চিরকুট
চিরকুট


রিকশার হুডটা নামিয়ে দিল জোতি।এখন বাতাস পুরোপুরি লাগছে গায়ে।রিকশাওয়ালার পিঠে নজর পড়ল।ঘেমে একাকার। তবুও চালিয়ে যাচ্ছে ক্লান্তিহীন ভাবে। মার্কেটের সামনে আসতেই ব্রেক কষলো রিকশা।শরীরটা সামনে দিকে ঝুঁকে গেল জোতির। সামলে নিল নিজেকে।
ভাড়া মিটাতে টাকা খুজছে হাত ব্যাগে। কোনো ভাঙতি টাকা নেই। বিরক্ত হয়ে রিকশাওয়ালাকে বলল- আমার কাছেতো বিশ টাকা ভাঙতি নেই। সবি বড় নোট।
গায়ের গামছায় কপালের ঘাম মুছতে মুছতে রিকশাওয়ালা হাত বাড়িয়ে দিল।
- দেন আমারে, ভাঙায়া আইনা দেই।
এক হাজার টাকার নোটটা রিকশাওয়ালাকে দিতেই একটা টোকাই এসে হাত পাতে জোতির সামনে।
খালি গা। ময়লা কালো রঙের শর্ট প্যান্ট পড়া। মাথার চুল কোকড়ানো, তেলহীন শুষ্ক। হাত বাড়িয়ে মুখটা জোর করে হাসি ধরে রাখা চেষ্টা।হাত ব্যাগ হাতড়ে একটা কয়েন পেল।ছেলেটার হাতে দিতে যাওয়ার সাথে সাথে হাত ফসকে ব্যাগটা মাটিতে পড়ে গেল।একটা দুমড়ানো মোচড়ানো কাগজ পড়ল ব্যাগ থেকে।
ছেলেটা চলে যাওয়ার পর জোতি ব্যাগটার সাথে কাগজটাও তুলে নিল।চোখ ছলছল করছে জোতির। কাগজে লেখা-
আসমানে তুই চাঁদ জোছনা
মাটিতে তুই ছায়া
যখন আমি তোর হব না
রাখিস একটু মায়া।
কবিতাটা অনেক দিন আগে ক্লাসের বেস্ট ফ্রেন্ড সৌম্য লিখেছিল।জোতির জন্মদিনে গিফটের সাথে চিরকুটে করে কবিতাটা দিয়েছিল।
রোড এক্সিডেন্টে সৌম্য মারা গেলেও বুকে যে ভালোবাসাটা আছে তা আজও এই চিরকুটের মাধ্যমে জিইয়ে রেখেছে।
-- আপা, আপনের বাকি টাকাটা।
রিকশাওয়ালার ডাকে জোতি বর্তমানে ফিরে আসে। রিকশাওয়ালা টাকাটা জোতির হাতে ধরিয়ে দিয়ে টুংটাং শব্দ তুলে চলে যেতে লাগল।