Koushani Paul

Inspirational Children

3  

Koushani Paul

Inspirational Children

মজার ফল

মজার ফল

7 mins
298


আজও মনে পড়ে সেই দিনটার কথা যেদিন মা মনিকা চৌধুরী বাড়িতে ছোট্ট মেয়েটাকে কোলে করে ঢুকেছিলো , মা ঠাকুমা অপরূপা সারা পাড়ায় মিষ্টি বিতরণ করেছিলো , ঠাকুমা সাধ করে নাম রাখলো পরী , প্রমিতা ।


খুশি হয়েছিলো বাড়ির সবাই বিশেষ করে মেয়েটার বাবা সুবিমল । 

তিনি বলেছিলেন - একটা মেয়ে দশটা ছেলের সমান 

সুবিমল বাবু মেয়েকে কোলে নিতেন না , যদি মেয়ে পড়ে যায় সেই ভয়ে


দাদু অজিতেশ বাবু , রোজ অফিস থেকে এসেই হাত মুখ ধুয়ে কোলে নিতো মেয়েটাকে 

কাকা সুকল্যান , তো রোজ রাতে নিত্য নতুন খেলা আবিষ্কার করে বাচ্চাটার সাথে খেলতো । কেউ কক্ষনো মেয়েটার কোনো অযত্ন হতে দেয়নি


দেখতে দেখতে সুন্দর করে সাত সাতটা মাস অতিক্রম করলো আমাদের ছোট্ট পরী । এবার তো তার অন্নপ্রাশন দিতে হয় । তখন কারোর অবস্থাই ভালো ছিলো না তাই সবাই ঠিক করলো কোনো বাড়ি ভাড়া করে নয় , নিজেদের বাড়িতেই হবে অনুষ্ঠান , সুবিমল বাবু নিজে বাজার করবে আর মা ঠাকুমা রাঁধবে আর দাদু আর কাকা অতিথি আপ্যায়নের দিকটা খেয়াল রাখবে ।


অন্নপ্রাশনের দিন সকালে বাবা বাজারে যেতেই ভিড়ের মধ্যে পকেট থেকে পড়ে গেলো চকচকে একটা পাঁচশো টাকার নোট , তখনকার দিনে পাঁচশো টাকার অনেক দাম । তাও একমাত্র মেয়ের মুখে ভাত বলে কথা তার মধ্যেই কোনো রকমে বাজার করে বাড়ি ফিরলো সুবিমল ।


সুষ্ঠ ভাবে মিটে গেলো মুখে ভাতের অনুষ্ঠান । 


এর ঠিক তিনবছরের মধ্যে কাকার বিয়ে ঠিক করা হলো তারই পছন্দের পাত্রী অরুণিমার সাথে , মেয়েটা অত্যন্ত ভদ্র সভ্য , রুচিশীল ।


সেখানে গিয়েও আরেক বিপত্তি । বিয়েটা ঠিকমতো মিটলেও সমস্যা দেখা গেলো বৌভাতের দিন রাত্রিবেলা । ছোট্ট পরীর জ্বর এসেছে , ধুম জ্বর । মাথার পাশে বসে আছে বাড়ির লোক , নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজন , এমন ভালো দিনে এমন ঘটনা , বাড়ির প্রথম ও বড়ো মেয়ে হওয়ার দরুন বাড়িতে কান্নাকাটি পড়ে গেছে । নতুন কাকিমা , সেও কাঁদছে , সে বিয়ের আগে থেকেই পরীকে চিনতো কারণ পরী মাঝেমধ্যে ওর কাকার সাথে তার হবু কাকিমার কাছে যেতো ।


সে যাই হোক , মা বাবা নিয়ে গেলো ছোট্ট তিন বছরের পরীকে family physician এর কাছে । ডাক্তার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটা ওষুধ দিলো আর তার সাথে কয়েকটা fruit juice কারণ জ্বরের জন্য মুখে অনেক ঘা হয়েছে তাই solid কিছু খেতে পারছে না । বলে না যে থাকে যার তালে , এখানেও ব্যাপারটা ঠিক সেইরকম । আমাদের ছোট্ট পরী খুব খুশি কারণ সে তো fruit juice খেতে ভালো বাসে ।


আসতে আসতে পরী স্কুলের দোরগোড়ায় পা রাখলো । প্রথম দিন স্কুলে গিয়ে সে কি কান্না !! স্কুল ছুটি হওয়ার পর মনিকা মেয়ের কান্না দেখে নিজেই কেঁদে ফেললো , যতই হোক বড়ো মেয়ে বলে কথা । 


সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হয়ে গেলো । স্কুলের পরীর নতুন বন্ধু হলো , বীথি আর অদিতি ; এদের মধ্যে অদিতি ছিলো একটু ঝগড়ুটে , না ঝগড়ুটে বলা ভুল , ও ছিলো পরী আর বীথির ওপর ভীষন possessive । ওরা সবসময় একসাথে থাকলেও পরী আর বীথি ছিলো একে best friend , সারা স্কুল এমনকি teachers রাও জানতো ওদের বন্ধুত্বের কথা ।


পরী যখন ক্লাস টুতে পরে তখন মনিকা দেবীর কোল জুড়ে আসলো তার ছেলে , প্রতীক । এতো দিন ধরে মাকে বলতে বলতে , এখন পরী ভাই পেয়েছে এটা কি কম বড়ো কথা ? যেদিন মা ভাই আনলো সেদিন থেকে ও ওর ভাইয়ের পাশে বসে বসে থাকতো । ওর মনে হতো যেনো ওর ছোট্ট বেলার খেলার পুতুল happy baby কে ভগবান প্রাণ দিয়ে পাঠিয়েছে , কি ছোট্ট নরম হাত , কি ছোট্ট ছোট্ট পা ।


ভাইয়ের যাবতীয় সব কাজে মাকে যথা সম্ভব সাহায্য করতো পরী । পরী তার ভাইয়ের খুব খেয়াল রাখতো আর ভাইও দিয়া বলতে অস্থির । স্কুল থেকে ফিরলে পরে ছোট্ট ছয়মাসের ভাই তার দিদির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তো । 


এতদিন অবধি ভগবান যেনো পরীকে স্বপ্নের দেশে রেখে ছিলেন । কিন্তু এবার ? এখানেই গল্পের climax 


ভাই কে যতই ভালোবাসুক না কেনো নিজের এতদিনের ভালবাসাগুলো কে share করতে কার ভালো লাগে । ভাই হওয়ার পর , কোনো অন্যায় করলে কেউ যদি বকতো তাহলে পরীর মনে হতো যে ভাই যেনো ওর এতদিনের ভালবাসাগুলো কে কেড়ে নিচ্ছে । ও চুপিসাড়ে মন খারাপ করতো ।


পরী আদপে ছিলো খুব শক্ত মনের , ও এই মনখারাপ গুলো কাটাতে গল্প লিখতে শুরু করে । ওর লেখার হাত ছিলো অসাধারণ । এর মধ্যে ওর ভাই বড় হলো তার ৬বছর পূর্ণ হলো , ওর ভাই দেখতো যে ওর দিদিকে বাড়ির সবাই বকাবকি করে তাই সেও দিদিকে শাসন করতে শুরু করে , কারণে অকারণে গায়ে হাত দিতো । পরী বোধ হয় এতো মার ওর বাবা মায়ের কাছেও খেতো না যা ও ওর ভাইয়ের কাছে খেতো । 


পরী খুব শান্তশিষ্ট মেয়ে ছিলো , ভাই যদি ওকে খুব জোড়ে না মারতো তাহলে ও কাউকে বলতো না । আর সেটাই হয়ে গেছিলো ওর জীবনের অন্যতম ভুল । ভাই মারতে মারতে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেলো যে ও ওর ভাইকে মারতে বাধ্য হতো যেখানে পরী কারোর গায়ে কখনো হাত দেয়নি । বাড়ির সবাই প্রতীককে বকলেও প্রতীক নিজেকে বদলালো না । 


পরীর গানের গলা ছিলো অপূর্ব !! মা ঠাকুমা কাকিমা ওর ৮বছর বয়সে , সাধ করে কাছেই একটা গানের ক্লাসে ভর্তি করে দিয়েছিলো । কিন্তু ক্লাস নাইনে পড়ার চাপে ওর বাবা সেটাও বন্ধ করে দেয় তার বদলে দিয়ে দেয় একটা ফোন যেহেতু পড়াশোনার কাজে লাগে।


মেয়েটা গানের ক্লাসে গেলে একটু প্রাণখুলে নিঃশ্বাস নিতে পারতো , এখন তারও উপায় নেই । স্কুলও ছুটি করোনার কারণে । মেয়েটা ফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে । ও এবার অনলাইন রাইটিং প্লাটফর্মে লেখালেখি শুরু করে । 


