাটি গো ? এহ মা তোমার হাতের বাটি টা আর কি , দাও দেখি তোমাকে দুখানা তরকারি দি । এই কথা শুনে শ্রীকান্ত তো আনন্দের শেষ নেই । সে মনে মনে বলছে , এ বুঝি সর্ষে ইলিশ পাবো এখন খেতে । কাঁকন এক বাটি তরকারি আনলো ঠিক , কিন্তু সে বাটিতে সর্ষে ইলিশ নয় বরং নিরামিষ তরকারি আছে । নিরামিষ তরকারি দেখার পর শ্রীকান্তের চেহারাটা যে কেমন হয়েছে তা দেখার মতো ছিল । বাড়ি চলে যাওয়ার সময় সে একটি কথা বার বার বলছিল , এতো কষ্টো করে মিথ্যা বলাম কি , নিরামিষ আনার জন্য ? ধুর ! যাইগা । বাসায় পৌছাতে মা বলে বসলো কি রে ! শ্রীকু , গেলি কোথায়? জল খাবার দিতে বলে ? জল খাবার যে , ঠান্ডা হয়ে এলো । আমি বাহিরে গিয়েছিলাম । তা তো দেখতে পারছি । একি হ্যা ! তো হাতে নিরামিষ তরকারি ? কোথা থেকে পেলি এই তরকারী ? শুনি । মা তুমি কি মনে করছো , রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনেছি আমি ? আমি কি তা বলেছি নাকি , কেউ তো দিয়েছে , কে দিয়েছে বল না ? আছে আমার এক শুভাকান্খি , সে দিয়েছে । আচ্ছা আমাই একটুখানি দে তোর নিরামিষ তরকারি । তোমাই কেন দিবো আমি ? আমার তরকারি , আমি খাবো । আচ্ছা বাবা তোর তরকারি তুই খাস কেমন । সর্ষে ইলিশ দেইনি তো কি হয়েছে , এই তরকারি খাবো আমি , মজা করে খাবো । এই বলে শ্রীকান্ত খেতে লাগলো ।
