Suparna Bose

Romance Tragedy Others

3.4  

Suparna Bose

Romance Tragedy Others

ছোট গল্প, ' সিঁথিময়ূর '

ছোট গল্প, ' সিঁথিময়ূর '

3 mins
487


উইক ডেইজের সকালগুলো মহার্ঘ।ফেলে ছড়িয়ে খরচ করার উপায় থাকেনা দুজনের কারোরই।ঋদ্ধি বেরিয়ে যায় ভোর ছটায়।তাকে হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতে হয়। ফিরতে ফিরতে রাত্তির।  কাজের জায়গা চিত্তরঞ্জন রেলওয়ে ওয়ার্কশপ।প্রীতি বেরোয় আরো আড়াইঘন্টা পর।সে গোলপার্কে একটি গয়নার দোকানে সেল্স পার্সনের কাজ করে।

খদ্দেরের পছন্দ অনুসারে শোকেসের ভেতর থেকে গয়না বার করে ট্রের ওপর রেখে এগিয়ে দেয়।মুখে হাসি অথচ দৃষ্টি শ‍্যেন।সোনার গয়নার চোখ ধাঁধাঁনো আয়নাঘেরা ঘরে কোনো খদ্দেরই যেমন ফেলনা নয় তেমনি সন্দেহের ঊর্ধ্বেও নয়।এই তো গতবছর এক সুন্দরী সুবেশা বিস্তর গয়নাগাঁটি দেখার পর একখানা সানিয়ামির্জা নাকছাবি কিনে বাড়ি গেলেন।ভাগ‍্যিস সেটাও কিনেছিলেন তাইতো দিন শেষে হিসেব না মেলায় সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে বিষয়টা ধরা পড়ল। ফোন করে ডেকে পাঠানো গেল আর উদ্ধার হলো দেড়ভরির চেনসহ পেন্ডেন্ট।ওর স্বামী কাঁচুমাচু হয়ে বললেন মহিলা নাকি ক্লেপটোম‍্যানিয়াক।অর্থাৎ চৌর্যবৃত্তির অসুখ।এটা জানার পর কতৃপক্ষ বিষয়টিকে আইনগত করেননি কারণ খদ্দের মানে লক্ষ্মী।আদরণীয়।কিন্তু ডিউটি আওয়ার্স এ সিকিউরিটি থেকে ম‍্যানেজার সকলকেই খুব সজাগ থাকতে হয়।এতগুলো টাকা মাইনে ওরা এমনি দেয়না।সঙ্গে দামি ইউনিফর্ম।শোরুমের ভেতর মডেলের মত সেজে থাকার জন‍্যে চমৎকার সব সোনাদানার গয়না। সেটাও অবশ‍্য ডিসপ্লের জন‍্যেই।মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি।

   একএকদিন আশ মিটিয়ে সোনার গয়না পরে প্রীতি।যেদিন নিজের বোনের বিয়ের গয়না কিনতে, বোনকে সঙ্গে নিয়ে শোরুমে এসেছিল ঋদ্ধি,সেদিন মাঝখানে চূনী লাগানো সাবেক ডিজাইনের একটা সিঁথিময়ূর পরে সেজেছিল প্রীতি।সহকর্মী থেকে ম‍ালিক সকলেই বলেছিল দারুণ দেখাচ্ছে।প্রীতিরও নিজেকে আয়নায় দেখে ভারি ভালো লেগেছিল।গলায় একটা ম‍্যাচিং চোকার আর কানের দুল অ‍্যালট করিয়েছিল ম‍্যানেজারের কাছে।