কিন্তু শুধু লিখলেই তো হলো না গল্পের plot ও তো ভাবতে হবে কিন্তু তা আর হচ্ছে কই ? সারাদিন তো বইয়ে মুখ গুঁজে থাকতে হয় । তাই পরী ঠিক করে যে স্নানের সময় ও বাথরুমে বসে বসে ভাববে । 


একটু অদ্ভুত না ? হ্যা অদ্ভুতই তো । পরী হাতে পায়ে বড়ো হলেও মাথায় একবারেই বড়ো হয়নি , ও ক্লাস নাইনে পড়লেও ওর মধ্যে তখনো maturity আসেনি । ও ছোট্ট থেকেই ছিলো একটু বোকা বোকা , বাবা মায়ের অত্যন্ত আদরের কিনা । এমনকি ও যখন প্রথম বন্ধুদের কাছে menstrual cycle এর কথা শোনে তখন ও বুঝতেই পারেনি । ও বাড়িতে এসে মনিকা দেবীকে বলায় মনিকা দেবী , অরুণিমা দেবী ওকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো ভালো করে ব্যাপারটা ।


সে যাই হোক , ওর বাথরুমে বসে বসে গল্পের প্লট ভাবার ব্যাপারটা ও কাউকে বলেনি , যদি কেউ হাসাহাসি করে তাই । সেটাই কাল হলো । বাড়ির সবাই বলাবলি করতে আরম্ভ করলো যে বাথরুমে স্নান না করে ও বসে থাকে !!! সবাই ভাবতে শুরু করলো যে ওর বোধ হয় কোনো psychiatric disorders হয়েছে । বলতো না শুধু কাকিমা আর মা ।


সবাই ওর মাকে বলতো মেয়েকে councelling করানোর জন্য , ওর মা বাড়ির লোকের মুখের ওপর কিছু না বললেও মনে মনে কষ্ট পেতো , রাগ হতো আর সেই রাগ পরীর ওপর দেখাতো । পরীকে এই নিয়ে কেউ কিছু বললে ও স্পষ্ট জবাব দিয়ে দিতো , মুখের ওপর যা নয় তাই বলে দিতো । ও ওর মাকেও বলতো যে ভগবান মানুষের দুটো কান দিয়েছে , এক কান দিয়ে কথা শোনার জন্য আর অন্য কান দিয়ে সেই কথা বার করে দেওয়ার জন্য । 


পরী ছেলেমানুষ হলেও বুঝতে পারতো মায়ের মনের কষ্ট গুলো , কিন্তু সে তো mentally sick নয় । পরী যে এই কথা গুলো তার বাবা কে বলবে এমনটাও নয় কারণ সুবিমল বাবু এখন ভালো চাকরি করে , তার পাশাপাশি পার্টি করে । এতো খাটাখাটনির পর বাবাকে এগুলো বলতে খারাপই লাগতো ।


একদিন এই অশান্তি চরমে উঠলো । পরীর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো সেদিন যেদিন ও দেখলো যে কাকা ছোট্ট থেকে ওকে ভালোবেসে এসেছে সেই কাকা ওর বোকামো গুলো দেখে , ওর বাচ্ছামো গুলো দেখে হয়তো মজা করেই ওকে বললো যে ওকে asylum এ দিয়ে আসবে । প্রথম প্রথম উড়িয়ে দিলেও পরে ব্যপারটা ও seriously নিলো । পরী ভাবলো যে ওর জীবনে কোনো entertainment নেই , স্কুল বন্ধ , গান শিখতো তাও ছেড়ে দিলো আর এখন এসব কথা , ও আর নিতে পারছেনা । ও সেদিন ঠিক করলো যে আর নয় এবার কিছু একটা করতেই হবে ।


আর এর পর যা হওয়ার তাই হলো , পরের দিন সকালে , পরীর বাড়ির লোক পরীর ঘর থেকে ওর নিথর মৃতদেহ উদ্ধার করলো ।


(দয়া করে, বন্ধুরা , শিশুদের তাদের মতো করে বাঁচতে দিন । ওদের ওপর নিজেদের মতামত চাপিয়ে দেবেন না। ওদের মনের কথা গুলো বোঝার চেষ্টা করুন । সারাক্ষণ ওদের বড়ো বড়ো বলবেন না , হয়তো বয়সে বড়ো হলেও মনের দিক থেকে তারা এখনো ছোটো । তাই সন্তানদের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করুন নয়তো পরীর মতো তাদের নিষ্পাপ প্রাণটাও চলে যাবে । 


এটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে । লেখার সুবিধার্থে চরিত্রের নাম ও স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে ।)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational