নীলকণ্ঠী Dutta

Romance Tragedy

4  

নীলকণ্ঠী Dutta

Romance Tragedy

হিমপ্রাচীর

হিমপ্রাচীর

2 mins
392


'জানি তুমি চিঠি বিলিয়েছ অকাতরে

আমি প্রেম খুঁজেছি শব্দকোষে ছেঁকে

বিরাগের ঘায়ে লুটিয়ে পড়েছি কখন, -

বুঝি সুখ- হরকরা ফিরে গেছে ডেকে ডেকে। '

- কিরে, আদৌও শুনছিস? 

- ধুর, থামা তো তোর মেলোড্রামাটিক কবিতা। বোরিং পাব্লিক একটা..... 

অরুনাক্ষের এমন বাক্যবিন্যাসে থতমত খেয়ে গেল হিমানী। রাগে অপমানে সদ্যোজাত কবিতার কাগজটা অরুনাক্ষের মুখের উপর ছুঁড়ে দিয়ে তরতরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গিয়েছিল সে। 

কলেজ পাশের সময় যত এগিয়ে এসেছে ততই যেন বদলে গেছে অরুনাক্ষ। ও পড়াশোনার চাপ অপেক্ষা বাপ- ঠাকুরদার সিমেন্ট ব্যবসার চাপটাই বেশি নিয়েছে। 

একদিন তো কথা কাটাকাটির মাঝে বলেও ছিল, 

- তোর মাথায় ঢুকবে না, হিম, কত ঘাম ঝরিয়ে তবে এই ব্যবসা চলে। এখন আর তোর এই ষোড়শী সুলভ কাব্য শোনা আমার পোষায় না। 

অভিমানী গলায় হিমানীও জবাব দিয়েছিল সেদিন, 

- সেই, সিমেন্ট ব্যবসায় ঘাম ঝরিয়েই তুই মনটাকে কংক্রিট বানিয়ে ফেলেছিস। 

ব্যস্ত ব্যবসায়িক পরিবৃত্তেই অরুণাক্ষের আরো বারোটা বসন্ত কেটে গেছে। এখন সে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর পাশাপাশি ঘোরতর সংসারী। 

এক তুচ্ছ দিনের রংচটা দুপুরের কথা। এরকম দুপুরে ভাতঘুমটা না বলেই চম্পট দেয়। সেরকমই এক সময় কে

কিছুটা মূল্য দেওয়ার তাগিদে অরুণাক্ষ পুরানো, বাতিল হিসেবের খাতাপত্র সিঁড়ির তলার ঘুপচি স্টোর রুম টা থেকে বের করে আনছিল। খবরের কাগজের দরে বিদেয় 

করতে হবে যত উইয়ে খাওয়া দস্তাবেজ। ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতেই খাতাপত্রের ভিতর থেকে একটি কাগজ পায়ের কাছে পড়ল। তুলে ফেলে দেওয়ারই কথা, কিন্তু কাগজের ভাঁজেই যেন তার আঙুলগুলো থমকে গেল। ত্রিকোণাকার ভাঁজ। এভাবে চৌকো কাগজকে কোণাকুণি ভাঁজ করার অভ্যেস এতবধি একজনের মধ্যেই দেখেছে সে, তাও অন্তত এক যুগ আগে..... 

হর্ষ ও বিমর্ষতার মধ্যস্ততায় ঘটে যাওয়া মোচড় টাকে

কোনোরকমে পাঁজরের মধ্যে আটকে দিয়েই অরুণাক্ষ

তড়িঘড়ি কাগজের ভাঁজ খুললো --

'যে ভূঁইলোটন গিয়েছে সীমানা ছেড়ে

আমি, অহেতুক সব বার্তা পাঠাই তাকে

আবর্তে ডানা ভেঙে ছিল কিনা, 

কুয়াশায় পথ ঢেকে ছিল কিনা , জানতে চাইনি;

জানতে চাইনি কেমনে সে থাকে সখী বিনা। 

জানতাম শুধু উড়েছিল সে দিগন্তখানি চিরে

জেনেছি হয়তো, কথা ছিল যত

পড়ে গেছে ছিঁড়ে ছিঁড়ে ;

আমি অহেতুক খাটিয়ে মেরেছি তাকে -

বাঁচিয়ে রেখেছি আমার অপেক্ষাকে... 

আজ আলেয়ার থেকে ধার নিই আলো

রাখি পাঁজরার ফাঁকে

আরো একবার ভুলেও যদি .. সেই সুখ-হরকরা ডাকে ---'


মেঘ ভাঙা এক বৃষ্টিতে যেন দীর্ঘ শীত ঘুমের বিঘ্ন ঘটল। 

ঝাপসা চোখেও অরুণাক্ষের পড়তে অসুবিধা হলো না, 

সেই কাগজে লেখা শেষ শব্দদুটো, -

_'তোর হিম' 

---------------------০---------------



Rate this content
Log in

More bengali story from নীলকণ্ঠী Dutta

Similar bengali story from Romance