খোরাক
খোরাক
গা ঘিন ঘিন করছে রেহানার। একে এই তুমুল বৃষ্টি, ছাতায় বাঁধ মানে না, মাঝ রাস্তায় বাস-স্ট্যান্ডে এক গাদা লোকের মাঝে ভিড়ে চ্যাপ্টা হতে হচ্ছে। বর্ষার প্যাচপ্যাচ, ভিড় ভাট্টা, ঘামের গন্ধ, তার মধ্যে ঢুকে পড়েছে নেড়ি কুকুরগুলোও, আর ওই লোকটাকে দেখো, রেহানার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে হস্তকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। ওয়াক!! মা গো, এত নোংরা হয় কি করে রে বাবা... দেখে তো ভদ্রলোকই লাগছে, পরিষ্কার জামা প্যান্ট, টেরি বাগানো চুল, হাতে একটা ফাইলের মতো ব্যাগ আর ছাতার প্যাকেট। এসব কাজ কেউ পাব্লিক প্লেসে অভদ্রের মতো করতে পারে, ইস্.. বমি উঠে আসছে।
যতই অন্য দিকে তাকানোর চেষ্টা করুক না কেন, সেই হতভাগা চোখ ওই দিকেই ঘুরে ফিরে যাবে। যাচ্ছেতাই!! এরে বাবা রে.... ভাব ভঙ্গি দেখো!! মুখ হাঁ করে জগৎ সংসার ভুলে মনের সুখে হাতের খেল দেখিয়েই যাচ্ছে। উফ ভগবান!! এই রকম চলতে থাকলে আর কিছু না হোক, লোকটার ওই থ্যাবড়া মার্কা নাকটা বিদ্রোহ ঘোষনা করে গোলগাল মুখটা থেকে যদি ছিটকে বেরিয়ে আসে, তাহলে কেমন দেখাবে! সূর্পনখার পুরুষ সংস্করণ!
বৃষ্টিটা ধরে এসেছে। এবার আস্তে আস্তে স্ট্যান্ডের কারশেডের নিচে থেকে ভিড় পাতলা হচ্চে। টুং করে রেহানার মাথায় টুনি বাল্ব জ্বলে উঠলো। একটু খোঁচালে হয় না লোকটাকে!! এই খোঁচা মারা বিদ্যা ছোট থেকেই বেশ ভালো রকম রপ্ত রেহানার।
-" এই যে দাদা, আর কিছু অবশিষ্ট আছে?"
-" আমাকে বলছেন?" দাদা এপাশ ফিরলেন।
-"হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি। আর কিছু অবশিষ্ট আছে কি?"
-"কিসের বলুন তো?"
-" এই যে তখন থেকে কোদাল চালিয়ে গেলেন... নাকের মধ্যে পদার্থ অপদার্থ কিছু আর অবশিষ্ট আছে কি!!"
-"অ্যাঁ"
-"আজ্ঞে হ্যাঁ.... কোদাল চালানো তো কম্পলিট, কিছু বীজ ছড়িয়ে দিলে হয় না!! বাগান হয়ে যাবে।"
লোকটার ভ্যাবলা হতচকিত দৃষ্টিকে পিছনে ফেলে রেহানা ধাঁ। পেটের মধ্যে গুড়গুড় করে উঠছে হাসি। সোডার বোতলের মতো একবার ছিপি খুললেই ভুস করে উঠে আসবে হাসির লহর। লোকটা এই জীবনে জনসমক্ষে কোদাল কর্ম করার আগে নিশ্চয় দশবার ভাববে।
এবার গন্ত্যব্য অফিস। দিনটা খোরাক দিয়েই শুরু হলো আজ।
আরে নাহ! কি কপাল! বাসে সীট পেয়ে গেলো রেহানা, তাও আবার জানলার ধারে। জমিয়ে বসে স্কার্ফে মুখ ঢেকে এতক্ষন চেপে রাখা হাসিটার আগল খুলে দিলো, মিউট হাসি কি যার তার কম্ম!! রেহানা এটাতেও পোক্ত। মুডটা একদম ফ্রেশ হয়ে গেলো।
অফিসে ঢুকেই নজর গেলো মিমির দিকে। আইলা, কি ঝিনচ্যাক ডেরেস দিয়েছে মাইরি। স্কিন টাইট স্লিভলেস সালোয়ার, কেত মারা চুল আর মেক আপ তো বারো মাস মুখের উপর ফিক্সড। অফিসের ছেলে গুলো ছোঁকছোঁক করবে না তো কি করবে!! ওই ত্তো... উল্টোদিকে রাতুল, চোখ আটকে গেছে ইস্পেশাল জায়গাতে... মিমির ও অস্বস্তি বেড়ে চলেছে। উফ, দুপাট্টা যে কেন মেয়েগুলো পড়ে না আজকাল!! এমন জামা পরেছো মামনি, সাথে এসব রাখতেও তো হয়... দেশটা এখনো তো লন্ডন- আমেরিকা হয়ে যায়নি!
রাতুলের একদম মুখের সামনে সটান দাঁড়িয়ে পড়লো রেহানা। চমকে চকিত রাতুল একটা বোকা বোকা হাসি দিলো রেহানার দিকে। মনে মনে বিরক্ত হলেও উপায় নেই, ঠোঁট কাটা রেহানাকে অফিসে সবাই সমঝেই চলে। রাতুলকে একবার আপাদমস্তক মেপে নিতেই রেহানার জিভটা আবার সুড়সুড় করে উঠলো।
-" হেভি ভিউ, তাই না?"
-" ইয়ে মানে... কি বৃষ্টি বাইরে, তোমার আসতে খুব কষ্ট হলো বলো রেহানাদি!"
-" সেই, কত বুঝিস মেয়েদের কষ্ট। একটু কম বোঝ, তোর জন্যও ভালো, বুঝলি!!"
নিচু গলায় কথাগুলো বলে রেহানা ঘুরে তাকালো মিমির দিকে। রাতুল মাথা নিচু করে কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকলো। বেচারার মুখ কালো হয়ে গেছে। ছেলেটা এমনি খারাপ না, কিন্তু এই সব বিষয় অফিসে না বাড়তে দেওয়াই ভালো। এটা রেহানার প্রিন্সিপ্যাল।
স্কার্ফটা ছুঁড়ে দিলো রেহানা মিমির দিকে। অপ্রস্তুত মিমি জামা ঠিক করার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে রেহানার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলো। সামনে এগিয়ে এসে মিস্টি করে রেহানা বললো... "যতই চেষ্টা কর না কেন, চাঁদ সূর্য উকি মারতে চাইলে আটকাবি কি করে! অফিসে একটু ভদ্রলোক হয়ে আসিস।"
আর রাতুলের দিকে এক চোখ রেখে গলা তুলে জানালো... "স্কার্ফটা কাল ফেরত দিলেই হবে।"
দেদার কাজ এখন। নিজের সীটে বসে আত্মস্থ হয়ে পড়ে রেহানা। আদ্যোপান্ত কাঠখোট্টা একটা মেয়ে,তার উপর স্পষ্টবাদী, শুধু স্পষ্টবাদী বললে খুবই কম বলা হয়, যাকে বলে আগলহীন মুখ, রেহানা তাই। শরীরে ভয় ডর বলে কিছু নেই। অনেকেই অপছন্দ করে রেহানাকে। কিন্তু ওই যে, শত চেষ্টা করেও রেহানার কাজের খুঁত খুঁজে বার করা যাবে না। শুধু তাই নয়, অফিসে কারুর কোনোরকম সমস্যা হলেই আর কেউ আসুক না আসুক রেহানা ঝাঁপিয়ে পড়বেই। এতে ওর কেরিয়ারে দাগ পড়বে কিনা এসব নিয়ে বিলকুল মাথা ব্যাথা নেই ওর। এই সব কারণের জন্যই অফিসে রেহানাকে অপছন্দ করার মানুষদের পাশাপাশি পছন্দ করার মানুষের লিস্টও কিছু কম নয়।
নিলয় এসে রেহানাকে ডাকলো।
-"রেহানা, এ ওয়ান প্রোডাকশন হাউজ থেকে ওই লোকটা এসেছে।"
-" কোন লোকটা?"
-" আরে ওই চেক কালেকশন কেসটা। রিমা ঝাড় খেলো না সেদিন ফিনান্স হেডুর কাছে!!"
-" আচ্ছা! আজ এসেছে চেক কালেক্ট করতে! কোথায় মালটা?"
-" হেডুর ঘরে।"
-" ওফ, তোরা ওকে আগে ধরলি না কেন! এখন দোতলায় গিয়ে ক্যাঁচাল করা যাবে না।"
-" আরে হেডুর সাথে ঢুকলো। "
-" হেডু নিচে কি করছিলো রে! দুনিয়া শুদ্ধু লোককে তো নিজের চাকর ভাবে, কেবিনে ডেকে পাঠায় লক্ষবার। আজ নিজে সাপ্লায়ারদের সাথে ঘুরছে! "
-" হু হু বাওয়া.... কাট মানির গল্প আছে সোনা। এমনি এমনি ফিন্যান্স ডিরেক্টার। কোন দিক দিয়ে স্যুট করে কাট মানি গলে যাবে, কেউ টের পাবে না।"
-" হুম, নিচে আসতে দে। তক্কে তক্কে থাক। দেখি ব্যাটাকে আজ ক্যালাতে পারি কিনা।"
-"হেডু তো দেখছি প্রোটেকশন দিয়ে রেখেছে লোকটাকে।"
-"তাহলে হেডুকেই ধরবো।"
বড়জোর মিনিট বিশেক....
সাপ্লায়ার ভৌমিক উইথ ফিনান্স ডিরেক্টার স্যান্যাল নামছেন। নিজের মধ্যে গম্ভীর বদনে বাক্যালাপে ব্যস্ত তারা। বাক্যালাপ এক তরফা সাপ্লায়ার ভৌমিকেরই, মগ্ন শ্রোতা অপরজন। সাথে মুখে গাম্ভীর্য বজায় রেখে মাঝে মাঝে হুঁ হাঁ করায় ব্যস্ত স্যান্যাল, ওরফে হেডু।
সামনে এসে দাঁড়ালো রেহানা।
-" স্যার, কথা ছিলো।"
-" এখন সময় নেই রেহানা। আই হ্যাভ টু এটেন্ড আ মিটিং। তুমি পরে কেবিনে এসো।"
-" আমার হাতেও সময় নেই স্যার। উই নিড টু টক রাইট নাউ স্যার। পরে আপনার কেবিনে ভৌমিককে পাবো না।"
-" কি ব্যাপার! " ভ্রু কুঁচকে গেলো স্যান্যালের।
-" ভৌমিক বাবু কি আজ চেক কালেক্ট করলো স্যার?"
-" হ্যাঁ... একটা চেক আজ ক্লিয়ার হলো। কেন বলো তো?"
-" এই চেকটার জন্যই কি পরশুদিন রিমাকে একিউজ করলেন আপনি সবার সামনে?"
স্যান্যাল একটু থামলেন।
-" দেখো, আমি কাউকে কৈফিয়ত দিই না। এনি ওয়ে আই এম গেটিং লেট।"
-"একটু স্মৃতির উপর জোর দিন স্যার।"
-"মে বি। তাতে হয়েছে টা কি?"
-" ভৌমিক আপনাকে কি বলেছে জানি না স্যার। আপনি ছিলেন না কিছুদিন এই অফিসে। রিমা নিউলি এমপ্লয়েড একজন। আপনি বেছে বেছে ওকেই এই দায়িত্ব দিলেন, চেক কালেক্ট করে আপনার কেবিনে আপনার ড্রয়ারে রেখে আসতে। ভৌমিক নাকি জানে চেক কাকে দিতে হবে। অর্থাৎ রিমাকে দিতে হবে। আপনি একটু সবার সামনে কাইন্ডলি ভৌমিককে জিজ্ঞাসা করবেন উনি কবে রিমাকে চেকটা দিয়েছেন?"
-" এটা যদি হয়েও থাকে, তাহলে সেটা সিম্পলি একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং রেহানা। কোথাও বুঝতে ভুল হয়েছিলো। এই নিয়ে সিন ক্রিয়েট করার এস সাচ কোনো মানে নেই।"
-" এটা যদি এতই সিম্পল ব্যাপার হতো স্যার, তাহলে আমি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে দুজনেরই অমূল্য সময় নষ্ট করতাম না। সিন সেদিন ক্রিয়েট হয়েছিলো, আজ সেটায় নাহয় পরদা পড়ুক।"
-" লিভ ইট রেহানা। আই এম গেটিং লেট।"
-" হাউ ক্যান আই স্যার? একটা নতুন মেয়ে, এমনিতেই ভয় পেয়ে আছে নতুন অফিসে। ওর প্রথম চাকরি এটা। ওকে আপনার এই সিম্পল কেসটার জন্য সকলের সামনে কি ভাবে হিউমিলিয়েট করেছিলেন আপনি? সেদিন তো গলা তুলে বলেছিলেন, ভৌমিক আপনাকে বলেছে ও নিজে রিমার হাতে চেক রেখে গেছে। রিমা সেটা মিসপ্লেস করেছে... ব্লা ব্লা ব্লা। চেক তো আজ এলো স্যার। তাহলে আইদার ভৌমিক লায়ার ওর ইউ স্যার!"
-" টোল্ড ইউ রেহানা, ইটস আ সিম্পল কেস অফ মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং। " গলার পারদ চড়তে থাকে সান্যালের।
-" নো স্যার, ইটস আ কেস অফ হিউমিলিয়েশন। একটা বাচ্চা মেয়ের মনোবল ভাঙতে ক'সেকেন্ড লাগে বলুন তো! আপনারাই বলেন, ইটস আ স্মল ইউনিট, আমরা একটা পরিবারের মতো। আপনি পরিবারের মাথা হয়ে কি ভাবে পরিবারের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্যকে অপমান করতে পারেন?"
-"হাউ ডেয়ার ইউ টু টক টু মি লাইক দিস রেহানা?"
-"অন্যায়ের প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে আমার যে সৎ সাহসের কোনোদিন অভাব হয়নি স্যার আর হবেও না...এটা তো আপনি জানেন।"
-"রেহানা!! " রাগে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে চিৎকার করে উঠলেন ফিনান্স ডিরেক্টর স্যান্যাল।
-"কি ব্যাপার! প্রবলেম কিসের?"
বাগবিতন্ডা আর চিৎকার চেঁচামিচি শুনে বেরিয়ে এসেছেন অপারেশন ভাইস প্রেসিডেন্ট মি: তালুকদার।
-" কি হয়েছে স্যান্যাল? কি ব্যাপার রেহানা, এত জটলা কিসের?"
রেহানা শান্ত ভাবে তালুকদার স্যারকে সমস্ত ঘটনা জানায়। ওর ভরসা আছে তালুকদার স্যারের উপর। এমন দেবতুল্য আর পক্ষপাতহীন মানুষ এখনো আছেন বলেই মানুষের উপর বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে বারবার।
-" অন্যায় তো হয়েছে স্যান্যাল। আপনার আগে একবার ভেরিফাই করা উচিত ছিলো কে সত্যি বলছে। মোর ওভার, একটি নিউলি এপয়েন্টেড মেয়ে কোম্পানির নামে রেডি চেক লুকিয়ে কি লাভ! একটু ভেবে কাজ করুন।"
গলা খাঁকারি দিয়ে স্যান্যাল.....কিছুটা তির্যক ভঙ্গিতে.....
-" ওকে ফাইন। আই এম দ্যা গিলটি। সো, মে আই লিভ নাউ রেহানা!"
