"ম্যাচস্টিক"
"ম্যাচস্টিক"
খোলা আকাশের নিচে রূপঙ্কর শুয়ে আছে .সময় টা রাত্তির ৩.৩০ .হটাৎ স্বপ্নের ঘোর কাটতে রূপঙ্কর উঠে বসলো . সামনে একটা ছোট্ট টুল .তার ওপর জলের জগ .একটু জল গ্লাস এ ঢেলে গলা ভেজাল .
বালিশের নিচে সিগারেটের বাক্স,ম্যাচ বাক্স এ দেশলাই কাঠি নেই ,তাহলে সিগারেট ধরাবে কিকরে?শীতকাল,মুখ দিয়ে ধোয়া বেরোচ্ছে .পায়ে চটি গলিয়ে নিচে যাওয়ার কথা ভাবলো কিন্তু তার জো নেই .গেট এ তালা ঝুলছে .একটু পরে দাদারা এসে ডেকে নিয়ে যাবে . কালো পতাকা নিয়ে মিছিলে যেতে হবে .পুলিশের দিকে পাথর বৃষ্টি করতে পারলে ৫০০ টাকা পাবে, তাই দিয়ে দুদিনের খাবার আর সিগারেটের বন্দোবস্ত হবে .তার পর অন্ধকার ভবিষ্যৎ .
গল্পটা শুরু করেও অরুনের আর লেখা হয়ে উঠলো না . CAB /NRC নিয়ে দেশে যা অবস্থা মানুষ পথে নেবে কি কাণ্ডই না করছে .অবশেষে বিরোধী দলরা মিলে বন্ধই ডেকে দিলো .বাস পুড়লো, লাঠি বৃষ্টি হলো,মেয়েদের নিয়ে ধাক্কা-ধাক্কি .কিন্তু এই সব ভাবার অরুনের সময় নেই .একেই তো প্রাইভেট চাগ্রি,আজ থাকে তো কাল থাকে না .বস এর ঘন -ঘন ফোন আসছে .যে করে হোক অফিস এ ঢোকো নাতো তোমার অবিচুয়ারি লেখা হয়ে যাবে .আগের দিন চারজন কে অফিস থেকে বার করে দিয়েছে . তারা তাদের পয়সা -গোন্ডা বুঝে বিদায় হলো .
হাতে আর সময় নেই . OLA ই বুক করতে হবে .মাসের শেষে ২৫০ টাকার ধাক্কা .তার ওপর ID কার্ড লুকিয়ে চলো .অফিস পাড়া নাকি শান্ত কিন্তু পথ টাই তো বিপদ ,কে ঢিল ছুড়বে ,কে কলার ধরবে .বসের ফোন না এলে অরুন ভেবে ছিল ছুটি নিয়ে গল্প টা কে শেষ করবে . কিন্তু ছুটি নেওয়া মানে টাকা কাটা যাওয়া তো বটেই তার ওপর বসের গালিগালাজ .
OLA এসে হাজির ,ড্রাইভার ফোন করলো .কোথায় যাবেন? গাড়ি চালানোর আগে ড্রাইভার একটা বিড়ি ধরালো , OTP টা বলবেন দাদা ,...কি হা ১১২৯.
তিনটে ট্রান্সফার দেয়ার পর অরুন ভাবলো বস বুঝি খুশি হয়ে আগে LOGOFF দেবে .টীম এর সেলস হয়নি ঠিকই কিন্তু সবাই প্রসপেক্ট বানিয়েছে ,এটলিস্ট ১০ তার মধ্যে ১ কনভার্ট হলেই বছর এর শুরু টা ভালোই হবে . কিন্তু কোথাকার কথা কোথায় গড়ালো .প্রসপেক্ট হলে কি হবে,কাজ নাকি করে যাবে না ,ভালো ডেভেলপার নাকি কলকাতায় পাওয়া যাচ্ছে না. এদিকে লোক না খেতে পেয়ে মরছে .বস হ্যাপি উইকেন্ড তো বললেন কিন্তু অপ্রিয় সত্য টাও মনে করিয়ে দিলেন.
