গরু
গরু


এক সময় পোস্টিং ছিল কালিয়াগ্ঞ্জ এ। ছোট শহর। হাত এর মধ্যে বাজার হাসপাতাল পেট্রোল পাম্প। আমরা থাকতাম ভাড়া বাড়িতে। ওপর তলায় থাকতাম আমরা, অর্থাৎ আমি,পার্থ আমাদের ছয় বছরের পুত্র আদিত্য। নীচের তলায় থাকতো এক মারোওয়ারী পরিবার। এই শহরে অনেক ঘর মারোওয়ারী থাকতো। বহু বছর আগে কোন পূর্ব পুরুষ এসেছিল সেই সুদূর রাজস্থান থেকে। তার পর এখানে থেকে গেছে। যেমন টি হয়েছে ভারত এর আরও বহু জায়গায় রাজস্থানের নিবাসী সর্বত্র। বাংলার মারোওয়ারী রা নিজেদের মধ্যে নিজের ভাষায় কথা বলে কিন্তু বাঙালি দের সাথে সুন্দর বাংলা বলতে পারে। স্বভাব এ ভদ্র আর ব্যবসায় বুদ্ধি হয় এদের।
বড় ছোট মিলিয়ে বেশ সাত জন এর পরিবার। ওরা কি করে যেন ওই দু কামরার বাড়ি তে থাকতো। ঝগড়া ঝামেলা না করেই থাকতো। যাই হোক এবার আসল গল্পে আসি।
ওরা রোজ সকালে গরু দের খেতে দিত। সকাল হতে ই হাম্বা হাম্বা ডাক ছেড়ে বেশ কয়েকটা গরু এসে জুটতো ওদের বাড়ির দরজায় লাগোয়া ছোট উঠোনে । মহা আরম্ভরে চলতো গরু সেবা। গরুর ডাক এ আমার ও ঘুম ভেঙে যেত। দোতলার বারান্দা থেকে সে দৃশ্য আমি উপভোগ করতাম।
বাড়ির যে শাশুড়ি সে সকাল সকাল উঠে পূজা আরম্ভ করে দিত, বেশ গ
ান করে করে, ধূপ ধুনো পুড়িয়ে। বাড়ির যে বউমা সে বসাত চা, এক গামলা চা, বেশি দুধ বেশি চিনি ও সামান্য আদা। ছোট বড় সকলেই সে চা খেত। ফৃজ থেকে বের করতো রুটি। আগের রাতে করে রাখা বাসি রুটি, বেশ বড় বড় মোটা রুটি অল্প ঘি মাখানো। গ্লাস ভর্তি গরম চা ও রুটি সহযোগে ওরা দিন শুরু করতো। সেই রুটির ভাগ পেতো গরু। গরু বেচারী চা খেতে পারবে না তাই একটা বড় টিন এর বাক্স থেকে বেরোতো গুড়, লাল লাল চীট চীটে গুড় মাখিয়ে দেয়া হতো রুটি সাথে। গরু নাকি গুড় খেতে খুব ভালোবাসে।
দোতলার ঝুল বারান্দা থেকে মাঝে মধ্যে আমি সেই দৃশ্য উপভোগ করি। সেই দেখা দেখি তে ওদের সাথে আমার পরিচয় হয়ে গেছিল। খেতে খেতে ওরা মাঝে মাঝে উপর পানে চেয়ে দেখে নিত আমাকে। ঘন্টা খানেক পরে আমি ছেলে কে স্কুল বাস এ তুলতে যেতাম উঠোন পেরিয়ে বড় রাস্তায়। গরু গুলো এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে থাকে। অতি সাবধানে তাদের লেজ এড়িয়ে আমি ও ছেলে যেতাম বড় রাস্তার দিকে।
স্কুল বাস আসে চলে যায়, আমি একাই ফিরি ঘরে আর ফেরে গরু গুলি, যে যার ঘরের দিকে চলে যায়। পাঁচ মিনিট পর মাঠ ফাঁকা। কার বাড়ির গরু, কোথা থেকে আসে খেয়ে দেয়ে চলে যায়... শেষ দিন পর্যন্ত বুঝতে পারি নি।