STORYMIRROR

Koushik Das

Romance Fantasy

1.6  

Koushik Das

Romance Fantasy

রিমঝিম বৃষ্টি (প্রথম পর্ব)

রিমঝিম বৃষ্টি (প্রথম পর্ব)

4 mins
7.7K



                                                                                                                

বৃষ্টি হলেই মনটা কেমন একটা করে রিমঝিমের, এক অন্যরকমের মন কেমনকরা যেটা অন্যসব মন কেমনের থেকে আলাদা । এর আগে পর্যন্ত রিমঝিম বান্ধবীদের কাছে শুধু শুনে গেছে কিন্তু ওরা যেসব কথা বলত সেসব কেমন যেন সুপারফিশিয়াল মনে হত রিমঝিমের।মুখে ‘বাঃ বাঃ দারুণ তো’ বললেও মনে মনে বলত ‘ধুস এমনও হয় নাকি...!’ তবে গত শুক্রবার থেকে রিমঝিম নিজেকে বোঝাতে পেরেছে যে তাহলে এমনও হয় !

মনখারাপের মধ্যে মনভালোকরা একটা গান, ভালোলাগার মাঝে মনকেমনের এক বৃষ্টি স্নান – মনের ভেতরে এমনই অহরহ unpredictable হাওয়াবদল

এটাই ছিল রিমঝিমের প্রেম !

 

রিমঝিমের আরও ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায় – যখন দাদা জ্ঞান দিত আগেই জোরে প্যাডেল মারবি না, আর হ্যান্ডেলটা বেশী শক্ত করে ধরবি না, জাস্ট রাস্তার সামনের দিকে তাকিয়ে ব্যালেন্সে কন্সেট্র্রেট করবি , কিন্তু দাদা যতই বোঝাক না কেন , বাবা যতদিন না সেই মিষ্টি গোলাপি রঙ্গের সাইকেলটা কিনে দিয়েছিল, ততদিন পর্যন্ত সাইকেল চালানো যে কি ব্যাপার সেটা সম্বন্ধে রিমঝিমের কোন আইডিয়াই ছিল না।এই প্রেমের ব্যাপারেও ঠিক এমনটাই হল ওর সাথে !

 

এটা সেদিনের কথা যখন বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর আসাতে এক সপ্তাহ পরে প্রথম ক্লাসে ( ইলেভেন সায়েন্স) যায় রিমঝিম । ওদের বয়েজ্ হাইস্কুল (এখন যেখানে ভর্তি হয়েছে) আর গার্লস হাইস্কুল ( ক্লাস ১০ পর্যন্ত যেখানে পড়ত ) এর মাঝখানে একটা ফুটবল মাঠের ব্যবধান । এই বয়েজ্ হাইস্কুল নিয়ে কত জল্পনা কল্পনা চলত ওদের মধ্যে, কবে ওরা মাধ্যমিক দেবে আর তারপর ছেলেদের সাথে একসাথে ক্লাস করবে ! উফফফফ কি রোমাঞ্চকর ব্যাপার ! শেষমেশ আজকের দিনে আরও অনেকের মতই রিমঝিমের কৌতূহলের অবসান হল । ক্লাসের একদিকে ছেলেরা ও একদিকে মেয়েরা বসেছে । বিজ্ঞান বিভাগে মেয়েদের সংখ্যা কম বলে দেরী করে আসাতেও সেকেন্ড বেঞ্চেই জায়গা পেয়ে গিয়েছিল রিমঝিম । তখন থার্ড পিরিয়ড চলছে , দিলীপ স্যার পাস্কালের সূত্র ব্যাখ্যা করে আরও ক্ল্যারিটি আনার জন্য একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে যাচ্ছিলেন এমন সময় চারজন ছেলে ‘স্যার একটু আসব’ বলে ক্লাসে ঢুকল । এই সুযোগে কালি শেষ হওয়া পেনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগ থেকে আরেকটা পেন বের করে মাথা তুলে তাকাতেই ভেতরটা ঝ-ন্‌-ন্‌-ন্‌-ন্‌ করে উঠল। ততক্ষণে সে, স্যার যেখানে বসে সেই কাঠের টেবিলের স

ামনে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করেছে –

“ আমাদের স্কুলের গোল্ডেন জুবিলি প্রোগ্রামের আর বেশী দেরি নেই, তাই আমরা হেড স্যারের পার্মিশন নিয়ে ডিসাইড্ করেছি এখন থেকেই ইভেন্টের প্রিপারেশন শুরু করে দেব । সায়েন্স এক্সিবিশন থেকে শুরু করে নাটক, ডিবেট, নাচ , আবৃত্তি, কুইজ কম্পিটিশন এমন অনেক ক্যাটাগরিতে ইভেন্ট হবে । আর্টস ও কমার্স বিভাগের চেয়ে আমাদের বিভাগের ছাত্র সংখ্যা অনেক কম, তবুও আমরা দেখিয়ে দিতে চাই পড়াশুনো ছাড়া এক্সট্রা ক্যারিকুলামেও এই স্কুলে আমরাই সেরা । আর সেজন্য তোমাদের সকলের অ্যাক্টিভ পার্টিসিপেশন চাই । তোমরা নতুন এসেছ তাই হয়ত আমাদের চেনোনা, আমরা তোমাদের সিনিয়র ,১২ সায়েন্স । আর আমি রেয়ান এই ইভেন্টের হেড । শীল স্যারের সাথে কথা বলেছি ,আজ টিফিন ব্রেকের পর উনি তোমাদের কেমিস্ট্রি ক্লাস নেবেন না, তার বদলে আমরা ইভেন্টের প্ল্যানিং এর ব্যাপারে ডিসকাস করব । তাই শার্প দুটোতে সবাইকে ক্লাসে থাকার জন্য রিকোয়েস্ট করছি ।" 

ক্লাসের স্টুডেন্টদের দিকে তাকিয়ে একনাগাড়ে বলে তারপর স্যারকে “thank you sir” বলে ওরা ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল । রিমঝিম মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছিল রেয়ানের কথা। রেয়ানের কথা শুনছিল বললে ভুল বলা হবে, ওর সমস্ত সেন্স শুধু রেয়ানকে দেখছিল আর অনুভব করছিল । একটা ঝিরিঝিরি রিমঝিম ভালোলাগার বৃষ্টি ভিজিয়ে দিচ্ছিল ওকে । এমন অদ্ভুত অনুভূতি আজকের আগে কখনো অনুভব করেনি রিমঝিম , প্রথমবার সাওয়ারিয়াতে রণবীর কাপুরকে দেখেও মনটা এমন ভালোলাগায় এমন মোচড় দিয়ে ওঠেনি । সেদিন আর কিছু বুঝুক না বুঝুক তবে এতটুকু রিমঝিম আলবাত বুঝে গেছে যে সে অনর্থের থেকে আর বেশী দূরে দাঁড়িয়ে নেই ।

 

রিমঝিম ডিবেট আর এক্সিবিশনে নাম দিয়েছিল। রেয়ান নাটকে পার্টিসিপেট করছে জানবার পর রিমঝিম দিনরাত এক করে ভেবেছে , তবু ওর সাহস হয়নি নাটকে নাম এনলিস্ট করবার । যতবারই মন সায় দিয়েছে ততবারই মাথা লজিক খুঁজে দিয়েছে যে – ‘ তুই এর আগে কোনদিন নাটক করিসনি, তারওপর রেয়ান থাকবে সাথে, ওর সামনে রিহার্সালের সময় খাজা অ্যাকটিং করে ইম্প্রেশনের মা-বোন করার কোনো মানে নেই । আর ধরে নে রিহার্সাল ঠিক ঠাক ভাবেই করলি কিন্তু এতো লোকের সামনে স্টেজে গিয়ে যদি মাথায় সব স্ক্রিপ্ট কেলিয়ে পড়ে তাহলে নিজের সাথে সাথে পুরো সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে।'

 

এই কয়দিনের মধ্যে রেয়ান নিয়ে এতকিছু সে ভেবে ফেলেছে যে মাঝেমাঝে সেসব ভাবতেই লজ্জায় ওর ফর্সা গোলগাল মিষ্টি মুখটি আপেলের মত রঙিন হয়ে ওঠে । তবে স্কুলে যেতেই রিমঝিমের মনের ভালবাসার আকাশে বিষণ্ণতার মেঘ নেমে আসে । রিমঝিম প্রথম থেকেই একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছে যে রেয়ান ওদের (মানে রিমঝিমদের) ক্লাসের বাকি মেয়েদের সাথে ভালোকরে কথা বলা, মেলামেশা ঠিকই করছে শুধু রিমঝিমের বেলায় অবহেলা !

যতটুকু কথা না বললে সৌজন্যবোধ বজায় থাকে না ঠিক মেপে মেপে ততটুকুই কথা বলেছে রেয়ান রিমঝিমের সাথে । রিমঝিম যতবার ভেবেছে ওকে ভুলে যাবে, ওর কথা ভাববে না ঠিক ততবার আরও বেশী করে ভাবতে বাধ্য হয়েছে। ওর পরিস্থিতি ঠিক যেন পৃথিবী(ব্যান্ড)’র গান –

“ যতবার ভেবেছি ভুলে যাবো ... তারও বেশী মনে পড়ে যায়...”(চলবে)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance