নিছক প্রেমের গল্প
নিছক প্রেমের গল্প


প্রিয় সোমলতা,
কিভাবে এটা লিখবো সেটা নিয়ে অনেক ভেবেছি।আদৌ লিখবো কিনা তাও ভেবেছি।শেষপর্যন্ত লিখছি।এই সময়ে তুমি এটা কিভাবে নেবে জানি না।তবুও এটা আজ আমি তোমাকে জানাবো।সত্য কখনো কখনো খুব বড় চমক নিয়ে আসে। কখনো বা কষ্টও বুঝি দেয়। তবুও তো সেটা সত্য। আর আমার সত্য টা হলো তুমি! যা ভাবছো ঠিক তাই!! আমি তোমাকে ভালোবাসি।হাত কাপঁছে জানো, যখন এটা লিখছি। তুমি এখন এমন একটা অবস্থায় আর আমি এটা কি বললাম তোমায় এখন। কি জানি কেন বললাম!! তবুও বলেই যখন ফেলেছি প্লিজ ফিরে আসো। যেভাবেই হোক ফিরে আসো।
আমাকে ভালোবাসতে হবে না।আমার ভালোবাসা টা শুধু বেচেঁ থাক।এইটুকু কর আমার জন্য, প্লিজ!
ইতি
অনিক
(ক্লাশের যে ছেলেটি কখনোই তোমার সাথে কথা বলে নি)
নীল কাগজে কালো কলমে লেখা চিঠিটা।কালার কম্বিনেশনটা আসলে বেশি ভালো হয় নি। সোমলতার হাতে চিঠিটা, সোমলতা শুয়ে আছে। বোধহয় ঘুমাচ্ছে।ওর ডান হাতটা ছড়ানো। ওই হাতেই চিঠিটা আলতো করে ধরা।ফ্যান চলছে ফুল স্পিডে।চিঠিটা উড়েই যাবে কিনা। ওহো উড়েই গেলো............
(দুই)
এয়ারপোর্টে নেমেই সোমলতার মনটা খুশিতে ভরে গেলো। সেই কলকাতা। এয়ারপোর্ট থেকে বেরোনোর পর কলকাতার রাস্তায় জোরে দৌড়াতে ইচ্ছে করছে সোমলতার।ইচ্ছেটা অবশ্য দমাতে হল। আশেপাশে আত্নীয় স্বজন অনেক। তার চেয়ে বড় কথা তার শারীরিক অবস্থা টা আসলে এখনো দৌড়ানোর মত নয়।অনেক বন্ধুও এসেছে ওর ওকে রিসিভ করতে। সোমলতা অনিক কে খোঁজে কিন্তু ওকে কোথাও দেখে না। ছেলেটা বোধহয় আজকেও আসতে সাহস পায় নি। সোমলতা মনের অজান্তেই হেসে ওঠে।এই ক মাসে সাহস টা তো কিছুটা বাড়ার কথা। ফেসবুকে,ফোনে এই ক মাসে তো অনেক কথা হয়েছে ওদের মধ্যে।ইচ্ছে করেই ওকে আর ফোন করলো না সোমলতা।ওকে মজা দেখাতে হবে। এতো দিন পর সোমলতা এলো আর ওর কোন খবর নেই।ফোন করে যে কোথায় একটু খবর নেবে তাও না।
অথচ এই ক মাসে কি না করেছে ও। সোমলতা যখন সেই দূর দেশে এ প্রচন্ড একাকী।তখন তার একমাত্র বন্ধু ছিল ইন্টারনেট।আর হ্যাঁ অনিকও ছিল। দিন হোক রাত হোক সারাক্ষণ ফেসবুকে দুজনের কত কথা।কত মুভি যে দেখা হলো।দুই জন দুই দেশে বসে একই সময়ে একই মুভি দেখা আর একই সাথে নিজেদের অনুভূতি শেয়ার করা ,ব্যাপারটা সোমলতার অদ্ভুত ভালো লাগতো। টেকনোলজি পারেও বটে! খুব হাস্যকর একটা চিঠি পাঠিয়ে ছিল অনিক যেদিন সোমলতা দেশ ছাড়ছে ।সব বন্ধুরা এসেছিল সেদিন । অনিক ও ছিল সেদিন। চলে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে চিঠিটা সোমলতা কে দিয়েছিল অনিক।তারপর থেকে ওর সাথে সোমলতার আর মুখোমুখি দেখা হয় নি। ফেসবুকে নিজেই অনিক কে নক করেছিল সোমলতা।আচ্ছা করে বকা দিয়েছিল সে।সেদিন থেকেই আসলে ওদের মধ্যকার জড়তা টা কেটে গিয়েছিল।এর পরে ওদের কেউই আর চিঠিটার কথা তোলে নি।হাসি, মজা , মান অভিমানে একটা ভার্চুয়াল মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ওদের মাঝে।খারাপ সময়গুলোতে সোমলতার কান্না তার বাবা মা এর বাইরে একমাত্র অনিকই শুনতে পেত। আর আজ সোমলতা ফিরেছে অথচ অনিক নেই ।
(তিন)
রাতের খাবার টা অনিক রা সবাই একসাথে খায়।অনিক রা!! ওহ হ্যাঁ উত্তর কলকাতার রায় বাড়ির সাথে তো এখনো পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় নি।অনিকের বাবা পরিতোষ রায় এ বাড়ির কর্তা। অনিকের আর একটি বোন আছে, ক্লাস সিক্সে পড়ে।অনিকের বোন টুশিকে তার মা আজ কিছুতেই খাওয়াতে পারছে না। সে মাছ ছাড়া ভাত খেতে পারে না। অথচ আজ বাড়িতে নিরামিষ খাওয়া হবে।অনিকের বাবার ও আজ খেতে খুব কস্ট হচ্ছে। অনিকের দূর সম্পর্কের এক জ়েঠু আজ মারা গেছেন।এই জন্যই আসলে আজকে নিরামিষ খাওয়া। ওনার শ্রাদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত নিরামিষই খেতে হবে।অনিকের বাবার খুব শ্রদ্ধার মানুষ ছিলেন ভদ্রলোক।আজ পরিতোষ রায়ের খুব মনে পড়ছে সেই পুরনো দিনগুলির কথা। অনিকের মা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেন, “ওগো শুনছো তা দাদাকে মুখাগ্নি কে করলো? অনুপ এসেছিল?”। “হ্যাঁ শুনলাম অনুপ এসেছিল কিন্তু ও মুখাগ্নি করে নি।জগু কাকার ছেলে নরেশ করেছে।অনুপ টা একটা অমানুষ, বাবা মরেছে অমনি সুড় সুড় করে চলে এসেছে সম্পত্তির গন্ধে। ভুবন দা চিরটা কাল সবার উপকার করেছে, জানো, কিন্তু শেষকালে নিজের ছেলের হাতের আগুন পর্যন্ত পেলো না। যতবারই গেছি ততবারই ভুবনদা কেদেঁছে আর বলেছে, পরিতোষ আমি কি দোষ করলাম যে আমার সাথে এমন হলো” বলতে বলতে অনিকের বাবার গলাটা ধরে আসে।
অনিকের খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। সে নিঃশব্দে খাবার ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।
(চার)
শেষ পর্যন্ত সোমলতাই ফোন করল অনিক কে।দুইদিন ধরে সে দেশে এসেছে অথচ অনিকের কোন খবর নাই। সোমলতার মনে মনে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল আবার অনিকের কোন কিছু হলো না তো।দুইবার রিং বাজতেই ফোন ধরল অনিক।“হ্যালো সোমা, কি খবর! আমি না খুব দুঃখিত তোমাকে রিসিভ করতে যেতে পারিনি এয়ারপোর্টে।একটা জরুরি কাজে আটকে গিয়েছিলাম।” অনিকের শীতল কন্ঠ সোমলতার বুকে বুঝি কাটাঁর মত বিধঁছিল।সোমলতার কিছু বলতে ইচ্ছে করে না।সোমলতা শুধু বলে, “তোমার সাথে আজ বিকালে দেখা করবো ক্যাম্পাসে। ঠিক বিকেল ৫ টায়।” এটুকু বলেই
সোমলতা ফোন কেটে দেয়। সোমলতার মনে হঠাৎ এক নতুন ভয় ঢুকে যায়। সে কি অনিককে ভালোবেসে ফেলছে। তা না হলে ওর অবহেলা এভাবে ওকে এলোমেলো করে দিচ্ছে কেন? ল্যাপটপে তখন বাজছে রবীন্দ্র সঙ্গীত…
“ সখীর হৃদয় কুসুমকোমল-
কার অনাদরে আজি ঝরে যায়!
কেন কাছে আস, কেন মিছে হাস,
কাছে যে আসিত সে তো আসিতে না চায়।।”
(পাঁচ)
বাড়ি থেকে একটু দূরের একটা রেস্টুরেন্ট এ সোমলতা আর অনিক মুখোমুখি। একসাথে ক্লাস করলেও আজকেই প্রথম ওরা আসলে প্রথম মুখোমুখি কথা বলছে। অনিক একটু কুকঁড়ে বসে আছে।সোমলতার মুখ ভার।দুটি একটি ছোটখাটো কথার পর সোমলতা আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলো না। অনেক যুদ্ধ করেছে সে নিজের সাথে। অনিকের চোখে চোখ রেখে সে বললো, “অনিক তোমার মনে আছে যেদিন প্রথম আমি তোমাকে চ্যাট এ নক করেছিলাম সেদিন তোমাকে আমি অনেক বকেছিলাম ঐ হাস্যকর চিঠিটা দেওয়ার জন্য।মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত একটা মেয়ে যখন চিকিৎসার জন্য বাইরে যাচ্ছে তাকে তুমি প্রেমপত্র পাঠিয়ে ছিলে!!That was insane! এত দুখের মাঝেও খুব হাসি পেয়েছিল জানো।তারপর চিকিৎ্সার সেই কস্টের সময়টা পার করে যখন দেশে ফিরলাম তখন বুঝতে পারলাম যে আমার ক্যান্সার হয়েছিল ভালোই হয়েছিল। না হলে তো কখনো তোমার মনের কথা টা জানতে পারতাম না।দেশে আসার পর তোমার আচরণ দেখে এটা বুঝতে পারছি তুমি আসলে আমার মুখোমুখি হতে লজ্জা পাচ্ছো।তুমি এখনো এত লজ্জা পাচ্ছো তাই ভাবছি আমার ক্যান্সার না হলে তুমি বোধহয় আমার সাথে কখনো কথাই বলতে না”।বলেই সোমলতা একটু হাসলো। অনিক নিশ্চুপ। স্থির দৃস্টিতে টেবিলে রাখা গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আছে।সোমলতা দুহাত দিয়ে অনিকের হাত দুটো ধরে আবার বলতে শুরু করে,
“অনিক, এই সময় তে আমি জীবন টাকে নতুন করে খুঁজে পেয়েছি। জীবনটার একটা নতুন অর্থ পেয়েছি। আমি আমার এই নতুন জীবনটা এমন একজনের সাথে কাটাতে চাই যাকে আমি ভালোবাসি এবং যে আমাকে ভালোবাসে।আজকে আমি বুঝতে পেরেছি আমার ভালোবাসাটা হচ্ছো তুমি! তুমি চিঠিতে বলেছিলে না ফিরে আসতে। আমি ফিরে এসেছি অনিক নতুন জীবন নিয়ে।ফিরে এসেছি তোমাকে ভালোবাসতে!!”
অনিক এক ঝটকায় তার হাতদুটোকে সোমলতার বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত করে নেয়। শুকনো একটা হাসি দিয়ে বলে, “come on! সোমা, তুমি ভুল ভাবছো। তুমি তখন ক্যান্সার এর চিকিৎসার জন্য বাইরে যাচ্ছিলে,সবাই তোমাকে কিছু কিছু না কিছু দিচ্ছিল, wish করছিলো। আমি just কিছু লেখার পাচ্ছিলাম না। তাই যা মনে এসেছিল লিখে দিয়েছিলাম। আমি আমার সব বন্ধুকেই ভালোবাসি আমার বন্ধু হিসেবে। তোমার খারাপ সময়টাতে তোমাকে সময় দিয়েছি শুধুই একজন বন্ধু হিসেবে।তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও আমি তাই করতাম।সোমা, I am not the right person for you. You must understand.” এই কথা বলেই অনিক উঠে চলে গেল। সোমলতার চোখের দিকে তখন আর তাকায় নি অনিক, তাকালে দেখতে পেত সোমলতা কাদঁছে। সোমলতার সকালে শোনা গানটার শেষ কটা লাইন মনে হতে থাকে-
“সুখে আছে যারা সুখে থাক তারা,
সুখের বসন্ত সুখে হোক সারা-
দুখিনী নারীর নয়নের নীর
সুখীজন যেন দেখিতে না পায়।
তারা দেখেও দেখে না, তারা বুঝেও বুঝে না
তারা ফিরেও না চায়।”
অনিক রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়েই পাশের দোকান থেকে সিগারেট কিনে একটা সিগারেট ধরালো।অনিক regular ধূমপায়ী নয়। শেষ যেদিন সে সিগারেট ধরিয়েছিল সেদিন এই সিমেস্টার এর রেজাল্ট দিয়েছিল।অনিক ফেইল করেছিল করবেই না বা কেন সারাদিন সারা রাত ফেসবুকে পরে থাকলে তো ফেইল করবেই।সেদিনই কেন যেন বাবা জিজ্ঞেস করেছিল রেজাল্ট দিয়েছে কিনা। অনিক বলেছিল দেয় নি।বলেই বাসা থেকে বেরিয়ে সিগারেট ধরিয়েছিল সে।
(ছয়)
...................নীল কাগজে কালো কলমে লেখা চিঠিটা।কালার কম্বিনেশনটা আসলে বেশি ভালো হয় নি। সোমলতার হাতে চিঠিটা, সোমলতা শুয়ে আছে। বোধহয় ঘুমাচ্ছে।ওর ডান হাতটা ছড়ানো। ওই হাতেই চিঠিটা আলতো করে ধরা।ফ্যান চলছে ফুল স্পিডে।চিঠিটা উড়েই যাবে কিনা। ওহো উড়েই গেলো।
বেশিদূর অবশ্য গেলো না বিছানার সামনের আলমারিটার গায়ে লেপ্টে রইল। ঘরে ঢুকলেন সোমলতার মা।অনিক নামে সোমলতার এক বন্ধু এসেছে।সোমলতা ঘুমাচ্ছে তাকে ঘুম থেকে ডাকাটা তার মার কাছে ঠিক মনে হচ্ছে না কিন্তু কি আর করা যাবে সোমলতা বার বার করে বলে দিয়েছে অনিক এলে যেন তাকে খবর সেওয়া হয়। মার ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল সোমলতার। মার কথা শুনে শুধু অস্ফুট স্বরে বললো, “ ওকে এ ঘরে পাঠিয়ে দাও।”
সোমলতাকে দেখে চমকে উঠে অনিক। মাত্র দিন পনের আগে দেখা হয়েছে তখনো রোগা ছিল কিন্তু এমন ফ্যাকাশে তো সে তখন ছিলো না। অনেকগুলো কেমো সহ্য করা সোমলতার শরীরটা বুঝি আর পারছে না।কি হয়ে গেলো এ কদিনে সে তো কিছুই জানে না।আজকে হঠাৎ করে সোমলতার এসএমএস পেয়ে সে এসেছে। খুব সিম্পল লেখা,“I want to see u last time.pls meet me at my home today. Its my last request to u.pls…” অনিক হঠাৎ করেই কেঁদে ফেলে একদম শিশুর মত। “তোমার আবার কি হয়েছে সোমা! ডাক্তাররা না বলেছিল তুমি সম্পুর্ণ সুস্থ। তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?” কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে অনিক। সোমলতা একটু হাসার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। অস্ফুট স্বরে বলতে থাকে, “ এ মা! ছি! কাদঁছো কেন?ও আমি তো তোমার বন্ধু হই।বন্ধুর জন্য খারাপ লাগছে তাই না। কি করবে বলো তোমার এই বন্ধুটার কপাল খারাপ। সুখ সয় না। অবশ্য দুঃখ ও আর বেশিদিন থাকবে না।এবার ডাক্তার সময় বেঁধে দিয়েছে। বেশি হলে আর ৪ ৫ দিন। দেশে ফেরার দিন সাতেক পরই বুঝতে পারলাম কিছু একটা ভুল হচ্ছে।বাবা মা আমার কাছে গোপন করেছিল যে ওখানকার ডাক্তাররাই আশা ছেড়ে দিয়েছিল বলেই আমাকে রিলিজ করে দিয়েছে। আর আমাকে বলেছিল আমি নাকি সুস্থ হয়ে গেছি। আজ সকালেই বাবা আর পারেনি।কাঁদতে কাঁদতে সব বলে দিয়েছে। জানো আমি আমার বাবাকে কখনো কাঁদতে দেখিনি”।সোমলতার চোখ থেকে জল ঝরতে থাকে।অনিক কিছু বলতে পারে না শুধু সোমলতার দিকে অনেকটা ঝুঁকে পড়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। সোমলতা বলতে থাকে,“ অনিক আমার না খুব বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে, করবে আমাকে বিয়ে।I don’t wanna die virgin!!” অনিক হাতের আঙ্গুল দিয়ে সোমলতাকে থামিয়ে দেয়।দুজন দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ পাচ্ছে তখন।অনিকের ঠোঁট সোমলতার ঠোঁট স্পর্শ করে।সোমলতার তখন রবি ঠাকুরের একটা কবিতা মনে পড়ে
“অধরের কানে যেন অধরের ভাষা,
দোঁহার হৃদয় যেন দোঁহে পান করে-
গৃহ ছেড়ে নিরুদ্দেশ দুটি ভালোবাসা
তীর্থযাত্রা করিয়াছে অধরসংগমে”
অনিক নিজেকে সামলে নেয়। তারপর সোমলতার কানে কানে বলে,“You will not die virgin”।সোমলতা একটু হাসে তারপর বলে,“I will! You’ve just kissed a muslim lady but You cannot marry her... ভালো থেকো”। অনিক দ্রুত বাসা থেকে বেরোনোর পথেই নীল কাগজে লেখা সেই চিঠি টা দেখতে পায়। চিঠিটা সে নিয়েই যাচ্ছিল সোমলতা বলে উঠল,“ওটা আমার! থাক না আমার কাছে”।অনিক চিঠিটা সোমলতার কাছে তুলে দিয়ে আর দেরি করে না বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। সে রাতেই সোমলতা মারা যায়।অনিক খবর পেয়েছিল কিন্তু আর দেখতে আসেনি।
শিল্পপতি খিজির হায়াত খান এর এক মাত্র মেয়ে সোমলতা হায়াত খান এর জীবনের গল্প এখানেই শেষ।
(পরিশিষ্ট)
নিমতলা শশ্মান ঘাটে আজ ও সেই প্রতিদিনের মত অবস্থা।সেখানে নীরবতা মানে বিষাদ আর শব্দ মানে কান্না। পরিতোষ রায় এসেছেন আজকে তার ছেলেকে নিয়ে। তার ভুবন দা নিজের ছেলের হাতের আগুন পান নি ,পরিতোষ রায় ও পাবেন না।পার্থক্য এটুকুই ভুবন বাবুর ছেলে অনুপ অন্য ধর্মের মেয়ে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত আর পরিতোষ বাবুর ছেলে অনিক লোকান্তরিত। তার মাদকাসক্ত ছেলেটাকে অনেক চেষ্টা করেও পরিতোষ বাবু বাচাঁতে পারেননি।অনিকের মুখাগ্নি করতে গিয়ে পরিতোষ বাবুও বলতে থাকেন,“আমি কি দোষ করলাম যে আমার সাথে এমন হলো” আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে....