কেশবের প্রাপ্তি
কেশবের প্রাপ্তি
কেশব : বাসন্তী, ও বাসন্তী। খানা দে না এবার! সময় যে এবার গনিয়ে এলো! তোর জন্য কি রোজ রোজ বসের এমন নিমপাতার তিক্ততায় মেশানো তিক্ত ঝাড়ি খাব?
বাসন্তী : একটু সবর তো কর! একা মানুষ আমি। এক হাতেই তো সবকিছু সামলাতে হয়। এলিয়েন তো নই আমি। দিচ্ছি খানা, ধৈর্য ধরে বস দেখি!
কেশবের বাবা, বাসুদেব : প্রভাত হতে হতেই রোজকার চিল্লাচিল্লি আর ভালো লাগে না। কি হয়েছে রে বাছা! রোজ রোজ বৌমার সাথে এরাম চিল্লাচিল্লি করিস কেন! একটু ধৈর্য ধরতে পারিস না!
বাসন্তী : বাবা, বলেন তো! এরাম করলে হয়?
কেশব : হয়েছে এবার খানা দে! আর নালিশ জানাতে হবে না!
বাসন্তী : প্রেম করার সময় তো, খুব করে বলতে " রাজরানীর মতো করে রাখবে। পাতিলের কয়লা পরিষ্কার করতে করতেই যৌবন গেল।
খাবার শেষ করে কেশব চলে যাচ্ছে তখন
কেশবের বাবা, বাসুদেব : বাবা, নতুন চাকরি টাকরি খুঁজে ছিলি? এই টাকায় আর সংসার চলে না বাবা! আমার পেনশনের টাকাও তো শেষ।
কেশব : চেষ্টা করছি বাজান। কত জায়গায়ই তো ইন্টারভিউ দিলাম! আজকের দুনিয়ায় মামা-চাচা না থাকলে চাকরি হয়?
আচ্ছা যাই বাজান।
এই কথা বলে কেশব চলে যায়। কেশব একটি ঔষধ কোম্পানিতে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করে।
অফিসে ডুকতে না ডুকতেই বস ডেকে পাঠায় তাকে
বস : তোমার কাজের অবস্থা তো খুবই হতাশাজনক। এভাবে কাজ করলে তোমাকে রাখা সম্ভব হবে না।
কেশব : বস, আমাকে আর একটা সুযোগ দিন। এবার আমি যেভাবেই হউক টার্গেট পূরণ করবো।
বস : এটাই শেষ সুযোগ তোমার। যাও....
তারপর কেশব তার মালপত্র নিয়ে বের হয়ে পড়ে ঔষধের অর্ডার কাটার উদ্দেশ্যে। আবার সুযোগ করে ইন্টারভিউও দিতে যায় নতুন চাকরির উদ্দেশ্যে
ইন্টারভিউতে কয়েকজনের পড়ে আসে এবার তার সিরিয়াল
কেশব : আমি কি আসতে পারি?
ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্মকর্তা : জ্বি আসুন, বসুন
তারপর সার্টিফিকেট দেয় তাদের
কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস না করেই বলে...
ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্মকর্তা : আপনার তো রেজাল্ট ভালো। কিন্তু শুধু রেজাল্ট দিয়ে কি চাকরি পাওয়া যায়? আপনার মতো কাউকেই আমাদের দরকার কিন্তু দেনাপাওনার বিষয়টা.....
কেশব : দেনাপাওনা মানে?
ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্মকর্তা : মানে শুধু সার্টিফিকেটই নিয়ে আসছেন! নাকি সম্মানিও আনছেন। মানে মিষ্টিমুখ করার জন্য কিছু আর কি!
কেশব : দুঃখিত জনাব।
ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্মকর্তা : আপনি আসতে পারেন।
কেশব : জ্বি জনাব। তবে যাওয়ার আগে কিছু কথা বলি, " আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তার বয়স হয়েছে। একটার পর একটা রোগ তার লেগেই থাকে। আবার একটা বউও রয়েছে। দিনশেষে তাদের খুশী করার জন্য আমার কিছু না কিছু করতেই হয়। খুব কষ্ট করে বাবা আমাকে লেখাপড়া করিয়েছে জনাব। আমি রোজ যখন বাসা থেকে বের হই রোজ বাবার একটা কথা শুনতে হয়, বাবা কিছু করতে পারলি? কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে আমাকে রোজ কিছু না কিছু বলতে হয়। জনাব আপনারা যখন চাকরিই দিবেন না তাহলে এই নাটক করার কি দরকার। আপনি কি জানেন আপনাদের এই নাটকের জন্য আমার আজ একবেলা না খেয়ে থাকতে হবে। মনে হয় জোরে কথা বলছি, দুঃখিত। আমাকে রোজ ইন্টারভিউ দিতে সেজেগুজে আসতে হয়, হিসেব করলে প্রতিদিন আপনাদের এই নাটকের জন্য আমার ৫০ টাকা করে খরচ হয়, এক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। আপনাদের কাছে এই টাকা সামান্য হতে পারে কিন্তু আমার কাছে একবেলা খাবারের টাকা। আমার মতো আপনারাও নিশ্চয়ই এই স্ট্রাগল করেছেন, তাহলে আবার ঐ কাজটাই কেন আমাদের মতো গ্রাম থেকে উঠে আসা অসহায়দের সাথে করছেন? জনাব আমার একটা চাকরিই দরকার, একটা চাকরি হলেই হবে। নিশ্চয়ই পিওনের পোস্টের জন্য ঘুষের দরকার হবে না, ঐ চাকরিটাই আমাকে দিন ।
তারপর সে অফিস থেকে বের হয়ে আসে এবং মানসিক ভাবে খুবই ভেঙে পড়ে। সর্বশেষ সুইসাইডের সিদ্ধান্ত নিন কিন্তু ব্যর্থ হন। তখন নিজের সাথে নিজেই কথা বলতে থাকেন, নিজেকে স্বান্তনা দিতে থাকেন।
কেশবের মতোই হাজারো, লাখো কেশব এভাবেই প্রতিনিয়ত ভেঙে পড়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিতে, বলি দিতে বাধ্য হয়। তবুও এসব মধ্যবিত্তের ঘরে জন্ম নেওয়া কেশবরা নতুন করে স্বপ্ন বাঁধে, নতুন প্রভাতের আশায় থাকে। যেখানে কোনো কেশবকে কখনো বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে না,বলি দিতে হবে না আর জীবন।