যাক গল্পে ফেরা যাক .গল্প আবার ইন্টারেষ্টিং না হলে পাঠক রা পছন্দ নাও করতে পারে ,তাই মসলা ভালো করে কোষে কড়াতে চাপাতে হবে I কিন্তু একটা ম্যাচস্টিক লাগবে ,লাগবে আগুন .
রূপঙ্কর এর কাছে শেষ কাঠি টা ওই লোক টা নিয়ে গেল .ওর হাত -পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে .তার ওপর কলকাতায় এবার প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে .ছাদে সোয়া, ভোরে উঠে ঠান্ডা জলে স্নান করে কাজ ই বেরোনো .পাথর ছুড়তেও বুকের পাঠা লাগে.
বছর শেষ টা অবশ্য অরুনের ভালোই কেটেছিল .আকাশে ওড়ার স্বপ্ন ছোটবেলার .পাইলট তো আর হওয়া হলো না তাই পাইলট বন্ধু র কাছে বসে 2020 শেষে যদি কোথাও ঘুরে আসা যায় .ডিজিটাল টিকেট দেখিও কাজ হলো না .এক টা ছোট্ট মেশিন এ PNR টা দিতে হলো . বোর্ডিং পাস টা প্রিন্ট হলো .তার ওপর সেলফ চেক ইন. বেশ অনেক টা সময় কেটে গেল ফর্মালিটিজ গুলো শেষ করতে করতে .
ফ্লাইট এ একটা ম্যাগাজিনে এ চোখ গেল . কি সুন্দর লেখা, এয়ার হোস্টেস ও বেশ পারদর্শি .দিল্লী তে সময় টা কি ভাবে কেটে গেল বোঝা গেল না .এবার ফেরার পালা.কলকাতায় যখুন এলো অরুনের চোক অশ্রু তে চকচক I ঘরের ছেলের ঘরেফেরা .কিন্তু রূপঙ্করের কি হবে ...আসুন দেখি....
ম্যাচস্টিক যখুন পেলো না রূপঙ্কর ভাবলো যদি তালা ভেঙে বেরোনো যায়.দাদাদের ভয় করলে চলবে না .বিছানা পত্তর নিয়ে খাড়া সিডি দিয়ে নামলো ,অবশ্য এই বাসার সন্ধান দাদা রাই দিয়েছিলো .তাই ও এক প্রকার কৃতজ্ঞ বটে.. যেমন মতি তেমন কাজ , রূপঙ্কর বাইরে ঠিক বেরিয়ে এলো.কিন্তু এখানেও পোড়া কপাল ,দূরের দোকানে যখুন পৌঁছলো দেখলো মালিক দোকান বন্ধ করে বৌ কে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল .
রূপঙ্করের চোখ ভিশন সার্প . ও ঠিক দুটো পাথর আর একটু পেট্রল জোগাড় করে আদিম মানুষের মতন আগুন ঠিক জ্বালিয়ে ফেললো .কিন্তু এ কি মাজ রাত্তিরে বৃষ্টি কেন . বৃষ্টি তে রূপঙ্কর ভেজে আর হাস্তে হাস্তে ভিজে যাওয়া সিগারেট .টাকে দেখে...গরিব হওয়ার কি জ্বালা .
রূপঙ্করের আর বাড়ী ফেরা হলো না .এইভাবেই গল্প শেষ করতে মন করলো না অরুনের কিন্তু কি আর করা যাবে ক্যাব এসে ওর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে গেল ,এবার পায়সা মিটিয়ে ক্যাব ড্রাইভার কে ধন্যবাদ দেয়ার পালা ....রূপঙ্করের সাথে কি অরুন ও হেরে গেল না? যদি রূপঙ্কর কে নিজের পায়ে দাঁড় করতে পারতো.হা ঈশ্বর ও মনে মনে নিজের লেখা চরিত্র কে বললো হাল ছেড়ো না বন্ধু ....আসবে সকাল ভোর হবে..তুমি ঠিক বিজয়ী হবে .
আমার রেটিং টা স্যার ৬ ষ্টার হবে তো ক্যাব ড্রাইভার বলে ওঠে ....
অবশই
অরুন অন্ধকারে মিলিয়ে যায় .
