STORYMIRROR

swarna das

Romance

4  

swarna das

Romance

প্রহেলিকা

প্রহেলিকা

3 mins
281

সকাল থেকেই শরীরটা ভালো নেই মিঠুর। মাথাটা কেমন জানি ধরেছে ধরেছে ভাব হচ্ছে। তাই সে আজ বোনঝির অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানে যায়নি। বালিশ টা র উপর মুখটা চেপে গুঁজে শুয়ে আছে সে। না, আজ সে কলেজ ও যাবে না। আরে এ কী!! দীপ্তদা ফোন করছে মনে হয়। " আমি দাঁড়িয়ে আছি নীচে চলে আয়" " না গো আজ আর আমি যেতে পারব না " কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দেয় সে। কী যে করে না সোজা বাড়ি চলে এসেছে। দীপ্তদা তার কলেজের সিনিয়র দাদা। প্রথমদিন নবীনবরণ অনুষ্ঠানে দীপ্তদা-ই তো মিঠুর জন‍্য গিটার বাজিয়ে গান করেছিল।এরপর পূজায় একসাথে ঠাকুর দেখা থেকে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরা। সব দীপ্তর সাথে। দীপ্তদা একজন ভালো গাইডও বটে। দীপ্তদার এসব আচরণে কোথায় যেন হারিয়ে যায় মিঠু। মাঝে মাঝে তার বুকের মাঝেও ভালোবাসার মরশুম বেজে ওঠে। কিন্তু দীপ্তদা সে কি তাকে ভালোবাসে? জানেনা মিঠু,তবুও থামাতে পারনা নিজেকে। কিন্তু মিঠু একথা কখনো ই নিজে মুখে বলবে না তাকে। দীপ্তদা বলে ভালো করে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। দীপ্তর সাথে প্রথম আলাপ মিঠুর কলেজে হলেও এখন আর দীপ্তদা কলেজে পড়েনা বরং চাকরি করে। মিঠু থার্ড ইয়ারের ছাত্রী। সামনেই মিঠুর একুশ বছর জন্মদিন। দীপ্তদা তার থেকে তিন বছরের বড়ো। কত কিছু প্ল‍্যানিং মিঠুর সে বিষয়ে। এ বছর সে দীপ্তদা কে নিমন্ত্রণ করবে তার বাড়িতে। যখন সে এই কথাটা বলেছিল দীপ্তদা ভীষন রেগে গেছিল তবে মিঠুর শেষ কথা " আমার জন‍্য " শুনে থমকে গেছিল। মিঠু এর আগে ওর কত বন্ধুদের সাথেও দীপ্তকে দেখা করতে বলেছে ও রাজি হয়নি। এইসব কথা ভাবতে কিছুক্ষণ পর মিঠু বইটা খুলে বসল। এরপর দিন এগোতে লাগল আর দেখতে না দেখতেই চলে এল মিঠুর জন্মদিন। রাত সাড়ে ন টা বাজে দীপ্তদার আর পাত্তা নেই। তবে কি সেদিন মুখের উপর কলেজ যাবে না বলে রাগ করেছিল। কিজানি সেদিনের পর থেকে আর দেখা হয়নি। হোয়াটসঅ‍্যাপে টুকটাক মেসেজ। এদিকে মিঠুর জেদ যে দীপ্তদা না এলে সে কিছুতেই কেক কাটবে না। এদিকে অতিথিরাও অপেক্ষা করছে। অবশেষে রাত দশটার সময় এল দীপ্তদা। " এতক্ষণে তোমার আসার সময় হল " কিন্তু এ কি এ কার সাথে কথা বলছে মিঠু সামনে যে কেউ নেই। দীপ্তদা শুধু বলল " সবাই জেনে গেছে। Happy birthday my dear. তোকে অনেকটা ভালোবাসি। এই গিফ্টটা তোর " বলে হাতে একটা বাক্স ধরিয়ে দিয়েই চলে যায় সে।বাক্সটা খুলে দেখে একটা হাত ঘড়ি লাল রঙের আর একটা চিঠি। অবাক মিঠু সেই চিঠিটা পড়তে থাকে                 

ডাবতলা মোড়,             

কাটোয়া

প্রিয় মিঠু,  

     আমি আজ কলকাতার একটা নামকরা কলেজের ছাত্র। তোর সাথে আমার প্রথম দেখা তোর মামারবাড়িতে। মনে পড়ে আমরা ভাড়াটে হয়ে এসেছিলাম। তুই প্রায়শই আসতিস তোর মামারবাড়িতে। তখন আমি ক্লাস টেন আর তুই ক্লাস সেভেন। তোর সাথে কত খেলতাম। সাইকেলে করে ঘুরতে নিয়ে যেতাম। কত ভালোবাসতিস তুই আমার সঙ্গে খেলতে। এসবের মধ‍্যে কখন যে তোকে...যাই হোক আমার উচ্চমাধ‍্যমিক - ও শেষ হল। তারপর তোর মামাদের সাথে আমাদের ভীষন ঝামেলা। এসব কিছুর মধ‍্যে বাড়ি ছাড়তে হয় আমাদের । তারপর বাবা আর মা দেশের বাড়িতে চলে যায় আর আমি কলকাতার হোস্টেলে। বিশ্বাস কর তোকে সেই দিনও ভীষণ ভালোবেসেছি। এরপর সেমিষ্টারের চাপ, বাবার হাই পেসার, মায়ের ওষুধ আর এত চাপ নিতে পারছি না রে। তাই আমি আজ হোস্টেলে সুইসাইড করব। কিন্তু যাওয়ার আগে তোকে জানিয়ে দিয়ে গেলাম আমার মনের কথাটা। 

                         ইতি

                    তোর দীপ্তদা 

চিঠিটা পড়া শেষ হতেই মামী বলল হ‍্যাঁ ঠিকই তো রে দীপ্তরা তো আমাদের বাড়িতেই তো থাকত। কোন কথা আর কানে যাচ্ছেনা মিঠুর বাস্তবটাকে কেমন জানি ঘোলা কাঁচের মতো লাগছে তার। এরপর জ্বর হয় মিঠুর। এরপর অনেকদিন পর সুস্থ হয়ে মিঠু ভাবে দীপ্তদা তার ভালোবাসা না প্রহেলিকা?



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance