Kanchan Biswas

Drama

1  

Kanchan Biswas

Drama

চোর

চোর

2 mins
2.0K


কম্পিউটারের টাইপ রাইটার ছেড়ে আজ কাগজ নিয়ে বসলাম। খুঁজে বের করলাম একটা ফাউন্টেন পেন। বহুদিন এর অব্যবহারের ফলে প্রায় নষ্ট হতে বসেছে। ঘষে ঘষে পরিষ্কার করলাম। এর পর জোগাড় করতে হবে কালি। দোকান ঘুরে এক রকম চাইনীজ দোয়াত পেলাম। সেই কালি পেনে ভরে কাগজ কালি দিয়ে লিখতে বসলাম আজকের গল্প টা.... কাগজ কালি সহযোগে আত্মা দিয়ে লেখা এক চোরের গল্প।


একটি চোর প্রায় হাসপাতালে আসে...প্রতি পাঁচ মাস অন্তর আসে... মানে নিয়ে আসা হয়... পুলিস নিয়ে আসে চোরটাকে। প্রায় আধ মরা অবস্থাতে নিয়ে এসে ভর্তি করে দিয়ে যায় আমার হাসপাতালে। কোথাও চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়, তারপর গণ-ধোলাই, কিল চড় থাপ্পড়... পরিস্থিতি বিবেচনা করে চোরের মাসতুতো ভাই পুলিশে খবর করে দিত। পুলিশ এসে পাবলিক এর হাত থেকে উদ্ধার করে টেনে তোলে ভ্যানে। কোনো রকমে থানায় ডায়েরি ঠেকিয়ে চলে আসে সোজা হাসপাতাল। এতক্ষণে চোরটা ঝিমিয়ে পড়েছে। কোনো মতে ধরে নিয়ে বেডে শোয়ানো হয়...


চালানো হয় স্যালাইন... নার্স ও ডাক্তার পরিবেশটিত চোর মিট-মিট করে চেয়ে দেখে নেয় চারদিক। যে জনগন তাকে মেরেছিল তাদের কয়েক জন হাসপাতাল পর্যন্ত এসেছে। ক্যামেরা হাতে রিপোর্টার রয়েছে। ছোটোখাটো জটলা তৈরি হয়েছে। চোরটা সুযোগ বুঝে "ওরে বাবা ওরে মা" বলে এমন চিৎকার করে আর হাত পা ছোড়ে যে ডাক্তার নার্স ছুটে আসে! জনগণ পিছিয়ে যায়,মরে গেলে আবার অন্য বিপদ!ভিড় পাতলা হয়ে আসে...ঘন্টা খানেক পরে হাসপাতাল শান্ত হয় আর চোরটাও অদ্ভুত সব অঙ্গভঙ্গী বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে।


রোগা হাড় জীর্ণ চেহারা... বাচ্চা ছেলে... না খায়, না চান করে... দিন রাত চুরির ধান্দায় ঘুরে বেড়ায়...তার উপর আজ পড়েছে মার!সে বেচারা রণক্লান্ত সৈনিকের মতো লুটিয়ে পড়েছে। একটু স্যালাইনের জল, পাখার হাওয়া, পেইন-কিলার ইঞ্জেকশন পেয়ে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাচ্ছে।

বেশ কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে সে যখন উঠলো তখন হাসপাতাল ফাঁকা। যে যার বাড়ি ফিরে গেছে,কাজে কর্মে মন দিয়েছে। চোর-পর্ব সমাপ্ত! এখন দিন তিনেক ওই চোর হাসপাতালের গেস্ট! তিন বেলা খাবার পাবে, ওষুধ পাবে,শরীরটাকে একটু চাঙ্গা করে নেবে। হাসপাতালের সব ডাক্তার নার্স রা ওকে চেনে। যে যখন সময় পায় ওকে জিজ্ঞেস করে, "কী রে? কেমন আছিস?"

সেও হাসি মুখে উত্তর দেয়, "ভালো।"


তিন দিন পর পুলিশ আসবে। ওকে ডিসচার্জ করে নিয়ে যাবে। তারপর তুলবে জুভেনাইল আদালতে। সেখান থেকে ওকে করেকশনাল হোমে রাখার কথা এবং চৌর্যবৃত্তি নিরাময় করার কথা! কিন্তু কি যে হয় মাঝ পথে? সে চার পাঁচ মাস পরে আবার এসে হাজির হয় আমার হাসপাতালে! সেই একই ভাবে পুলিশ নিয়ে আসে...চার পাঁচ মাস অন্তর আমরা তার দেখা পাই। একইভাবে সে আসে এবং একই ভাবে চলে যায়। 


আজ বহু বছর ধরে ডাক্তারী করছি কিন্তু ওই ছোট্ট গ্রামীণ হাসপাতালে একটি চোরের চিকিৎসা আমার আত্মাকে পরম শান্তি দিয়েছে।

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

More bengali story from Kanchan Biswas

Similar bengali story from Drama