Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Ratna Chakraborty

Inspirational

3  

Ratna Chakraborty

Inspirational

ওরা সুখে আছে

ওরা সুখে আছে

6 mins
1.6K


হ্যাঁ শুনলে সবাই অবাক হবে কিন্তু ওরা ভালো আছে। আগে স্টেশনে থাকত তিনফু, এখন খালপাড়ে প্ল্যাস্টিকের ছাদ আর দর্মার বেড়া দেওয়া ঘর বানিয়েছে। সত্যিকারের ঘর! স্টোভ আছে হাঁড়িকুড়ি, ছুরি, হাতাখুন্তি, প্ল্যাস্টিকের বালতি সব আছে। মায় কাঠের প্যাকিংবাক্সের একটা কাঁথা বিছানো বিছানা পর্যন্ত। আর এই ঘর হয়েছে যবে থেকে নিমুকে বিয়ে করেছে তিনফু, তার ঘরণী এসেছে।

বিয়ে অবশ্য শনিঠাকুরের সামনে মালাবদল করে হয়েছে। ঠিক স্টেশনের বাইরে ওই মন্দিরটাই আছে কিনা। শনিবারে প্রচুর মালা ধূপ পূজো পড়ে।তাই দিয়েই চাওয়ালা বিনু, ঝাড়ুদারনি ফুলি,জুতো পালিশ ওয়ালা শাহজাহান দাঁড়িয়ে থেকে অপরাজিতার মালাবদল করিয়ে বিয়ে দিয়েছে। ফুলি আবার একটা কাপড় দিয়েছে। বিনু সবাইকে পাঁউরুটি আলুরদম খাইয়েছে। তিনফু আর নিমুর বিয়ে হয়েছে।


  না না, এরা কোন চীনা জাপানি পরিবার নয়। বরং একদমই চেনা, স্টেশনে ভিক্ষে করা তিনফুটিয়া, যাকে তার বাপ বছর পাঁচেক বয়সে স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিল। ভালো কথা বলতে পারত না, নাকে নাকে কথা বলত। বাড়ির ঠিকানা জানত না। তিনফু শুধু জানত মা মরেছে পনেরো দিন হল। বাপ যাকে সবাই ভক্তদাস বলে ডাকত, সে দুচক্ষে দেখতে পারত না তিনফুকে, খুব মারত, সে নামিয়ে দিয়ে গেছে তাকে। ট্রেনে করে অনেক দূর থেকে সে এসেছিল বাপের সাথে । স্টেশনে বসে হাপুস নয়নে কাঁদছিল। কখন ঘুমিয়েছে, কি খেয়েছে তা আজ আর মনে নেই। তারপর থেকে আস্তে আস্তে কিন্তু নিজে নিজেই বড় হয়েছে।

কিভাবে বড় হয়েছে তা বলা মুশকিল। স্টেশনে এক পাগলি থাকত সে তিনফুকে খুব ভালবাসত। তিনফু তার কাছেই থাকতো বেশিক্ষণ। ভিক্ষা করতে করতে একদিন বড় হয়ে গেল। বড় হয়ে গেল বলতে বয়সেই বড় হল। চেহারার সর্বসাকুল্যে তিন ফুটের কাছাকাছি ছিল। ওভারব্রীজের নিচের ত্রিভুজ অংশটাতে রোদ বৃষ্টিতেও আরামে ঘুমোত, ছোট মানুষ এঁটে যেত। একদিন তার পাগলি মা রেলে কাটা পড়ল। খুব কাঁদল তিনফু। যে সব যাত্রীরা খুব পিছনে লাগত তারাই প্রচুর ভিক্ষা দিয়ে সাহায্য করেছিল। 

পুলিশ শুনেছিল খুব বজ্জাত হয় কিন্তু তারাও সাহায্য করেছিল। চেরাইঘর থেকে মরা বার করতে ঝামেলা হয় নি, ডোমও আলাদা করে যে টাকা নেয়, তা নেয় নি। ভ্যানওয়ালা এমনিই মরা বয়েছিল। এই বড় সাইজের ছোটলোকেরা তার খুব উপকার করেছিল। মুখাগ্নি করেছিল তিনফু। তারপর একার জীবন। ট্রেনের আসা ট্রেনের যাওয়া দেখতে দেখতে সে কেমন জীবনের প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। তার নিজেকে নিয়ে কোন আফসোস ছিল না। স্টেশনের অনেকেই তার আপনজন হয়ে উঠেছিল।

  এমন সময় একদিন নিমুর সাথে দেখা। রেললাইনের ধারে ঘুরে বেড়ানোটা তার একটা নেশার মত ছিল। অনেক অনেক দূর চলে যেত সে, এই পথেই একদিন তার বাবা তাকে এনে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিল, এই লাইনেই তার যশোদা মা মরেছিল। পড়াশোনা না জানলেও ট্যাঁপাদার টি-স্টলের ছোট টিভিতে সে রামায়ণ, মহাভারত আর সিরিয়াল দেখেছে অনেক।

ট্যাঁপাদার ফাইফরমাশ খাটত। ট্যাঁপাদা লোক ভালো, ওই টিভি দেখার মস্ত সুখটা ছিল তার কাছ থেকে পাওয়া। সেখানেই শ্রীকৃষ্ণ আর যশোদামাকে দেখেছে। চোখে তার জল ভরে আসত। মাকে তার অল্প মনে আছে, বাবা মারলে মা তাকে বুকে চেপে চেঁচাতো আর কাঁদত।আর এখানে পাগলিমাই তার যশোদা মা, তাকে আগলে রাখত। 

সেই সময় একটা ঘটনা ঘটল।

সে হাঁটছে আপন মনে। এমন সময় একটা মেয়ে হঠাৎ তার থেকে একটু দূরে লাইনের পাশের ঝোপ থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালো লাইনের উপর। তারপর লাইন ধরে হাঁটতে লাগল হনহন করে। অস্বাভাবিক হাঁটা। মেয়েটা বিশাল লম্বা, বেটাছেলেদের মতো। তার মতলব ভালো নয়। এটা সে বুঝল। এই লাইনে ট্রেন আসছে। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে হাঁটছে মাঝে মাঝেই সে হাতের তালু দিয়ে মুখ মুছে নিচ্ছে। তার মুখটা অবশ্য দেখতে পেল না তিনফু।মেয়েটা তাড়াতাড়ি হাঁটছে, অদ্ভুত চলাফেরা কেমন ঘোড়ার মতো। ছুটতে লাগলো তার পিছনে তিনফু, তার ছোট ছোট পা বেশি দ্রুত দৌড়াতে পারে না। সে বুঝলো ডাকলে মেয়েটা শুনবে না। একমাত্র উপায় ছুটে গিয়ে মেয়েটাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া। তা না হলে কাটা পড়বে। তার মার কথাটা হঠাৎ মনে পড়ে গেল। ট্রেন এসে যাচ্ছে। ছুটে এসে মেয়েটার হাঁটুতে ধাক্কা মারল তিনফু। তার গায়ে তত জোর ছিল না।

মেয়েটা অন্যমনস্ক না থাকলে আর তিনফু আচমকা জোরে ধাক্কা না দিলে, মেয়েটাকে সরানো সম্ভব হত না। দুজনেই মরত তেমন হলে। কিন্তু দুজনেই পড়ে গেল গড়িয়ে গড়িয়ে পাশের ঝোপে, তাদের পাশ দিয়ে ট্রেনটা বেরিয়ে গেল ঝড়ের মতো হুহু করে।

মেয়েটা খানিকক্ষণ পড়ে রইল মরার মত তারপর হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকাল তার দিকে।" কেন বাঁচালে আমাকে? তোমার কি দরকার ছিল আমাকে ধাক্কা দেবার? তুমি কে ওস্তাদি করার? " তিনফুও সতেজে জবাব দিল " কেন মরতে যাচ্ছিলে? মরা মুখের কথা? আমায় তাকিয়ে দেখো, দেখো। আমার চেহারা দেখে হাসে সকলে, আমি বেঁটে বামুন বলে আমাকে ফেলে দিয়ে চলে গেছে কত ছোট বয়সে আমার বাবা, আমি তো মরতে যাই নি, আমি তো লড়ে যাচ্ছি। জীবনে তোমার কি কষ্ট তা আমি জানি না। নিশ্চয়ই কষ্ট আছে, কিন্তু কার নেই? তোমার তাও একটা সুস্থ শরীর আছে সেটা তো চোখের সামনে দেখতেই পাচ্ছি।চোখে দেখতে পাও, হাত-পা গোটা আছে, বোবা নও, তবে? জীবন এত সস্তা নয়। " হাঁফাচ্ছে তিনফুটিয়া।

তার কপাল ছড়ে গিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। মেয়েটা থমকালো যেন, ছোট্ট চেহারার বড় মানুষটার দিকে তাকাল। তিনফু দেখল বাঁশের মতো লম্বা, রোগা কালো একটা চ্যাপ্টা গোছের মেয়ে। নারী বলে বোঝা যায় না তাকে দেখলে। বিহ্বল হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর বিড়বিড় করে বলল " শরীর আছে..." তারপর অতখানি মেয়েমানুষটা কাটা কলাগাছের মতো ধপ করে লুটিয়ে পড়ল তার সামনে সেই কাঁটাঝোপের পাশে। আকাশে তখন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। এই মেয়ের শরীর টেনে তোলার ক্ষমতা তিনফুর নেই। ফেলে সে যেতে পারে না। মরণ এর পিছনে ঘুরছে। তিনফুও সেখানেই বসে রইল, তার আর ফেরার তাড়া কি! তার কোন পিছটানও নেই। সময় কাটল খানিক, সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত নামল। বৃষ্টি নামল ঝিপঝিপিয়ে। মেয়েটা নড়ে উঠল। বৃষ্টির জলে মেয়েটার কঠিন মুখ নরম হয়ে গলে যাচ্ছে। মেয়েটা চোখ মেলল, খানিক ফ্যালকা মুখে তাকিয়ে রইল। তারপর তার মোটা ভাঙা গলায় হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। তিনফু বসে রইল, বারণ করল না, তাকে কাঁদতে দিল। বৃষ্টি নামল অঝোরে। 

 স্টেশনে তাকে আনল তিনফু, ধরে ধরে নয় পাশেপাশে। বসালো খালি বেঞ্চে। একগ্লাস জল চেয়ে আনল বিনুর কাছ থেকে। 

 নমিতা অনাথ, জেঠির ঘরে আপদবালাই বেড়ে ওঠা অলক্ষ্মী একটা পুরুষালি চেহারার মেয়ে, যাকে নিমু বলে ডাকত সবাই। পাঁঁচবছর থেকেই জেঠীর সংসারের বিনি মাইনের ঝি। বড় হতে সবাই বলত, ওর নাম নমিতা নয় নিমাই, অর্থপূর্ণ কুৎসিত হাসত সবাই। অত্যাচার, খাটুনি সয়েই ছিল কিন্তু এবার জাঠতুতো দিদির বিয়ের সময় বেটাছেলেদের আড্ডায় চা দিয়ে আসতে গেলে জামাইবাবু, ভাই আর একগাদা  বেটাছেলেদের মাঝে সবার সামনে টান মেরে জামা খুলে দিয়েছে তার মাতাল দাদা আর সবাই উৎসাহ দিয়ে বলেছে সায়াটাও খুলে দেখতে মেয়ে না ছেলে! রাগে দুঃখে গরম চায়ের কেটলি তুলে দাদার মাথায় মেরে সে পালিয়েছে এই আপদ জীবন সে রাখবে না, এত অপমান, অবিচার,অত্যাচার সে আর সইবে না। তাই...। একে একে সবাই শুনেছে বিনু, ফুলি শাহজাহান...

 

না ওরা কেউ মরে নি। একে অপরকে নিয়ে ঘর বেঁধেছে। ওভারব্রীজের নিচে তিনফুটিয়া ধরে যেত অত লম্বা বৌ তো ধরবে না। আর ভিক্ষা করে নিজে খাওয়া যায়, বৌ নিয়ে খেতে তিনফুর ইজ্জতে বাঁধে। আর সে একা নয়। স্টেশনের ধারে মস্ত হনুমানজীর মন্দির। সেখানে এখন তিনফু ভক্তদের জুতো জমা রাখে। শনি মঙ্গলবার ভালো পয়সা। নিমু মস্ত দুটো ফ্ল্যাট বাড়িতে কমন সিঁড়ি ঝাঁট দেওয়া মোছা করে। তারও ভালো ইনকাম। এখন ও অনেকেই তাদের বেখাপ্পা জোরী নিয়ে হাসে, অশ্লীল ইঙ্গিত করে কিন্তু তারা তো পরম সুখী।

সারাদিনের কাজের ফাঁকে তারা ঠোঙা তৈরি করে, দোকানে দেয়। আর ট্রেনের আনাগোনা দেখে, গুজগুজ গল্প করে। ভবিষ্যৎ প্ল্যান করে। কাগজ যোগান দেয় ট্যাঁপাদা। তিনফু বলে "প্ল্যাসটিক পলিথিন আর চলবে না, ঠোঙার দাম বাড়বে দেখবে। তখন পয়সা ভালোই আসবে। কিছু জমাতে হবে তো । ভবিষ্যৎ আছে। "নিমুকে বলে তিনফু সস্নেহে "জীবন কত সুন্দর বল, মরে গেলে আর পেতে এমন সুন্দর জীবন? জীবন অনেক কষ্টে পাওয়া তাকে হেলায় হারাতে আছে? "  নিমুর মনে হয় না তার বর তিনফুটের একটা মানুষ, মনে হয় কত্ত বড়। নিমু তার মোটা পুরুষালি গলায় বলে " এমন কথা বলা তুমি কেমন করে শিখলে গো। আমার মতোই তো ইস্কুলে পড় নি। "

নরম মিহি গলায় তিনফু বলে " ট্যাঁপাদার দোকানে টিভি দেখে দেখে। হিরোরা বলে যে। তবে বড় সুন্দর কথা।সত্য কথা। সুন্দর সত্যি।।"



Rate this content
Log in

More bengali story from Ratna Chakraborty

Similar bengali story from Inspirational