স্মৃতির পাতা থেকে
স্মৃতির পাতা থেকে
জীবনের প্রথম প্রেম।প্রেমে পড়ার অনুভূতিটা কিন্তু দারুন।মনটা যেন উড়ছে হাওয়ায় আর ভাসছে।কোথাও যেন খারাপ কিছু চোখেই পড়ছে না।অভিমান, রাগ সব যেন কোথায় হারিয়ে যায়।তখন আমার ক্লাস এইট।স্কুল যেতাম এক বন্ধুর সাথে কিছুটা রাস্তা হেঁটে।যাওয়ার পথেই একদিন হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা দোতলা বাড়িব বারান্দায় একটি ছেলে দাঁড়িয়ে সোজা আমার দিকে তাকিয়ে।বেশ ফর্সা আর ছিপছিপে দেখতে ছেলেটিকে, সেই শুরু।রোজ নির্দিষ্ট সময়ে ছেলেটি দাঁড়িয়ে থাকত।আর ওই সময়টুকু একে অপর কে মেপে নেওয়া। প্রেমটা ছিল এইটুকুই।আর এগোবার সাহস ও ছিল না।বাড়ীতে জানতে পারলে স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যেত একা একা।ছেলেটির সেই উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকাটা আমাকে খুব আকর্ষণ করেছিল৷ মনে পড়ছে এটা চলেছিল বছর খানেক।তারপর ছেলেটি দোতলা থেকে নীচে অবতরণ করল। মানে আমার এক পাড়াতুতো দাদাকে ধরে আমার কাছে পৌঁছবার প্রচেষ্টা। প্রথমদিন তো হাত-পা কেঁপে যাচ্ছেতাই ব্যাপার।তার উপর ভয় কোথায় কে দেখে ফেলবে।তাহলে তো বাবার মার একটাও বাইরে পড়বে না।যাইহোক হঠাৎ একদিন স্কুল যাওয়ার পথে একটা লাইফসায়েন্স বই ধরিয়ে দিয়ে হাতে, ছেলেটি সাইকেলে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।সন্তর্পনে বইটা খুলে দেখে নিলাম,ভেতরে একটা কাগজ,জীবনের প্রথম প্রেমপত্র।হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে স্কুল গেলাম।অধীর আগ্রহে টিফিন পিরিয়ড'এর অপেক্ষা। অবশেষে হাতে প্রেমপত্র।আজ আর অত মনে নেই কিন্তু এটা মনে আছে যে পড়ার সাথে সাথে অত প্রেম একেবারে উবে গেল।জঘন্য ভাষায় ভুলে ভরা আর অতি জঘন্য হাতের লেখায় একটি প্রেমপত্র।আমি আবার হাতের লেখার প্রতি অতি মনযোগী।মন এত খারাপ যে চিঠিটা যে বই এর ভেতর রয়ে গেল সেটা মাথার থেকে বেরিয়ে গেছে।বই সমেত বাড়ি।আর সেদিনই মায়ের ব্যাগ চেক।ব্যস, উদোম মার জুটল।দুঃখটা মার খাওয়ার থেকে বেশী হল জীবনের প্রথম প্রেম হারিয়ে যাওয়ার জন্য।