এক প্যাকেট বিস্কুট ও ভালোবাসা
এক প্যাকেট বিস্কুট ও ভালোবাসা


এক নং platform দিয়ে থ্রু ট্রেন যাবে,যাত্রীদের অনুরোধ করা হচ্ছে তারা যেন প্ল্যাটফর্মের ধার থেকে সরে দাঁড়ায়…
উজানপুর সিমুলগঞ্জ লোকাল ২নং প্লাটফর্মে আসছে…
একের পর এক ট্রেনের announcement হয়ে চলেছে। ছেলেটা বারবার নিজের হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। কিছুটা ইতস্তত। অপেক্ষা করছে কারোর আসার।বসছে উঠছে একটু চলাফেরা করছে... জিন্সের পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে অনেকক্ষন ধরে কাউকে একটা ফোন করার চেষ্টা করছে। ফোনের রিং বেজে যাচ্ছে কিন্তু ফোন তুলছে না কেউ। পাশে বসে আছে অনির্বাণ। দুর্গাপূজার ষষ্ঠীর দিন তবুও তাতে অনির্বাণের কিছুই আসে যায় না,তার জীবনের "নানা রং এর দিনগুলি" কোথায় যেন হারিয়ে গেছে, জীবনের ক্যানভাস তার বড্ড ফ্যাকাসে আজ। সুখ যে কবে ছেড়ে গেছে সেকথা তার মনেও পরেনা। হয়তো আজ আর মনে করতেও চায়না "পুরনো সেই দিনের কথা" গুলি। সুতরাং দুর্গাপূজা হোক বা কালীপূজা তার জীবনের প্রতিদিন একইরকম কাটে। সেদিনও ব্যতিক্রম নয়, স্টেশনে বসে আছে আর তারই মাঝে সমস্ত ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করছে অনির্বাণ।
অবশেষে খবর হল উজানপুর লোকাল দুই নম্বর প্লাটফর্মে আসছে। Announcement শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ছেলেটি বসলে অনির্বাণের উলটো দিকে। ট্রেন প্লাটফর্মে এসেছে,থেমেছে,যাত্রীরা ওঠানামা করল। ট্রেন চলে গেল। সকল যাত্রী চলে যাওয়ার পর একটা বছর ২৩ এর মেয়ে,উচ্চতা ৫ ফুট ১ ইঞ্চি,গায়ের রং দুধের মতো সাদা, বেশ স্বাস্থ্যবান, একমুখ হাসি, পরে আছে জিন্স ও টপ এগিয়ে আসছে প্লাটফর্মে বসে থাকা তার মনের মানুষের দিকে। ডান হাতে সাইড ব্যাগ বাম হাতে রাজা মেরি গোল্ড বিস্কুটের প্যাকেট। অস্থির হয়ে ওঠা প্রেমিকের চোখে মুখে অবশেষে শান্তির হাসি দেখা গেল, ছুটে আসছে মেয়েটি। একটু সময়ও যেন নষ্ট করতে চায়না। কাছে আসতেই প্রশ্ন, "ফোনটা ধরছিলি না কেন? কতবার ফোন করলাম আমার কি চিন্তা হয় না কোন?" প্রেমিক মশায়ের সে কি রাগ,সঙ্গে সঙ্গে কোমল গলায় বেরিয়ে এল "আরে ওই জন্যেই তো তোকে মেসেজ করলাম,সে যাই হোক দেখ দেখ কি পেয়েছি…"
-কি পেয়েছিস?
-আরে দেখ না…
-একি বিস্কুটের প্যাকেট কোথায় কিনলি?
-আরে ধুর,কিনিনি তো…
-তাহলে কোথায় পেলি? চুরি করেছিস নাকি(হা হা হা হা হা হা)
-আরে না না দুর্গাপূজার একটা মণ্ডপে কুইজ হচ্ছিল, সেখানে একটা প্রশ্নের উত্তর দিলাম আর ওরা এটা দিল…
-পাগলী রে তুই এতো খুশি?
-হ্যাঁ(এক মুখ হাসি নিয়ে)
-বেশ বেশ চল এবার তাহলে বাড়ি যাওয়া যাক...কালকে তো আবার ঠাকুর দেখতে যাচ্ছিই একসাথে...আর সন্ধ্যাও হয়ে এসেছে।
-হ্যাঁ নিশ্চয়।ভালো করে সেজে আসবি কিন্তু…
-হ্যাঁ রে বাবা,আমি যতই সজি না কেন আমাকে সেই একই রকম লাগবে...আমি কি আর তোর মতো সুন্দর?
-নাও শুরু হল এবার…
-নে নে চল এবার বাড়ি যাওয়া যাক…
ওরা চলে গেল। বসে আছে অনির্বাণ। চুপচাপ। দেখছে শুধু দুচোখ ভোরে। মনে মনে ভাবছে কেউ জানে না কতদূর এদের গন্তব্য। আদৌ এদের প্রেম শেষ পর্যন্ত পরিণতি পাবে কি না? নাকি মাঝ পথেই বিচ্ছেদ ঘটে যাবে,তবুও এরা কত খুশি,কত সুখী। একটা সামান্য বিস্কুটের প্যাকেট উপহার পেয়ে একটি মেয়ে কত আনন্দিত,সেটাকে নিয়ে এসে তার মনের মানুষটিকে দেখাতে পেরে সেটা অনির্বাণ অনুভব করল। কে বলে পৃথিবীতে সবাই কেবল অর্থের পিছনে ছোটে? কোথায় মেয়েটি তো অর্থের পিছনে ছোটেনি,কত কম চাওয়া পাওয়া তেই সে কত সুখী,কত খুশি।
বেশ কিছুক্ষন হল ওরা চলে গেছে,প্লাটফর্ম ফাঁকা। বিকাল ঘনিয়ে কখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে, পাঁচ সাত ভাবতে ভাবতে অনির্বাণ সেদিকে খেয়াল করেনি। চায়ের কাপে শেষ চুমুক টা দিয়ে অবশেষে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিল অনির্বাণ...