হৃদয়ের চিঠি
হৃদয়ের চিঠি
পূজার মা-বাবা পূজা ক্লাস 11 এ পড়াকালীন মারা যায় এক পথদুর্ঘটনায়,, সদ্য কৈশোরের বছর সতেরোর মেয়েটির ঠাই হয় মামাবাড়ি,, না না পূজাদের অবস্থা খারাপ ছিলো না,,কিন্তু একরত্তি মেয়েটার পক্ষে একা থাকা সম্ভব নয়,, পূজার রূপ গুন আর মিষ্টি স্বভাবের জন্য ও সকলেরই প্রিয় ছিলো,, আর অপরদিকে ওর মামাতো দিদি তানিয়া ছিলো সম্পূর্ন বিপরীত স্বভাবের,, পূজার মামী কোনোদিনই পূজাকে ভালোবাসতো না,, পূজাকে সহ্য করতো ওর বাবার সম্পত্তির কারণে,, কোনো এক বিশেষ কারনে পূজার বাবা উইল করেন যে পূজা তার একুশ বছর বয়েসে ওর বাবার সমস্ত সম্পত্তির মালিকানা পাবে,,ওদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলেও ,, বর্তমানে ওর বাবার নামে প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে,,আর পূজার মামীর নজর ঐগুলোর দিকেই,, তাই উনি পূজাকে বাড়িতে এনেছেন,,পূজার মামা এসব জেনেও ওনার কিছু করার নেই,,উনি সাধাসিধে মানুষ হওয়ায় ওনার স্ত্রী কন্যার অন্যায়ের সঙ্গে পেরে ওঠেন না,,উনি পূজাকে খুব স্নেহ করেন,,পূজা ওর মামাকে ওর সব কথা বলে,,কিন্তু ওর কষ্টের কথা বলে না,,পূজা খুবই মেধাবী,, ক্লাস টুয়েলভ পাস করার পর ওকে ওর মামী কলেজে দিতে চায় নি,, ঐদিন ও খুব কেঁদেছিলো,, ওর মামাও নীরবে চোখের জল ফেলেছিলো,, সামান্য গ্যারেজ মালিক হয়ে ওনারও কিছু করার ক্ষমতা ছিলো না,, পূজা ইচ্ছে করে কলেজের গ্রুপ ডি পদে পার্টটাইম জব করতে চায়,, ওর আসল উদ্দেশ্য ছিলো কলেজে যাওয়া,, এবং ক্লাসের বাইরে থেকে পড়া শোনা এবং লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়া,,ওর মামিও রাজি হয়ে যায়,, ও কলেজে গিয়ে কাজ করতো,,পড়া শুনতো আর অবসর সময়ে লাইব্রারী তে গিয়ে বই পড়তো,, ওর ইংরেজি সাহিত্য ছিলো বিশেষ পছন্দের,, ওর বান্ধবী তরী ওকে নোট সরবরাহ করতো,,
পূজার খুব শখ ছিলো ডাইরি লেখা,, একদিন ও একটা বই পড়ে যেটাতে লেখাছিলো,,
"For everybody in this world, God has made someone very special"❤️
পূজা সেইদিন ডাইরি আনেনি,, তাই ও একটা ছেড়া কাগজে লিখেছিলো,, ভগবান সবার জন্য কাউকে না কাউকে বানালেও,,আমার কথা হয়তো ভুলে গিয়েছিল,, নইলে আমিও তাকে পেতাম,,যে আমার কাঁধে হাত রেখে বলতো 'সব ঠিক হয়ে যাবে,, আমি আছি তো' ,, যার হাত ধরে আমি স্বর্গেও পাড়ি দিতে পারি,, আরো কিছু লেখার আগেই ওর ডাক পড়ে করিডোর পরিষ্কার করার জন্য,, তাড়াহুড়োয় ও কাগজটা বইয়ের মধ্যেই রেখে চলে যায়,, সেইদিনই ব্রেক টাইমে কলেজের মেয়েদের হার্টথ্রব আরিয়ান ঐ বইটাই নিতে যায়,,আসলে ও লাভ স্টোরি পড়তে ভালোবাসতো আর বইটা ঐ বিষয়েরই ছিলো,, বইটা পড়তে গিয়ে ও চিঠিটা পায়,, কথা গুলো পড়ে আর হাতের লেখা দেখে ও মুগ্ধ হয়ে যায়,, ও উত্তরে লেখে,, ' ভগবান তোমার জন্যেও কাউকে পাঠিয়েছে,, শুধু সময়ের অপেক্ষা,, ও হেসে বইটা রেখেই চলে যায় ,, so don't be upset' কাগজটার কথা মনে পড়াতে পূজা ঐটাকে আনতে গিয়ে দেখে,, কাগজটার পিছনের পৃষ্ঠায় ওসব লেখা আছে,, "ও হেসে লেখে সত্যি বলছেন?? ঠিক আছে,, আজ থেকে আমিও তার অপেক্ষায় রইলাম,, যদি তাকে না পাই আপনি দায়িত্ব নেবেন তাকে খুঁজে দেওয়ার??"
পরের দিন,,
আরিয়ান লেখাটা দেখে লেখে,, বন্ধু হলে দায়িত্ব নিতেই পারি,, এইভাবে ওদের অজান্তেই ওদের হৃদয়ের চিঠির আদানপ্রদান হতেই থাকে ঐ বইটার মাধ্যমে,, একদিন পূজা কলেজে না আসায় ,, পূজা আরিয়ানের লেখনীতে উদ্বিগ্নতা ও চিন্তা দেখেছিলো,, ওরা না কেউ কাউকে দেখেছে না কেউ কারোর নাম জানে,, যে ছেলেটা অফ পিরিয়ডে আড্ডা মারতো সে বেশির ভাগ টাইমই লাইব্রেরিতে কাটাচ্ছে,, যেটা আরিয়ানের বন্ধুদের খুব অবাক করেছিলো,, আরিয়ানের বেস্টফ্রেন্ড অয়ংশ ওকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে ,, আরিয়ান সবটা জানায়,, অয়ংশ ওকে বলে,,ব্রো তুই প্রেমে পড়েছিস,, তোরা তো লেটার ডেট করছিস ,, আরিয়ান ওর কথাটা হেসে ওড়ালেও ওর পাশে বসে থাকা ওর ফ্রেন্ড দামিনী ব্যাপার টা ভালোভাবে নেয়নি,, কারণ ও আরিয়ানকে পছন্দ করতো,, আরিয়ান দুইদিন পর উপলব্ধি করে ও সত্যি ওর মায়াবিনীকে ভালোবেসে ফেলেছে,, এইভাবেও ভালোবাসা হয়?? তাকে না দেখে,, না জেনে চিঠির মাধ্যমে?? হয়তো হয়,, ও সকলের সামনে স্বীকার করে,, ও ওর মায়াবিনীকে ভালোবাসে,, ও ঠিক কিরে ওকে প্রপোস করবে,, তাও সামনাসামনি,, ও ওর মায়াবিনীকে চিঠিতে দেখা করতে বলে,, পূজারও ওর সখা কে দেখার তীব্র ইচ্ছায় ও জানায় যে ও দেখা করবে,, আরিয়ান ওকে বলে ও কি করে চিনবে ওকে?? পূজা জানায় ও লাল গাউন পড়ে মুখে fairy mask পড়ে আসবে,, আরিয়ান সম্মতি জানিয়ে ওকে ধড়কন ক্লাবে আসতে বলে পার্টিতে,,কিন্তু সেইদিন পূজা আরিয়ানকে দেখে নেয় চিঠি লিখতে,, ও ভাবে আরিয়ান ওর পরিচয় জানলে হয়তো ওকে ঘৃণা করবে,, তাই ও ভাবে ও দেখা করবে না,, ও বাড়িতে এসে খুবই মনমরা হয়ে যায়,, ওর মামা ওকে দেখতে পেয়ে বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে,, ও ওর মামাকে ওর সখার ব্যাপারে জানায়,, ওর মামা ওকে দেখা করতে বললে,, ও প্রথমে না না করলেও শেষে ও রাজি হয়,, রাতের পার্টিতে ওকে অসম্ভব সুন্দরী লাগছিলো,, ও তরীদের বাড়িতে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে পড়ে,, তরীই ওকে হালকা মেকআপ করিয়ে দেয়,,
পার্টিতে গিয়ে আরিয়ান তার মায়াপরীকে খুঁজতে থাকে,, অবশেষে ওর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ওর মায়াবিনী হাজির হয়,, ও যখন মাস্ক খোলে তখন ওর সখা ওকে দেখে কয়েকটা হার্টবিট মিস করে,, আরিয়ানের হুশ ফেরে দামিনীর কথায়,,
দামিনী: আরে এ তো আমাদের কলেজ পরিষ্কার করা ছোটো লোকটা না??
তানিয়া: (ওকে দেখে রেগে আর অবাক হয়ে) হ্যাঁ,, হ্যাঁ, দামিনী তুই ঠিকই বলেছিস,, এ তো আমাদের বাড়িতে কাজ করে,,( তানিয়া,, দামিনী,,আরিয়ান একই ইয়ারে পড়ে)
আরো কতকি বলে,, আরিয়ানও লক্ষ্য করে ওকে মাঝে মধ্যে কলেজ সাফাইয়ের কাজে দেখেছে,, কিন্তু তখন তো এই পরী কে লক্ষ্য করে নি,, পূজা ভাবে আরিয়ান ও হয়তো ওকে অপমান করবে,,যেটা ওর পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়,, তাই ও আগেই দৌড়ে বেরিয়ে আসে,, আরিয়ান ওকে আটকাতে গিয়েও পারেনি,,
পরেরদিন ও কলেজেও আসেনি,, আরিয়ান খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ও কাজ ছেড়ে দিয়েছে,, ও কলেজ থেকে খোঁজ নিয়ে ওর ঠিকানা বের করে,, ওর খুব একটা সমস্যা হয়নি,, কারণ ওর বাবা কলেজের ট্রাস্টির মেম্বার, ও ওর মামার গ্যারেজএ গেলে পূজার মামা ওকে অপমান করে,, কিন্তু ও অনড়,, ও ওর মায়াবিনীর সঙ্গে দেখা করবেই,, পূজার মামা বুঝতে পারে,, ওনার বোনঝির সুখের দিন ফিরে এসেছে,, উনি পূজাকে গ্যারেজে ডেকে পাঠান,, পূজা গ্যারেজে এসে আরিয়ানকে দেখেও পাত্তা দেয় না,, ওর মামা বুঝতে পেরে ওদের একা ছেড়ে দেয়,,
আরিয়ান: মায়াবিনী,, প্লিজ কথা বলো,,আমি ভেবেছিলাম তুমি সেইদিন প্রতিবাদ করবে তাই প্রথমে আমি নীরব ছিলাম,, কিন্তু তুমি তো কিছু না বুঝেই চলে গেলে,,
পূজা: দয়া করছেন??
আরিয়ান: মায়াবিনী!!! আমি তোমায় ভালোবাসি ❤️
(ব্যাস এই টুকুই পূজার চোখে জল এনে দেয়,,) আমি তোমায় ভালোবাসি,, তোমার ভালোমন্দ সবটাকে নিয়ে,,
পূজা: ছেড়ে যাবে না তো কোনোদিন??
আরিয়ান: কখনো না,, এই দেহে প্রাণ থাকতে তো নয়,,
(পূজা হাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে,, আরিয়ান ওকে জড়িয়ে ধরে) ভালোবাসো??
পূজা: জানিনা,,
আরিয়ান: প্লিজ বলো না!!
পূজা: হম্ম, ভালোবাসি ❤️,, আমার সখাটাকে খুব ভালোবাসি,,
তানিয়া ওর মাকে এসে বলায়,, ওর মা পূজাকে খুব মারে,,যা ওর হাতের কালসিটে স্পষ্ট জানান দেয়,, আরিয়ান দেখে প্রতিবাদ করতে গেলে,, পূজা ওকে বলে,, কোন অধিকারে প্রতিবাদ করবে তুমি??
আরিয়ান এটা শুনে চলে যায়,, পরেরদিন ওর বাবা মা কে নিয়ে পূজার মামাবাড়িতে এসে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করে,, আরিয়ানের কথা শুনে ওর বাবা মা ছেলের খুশিতে রাজি হয়ে যায়,, পরে আরিয়ানের বাবা দেখে যে ওনারই বন্ধুর মেয়ে পূজা,, যার সঙ্গে উনি ওনার ছেলের বিয়ে দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন,, ওনারা কয়েক বছর দেশের বাইরে ছিলেন বলে জানতেন না পূজার মা বাবা মারা গেছেন,, দেশে ফিরে জানতে পেরে পূজার খোঁজ পাননি,, শেষে জানতে পারেন পূজা ওর মামা বাড়িতে থাকে,, এখানে পূজার মা বাবার নাম দেখে উনি চিনতে পারেন,, উনিও খুব খুশি ওনার বৌমা পেয়ে,, পূজাকে ওরা সেইদিনই নিয়ে চলে আসেন,, পূজার মামী এর ঘোর বিরোধিতা করলেও আরিয়ানের হুঙ্কারের কাছে যান,, পূজা ওর মামার জন্য কান্না কাটি করে খুব,, ওর মামার ও মনখারাপ হয়ে যায়,, পূজা আর আরিয়ানের নতুন জীবন শুরু হয়,, পূজা কলেজে ভর্তি হয়,, আরিয়ান কলেজ শেষ করে MBA তে ভর্তি হয়,, ওদের খুনসুটি আর ভালোবাসায় ওদের জীবনে সুখের অশেষ প্লাবন দেখা দেয় ,,
সমাপ্ত 🌼
কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না কিন্তু ,, রেটিং আর রিভিউ দিয়ে আমায় আশীর্বাদ করবেন 🙏