মাঝে সিঁথিকেটে টান করে বাঁধা খোঁপা আর মেরুণ সিল্কের শাড়িতে রাণীর মত দেখাচ্ছিল প্রীতিকে।ঋদ্ধির বোন রুচিরা পুরো সেটটা একলহমায় পছন্দ করেছিল নিজের জন‍্যে।শুধু বাদ সাধলো ওই রক্তফোঁটার মত চুনী বসানো সিঁথি ময়ূরখানা।ওটি রুচিরার বটলগ্রীন বেনারসির সাথে যাবে না।রুচিরা📎 ইঞ্জিনিয়ারিং ফাইনাল ইয়ার। সহপাঠী অয়নকে বিয়ে করছে। ক‍্যাম্পাসিং এ হায়দ্রাবাদে চাকরি পেয়েছে দুজনেই।ইচ্ছে ছিল, কিছুদিন লিভ ইন করে ধীরে সুস্থে বিয়ে করবে।তাদের উদ্দেশ‍্য আঁচ করে দুইবাড়ি থেকে তড়িঘড়ি বিয়ের বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। প্রথমে একটু আপত্তি থাকলেও এখন দুজনেই বিয়ের উৎসবে গা ভাসিয়েছে।রুচিরার অনুরোধে খুঁজে পেতে দেখা গেল সারা শোরুমে ওইরকম আর একটিও সিঁথিময়ূর নেই।অগত‍্যা চূনীর বদলে পান্না বসিয়ে আরেকটি বানিয়ে দেবার অর্ডার দিয়েছিল রুচিরা। আর এসব কথার মাঝেই রুচিরার সাথে মোবাইল নম্বর বিনিময় হয়ে গেল প্রীতির।দুদিন পরে ফোন এসেছিল। রুচিরার নয়।তার দাদা ঋদ্ধির।সেদিন শোরুমের শীতাতপ জনাকীর্ণ ঘরেও মুগ্ধতার আঁচ অনুভব করেছিল প্রীতি।সেও কি মুগ্ধ হয়নি যুবকটির প্রতি! তার বলিষ্ঠ গঠন, সপ্রতিভ কথা ঝকঝকে হাসি,ঘনঘন চোখের পরশ।যেভাবে গাছ তার পাতাগুলি মেলে দেয় আলোর দিকে।যেভাবে আলো, পাতার ভিতর সবুজকণাগুলিকে জাগিয়ে তোলে সেভাবেই ওরাও জড়িয়ে পড়ল পরস্পরের সাথে।তারপর একবছরের মধ‍্যে বিয়ে।


বর্ধমানে নিজের বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় বাসা ভাড়া নিল ঋদ্ধি।প্রীতিকে চাকরি ছাড়ার প্রস্তাব কখনোই দেয়নি। বরং নিজে কষ্ট করে এতোটা পথ ডেইলি প‍্যাসেঞ্জারি করে।অফিস বেরোনোর আগে যতটুকু সম্ভব প্রীতিকে সাহায‍্য করে সংসারের কাজে।মোটের ওপর সম্পর্কটা দারুণ জেল করেছে। দিব‍্যি সুখে শান্তিতে ঘরকন্না করছে দুজনে।

ঋদ্ধি অফিসে বেরিয়ে যাবার পর প্রীতি সিঙ্কের এঁটো বাসনপত্র মাজে।গ‍্যাস পরিস্কার করে স্নানে ঢোকে।আয়নার সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করে সাওয়ারটা ছেড়ে দেয়। আজ স্তনে, উরুতে সাবানের ফেনার সাথে কিছুক্ষণ খেলতে ইচ্ছে করে তার।আজ অনেকদিন পরে ভোররাতে ঘুমন্ত ঋদ্ধির ঠোঁটে ঠোঁট রেখে তাপ সঞ্চার করতে চেয়েছিল প্রীতি।ঋদ্ধি পাশ ফিরে বলেছে,প্লিজ এখন কিছু নয়।সারাদিন ভীষণ ক্লান্ত লাগে।আজ প্রচুর কাজ আছে সারাদিন।ঘুমের ঘোরেও ' কাজ ' শব্দটায় জোর দিল ঋদ্ধি।যেন সকাল সকাল যৌনতা করাটা মস্ত এক অকাজ।মাত্র দুবছরে ঋদ্ধির কাছে কেনা বই হয়েগেছে প্রীতি।সে বিছানা থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

আজ স্নানের ভিতর কিছুটা যেন স্লথ হয়ে পড়ছে প্রীতি।কিছুটা অন‍্যমনস্ক।আনমনে স্তনের ওপর হাত রাখলো।জলবিন্দু আচ্ছাদিত আবছা আয়নায় তাকিয়ে দেখল, বিয়েতে পাওয়া সিঁথিময়ূরের চুনীর মত সিদূরের বিন্দুটি জেগে আছে । সাবানটা  সাদা একটা ছোট্ট নৌকার মত পিছলে নেমেগেল নাভির ঘাটে আর ওমনি করিডোরে রাখা লালটুকটুকে ওয়াশিং মেসিনটা মৃদু শব্দ করে কাঁপতে লাগল।প্রীতি জানে ঋদ্ধি সকালবেলা জামাকাপড় মেশিনে কাচতে বসিয়ে গেছে।এখন ড্রায়ারের ভিতর জিন্স টিসার্ট কুর্তি,লঁজারি সব বনবন করে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় আধশুকনো হয়ে শান্ত হয়ে যাবে।প্রীতি স্নানের শেষে গায়ে বাথরোবটা জড়িয়ে বেরিয়ে আসে।আধভেজা কাপড়জামা ব‍্যালকনির তারে মেলে দিয়ে ভালকরে ক্লিপ এঁটে দেয়।সারা দিনমানে সেগুলি শুকিয়ে খটখটে হয়ে যাবে।প্রীতি কাজে বরোনোর জন‍্যে তৈরি হয়।খোঁপা বাঁধতে,শাড়ি পরতে পরতে নিজেকে একটা শোপিস মনে হচ্ছে তার।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance