সোমকের অন্তর্ধান
সোমকের অন্তর্ধান
![](https://cdn.storymirror.com/static/1pximage.jpeg)
![](https://cdn.storymirror.com/static/1pximage.jpeg)
“মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুমটা ভাঙল তনুজার। রাত্রি তিনটে পনেরোয় চৈতির ফোন! ঘুমচোখে রিসিভ করল, “কী রে! এত রাতে ফোন কেন?” বিপরীতে ভেসে আসা কথাগুলো শুনে মুহূর্তের জন্য ওর পায়ের তলার মাটিটা যেন সরে গেল!”
তখন সবে কলেজে পা রেখেছে তনুজা। সাইকোলজি অনার্স। কদিনের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল প্রাণোচ্ছল স্বভাবের জন্য। ধীরে ধীরে বন্ধু সংখ্যা বাড়ল। কিছুদিন পর থেকেই ও, চৈতি আর সোমক – থ্রি মাসকেটিয়ার্স।
কলেজের শেষ লগ্নে সোমক স্বল্পবাক চৈতিকে বেছে নেয় জীবনসঙ্গী হিসাবে। তবে এই সিদ্ধান্ত ওদের বন্ধুত্বে চিড় ধরাতে পারে না। বরং তনুজা মাঝেমাঝেই বলে, “এই বেশ ভালো, আমি একলাই ঠিক আছি। শুধু মাঝেমধ্যে ধার দিস তোর বরকে।“ ওর রসিকতায় তিনজনেই হেসে ওঠে।
বছর কতক পর, চৈতি রানী রাসমনি বালিকা বিদ্যালয়ের বাংলার দিদিমণি, সোমক লালবাজারের দুর্নীতি দমন শাখার ইন্সপেক্টর আর তনুজা গোয়েন্দা বিভাগের সাইকো অ্যানালিস্ট।
মাঝরাতে মোবাইলে চৈতির গলায় উদ্বিগ্নতার ছাপ স্পষ্ট।
“তনু, ও বিকালে বেরিয়েছিল, বলেছিল ফিরতে রাত হবে। বারটা নাগাদ একবার ফোন করি, সুইচ অফ বলে। তারপর থেকে অনেকবার ফোন করেছি, প্রতিবারই ‘সুইচ অফ’ বলছে। এখন কি করব?”
“দাঁড়া দেখছি। কোনো খবর পেলে তোকে জানাচ্ছি।“
লালবাজারে ফোন করে তনুজা –
“তনুজা রায় বলছি। রেইডের লিস্ট দেখে বলুন, সোমক বসু আজ কোনদিকে গেছেন?”
“দেখছি ম্যাডাম, আপনাকে কল ব্যাক করছি।“
মিনিট দুয়েক পর তনুজার মোবাইল জানাল, সোমক বসুর আজ রেইডের ডিউটি ছিল না।
মনের মধ্যে অজানা আতঙ্ক ছড়িয়ে গেল তনুজার। কি করা উচিত এখন? নাঃ, সোমকের ওপরের এসিপি মুখার্জি স্যারের সাথে ওর যথেষ্ট সখ্যতা। ওকে নিজের বোনের মত ভালোবাসেন মানুষটা।
“স্যার, তনুজা বলছি।“
“তনুজা, জানি তুমি কি জিজ্ঞাসা করবে, চিন্তা করোনা, কাল অফিসে এস, খবর পাবে। ফোনে আর কিছু বলতে পারব না।“
“কিন্তু স্যার, ওর স্ত্রী” –
“বললাম তো, কাল এস।“
<
/p>
চৈতিকে ফোন করে তনুজা-
“শোন, যেটুকু জানলাম, ও ঠিক আছে। আমার সাথে কথা হয়নি, তবে মুখার্জি স্যারের কথায় মনে হল কোনো বিশেষ কাজে আছে। তোকে পরে সব জানাব।“
বাবুঘাট –
কলকাতার এই জায়গাটা যেন একটা মিনি ভারতবর্ষ। একদিকে গঙ্গায় পুণ্যার্থীদের ভিড়, অন্যদিকে দুরদুরান্তের বাসে বুকিংয়ের জন্য লোকজনের হাঁকডাক। ছাতে নানান মালপত্র সাজিয়ে, তেরপল দিয়ে বাঁধতে ব্যস্ত কিছু মানুষ।
নানামানুষ নানা পসরা নিয়ে বিকিকিনিতে ব্যস্ত।
এক জায়গায় একটা ছোট্ট জটলায় বেশ গন্ডোগোল লেগেছে বোঝা যাচ্ছে।
দুমকা গামী পাশাপাশি দুটো বাস। খালাসীরা এক ব্যক্তির ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করছে। কার গাড়িতে মালটা যাবে সেই নিয়ে গন্ডোগোল।
“আরে মেরা বাত শুনো। মেরা পাস বহুত অর্ডার হ্যায়, বর্ডার মে আদমি আয়েগা, উসে সামান দে দেনা।“
“কেয়া মাল হ্যায়?”
“উসসে তুমহারা কেয়া মতলব? দোনো আধাআধি লে যাওগে।“
“ইয়ে সব সমান কে লিয়ে পয়সা জাদা লাগতা হ্যায়। আপ নয়া হ্যায় কেয়া?”
“হাঁ, কলকতামে পহেলি বার।“
“কোই চিন্তা নেহি, সামান পহুছ জায়েগা।“
“দো চার দিনকে বাদ বহুত সামান লায়েঙ্গে, ফোন করেঙ্গে, নম্বর দো।“
দিনকতক পর, সেই যুবক ছোটছোট বেশ কিছু ব্যাগ এনেছে। দুটো বাসের ছাতেই উঠছে ব্যাগ।
হঠাৎ বদলে গেল জায়গাটা। কোথাথেকে সশস্ত্র একদল লোক ঘিরে ফেলল পুরো এলাকাটা। তাদের তত্ত্বাবধানে শুরু হল সার্চ অপারেশন।
ঝাড়খন্ড গামী চারটে বাস থেকে উদ্ধার হল বেশ কিছু গাঁজা, চরস, আফিমের ব্যাগ। যার বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। বেআইনি অস্ত্রের বেশ বড় দুটো ভান্ডারও উদ্ধার হল।
সেদিন সন্ধ্যাবেলায়, তিনজন একসাথে চা খাবার সময় চৈতি জিজ্ঞাসা করল –
“তুমি আমাকে কিছু বলে গেলে না কেন? তনু তুইও পরেরদিন সবজেনেও কিছু বললি না। শুধু বললি ও ভালো আছে। কেন বলতো?"
“সখী, বিরহ প্রেমের আগুনকে উসকে দেয়, তোর ভালোর জন্যই করেছি। আমি চললাম, এবার দুজনে বিরহ আগুনের জ্বালা প্রেম সাগরে ডুব দিয়ে নেভাও।“