সাফল্য
সাফল্য
(১)
অসামান্য প্রতিভাধারিনী আহিরী সেন গত ৮ বছরে স্কুলের মধ্যমণি হয়ে উঠেছে। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে দিলেও, স্কুলে তার অবাধ বিচরণ। তাকে ছাড়া শঙ্করপুর উচ্চ বিদ্যালয় যেন অন্ধকার। ছোটোবেলা থেকেই সে পড়াশোনা তে খুব ভালো। এমনকি তার গান সমগ্র শঙ্করপুর গ্রামকে মুগ্ধ করে। ছোটো থেকে তার স্বপ্ন সঙ্গীত শিল্পী হওয়ার। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মানো এই মেয়েটি সকলকে এক নিমিষে আপন করে নিতে পারত।
বাবা সুব্রত সেন ,সামান্য একজন মেকানিক । শংকরপুর গ্রামের একপাশে তার বাইক রিপেয়ারিং দোকান । মা আশাদেবী গৃহকর্মী । প্রতিবেশী ছাড়া তাদের তেমন কোনো আত্মীয় ছিল না । কিন্তু আহিরীর খ্যাতি ও সুব্রত বাবুর সৎ মানসিকতা তাদের অনেক পরিচিতি বাড়িয়ে দেয় ।
ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় স্যার-ম্যাডামরা বিনা খরচে পড়াতেন। মায়ের কাছ থেকেই তার গান শেখা। প্রাইভেট টিউশন না থাকলেও নিজের অসাধারণ প্রতিভা নিয়েই ক্রমশ সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছে আহিরী। মা-বাবা সহ স্কুলের স্যার-ম্যাডামরা তাকে নিয়ে খুব গর্বিতl
(২)
আজ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট আউট, তাই সুব্রতবাবু দোকান থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছেন । বাড়ির রোয়াকে বসে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন,
- মেয়েটা সেই কখন স্কুলে গিয়েছে ,এখনো ফিরছে না কেন বলতো ? আমরা বাড়িতে যে টেনশন এ আছি সেটা তো ওর অজানা নয় । আশা দেবীও মনে মনে খুব বিচলিত হয়ে উঠেছেন, কিন্তু স্বামীকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বললেন ,
- তুমি একটু থামো তো। রেজাল্ট বেরোবে , মার্কশিট নেবে, স্যার-ম্যাডামদের সাথে কথা বলবে , তারপর না বাড়ি আসবে ?
ইতিমধ্যেই মেয়ে এসে দুজনের গলা জড়িয়ে হাঃ হাঃ করে হেসে উঠলো । মেয়ের মুখের হাসি দেখে একটু স্বস্তি পেলেন , আবার অবাক হলেন স্কুলের স্যার ম্যাডামদের দেখে ,
- আপনারা ?
- হ্যাঁ বাড়িতে আসতেই হলো, আপনাদের মেয়েকে কান্ড করেছে জানেন ?
সুব্রতবাবু অস্থির হয়ে ওঠেন ,
- কি কান্ড ?
- আরে না না , আপনি অস্থির হবেন না।
- বলুন না ম্যাডাম কি হয়েছে ? আমরা যে খুব ভয় পেয়ে গেছি।
- ভয় পাবেন না । বরং আনন্দ করুন , আপনাদের মেয়ে মানে আহিরী সেন শুধু শংকরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে নয় পুরো জেলার মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে ।
- কি বলছেন ম্যাডাম ?
- ঠিকই বলছি ।ও আমাদের পুরো জেলার গর্ব। তাই আর কিছুক্ষণ পরে জেলার সুপার ওকে সম্বর্ধনা দিতে আপনার বাড়িতে আসবে।
- মা ,বাবা আর তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। এরপর থেকে স্কলারশিপের টাকায় আমি অনেক দূর পড়াশোনা করতে পারবো ।
তারপর কয়েকদিন বাড়িতে হৈ-চৈ লেগে রইল। স্কুলের স্যার-ম্যাডামরা আহিরীকে শহরের এক ভালো কলেজে ভর্তি করে দিলেন ।আর্টস নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে , তাই ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে কলেজে ভর্তি হলো, সঙ্গে গানটাও ধরে লাগলো ।
(৩)
আজ দু মাস হলো আহিরি বাড়ির বাইরে পা রেখেছে । সবকিছু তার কাছে নতুন । অজানা পরিবেশটাকে একটু একটু করে চিনতে শুরু করেছে । কলেজে তেমন বন্ধু-বান্ধব তৈরি করতে না পারলেও প্রফেসরদের কাছে একটা পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছে । কলেজের নবীনবরণে গাওয়া গান আর উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বর এই দুটো তাকে পরিচিত করে তুলেছে ।
কিন্তু এই ছন্দময় জীবনে হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে গেল। হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ করেই সুব্রতবাবু চলে গেলেন । মাথার ওপর নিরাপদ ছায়াটা হারিয়ে ফেলল। মা ও মেয়ে অথৈ সমুদ্রে ভেসে গেল । বাবার দোকান বিক্রি করতে হল বাধ্য হয়ে । কিছুদিন যাওয়ার পর মাও একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন । বাবার যেটুকু সঞ্চয় ছিল সেই দিয়ে মা ও মেয়ের খাওয়া পরা টুকু চলছে কোন রকমে।
সেদিন কলেজের ক্যান্টিনে বসে আনমনে কি যেন ভাবছে আহিরী , -
(- বাস্তবের কাঠিন্যতা উপলব্ধি করতে পারছি ।আর কতদিন ? এইভাবে তো বাবার সঞ্চয় কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। কি করবো এবার মাকে নিয়ে ? আমাকে কিছু একটা করতেই হবে । যে করেই হোক উপার্জনের রাস্তা টা আমাকে তৈরি করতেই হবে । )
এই ভেবে পরদিন থেকে কলেজের টিফিন পিরিওডে সে বেরিয়ে পড়তো কাজের খোঁজে। কলেজের আশেপাশে ঘুরে ঘুরে কাজের খোঁজ করতে লাগলো । কিন্তু, এই অচেনা শহরে ,কে দেবে তাকে কাজ ? কে বা ভরসা করবে তাকে ?
একদিন কলেজে ক্লাস শেষ হওয়ার পরেও অনেকক্ষণ বসে ছিল ।
হঠাৎ করে সে পড়ল কলেজ ইউনিয়নের মাথা সায়ক চৌধুরীর নজরে,
- এই যে ম্যাডাম । ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে ।এখনো বাড়ি যান নি ?কি ব্যাপার ? কিছু হয়েছে ?
আহিরীর কিছুই কানে গেল না। সে শুধু চুপ করে বসে রইল ।এখন তার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে।
এবার আর চুপ করে থাকতে পারল না সায়ক। মুখের কথা কাজ হচ্ছেনা দেখে , ইউনিয়নের একটা মেয়েকে ডেকে বলল ,
- ঈশিতা। দেখতো মেয়েটা কে ? কথাবার্তা বলে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করতো কি হয়েছে ।
- আমি পারবোনা । আমার আজ তাড়া আছে। আমি ডেকে দিচ্ছি । তুমি কথা বলে নাও ।
- ঠিক আছে । তাই কর ।
- এই মেয়ে (গায়ে হাত দিয়ে ) তোমার সাথে সায়কদা কথা বলবে ।
ঈশিতা স্পর্শে এতক্ষণে সম্বিত ফিরল ।
- কি বলছেন ? কে কি বলবে ?
- ওই যে আমাদের ইউনিয়নের সায়কদা , তোমার সাথে কথা বলবে ।
সায়কদা তোমরা কথা বলো আমি আসছি।
- এই তোমার নাম কি ? ক্লাস তো অনেকক্ষণ শেষ । কি করছো এখানে ? একটু পরেই কলেজের গেট বন্ধ হয়ে যাবে । চলো আগে কলেজ থেকে বেরোই, তারপর কথা বলছি ।
কি করবে বুঝতে না পেরে সায়কের সঙ্গে কলেজ থেকে বেরিয়ে এলো। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ি যাওয়ার জন্য বাস ধরবে বলে ।
আজ বাস আসতে দেরি করছে তাই ওখানে বসেই দুজনে কথা বলছিল ।
- শোনো আহিরী , আমি এই কলেজ ইউনিয়নের মাথা, তাই কলেজের যে কারোর কোন সমস্যা হলে , আমি আমার সাধ্যমত সাহায্য করার চেষ্টা করি । তাই তোমার সমস্যার কথা তুমি বিনা দ্বিধায় আমাকে বলতে পারো । আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।
প্রায় দু'ঘণ্টা বাস লেট করল । এই সময়ের মধ্যে দুজন বেশ ভালো বন্ধু হয়ে উঠলো। এবং আহিরী সম্পর্কে প্রায় সব কথাই জানতে পারল সায়ক।
অচেনা-অজানা শহরে তার পাশে কাউকে পেয়ে মনে মনেএকটু শান্তি পেল আহিরী।
সায়ক চৌধুরী থার্ড ইয়ারের ভূগোল অনার্সের স্টুডেন্ট। বাবা এই শহরের বিখ্যাত ব্যবসায়ী অমিতাভ চৌধুরী । মা নেই। বাবা, দাদা ও বৌদিকে নিয়ে ছোট এবং প্রভাবশালী পরিবার। ইউনিয়ন করলেও ছেলেটা খুব ভালো , যেমন দেখতে শুনতে , তেমন ব্যবহারেও । নেশা করেনা। এক কথায় শিক্ষিত ,ভদ্র , স্মার্ট ছেলে।
আহিরীকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে, তার মায়ের সাথে পরিচয় করে , তারপর বাড়ি ফিরল ।
পরেরদিন কলেজে ক্যান্টিনে বসে গল্প করছে সায়ক ও আহিরী ,
- আমি স্টুডেন্ট জোগাড় করেছি , তুমি কি আজ থেকেই গান শেখাবে ?
আহিরী এক পায়ে খাড়া।
- হ্যাঁ যা। তবে.....
- তবে কিছু না । আজ কলেজ শেষ করেই তোমায় নিয়ে যাব । তৈরি থেকো।
ক্লাস শেষ করেই দু'জনে বেরিয়ে পড়ল। সায়ক তার ভাইঝিকে গান শেখানোর জন্য আহিরীকে নিজের বাড়িতেই নিয়ে গেল । যদিও গতকাল রাতে সবার সাথে আলোচনা করে রেখেছিল ।
এখান থেকেই আহিরীর পথচলা শুরু ।যেহেতু সায়ক নিজেও গান গাইতো এবং শেখাতো , তাই সমস্ত গানের টিউশন গুলো আহিরীকে দিল । আহিরী উপার্জনের রাস্তা খুঁজে পেল । এরপর সায়কের সাহায্য নিয়ে অনেক ছোট-ছোট গানের শো করতে লাগলো । মায়ের দেখাশোনা করা , বাড়ি-ঘর সামলানো , নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া, গান শেখানো সবকিছুতেই সায়ককে পাশে পেল আহিরী। তার ছন্দহীন জীবনকে আবার ছন্দময় করে তুলল সায়ক।
(৪)
দেখতে দেখতে দু বছর কেটে গেছে । আজও আহিরী কে বাড়ি পৌঁছে দেয় সায়ক । আজ হঠাৎ মনটা কেমন কেমন করছে, তাই কলেজ থেকে ফেরার পথে ,বাসে বসেই সায়কের কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে ছিল । হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল, 'বড় আশা করে এসেছি গো .....'
- হ্যালো , আহিরী । আমি তোর পাশের বাড়ির কাকা মনি বলছি ।
- হ্যাঁ । বল । কি হয়েছে ? তোমার গলাটা এমন শোনাচ্ছে কেন ?
- তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আয়। তোর মার শরীরটা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে ।ডাক্তারবাবু এসেছেন। নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হবে। তুই তাড়াতাড়ি আয়। আমি রাখছি ।
- না ।মা তোমার কিচ্ছু হবে না । আমি আসছি। (কান্নায় ভেঙে পড়ল ) তার চোখের জল মুছে দিয়ে সায়ক বলল ,
- কিচ্ছু হবে না মাসিমার । আমিতো আছি ।আমি সব কথা শুনেছি এবং অ্যাম্বুলেন্স কে ফোন করে দিয়েছি । আমাদের পৌঁছতে পৌঁছতে ওরা পৌঁছে যাবে ।
তারপর কয়েকটা ঘন্টা কিভাবে কেটে গেল কেউই বুঝতে পারল না । নার্সিংহোমে মায়ের কেবিনের সামনে বসে আছে দুজনে । হঠাৎ ডাক্তারবাবু বললেন ,
- পেশেন্টের বাড়ির লোক কে আছেন ?তাড়াতাড়ি পেশেন্টের সাথে দেখা করুন। আমাদের হাতে আর বেশি সময় নেই ।
আহিরী আর সায়ক ছুটে গেল মায়ের কাছে । মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে । আশাদেবী সায়ক কে কাছে ডেকে বললেন ,
- বাবা । আমি জানিনা কোন জন্মের পুন্যিতে তোমার মত একটা ছেলেকে আমরা পাশে পেয়েছি। তুমি আমার মেয়েটাকে সামলে রেখো। আমি চাই ও গান নিয়ে কিছু একটা করুক। এটাই আমার জীবন শেষ ইচ্ছা ।আমার মেয়েটাকে রেখে গেলাম ।
তারপর একটা তীব্র কান্নার রোল ফেটে পরলো সেই কেবিন ।
দ্বিতীয়বার ছন্দপতন ঘটল আহিরীর জীবনে। তার সমস্ত পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেল। কিন্তু সেই অন্ধকার ভেদ করার জন্য সায়ক আলোর দিশারী হয়ে এসেছে আহিরীর জীবনে।
(৫)
প্রায় মাস চারেক পর আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে আহিরী। সায়ক আহিরীর মাকে কথা দিয়েছে তাকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেবে। তাই গত চার মাসে সায়ক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, নিজের সমস্ত কাজ ফেলে , অল ইন্ডিয়া মিউজিক কম্পিটিশন -এ আহিরীর নাম রেজিস্টার করিয়েছে। সহায়কের ও স্বপ্ন ছিলো এই কম্পিটিশন - এ নাম দেওয়ার । কিন্তু একটি মাত্র ফর্ম জোগাড় করতে পারায় সে নিজের জায়গায় আহিরীর নামটাই দিয়েছে।
দুপুরে খাওয়া সেরে শোফায় বসে ঘুমের ঘোরে কি সব ভাবছে সায়ক।
(শুধু কর্তব্যের খাতিরে ,কষ্ট করে ,কেউ নিজের কথা না ভেবে ,অন্যের জন্য এত কিছু করে ? নাকি,অন্য কিছু আছে এর পেছন। সে কি ভালোবেসে ফেলেছে আহিরীকে ? সত্যিই যদি তাই হয় , তাহলে আহিরীও কি তাকে ভালোবাসে ? নাকি , সবকিছু একতরফা ।) এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল সায়কের।
- চারটে বেজে গেছে , এদিকে যে ওকে বললাম সাড়ে চারটের সময় আমার গুরুজীর কাছে নিয়ে যাবো । তাতে গানের তালিমটা আরেকটু ভালো করে দেওয়া যায় । একবার ফোন করে দেখি তৈরি হলো কিনা ।
- হ্যালো , তৈরি হয়েছো ?
- হ্যাঁ, অনেকক্ষণ । আমি বাসে উঠে গেছি। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসব।
- ওকে । আমি স্ট্যান্ডে ওয়েট করছি।
তারপর নিজের গানের গুরুজীর কাছে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করাল আহিরীকে । এবং সেই দিন থেকেই তার গানের তালিম শুরু হলো।
শুরু হল জেতার লড়াই । নিজের স্বপ্ন পূরণের লড়াই। যদিও সেই লড়াইয়ে আহিরী ছিল একমাত্র উপলক্ষ্য , কিন্তু সমস্ত লড়াইটাই পেছন থেকে লড়তে হয়েছিল সায়ককে।
বেশ চলছে তার গানের তালিম। এদিকে কম্পিটিশন চলে এসেছে। ইতিমধ্যেই গ্রামের বাড়িতে তালাবন্ধ করে শহরের ভাড়া বাড়িতে উঠে এসেছে আহিরী , তাও সায়কের সহযোগিতায় ।
একতরফা ভালোবাসা আরও গভীর হচ্ছে। যাইহোক , সায়কের এখন একটাই লক্ষ্য - আহিরীকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিতে হবে, আর ওর সাফল্যের মধ্যে দিয়ে আসবে তার নিজের সাফল্য।
(৬)
আজ অবশেষে সেই দিন এসে উপস্থিত হল। অল ইন্ডিয়া মিউজিক কম্পিটিশন এর ফাইনাল আজ।
- সায়ক ,খুব ভয় করছে । কি হবে ফাইনালে ? ,
- তুমি এত টেনশন করো না তো । আগের রাউন্ডে এত জন প্রতিযোগীর সাথে লড়াই করেছ । ফাইনালে মাত্র 10 জন। দেখো তুমি জিতবেই। আমি জানি ।
- তুমি ভরসা। আমি যখন গান গাইব তুমি স্টেজের সামনে থাকবে ।
- ওকে । আমি সামনে থাকবো। এবার যাও। অল দ্যা বেস্ট।
কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা সুন্দর সঙ্গীতময় পরিবেশ সৃষ্টি হলো। সব প্রতিযোগিতায় খুব ভাল গাইল। এবার ফলাফল ঘোষণার পালা ।
- অল ইন্ডিয়া মিউজিক কম্পিটিশন এর চ্যাম্পিয়ন মিস্ আহিরী সেন।
সায়ক যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তারপর সে অপূর্ব সন্ধ্যার কথা সবার মনে দাগ কাটলো ।
এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আহিরীকে। বড় বড় শো , নামি-দামি গায়কের সাথে প্লে-ব্যাক , গাড়ি-বাড়ি টাকা-পয়সা সবকিছু তার অতীতকে ভুলিয়ে দিল। এবং সায়কের সাথে দূরত্ব বাড়াল ।
সায়ক নিজের মনকে সান্তনা দেয়, হয়তো কাজের চাপে আহিরী তার খোঁজ নিতে পারছে না। তবে সায়ক আজ নিশ্চিন্ত। আহিরীকে সে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছে। কিন্তু তার নিজের জীবনের সাফল্য , সেটা কি পেয়েছি সে ?
একদিন সন্ধ্যায় নিউজ দেখছে সে। আহিরী সেনের লাইভ সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন সাংবাদিকরা। আহিরী সেন বলছেন ,
- আমার এই সাফল্য আমার একার । বাবা মা চলে যাওয়ার পর ,অনেক পরিশ্রম করে, কষ্ট করে, শুধু নিজের প্রচেষ্টায় আমি এই জায়গায় পৌঁছেছি । আমি আমার অতীতকে ভুলে যেতে চাই । সেই কষ্টের দিনগুলো আমি আর মনে করতে চাই না।
-------- এই কথাগুলো শুনে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেল সায়ক। যখন জ্ঞান ফিরল নার্সিংহোমের বিছানায় শুয়ে আছে সে । দাদা-বৌদি কারোর দিকে তাকাতে পারছে না সে । আহিরীর এই পরিবর্তন এবং তার কথাগুলো কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না । অঝর নয়নে তার গালভেসে যাচ্ছে। নিজের কাছে লজ্জিত আজ । কেউ যেন তার ভেতর থেকে অস্ফুটে বলছে ,
( - সায়ক চৌধুরী , তোমার সাফল্য কোথায় ? তুমি হেরে গেছো নিজের কাছে । একতরফা ভালোবাসা তোমার জীবন থেকে তোমার সাফল্যকে কেড়ে নিয়ে অন্য কারোর সাফল্যের গল্প লিখেছে ।)
এবার দাদা কথা বললেন
- একটু খেয়াল রাখো নিজের। কয়েকদিনের পরিশ্রম ,খাওয়া-দাওয়া না করে শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে । ডাক্তারবাবু বললেন হঠাৎ কোনো শক পেয়েছিস, শরীর সেটা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেছিস ।
- দাদা, আহিরী-------
- হ্যাঁ , খবর দেওয়া হয়েছে ।তবে জানিনা আসবে কিনা ------
দাদাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো সায়ক। একদিন যে সায়ক হাসিঠাট্টার মধ্যে দিয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখত ।এবং নিজের সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানোর জন্য , একজন সংগীতশিল্পী হওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে গেছে ।সেই আজ একতরফা ভালোবাসার কাছে সাফল্যের বিসর্জন দিয়েছে । তার মুখের দিকে তাকাতে পারছে না কেউই। আহিরীর অপেক্ষায় সবাই সময় গুনছে।
সত্যি কি আসবে আহিরী ? বুঝতে পারবে তার সাফল্যের আসল কর্ণধার কে ছিল ? সায়কের ভালোবাসা কি পূর্ণতা পাবে ? নাকি , আহিরীর মত হঠাৎ পাওয়া এরকম সাফল্যের আড়ালে সায়কের মতো হাজার হাজার ভালোবাসা নিজের সাফল্যের বিসর্জন দেখবে।
পাঠক বন্ধুদের কাছে অনুরোধ , আপনারা আশীর্বাদ করুন , যাতে সহায়কের ভালোবাসা পূর্ণতা পায় । আহিরী তার নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং "সাফল্য" হয়ে ফিরে আসে সহায়কের জীবনে।।