Swarnadeep Ray

Romance Classics

4.5  

Swarnadeep Ray

Romance Classics

রিচার্জ

রিচার্জ

4 mins
394



সেলফোনটা হাতে তুলে নিতেই শ্রেয়া বুঝতে পারল যে কল-টা আসছে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে। একটু ইতস্তত করে ও অবশেষে কল-টা রিসিভ করল।

"হ‍্যালো।"

কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতার পরে অন‍্য প্রান্ত থেকে সারা পাওয়া গেল।

-"হ‍্যালো, কে বলছেন ?"

একটি অচেনা পুরুষ কন্ঠ!

-"আপনি কে সেটা আগে বলুন। ফোনটা তো আপনি করেছেন”।

শ্রেয়া বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে।

-"সরি ম‍্যাডাম"

লোকটা একটু অপ্রতিভ হয়ে বলল।

-"আসলে এই নম্বরে ভুল করে একটা রিচার্জ করে ফেলেছি কালকে।"

শ্রেয়ার মনে পড়ল ব‍্যাপারটা। গতকাল তার ফোনে সত‍্যিই একটা উড়ো রিচার্জ এসেছিল। শ্রেয়া বুঝতে পারছিল না কে করল এটা। ওর একবার সন্দেহ হয়েছিল যে কাজটা বোধহয়‌ ‌ঈষাণ-এর। কিন্তু ‌ঈষাণ-এর সঙ্গে তো ওর ব্রেক আপ হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন আগে! এতক্ষণে শ্রেয়ার confusion দূর হল।

ওদিকে ফোনের ওপ্রান্ত থেকে লোকটা বলে চলেছে-

-"হ‍্যালো, ম‍্যাডাম শুনতে পাচ্ছেন ?"

শ্রেয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল

-"আপনার নাম্বারে রিচার্জ ব‍্যাক করে দিচ্ছি। নেক্সট টাইম রিচার্জ করার সময়ে সাবধানে করবেন।"

-"ধন‍্যবাদ ম‍্যাডাম। আমার নাম অভি, আপনার নামটা জানতে পারি ?"

-"কেন ?"

-"না এমনিই। আসলে একজন ভালো মানুষের সাথে পরিচয় হল তো, তাই নামটা জানতে ইচ্ছে করল।"

শ্রেয়া নিজের নাম বলল। তারপর জি‍জ্ঞাসা করল-

-"আপনি কী করেন ?"

-"আমি অটো চালাই ম‍্যাডাম। আমার রুট হল ফুলবাগান টু রাজাবাজার।"

শ্রেয়া একটু চমকে উঠল। 

-"আরে! আমি তো ওই রুটে রোজ‌ই কলেজে যাতায়াত করি।"

-” ও‌ঃ! তাহলে তো ম‍্যাডাম আপনি আমার অচেনা নন‌ । ওই রুটের ডেলি প‍্যাসেঞ্জারদের প্রায় সকলেই আমার মুখচেনা।”

-” তাই বুঝি ?”

-" হ‍্যাঁ ম্যাডাম। অটোস্ট‍্যান্ডে সবাই আমাকে চেনে। কখনো কোনো অটোওয়ালার সাথে ঝামেলা হলে আমার নাম করবেন। আর কোনো প্রবলেম হবে না।”

-"ওকে, থ‍্যাংক ইউ।"

-"মোস্ট ওয়েলকাম ম‍্যাডাম"।


‍*****

এর পরে যা যা হল সেগুলি একটু স‍‌ংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক। যাতায়াতের পথে শ্রেয়া আর অভি একসময়ে পরষ্পরকে আবিষ্কার করতে পেরেছিল । রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজের ছাত্রী শ্রেয়ার সাথে তরুণ অটোচালক অভির একটা সম্পর্ক‌ও গড়ে উঠেছিল। কিন্তু এসব ব‍্যাপারে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা হয়ে থাকে এক্ষেত্রেও তার ব‍্যতিক্রম হল না। উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে শ্রেয়ার অভিভাবকেরা নিম্নবিত্ত পরিবারের অভিকে তাঁদের মেয়ের উপযুক্ত বলে মনে করলেন না। শিক্ষাগত দিক থেকে অভি শ্রেয়ার চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে ছিল না। কিন্তু তাদের মধ‍্যেকার সামাজিক শ্রেণিগত ব‍্যবধানটাই এক্ষেত্রে বড়ো হয়ে দাঁড়াল। 

সময় কোনোকিছুর জন‍্য থেমে থাকে না। শ্রেয়া ও অভির বিচ্ছেদের পর দেখতে দেখতে এক দশক কেটে গেল।

*****

-"মিঃ চৌধুরি তোর সাথে একটু কথা বলতে চান।"

শ্রেয়া দেখল বাবা তার দিকে সেলফোনটা বাড়িয়ে দিয়েছেন।

-"তোমাদের আর কতবার বলতে হবে বাবা। বিয়ে আমি করব না।"

পাশ থেকে শ্রেয়ার মা ঝাঁঝিয়ে উঠলেন,

-" কত ভালো ভালো সম্বন্ধ এলো। তোর পছন্দ হল না। ওই অটোওয়ালাই তোর উপযুক্ত ছিল।"

বাবা এবার মাকে মৃদু ধমক দিয়ে বললেন,

-"আঃ, সিন ক্রিয়েট করো না"।

তারপর শ্রেয়ার দিকে ফিরে মৃদু স্বরে বললেন-

-"দ‍্যাখ মা, তোর বিয়ের জন‍্য কম চেষ্টা করি নি। কিন্ত তোর জেদের জন‍্য‌ই আমরা সফল হ‌ই নি। এবার তুই নিজে থেকে না চাইলে আমরা আর কোনো চেষ্টা করব না"।

শ্রেয়া তার বাবার দিকে একটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি হেনে বলল,

-"তাহলে এই ফোনটা নিয়ে এসেছ কেন ?"

-"আমি চাই তুই তোর সিদ্ধান্ত মিঃ চৌধুরিকে নিজের মুখে জানিয়ে দে। আমি বাবা হয়ে মেয়ের বিয়ের এত ভালো সম্বন্ধ নিজে ভেঙে দিতে পারব না।"

ফোনটা শ্রেয়ার হাতে দিয়ে বাবা মায়ের সাথে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন।

-"ভালো সম্বন্ধ! হুঁঃ!"

শ্রেয়া আপনমনে বলে উঠল।

-"মাল্টি-মিলিয়েনেয়ার জামাই চাই! এদিকে মেয়ের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো দাম নেই ! আর এই মিঃ চৌধুরিই বা কী ভেবেছেন ? তিনি একজন বিজনেস টাইকুন বলেই কি শ্রেয়া মিত্র তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বাধ‍্য নাকি ? "

ফোনটা কানে দিয়ে শ্রেয়া রাগী গলায় বলল,

-"কী বলতে চান বলুন। এক মিনিটের বেশি সময় দিতে পারব না।"

-"হ‍্যালো ম‍্যাডাম।"

একমুহুর্তের জন‍্য বোধহয় শ্রেয়ার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেল।

-"কে ? কে বলছেন ?"

-" ইটস্ মি ম‍্যাডাম, অভিনভ চৌধ্রি"

-"ওঃ"

 শ্রেয়ার কন্ঠস্বরে হতাশার ছাপ ফুটে উঠল।

-"বাট ইউ নো মি বাই অ্যনাদার নেম, ম‍্যাডাম"

-"হোয়াট ?"

-"আমি অভি শ্রেয়া, তোমার অভি!"

কথাটার অভিঘাত শ্রেয়ার মনের মধ‍্যে যেন আবেগের একটা সুনামি সৃষ্টি করল। 

কয়েক মূহুর্ত নিস্তব্দ্ধতার পরে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে আবার কথা ভেসে এল,

-"যে অভিকে তোমার অভিভাবকেরা বাধ‍্য করেছিলেন তোমার জীবন থেকে সরে যেতে। কারণ, সে ছিল গরিব। সোশ‍্যাল স্ট‍্যাটাস বা ব‍্যাংক ব‍্যলেন্স তার কোনোটার‌ই জোর ছিল না। তবে ভালোবাসার জোর তার ছিল। আর সেই জোরেই গরিব অটোচালক অভি হয়ে উঠেছে বিজনেস টাইকুন অভিনভ চৌধ্রি। And now, your parents who once kicked me out of your life are accepting me with open arms. "

হঠা‌ৎ শ্রেয়া বলে উঠল,

-"আপনি ভুল করছেন মিঃ চৌধুরি, মস্ত বড় ভুল"

-"কি বলছ শ্রেয়া !"

-"ঠিক‌ই বলছি। আমি যে অভি-কে ভালোবেসেছি, সে গরিব কিন্তু সৎ ও বিনয়ী একজন মানুষ। বিজনেস টাইকুন অভিনভ চৌধ্রিকে আমি চিনি নি। সে টাকার জোরে আমার অভিভাবকদের বশ করতে পারে ঠিক‌ই কিন্তু আমাকে সে স্ত্রী হিসেবে কখনোই পাবে না।"

অভিনব চৌধুরি দেখলেন কল-টা ডিসকানেক্ট হয়ে গেল।

*****

কাহিনীর পরবর্তী তথা শেষ অ‍ংশটি স্থানাভাবের কারণে সংক্ষিপ্তভাবে বলছি। শ্রেয়া কিছুতেই অভিনব চৌধুরিকে বিয়ে করতে রাজি হল না। কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষ অভি-কে সে ফেরাতেও পারল না। অভির অনুরোধেই সে শেষ পর্যন্ত অভিনব চৌধুরির সাথে মিলে একটি NGO চালু করেছে। সমাজের অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের সাহায‍্য করার পাশাপাশি এই সংস্থার আর‌ও একটি বিশেষ প্রোজেক্ট আছে। এই প্রোজেক্টটির মাধ‍্যমে সেই সমস্ত মানুষদের সাহায‍্য করা হয় যারা পরস্পরকে ভালোবাসলেও সমাজের চাপে একে অন‍্যের থেকে দূরে চলে যেতে বাধ‍্য হয়েছে। সংস্থার CEO শ্রেয়া মিত্র বলেন,

-"হারিয়ে যাওয়া প্রেম, ফুরিয়ে যাওয়া সম্পর্ক নতুন করে রিচার্জ করে দেওয়াটাই আমাদের চ‍্যালেঞ্জ !"

আর এই প্রোজেক্টের নাম ?

ঠিক‌ই ধরেছেন। এই প্রোজেক্টটির নাম হল…

রিচার্জ !


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance