পুজোয় ফেরা
পুজোয় ফেরা
ভর দুপুরে চায়ের কাপ হাতে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে দোঁহার। ওই অফিসের অভ্যেস, তাই লাঞ্চের পরেও হাতে কাপ নিয়ে কাজের ফাঁকে একটু বাড়ির ছাদে ভ্রমণ। ওয়ার্ক ফ্রম হোম এর সুযোগ পেয়ে দু'মাস আগে নিজের শহরে ফিরেছে দোঁহার।
দুপুরের তপ্ত মিঠে রোদ, নীল আকাশ আর বাড়ির সামনের শান্ত নদীটায় ভেসে উঠল পুজোর আবেশ। কতদিন পুজোয় বাড়ি ফেরা হয়নি, এবারের পুজোর সমারোহ তেমন না হলেও বাড়িতে থাকার সুযোগটা বেশ উপভোগ করছে দোঁহার।
পুজোর আগে থেকেই ছোট্ট শহরের আনাচে কানাচে পুজোর রেশ, তিস্তা পাড়ের কাশফুল, স্টেশন রোডের কুমোরটুলিতে চরম ব্যস্ততা। সাইকেল চালিয়ে ভোরবেলায় বেড়ার ফাঁকে চোখ লাগিয়ে গণেশ এর সুর রং করা দেখে দুজনের খিলখিলিয়ে হেসে ওঠা। নদীর ওই পাড়ে বিসর্জনের সন্ধ্যার রাবণ বধের সাজসজ্জা দেখতে জেঠুর বাড়িতে বারবার উঁকিঝুঁকি দু'জনার।
নৌকা চেপে শহরের প্রাণরেখা করলা নদীতে কতবার বিসর্জন দেখেছে একসঙ্গে দু'জোড়া চোখ। শরৎ-শীত-বসন্ত পেড়িয়ে শহর ছাপিয়ে বর্ষার জলে ভাসিয়েছে কাগজের নৌকা। সেই জলের স্রোতেই ছোটবেলার বন্ধুত্ব গড়িয়েছিল এক অন্য এক অনুভূতিতে। কলেজে ফাইনাল ইয়ারের লাস্ট এক্সামের আগের রাতের ফোনকলে সব অনুভূতির বিসর্জন হয়েছিল এই নিঃশব্দে বয়ে চলা করলার স্রোতে।
মোটা মাইনের চাকরি আর সুপাত্রের থাবায় ওইদিন সব অনুভব লকারবন্দী হয়ে আজ হলুদ হওয়া স্মৃতির পাতা মাত্র। মাঝের দীর্ঘ দশ বছরেও আর কোনদিন দেখা হয়নি তিয়াসার সঙ্গে। বাড়িতে এলেও সময় ক্ষণ মেলেনি ওদের। পুজোর বাতাসে এবার যেন পুরাতনকে নতুন করে মনে পড়ল ছাদের থেকে দেখা তিয়াসাদের বাড়ির চিলে কোঠার ঘরের দিকে তাকিয়ে।
'এখানেই দাঁড়ান দাদা' , চেনা গলা কানে আসতেই বাস্তবে ফিরল দোঁহার। লাল কটকি প্রিন্টের চুড়িদার পড়ে রিক্সা থেকে নামা এক ছোট্ট কন্যার মায়ের দিকে তাকিয়ে হারানো অনুভূতিকে হঠাৎ পাওয়ার আনন্দের আবেগে দুপুরের নিস্তব্ধতা ভাঙ্গল, 'কি রে এবার পুজোয় এখানে থাকবি?' 'হ্যাঁ জেঠিমা' উত্তর এলো রিক্সা থেকে নামা অতিথির কণ্ঠ থেকে। 'দোঁহারও আছে এবার।' নামটা শুনেই কেমন থমকে গেল তিয়াসা,নিজের অজান্তেই চোখটা যেন আপন পথ ধরেই চলে গেল ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির দিকে। শব্দহীন নদীর স্রোতে মৌন হলো কিশোরীবেলার চেনা চোখগুলো।