রেহানা এগিয়ে আসে।
-" একটা ছোট্ট কাজ বাকি থেকে যাচ্ছে। আমাদের পরিবারে কেউ ভুল করলে সরি বলতে হয় স্যার, আপনি তো জানেন। পরশু পুরো অফিসের সামনে রিমাকে ফর নো রিজন আপনি একিউজ এন্ড হিউমিলিয়েট করেছেন, আজ নাহয় সকলের সামনেই ক্ষমা চেয়ে ক্রিয়েটেড সিনটা ক্লোজ করুন স্যার। এজ সিম্পল এজ দ্যাট।"
-" ইয়েস, আই থিঙ্ক একটা সরি অনেক মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্লিয়ার করে দিতে পারে স্যান্যাল। থিঙ্ক এবাউট দ্যাট।" সমর্থন জানালেন তালুকদার।
স্যান্যাল দাঁতে দাঁত চাপলেন। রেহানাকে উনিই এপোয়েন্ট করেছিলেন বছর আটেক আগে। এ যে চকোলেট ব্যোম, সেটা তিনি এত দিনে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। অনেক চেষ্টা করেও রেহানাকে ফায়ার করতে পারেননি। মনে মনে সৎ মানুষদের একটু ভয়ই পান স্যান্যাল। আজ উপায় নেই, এই রিমা বলে পুচকি মেয়েটার কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে। ভাইস প্রেসিডেন্ট নিজেও এখন রেহানাদের দিকে। সুতরাং অযথা দেরি করে লাভ নেই।
স্যান্যালের একটা ছোট্ট সরি। রিমার লজ্জায় ভয়ে মুখ লাল হয়ে গেছে। রেহানার গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আস্তে করে জানায়,
-"ইটস ওকে স্যার। আমার ভুল ভ্রান্তি হলে বলবেন স্যার। আমি কাজ শিখতে চাই।"
স্যান্যাল কাঁধ শ্রাগ করে এগিয়ে যায়। আবার পথ রোধ করে রেহানা। জ্বলন্ত দৃষ্টি রেহানার দিকে। আবার কি চাই!
-" থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। ইউ বিন আ গ্রেট সোল। উই আর প্রাউড অফ ইউ।"
পাশ থেকে হাততালির ঝড় উঠলো। স্যান্যাল হন হন করে অফিস থেকে বেরিয়ে গিয়ে হাফ ছাড়লেন। পিছু পিছু ভৌমিক প্রায় দৌড়ে স্যান্যালকে ধরে ফেললো।
তালুকদার স্যার হালকা হেসে নিজের কেবিনের দিকে রওনা দিলেন। এই ডাকাবুকো মেয়ে রেহানাকে তিনি বড়ই স্নেহ করেন। এমন মেয়েই দরকার সবার ঘরে ঘরে।
রেহানা রিমার পিঠে মৃদু চাপড় দিয়ে বললো...
-" যা কাজ কর। আমরা সবাই আছি সবার পাশে।"
নিলয়, মিমি, রাতুল এবং অফিসের আরো অনেকে এগিয়ে এলো।
-" কনগ্র্যাটস রেহানা। ব্যাপক দিলে তুমি বস।"
-" এরকম ব্যাপক আরো পাবি, যদি তোরা কেউ বেগড় বাঁই করিস। যা কাজে যা। "
ভিড় পাতলা হয়ে গেলো। অদ্ভুত মেয়ে এই রেহানা। এত বড় কর্ম কান্ডে কোনো হেলদোল নেই। কোথায় সবাই আজকের এই খোরাক নিয়ে জমিয়ে দিনটা পাত করবে, তা নয়... রেহানা কাউকে সুযোগ দিলো না একটু পি এন পি সি করার। কাজে ডুবে গেলো আবার।
রিমা এগিয়ে এলো এতক্ষনে রেহানার কাছে।
-" তোমার ভয় করে না দিদি?"
-" না রে, ভয় কিসের!"
-" যদি তোমায় বলে কাল থেকে আর আসবে না অফিসে! "
-" ধুর তুই বড্ড বোকা। ব্যাপারটা অত সহজও নয়। আর ফায়ার করলে করবে। নতুন কিছু জুটিয়ে নেবো। কদিন একটু চাপ যাবে, কিন্তু হয়ে যাবে কিছু না কিছু। ঠিক করে কাজ শেখ। নিজের কাজ ঠিক করে করতে পারলে কারুর ক্ষমতা নেই তোকে লাইফ থেকে ফায়ার করে। বুঝলি পাগলী! যা কাজে যা। "
-" তুমি বড্ড সাহসী গো দিদি।"
মুচকি হাসলো রেহানা। সবাই ওকে সাহসী বলে, ভালোই লাগে। কিন্তু রেহানা জানে, ওর জীবনে একটাই ভয়.... কর্মক্ষমতা আর সত্যি কথা বলার সৎ সাহসটার অভাব যেন কোনোদিন ওর না হয়। ভগবানের কাছে শুধু এই একটাই প্রার্থনা। ব্যাস.... বাকি সব টুকু ও নিজেই সামলে দিতে পারবে।