বঞ্চিত শিশু
বঞ্চিত শিশু


দরজার গ্রিল ধরে চাতক পাখির মতো দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি। মনের মধ্যে একরাশ অভিমান। চোখ দিয়ে বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
পাঁচ বছরের মেয়েটি আজও বায়না করেছিল মায়ের কাছে "মা ..আ.. ও.. মা... আজকে তুমি আমাকে গল্প বলে খাইয়ে দাও না মা। "
ঘড়িতে দশটা বেজে গেছে। স্কুলে যেতে আজ অনেক দেরি হয়ে গেল। আর মেয়ের অহেতুক বায়না থামেনা।
মা বিরক্ত হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাগের মাথায় মেয়েকে সজোরে এক চড় কষিয়ে দেয়।" প্রতিদিন তোমার শুধু এক বায়না। চুপচাপ খেয়ে পড়তে বসবে। "
মেয়েটি নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে মায়ের চলে যাওয়া।
বর্তমান সমাজ পরিস্থিতি এখন এমনভাবে প্রবাহমান যেখানে কাছের দুরের সম্পর্কগুলো অবলীলায় হারিয়ে যায়, আর তাতে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। কেউ যেন অদৃশ্যে দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য গুলি ছুড়েছে, যেটা শুনে সবাই হঠাৎই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সবকিছু ফেলে শুধুই ছুটে যাওয়ার দিকে। যার নেই কোনো বিরাম। এইভাবেই বড়ও হয়ে যাচ্ছে বাচ্চারাও। বাবা, মা অত্যন্ত ব্যস্ত, আর তারা সত্যিই ব্যস্ত উপার্জনের জন্য। সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য। বাচ্চাকে ভালো খাবার, ভালো পোশাক, ভালো স্কুল, এক আদর্শ জীবনযাপনের জন্য, আপাত দৃষ্টিতে দেখতে গেলে অহেতুক কিছু নই কিন্তু। কিন্তু সত্যি বলতে সব পেয়েও যেন অনেকটা না পাওয়া। সেই বাবার ভালবাসা, মায়ের আদর, এগুলো যেন এক কাল্পনিক রূপকথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবকিছুই কি টাকা দিয়ে কেনা যায়। তখন রাস্তার ধারের বাচ্চাগুলো যারা কস্টে দিন কাটায়, খেয়ে না খেয়ে। কিন্তু মায়ের সাথে সবসময় জুড়ে থাকে। সেই সব পাওয়া বাচ্চাটির কিন্তু বারবার মনে হবে, মায়ের সাথে তো আছে। বাবা, মা হলো সেই ভালোবাসার আবরণ যার প্রলেপ যেন সবসময় গায়ে লেগে থাকে, সেটা যেন যে কোনো মূল্যেই হারিয়ে না যায়।