moniva sadhu

Romance

3  

moniva sadhu

Romance

বর্ষায় বসন্ত

বর্ষায় বসন্ত

5 mins
402


কলেজে প্রায় দেখা হয় ছেলেটার সাথে,মাঝেমাঝে চোখাচোখিও হয়।ঝিমলি ভাবে তাকে পাবার জন্য ছেলেরা হামলে পড়ে, আর এই ছেলে তার দিকে ফিরেও তাকায় না!! খোঁজ নিয়ে জেনেছে,নাম দেবরাজ দত্ত,ইংরাজি অনার্স নিয়ে পড়ছে।ঝিমলিরও ইংরাজি, তবে তার ফার্স্ট ইয়ার আর দেবরাজের থার্ড ইয়ার চলছে।ছেলে দেখতেও চৌখস,পড়াশোনাতেও ব্রিলিয়ান্ট,স্যারেরা সবাই তাকে ভালোবাসে।কলেজে আসে বাসে চড়ে।ঝিমলি বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে,গাড়ি চেপেই কলেজে যাতায়াত করে।

একবার বাসস্ট্যান্ডে তার বন্ধু,সোমালি দাঁড়িয়ে ছিল,তাকে লিফট দিতে গিয়ে দ্যাখে,দেবরাজ!!  তার দিকে একপলক তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলো।

      দেবরাজের নিঃস্পৃহতা ঝিমলিকে তার প্রতি আগ্রহী করে তুললো।কলেজের ডিবেটে অন্যান্য প্রতিযোগীদের মধ্যে তারা দুজনেও ছিল।তীক্ষ্ণধার যুক্তিতে দেবরাজই জিতেছিল।জিতেও তার মধ্যে তেমন উন্মাদনা দেখেনি,যেন এটাই তার প্রাপ্য ছিল।

    একদিন করিডোরে দেখা হতে আগ বাড়িয়ে ঝিমলি," হাই! ক্যান আই মেক আ ফ্রেন্ডশিপ উইথ ইউ?" তার বাড়ানো হাত না ধরে দুহাত জড় করে নমস্কার করেছিল," শত্রুতা কখনই কাম্য নয় আমার,তবে বৃথা গালগল্প করার মতো সময় নেই আমার।কিছু দরকার থাকলে বলবেন।"

---- আমি আপনার থেকে ছোট,তুমি বলতেই পারেন।

--- প্রথম সাক্ষাতে আমি কাউকে তুমি বলতে পারিনা,এটা আমার স্বভাব।ক্লাশ আছে,আজ আসি।দৃঢ় পদক্ষেপে তাকে ফেলেই নির্দিষ্ট ক্লাশে চলে গিয়েছিল।

জিন্সের প্যান্ট আর টাইট লাল গেঞ্জিতে শরীরের প্রতিটা বাঁক যেন বিদ্রুপ করছিল।এতো অপমানিত ঝিমলি আগে কোনদিনও হয়নি।

    অতীন এগিয়ে এসেছিল," কিরে,একা দাঁড়িয়ে কি করছিস?ওয়েটিং ফর সামওয়ান?"

---- নো,নো।লেটস গো।

নিজেদের গ্রুপে গিয়ে গল্পে আড্ডায় জমে গিয়েছিল।কাঁধের ব্যাগ থেকে সিগারেট বের করে সুখটান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তেই দেখে অদূরেই দেবরাজ তার দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

ঝিমলির ভেতরে কি যেন একটা হলো।অন্য বন্ধুরাও তার এই ভাবান্তরে তার দৃষ্টিকে অনুসরণ করে দেবরাজকে দেখতে পেলো।

--- আরে,তোর দিকে ছেলেটা ওভাবে তাকিয়ে কেন? দেখেনি নাকি কোন মেয়েকে সিগারেট খেতে? হাউ সিলি! তনিমা বিদ্রুপ করে।

ঝিমলি কি মনে করে সিগ্রেট ফেলে দেয়।

তার বাড়িতে অহরহ পার্টি লেগেই থাকে,ড্রিংক,সিগ্রেট এসব কোন ব্যাপারই না!সারাদিনে মা বাবার সাথে কতটুকুই বা সাক্ষাৎ হয়!!

কদিন পরে কলেজ লাইব্রেরীতে আবার দেবরাজের সাথে দেখা।ঝিমলি দেবরাজের টেবিলে নিজের বই নিয়ে বসলো।

---- আপনি তো খুব ভালো স্টুডেন্ট, আমায় একটু এই চ্যাপ্টারটা বুঝিয়ে দেবেন।

সেই শুরু,কখন যে ঝিমলি দেবরাজের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে,নিজের অজান্তে তা নিজেও জানেনা।

--- আমি আপনার সাথে আলাদাভাবে দেখা করতে পারি?

--- কেন? দেবরাজ বরাবরের মতোই নিস্পৃহ।

---- আমার দরকার আছে।

---- বলে ফেলুন,আমার তাড়া আছে।আপনার বন্ধুরা আপনার জন্যে ওয়েট করছে।বোধহয় ধুম্রপান করবে বলে অপেক্ষা করছে.

---- আমি আধুনিকা,সিগ্রেট খাওয়াটা কি পুরুষমমানুষের একচেটিয়া অধিকার?

--- আমার কাছে আধুনিকা বলতে,মা সারদা।মননে শিক্ষিতা,বাইরে নয়।পয়সা বেশি হলে আমাকে দিতে পারেন,আমি কিছু দু:স্থ বাচ্চাদের দেখাশুনো করি,কাজে লাগবে।বিনা প্রয়োজনে আমাকে বিরক্ত করবেন না।

ঝিমলির দুচোখ দিয়ে টপ টপ করে জল গড়িয়ে পড়ছিল, জীবনে এতো অপমানিত কখনো সে হয়নি,তাও বন্ধুদের সামনে।

ধীরেধীরে ঝিমলি পালটে যাচ্ছিল,সিগ্রেট ছেড়েছিল, পোষাকেও নিজেকে দেখানোপনা কমেছিল।পড়াশুনোও বেশি মন দিয়েছিল।রেজাল্ট আউট হতেই দেবরাজ এসেছিল," কনগ্রাচুলেশন ফর হায়েস্ট মার্কস।"

অভিমানে তখনো দুচোখে সমুদ্র।দেবরাজ অপ্রস্তুত, " আরে,কি হলো! কান্নার কি হয়েছে!"

---- আমি আপনার সাথে আলাদা করে দেখা করতে চেয়েছিলাম।

---- বেশ,আজকে তাহলে কলেজের পরে গেটের বাইরে ওয়েট করো।

---- কটায়?

--- উইদিন হাফ আন আওয়ার।বাই।

সেদিন দুজনে প্রথম মুখোমুখি। ঝিমলিই বলে," আমি তোমাকে ভালোবাসি।"

--- অপাত্রে ভালোবাসা ছড়াতে নেই।আমার এখন প্রেম,ভালোবাসার জন্য সময় নেই।তবে তুমি চাইলে আমাদের সংস্থায় পড়াতে পারো।অবশ্যই নিজের পড়ার ক্ষতি না করে।

সেদিন পাখির ডানায় উড়তে উড়তে  বাড়ি ফিরেছিল ঝিমলি,এই প্রথম দেবরাজ তাকে তুমি সম্বোধন করেছে আর তাকে তাদের দলে যোগ দিতে আহবান করেছে।

দেখতে দেখতে কয়েকবছর কিভাবে চলে গিয়েছে,দুজনেই বুঝতে পারেনি।

দেবরাজ আজ পর্যন্ত ভালোবাসার বা বিয়ের কথা কিছুই বলেনি।ঝিমলি একদিন আর এলোনা।

কোথায় মিলিয়ে গেলো,দেবরাজ কদিন কিছু বুঝতে না পারলেও ঝিমলির অনুপস্থিতির অভাববোধ করছিল।

কলেজের চাকরিতে মন বসছেনা,কি এক অস্থিরতা পেয়ে বসেছে।

কদিন পরে ঝিমলির বাড়িতে খোঁজে গিয়ে জানতে পারলো,বাড়ির অমতেই এক অখ্যাত গ্রামে স্কুলটিচারির চাকরি নিয়ে চলে গিয়েছে।ঝিমলির মা বলে উঠলেন,"মেয়েটা কার পাল্লায় পরে টোটালি চেঞ্জড হয়ে গেলো কে জানে! তোমার কিছু দরকার ছিল?"

---- হ্যা,তা তো একটু ছিলই।ওর বর্তমান ঠিকানাটা দেবেন,প্লিজ।

পরদিন সকাল হতেই দেবরাজ বেড়িয়ে পড়লো প্রথম প্রেমের অনুভূতিকে সম্মান জানাতে।

নির্দিষ্ট বাড়িতে ঢোকার খানিক আগেই ঝমাঝম বৃষ্টি।ভাড়া বাড়ির দরজায় কড়া নাড়তেই ঝিমলি দরজা খুলে দাঁড়াল।টানাটানা দুচোখে বিস্ময়।"তুমি!এখন! এভাবে!"

----- ঘরে ঢুকতে দেবে না!সারা শরীর ভিজে।

---- সরি,এসো। দরজা ছেড়ে দাঁড়ায়।

একটা গামছা আর শাড়ি নিয়ে এসে দেবরাজের হাতে দেয়,"আপাতত এই দিয়েই কাজ চালাও।ভিজে জামাপ্যান্ট শুকোনোর ব্যবস্থা করছি।তবে এ বৃষ্টি সহজে থামবে বলে মনে হচ্ছে না।"

---- আমি সময় নিয়েই এসেছি,তোমার অসুবিধে না হলে থেকে যেতে পারি।

---- আমি অবিবাহিতা, সেটা খেয়াল আছে??

--- বিয়ে করলেই হয়।

---- পাত্র কোথায়?

----- তোমার সামনেই!

--- ভাগ্যিস পালিয়ে এসেছিলাম,নাহলে বুঝতেই না আমার অভাব।

----- তুমিই আমার সাথে থেকে আমার একা থাকার অভ্যেস নষ্ট করে দিয়েছো।

---- আর তুমি যে দুর্দান্ত আধুনিকাকে সনাতনী প্রেমিকায় বদলে দিয়েছো,তার বেলা?

----- আজ দুজনে একসাথে ভিজবো।

---- তাহলে আমিও কিন্তু আজ একটা সিগ্রেটে সুখটান দেবো।

---- রাজি, তবে চুমু খাবার পর।

বর্ষাধোয়া দুটো শরীর সংস্পর্শের আগুনে এক হয়ে গেলো।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance