পূর্ণতা
পূর্ণতা
শরৎ কালের নীল আকাশ, সাদা মেঘ আর কাশের দোলায় পরিবেশ গাইছে মহামিলনের সুর। সেনগুপ্ত বাড়ির গিন্নী বারান্দায় বসে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে আছেন। এই বাড়ির ঠাকুর ঘর, চণ্ডী মন্ডপ সব কিছু যেন অপেক্ষা করে আছে উমার আগমনের। কিশোর বয়সে দেখা বাড়িটি আজ জীবন সায়াহ্নে এসে আমূল বদলে গেছে উনার চোখের সামনে। এক সময় যারা তরুণ ছিল আজ তাঁরা বৃদ্ধ। নতুন প্রজন্মের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলেছে কিন্তু বদলায়নি এই বাড়ির পুজো। আধুনিকতা যতই আসুক ঐতিহ্য কে মুছে যায়নি।
কিন্তু এই বছর টা যেন কেমন সাদা কালো। রঙিন আলো যেমন নেই কারো মনে। মারণ ব্যাধিতে চারিদিক তটস্থ।জীবন যুদ্ধে মানুষ আজ বড়ো ক্লান্ত। এই অবস্থায় শারদ উৎসবও অনিশ্চিত হবার জোগাড়।
কথাগুলি ভাবতে ভাবতে কে যেন হঠাৎ জড়িয়ে ধরে বললো
:-" কী ঠাম্মা কী ভাবছ এত!"
:-"ও তুলি, তুই কখন এলি? এই দেখ দেখতেই পায়নি!"
:-" সে আর কী করবে, সারাদিন বসে খালি তোমার বুড়ো টার কথা ভাবলে এরকমই হয় বুঝেছ।"
:-" সেই তো নিজের নাতনি যখন একটা বন্ধু খুঁজে দিচ্ছে না তখন তো বুড়োকেই মনে করতেই হবে।"
:-" তোমার খালি ওই এক কথা। আমি বিয়ে করে গেলে তোমার শান্তি তাই না। বুড়ো টা মরে আমার যত জ্বালা হয়েছে।"
:-"এখন যা ঘরে যা তোর মা বসে আছে তোর জন্য না খেয়ে।"
:-" আচ্ছা তুমি বস। আমি যাচ্ছি ঘরে।"
------ দেখতে দেখতে উনার ছেলে মেয়ে গুলো বড় হয়ে গেল। তাদের সংসার হলো, আলদা জীবন হলো। ঘর আলো করে নাতি নাতিনিরা এলো।ভাবলেন এইবার নাতি নাতিনিদের নিয়ে কাটিয়ে দেবেন বাকি জীবন। কর্তা চলে যাওয়ার পরে তখন এই নাতি নাতনী রাই নিত্য সঙ্গী ছিল তাঁর। রোজ বিকেলে চণ্ডী মণ্ডপে তাদের গল্পের আসর বসত।
তুলি, বাবাই, তোতা দের সঙ্গে বিকেল টা হাসি খুশি মজা তেই কেটে যেত তাঁর। কিন্তু এখন ওরা বড় হয়ে গেছে গল্প শোনাও ফুরিয়ে গেছে। আর তেমন ওরা ঠাম্মার কাছে আগের মতো আসে না। সারাদিন ফোনে মুখ গুজে বসে থাকে। মাঝে সাঝে যাও আসে ওই ইচ্ছে হলে তাও সবসময় নয়।
এই নতুন প্রজন্মকে দেখে উনার কেমন যেন বিষম লাগে। ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না তিনি। মেলাতে পারেন না তাঁর নিজের সাথে।
এই প্রজন্মের স্বাধীনতা আছে আধুনিকতা আছে কিন্তু সেই প্রাণের টান তা কী আছে?
মনে পড়ে সেইদিন গুলো, একদিন তিনিও কিশোরী ছিলেন। তখন বাবার বাড়ির পুজোয় সেই ছোট্ট একট নতুন গামছা কাপড় পড়েও কত আনন্দ ছিল তাঁর। ঝোল বারান্দায় খোলা চুলে দৌড়ে বেরেনো সেই জীবন্ত দিন গুলি, দীঘির জলে সাঁতারে বেড়ানো তাঁর চঞ্চল দুটি পা। গুরুগম্ভীর বাবাও যে মেয়ের কন্ঠের গানে মুগ্ধ হয়ে বলতেন:-" আমার ইন্দু সাক্ষাত বাগদেবী।"
সেই মেয়ের জীবনেও একদিন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এলো আলতায় রাঙানো পায়ে, সপ্তপদীর আলোয় সিঁদুরে রাঙা হয়ে উঠল তাঁর মুখ।
সেই কনে বেশেই মহা আড়ম্বরে একদিন সেনগুপ্ত বাড়ির বউ হয়ে এসেছিলেন। তখন অবাধ স্বাধীনতা হয়তো ছিল না। কিন্তু সেই বাঁধন ভেঙে কিছু জয় করার আনন্দ ছিল অন্য রকম। তখন প্রেম মানে ছেলেখেলা ছিল না, ছিল একে অপরের পরিপূরক হবার শক্তি। তখন বিশ্বাস ঘাকতা ছিল না, ছিল একবার দেখা পাওয়ার অদম্য ইচ্ছা।
মনে পড়ে সেই প্রথম দুর্গা পুজোয় কী অপূর্ব সেজে উঠেছিল এই বাড়ি। নহবত বসেছিল, ভিয়ান বসেছিল। শত শত মানি লোকেরা এসেছিলেন পুজোয়।
দশমীর দিনে যখন দেবীর বরন চলছিল তখন উনার কর্তা তাঁকে সবার আড়ালে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ছাদের ঘরে। ভয়ে ভয়ে ঐদিন গিয়েছিল ঠিকই, ছাদের ঘরে একরাশ সিঁদুরে সেদিন তাঁকে রাঙিয়ে দিয়েছিল কর্তা। সেই চোখে সেদিন ছিল শুধুই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
কিন্তু আজ কোথায় কী! দীর্ঘনঃশ্বাস ফেললেন তিনি। আবার ইচ্ছে জাগল মনে যদি ফিরে পেতেন সেইদিন গুলি আরেকবার বাঁচতে পারতেন তাঁর কৈশোরের চঞ্চলতা, আর সেই অকৃত্রিম ভালোবাসার গান যা ভরিয়ে দিত সবার মন।
এখন কেউ আর তাঁর গান তেমন শুনতে চায় না। ভাঙ্গা গলায় গান শুনতে বড় বাজে লাগে বোধহয়। বিকেলের গল্প টাও ফুরিয়ে গেছে নাতি নাতিনি দের বড় হবার সাথে সাথে।
বড়ো একা লাগে এখন, এই শূন্য জীবন বইতে বইতে ক্লান্ত, খুব ক্লান্ত লাগে।
সূর্য আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে গোধূলির রক্তিম আকাশে। সরলা চেচিয়ে নীচ থেকে গিন্নী কে ডেকে বলল:-" কী গো ঠাকুরন সন্ধ্যে হলো এখনও বসে আছ দেখি। এইবার পুজো হবে তো?"
আনমনা হয়ে গিন্নী বললেন:-" কী জানি!"
তারপরে অস্পষ্ট গলায় গাইলেন:-" আমার আনন্দিনী উমা আজও আসে নি তার মায়ের কাছে,,,।"
------------------------
(২)
এগিয়ে এলো দিন,
দেবীর বোধনের অপেক্ষায় সেনগুপ্ত বাড়ি। একটু একটু করে চণ্ডী মণ্ডপে চিন্ময়ী কে মৃন্ময়ী রূপ দেওয়া প্রায় শেষ। মহামারীর কথা মাথায় রেখে এবার ভক্ত সমাগম বন্ধ, বসবে না ভিয়েন হবে না তেমন আড়ম্বর।
চন্ডী মন্ডপে আজ দেবীর চক্ষুদান হলো।
গিন্নী তাঁর বড় ছেলে আর বউমাকে নিয়ে আজ মায়ের অলঙ্কার আনতে গিয়েছিলেন ব্যাঙ্ক থেকে।
ফিরবার পথে তিনি বললেন
:-" হে রে অরুণ, রুনু এবারে আর আসতে পারবেনা না তাই না রে।"
:-" কী করে আসবে মা। এই সময়ে বিদেশ থেকে এখন ওরা আসবেই বা কী করে।"
:-" বছরে এই কটা দিনই তো মেয়েটা আমার বাপের বাড়ি আসত। এইবার তাও হবে না।"
:-" কী করবে বলো মা। এই সময়ে যে পুজোটা হচ্ছে সেটাই অনেক। আমাদেরও কী আর খারাপ লাগছে না বলো।"
--------নিস্তব্ধ হয়ে রইলেন। বলার হয়তো সত্যি আর কিছু নেই।
মহাষষ্ঠীর দিনে মায়ের বোধন শুরু হলো। ঢাকের শব্দ আর বেদ উচ্চারণে সেনগুপ্ত বাড়িতে মাতৃআরাধনার শুভ সূচনা হলো। বেল তলে বোধন শেষে মায়ের বরণ শুরু হলো।
অপলক দৃষ্টি তে চিন্ময়ী মায়ের দিকে তাকিয়ে দেবীর সাজ দেখছিলেন গিন্নী। হয়তো আরো একবার নিজের সীমন্তিনী রূপটা ভেসে উঠেছিল হৃদয়ে।
পরের দিন মহাসপ্তমীর সকালে তুলি তার ঠাম্মাকে নিজে সাজিয়ে নিয়ে এল মন্ডপে। নব পত্রিকা স্থাপন, পুজো , আরতি, ভোগ , সবকিছুই আছে তবু যেন কীসের এক শূন্যতা যা পুরণ হবার নয়। আজ বাড়ির সবাই আছে গিন্নীর পাশেই কিন্তু তবু যেন কীসের খামতি মনের মধ্যে বার বার নাড়া দেয়। এর উত্তর তাঁর নিজের কাছেই হয়তো নেই।
মহাষ্টমীর সকালে মহাপূজো ঐতিহ্য মেনেই সম্পন্ন হলো।
অঞ্জলি শেষে তোতা তার ঠাম্মা কে বলল
:-" কী গো ঠাম্মা তুমি আজ মায়ের কাছে কী চাইলে, আমাদের কে একবার বলো।"
:-" যা চাইলাম তা যদি পাই, তাহলে আমি ধন্য হবো রে।"
:-" সে কী! কী এমন চাইলে বলত।"
:-" ঠাকুরের কাছে চাওয়া কোন কিছুর কথা বলতে নেই বুঝলি।" বলে গিন্নী নিজেই একটু হাসলেন।
তুলি, বাবাই, তোতারা একটু অবাক হলো ঠিকই।
সন্ধি পূজোর মহাআরতিতে পুরো বাড়ি আবার মেতে উঠল।
সবাই মিলে ধুনুচি নাচে সামিল হলো, সবার এই আনন্দ উন্মাদনার মাঝেও বারান্দায় বসে দেখা মানুষটি কিন্তু এই আনন্দের রেশ পাননি। কারন ততক্ষণে তিনি আপনমনে ঢাকের শব্দে ভেসে গিয়েছেন সেই আগের সময়ে, সেই সানাই এর সুরে অজস্র ঢাকের বাদ্যি, জমজমাট ঢাকের লড়াই। চোখের নিমেষে প্রশান্তির অশ্রু বয়ে গেল হৃদয় জুড়ে।
নবমী মানেই পূজো শেষের অপেক্ষা, হোমযজ্ঞের মাধ্যমে আজ দেবীকে শেষ আহুতি প্রদান। কিন্তু গিন্নী আজ অন্যরকম। ফুরফুরে মেজাজে আজ পুজো দেখছেন, সবার সাথে হাসি ঠাট্টা করছেন। ইদানিং কালে এই দৃশ্য সত্যি বিরল। কী হলো উনার। বাড়ির প্রত্যেকটি লোকের মনে একবার হলেও এই প্রশ্ন নিশ্চই জেগেছে।
নবমী রাতে শারদ আড্ডায় সবাই বসেছে মন্দিরের বারান্দায়।কেউ নাচ, কেউ গান, কেউ আবৃত্তি যে যেমন পারে তেমন ভাবেই আনন্দে সামিল হচ্ছে। একে একে সবার পালা শেষ হলো। তুলি এবার বলে উঠল:-" এবারে ঠাম্মার পালা। ঠাম্মা আজ আমাদের গান শুনাবে।"
বহুদিন পরে আবার সবার সামনে গান শুনাবেন তিনি। গিন্নী কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে গাইলেন
:-" এবার আমার উমা এলে আর উমা পাঠাব না,,,,এবার আমার উমা এলে,,,,"
কণ্ঠ কিছুটা ক্ষীণ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সুর আজও সেই একইরকম অনবদ্য।
মনমুগ্ধ হয়ে শুনল সবাই।ছেলে, বউ, নাতি নাতিনিরা আজ বহুদিন পরে প্রাণ দিয়ে গলা খুলে গাইতে দেখল সেন গিন্নীকে। গান শেষে বাড়ির ভৃত্য থেকে কর্তা সবাই কিছুক্ষন যেন স্তব্ধ হয়ে রইল। গিন্নী তখন ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলেন। তবে ঘোর কাটল অসংখ্য করতালিতে। নাতি নাতনিরা আবারো জড়িয়ে ধরল তাদের আদরের ঠাম্মাকে আজ বহুদিন পরে।
কিন্তু আজ তাদের ঠাম্মা কেমন জানি অন্যরকম, তাঁর চোখে মুখে এক অন্য আভা, একটা অচেনা হাসি, যা আগে কেউ কখনো দেখেনি বা হয়তো দেখার চেষ্টা করেনি।
বিজয়া দশমীর সকালে দর্পণ বিসর্জনের সাথে সাথে উমা বিদায় পর্ব প্রায় শেষ। দেবী বরণ চলছে, সিঁদুর খেলায় মেতেছে গোটা বাড়ি। ভাসানের আগে ঢাকের বাদ্য আর ধুনুচি নাচে সেনগুপ্ত বাড়ি মেতে উঠেছে।
কিন্তু গিন্নী সবার আড়ালে একটু সিঁদুর হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে সবার অলক্ষ্যে ছাদের সেই ঘরটায় আবার গেলেন। যেখানে প্রথম পুজোর দশমী কাটিয়েছিলেন দুজনে মিলে সবার অলক্ষ্যে। সেই ভাঙা আয়নাটার সামনে আরেকবার দাড়ালেন, আজ এই বৃদ্ধ মলিন মুখটা সেই সুন্দরী লাস্যময়ী মুখটাকে আবার দেখতে পেলো আয়নায়, যা সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে। আলতো করে হাতের সিঁদূর টা ছোঁয়ালেন গালে, ঠিক উনার কর্তার মতো। মনে মনে অনুভব করলেন সেই হাতের স্পর্শ, অনুভব করলেন সেই চোখের দৃষ্টিতে দেখা নিঃস্বার্থ ভালবাসা। মনের সেই অনন্য অনুভূতি চাইলেও হয়তো ভোলার নয় কখন, সত্যি ভোলার নয়।
--------------------------
(৩)
ভাসান শেষে সবাই বাড়িতে ফিরতেই খোঁজ পড়ল বাড়ির সবচেয়ে বড়ো মানুষটির। কারণ বিজয়ার প্রণাম তো গিন্নী কে দিয়েই শুরু হবে। তাই সবার আগে ডাক পড়ল গিন্নীর। কিন্তু কোথায় গিন্নী। সারা বাড়ি খুঁজেও তাঁর খবর নেই। তুলি কী একটা ভেবে ছাদের ঘরেই ছুটে গেলো খুঁজতে।
সবাই বেশ চিন্তায় পড়ল এই বয়সে কোথায় যেতে পারেন তিনি।
হঠাৎ তুলির চিকৎকার
:-" তোমরা তাড়াতাড়ি উপরে এসো। ঠাম্মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।"
মুহূর্তে গোটা বাড়িটা ছাদের ঘরটায় পৌছে গেলো। তুলির কোলে গিন্নী, তাঁর গালে এখনও সিঁদুরের দাগ স্পষ্ট।
ডাক্তারের ডাক পড়ল। ডাক্তার যাবতীয় পরীক্ষা করে জানিয়ে দিলেন গিন্নীর হাতে সময় খুব কম।
এই কথা শোনার পর আজ বাড়ির সবার চেতনার কেন্দ্রবিন্দু আবারো গিন্নী, হয়তো এটাই শেষবার।মধ্যরাতে গিন্নীর জ্ঞান এলো। তাঁর সামনে তুলি, বাবাই, তোতারা বসে ঝিমচ্ছে। ছেলে বউরা ঘরের বাইরে তন্দ্রাচ্ছন। ক্ষীণ কণ্ঠে তাদের ডাকলেন গিন্নী:-
"তুলি, বুবাই, তোতা,,,"
তুলি:-" ঠাম্মা! এইতো জ্ঞান ফিরেছে। তুমি ঠিক আছে তো। এই দ্যাখো আমরা সবাই তোমার সঙ্গে আছি। জানো পিসি কতবার ফোন করেছে তোমার কথা শুনে, পিসি খুব চিন্তা করছে।"
বাবাই:-"তোমার কিছু হবে না ঠাম্মা, দেখো তোমার কিছু হবে না। আমরা আবার গল্প করব আগের মতো। তুমি শুধু ভালো হয়ে যাও ঠাম্মা।"
বাবাই এবার কেঁদেই ফেলল।
বাকি রা ততক্ষনে উঠে গেছে। গিন্নীর তখন অল্প অল্প শ্বাস উঠেছে বাবাইয়ের মাথায় হাত দিয়ে বললেন:-
"তোরা জানতে চেয়েছিলিনা মা দূর্গার কাছে আমি কী চেয়েছিলাম, আমি যে মুক্তি চেয়েছিলাম রে মুক্তি, মা আমার কথা রেখেছেন।"
তোতা:-" কেন ঠাম্মা কেন? তুমি এমনটা চাইতে পারলে, তুমি এটা চাইতে পার না।"
:-" আমি যে বড়ো ক্লান্ত হয়ে গেছি দিদিভাই খুব ক্লান্ত। এবার আমায় ছুটি দে তোরা ছুটি দে।"
তুলি:- " না তোমায় কোথায় যেতে দেব না আমরা কোথায় না"
:-" পাগল মেয়ে তা যে হয় না। এটাই যে প্রকৃতির নিয়ম। তোরা আর কাঁদিস না রে।আমায় এবার যেতে দে। জীবনের শেষ দিনটাও যে আনন্দের। জীবনের শেষ আহুতি দিয়ে এবার আমি মুক্ত হবো। তোরা আর কাঁদিস না।"
কন্ঠ ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। ক্ষীণ কণ্ঠে শেষবারের মতো গিন্নী গাইলেন:-
"জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ।
ধন্য হল ধন্য হল মানবজীবন,"
থেমে গেলো গলা, চোখ স্থির, স্তব্ধ হৃদস্পন্দন। জীবনের সব শূন্যতার অবসান ঘটিয়ে পূর্ণতার স্বর্গরাজ্যে চলে গেলেন তিনি। অবাধ সুরে, অবাধ আনন্দে, আর অকৃত্রিম ভালবাসার মাঝে সব অপূর্ণতাকে জয় করে এবার জীবন পূর্ণ হোক।

