মিলল না
মিলল না
আমার বয়স তখন সাত কি আট হবে যাচ্ছিলাম মাসির বাড়ি দাদুর সাথে। মায়ের প্রচুর কাজ ছিল মামারবাড়িতে আর কাজ তো থাকবেই সামনেই যে আমার তুলিদিদির বিয়ে। তুলিদিদি আমার মামাতো বোন বয়সে সতেরো বছরের বড়ো। এদিকে মাসির শরীরটা খারাপ তাই আমি আর দাদু এখন রওনা দিয়েছি সেই উদ্দেশ্যে। আমার মামারবাড়ি লিলুয়ায় হুম টাউন এলাকা আর মাসির বাড়ি নিশ্চিন্দিপুরে। হ্যাঁ তোমার আমার প্রিয় গল্প ' পথের পাঁচালি ' - র নিশ্চিন্দিপুর। এতক্ষণেও মামারবাড়ি থেকে নিশ্চিন্দিপুরের দূরত্ব কষলে না। মাসিরবাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায়। কাজেই নেহাত কাছে নয়। আমি আর দাদু শিয়ালদা থেকে ট্রেন ধরে সোজা অন দ্য ওয়ে টু নিশ্চিন্দিপুর। ট্রেনের ভিড় ঠেসাঠেসি আর চেঁচামেচি থেকে নিস্তার পেলাম ট্রেন থেকে নেমে। বাজে বোধহয় সাড়ে ১১ টা। যাইহোক গাড়ির আশায় খানিকক্ষণ বসে থেকে হতাশ হয়ে পদযান-ই ভরসা হল। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর এসে পড়েছি। টের হল আরে রাস্তায় তো কেউ নেই কাকে জিজ্ঞাসা করব মাসির বাড়ির রাস্তা। তখন হঠাৎই কিম্ভূতের মতো উদয় হল এক মাতাল। মাতাল টাকে মেসোর নাম বলতেই সে দাবি করল যে সে মেসোর বাড়ি চেনে। এ তল্লাটে মেসোকে চেনা কোন আজব ব্যাপার নয়।এখানকার গ্রামের বড়ো স্কুলের হেডমাষ্টার যে মেসো। সে বলল আমাদের সামনে থাকা এই বড়ো ক্ষেতজমি পেরোলে একটা শশ্মান আর তারপর বড়ো রাস্তা ধরে হেঁটে গেলেই মাসির বাড়ি। আমরা সে পথ ধরেই রওনা দিলাম। নেহাত ছোট ছিলাম নইলে মাঠের ক্ষেত্রফল মাপতে বিশেষ অসুবিধা হত না। শশ্মানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গা টা ছমছম করছিল। একটু দূর এগোতেই শুনলাম মেৃসোর গলা। " আরে বাবা ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন? এদিকে আসুন আমার সাথে "। খানিকক্ষণ পর অন্ধকারের মায়া কাটিয়ে দেখতে পেলাম মেসোকে। গায়ে একটা শাল, ধুতি আর হাতে সেই ছাতাটা। এক্কেবারে মাষ্টারমশাই। মেসোর পিছুপিছু আমরা গেলাম। কি জানি মেসোর আচরণ আমার অদ্ভূত ঠেকল। মেসো ঠান্ডা হাতটা আমার পিঠে রেখে বলল," কি দীপুবাবু কেমন চলছে পড়াশোনা?? " আমি বললাম " ভালোই " মাতালটা তো বলেছিলো বড়ো রাস্তা থেকে একটু হেঁটেই মাসির বাড়ি। " ওওও দীপু ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস বাপ??? " মাসি বলল। কিন্তু একি মাসির পরনে যে সাদা শাড়ি। দাদু বলল," হ্যাঁ রে তুই সাদা শাড়ি পড়ে ঘুরছিস কেন?" " তার আগে বল তোমাকে এতদূর কে নিয়ে এল? " " কেন জামাই, এই তো দেখ " আমি আর দাদু পিছনে ফিরে দেখি মেসো নেই। মাসি বলল " ঘরে এসো সব বলছি " ঘরে যেতে মাসি বলল মেসো এক সপ্তাহ আগেই মারা গেছে। তাই জন্য মাসির শরীর খারাপ হয়েছিল। আমার জীবনের এতগুলো বছর পেরিয়ে গিয়েছে কিন্তু হিসেবটা আজও মেলেনি। সেদিন ওটা কে ছিল?
