ভুলের খেসারত
ভুলের খেসারত
গৌরব ট্যাক্সি থেকে নেমে স্টেশনে ঢুকবে , তখনই ফোনটা বেজে উঠল। রাতের ট্রেনে জামশেদপুর ফিরবে বাড়িতে। কলকাতায় এসেছিল, ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে। পকেট থেকে ফোনটা বের করে "হ্যালো" , বলতে অপর প্রান্ত থেকে একটা ভারী স্বর ভেসে এলো।
"গৌরব সিনহা? আপনি কোথায় এখন?"
গৌরব একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল হঠাৎ এই প্রশ্ন শুনে। "মানে? আপনি কে?"
"প্রবীর দত্ত আপনার কে হন?" , আবার সেই গম্ভীর গলা।
প্রবীর গৌরবের কলেজের সহপাঠী। আজই তার সাথে দেখা হয়েছে গৌরবের। বেশ কিছু সময় ধরে গৌরব তার বন্ধুর থেকে একটা বড় অংকের টাকা পায়। সেই ব্যাপারেই আবার কথা হল আজ । কথা বলা ভুল হবে, বেশ রাগারাগি ই হয়েছিল। যদিও প্রবীর সারাক্ষন বলে গিয়েছিল যে তার আরও কিছু সময়ের প্রয়োজন, কিন্তু বেশ অনেক সময় ধরে এই ভাবেই ঘুরিয়ে চলেছে প্রবীর তাকে। তাই আজ সে অনেক কথা শুনিয়েছে, এবং প্রবীরকে চূড়ান্ত শর্ত দিয়ে এসেছে যে সে যেন এক মাসের মধ্যে তার সমস্ত টাকা ফেরত দিয়ে দেয় ।
গৌরব চুপ করে এসব ভাবছিল, তখন আবার ফোন থেকে কণ্ঠস্বর শোনা গেল। "কি হল? প্রবীর দত্ত কে চেনেন তোহ?"
"হ্যা চিনি। প্রবীর দত্ত আমার সহপাঠী ছিল। কিন্তু আপনি কে?"
"আমি টিটাগর থানার ওসি সঞ্জয় খাঁরা বলছি। কিছুক্ষন আগে আপনার বন্ধুর মৃত্যু হয়। আমরা ওর বাড়ির লোকের খোঁজ করছি। কিন্তু আপনাকে একবার এখানে আসতে হবে। ভিকটিমের পকেট থেকে আপনার নাম এবং ফোন নম্বর লেখা একটা কাগজ পাওয়া গিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী আত্মহত্যাই বলা হচ্ছে, তাই কি কারনে এই পদক্ষেপ নিল, তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। দেরী না করে চলে আসুন।"
কথাগুলি শুনে হঠাৎ গৌরবের শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল। ভয়ার্ত কন্ঠে সে জিজ্ঞাসা করল, "আ আমি.. আস্তে হবে? কেন?"
"একজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার জামার পকেট থেকে আপনার নাম ও ফোন নম্বর পাওয়া গেছে। আপনাকে তো আসতেই হচ্ছে মিস্টার গৌরব সিনহা! তাড়াতাড়ি ভালোয় ভালোয় হাজিরা দিয়ে যান, নয়ত কিভাবে নিয়ে আসতে হয় সেসব আমরা ঠিক ই জানি। দেরী না করে চলে আসুন!"
ফোনটা কেটে যেতেই বেশ কিছু চিন্তা গৌরবের মনে ভীড় করতে থাকল।
একবার সে প্রবীরকে ফোন করল। "যেই নম্বরের সাথে আপনি যোগাযোগ করতে চাইছেন , সেটি এই মুহূর্তে উপলব্ধ নয়। অনুগ্রহে করে অপেক্ষা করুন অথবা কিছু সময় পরে চেষ্টা করুন!" বেশ অনেকবার চেষ্টা করে একই কথা!
একটু আগে যে নম্বর থেকে তার ফোনে কল এল তাতে কলব্যাক করল এরপর সে । "হ্যালো টিটাগর থানা!" আরও কিছু বলবার আগেই ফোনটা কেটে দিল গৌরব। নাহ সত্যি ই থানা থেকে ফোন করেছিল। অন্য নম্বর থেকে ফোন করে দেখে নিচ্ছিল গৌরব সত্যি থানা থেকে ফোন নাকি কেউ তার সাথে তামাশা করছে। কিন্তু না । ফোন সত্যিই পুলিশ করেছিল। প্রবীরকে ফোনে না পেয়ে বিমল বাবুকে ফোন করল গৌরব। বিমল বাবু শাড়ির ব্যবসায়ী , দুইজন কেই চেনেন। রাতের অপরক্ষাকৃত ঠান্ডা পরিবেশেও বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিচ্ছিল গৌরবের কপালে। এবারে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে উত্তর ভেসে এল। "হ্যা হ্যালো! বলো গৌরব!"
"বিমলবাবু প্রবীরের সাথে কথা হয়েছে আপনার?"
"হ্যা এইতো বিকেলে আমাকে ফোন করেছিল। কাল তো দেখা হল আমার সাথে , কি দরকার বলছিল।"
"কিছু বলল আপনাকে?"
"জানিনা কি সব আবলতাবল বলছিল। বলে আমার মা কে একটু দেখবেন। ওর মা তো অসুস্থ। জানিনা ছেলেটা কি করছে! আমিই বললাম তুমি এসেছ একবার দেখা করে আস্তে। তোমার সাথে দেখা হয়নি?"
"হ্যা.. মানে না। "
"ও আচ্ছা! জানিনা কি ব্যাপার। দেখি। তুমি তো আজ ফিরে যাচ্ছ?"
"হ্যা।" , বলেই তারাতারি ফোনটা কেটে দিল গৌরব। স্নায়ুর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রায় হারিয়ে ফেলছিল সে।
প্রবীর শেষে আত্মহত্যা করে নিল? এর জন্য কি সে ই দায়ী? আজ বিকেলের সমস্ত ঘটনা ছবির মতন ভেসে উঠতে থাকল তার চোখের সামনে।
কলেজে পড়তে প্রবীরের সাথে গৌরবের সেরকম বন্ধুত্ব ছিল না। কোনো এক কারনে মাঝ পথেই লেখাপড়া ছেড়ে দেয় এই প্রবীর। সাত বছর আগে প্রবীরের সাথে দেখা হয় তার। বড়বাজারে জামার মেটেরিয়াল অর্ডারের জন্য আস্তে হয়েছিল তাকে। সেখানে পনের বছর পর আবার প্রবীরের সাথে দেখা। চেহারা দেখে গৌরব বুঝেছিল যে তার বন্ধুর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সবার তো গৌরবের মতন ফ্যামিলি বিজনেস নেই। ওই সময় আরও অনেক কাজ থাকায় অনেক সময় জুড়ে কলকাতায় থাকতে হয়েছিল তাকে। এবং বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ হওয়ার পরে তার বন্ধু প্রবীর তার থেকে সাহায্যের আবদার করে বসে। বন্ধুকে সাহায্য করার সাথে সাথে নিজের ব্যবসার কথাও ভেবে রাজি হয়ে গিয়েছিল গৌরব। বেশ বড় অংকের টাকা ডাউনপেমেন্টের জন্য সে প্রবীরকে দেয়। কথা ছিল যে প্রবীর সেই টাকায় গার্মেন্টসের ব্যবসা করবে। বলা বাহুল্য গার্মেন্টসের হোলসেল ডিল গৌরব নিজের কোম্পানিকে ই দেবে। কিন্তু তীরে এসে তরী ডোবে। টাকা সে তার বন্ধুকে দিয়েছিল বটে, কিন্তু প্রবীর সেই টাকা দেখে নিজেকে সামলাতে পারেনি। জামা কাপড়ের ব্যবসা না খুলে প্রায় গোটা টাকা ই সে জুয়া খেলে, মদ খেয়ে এবং পতিতালয়ে উড়িয়ে ফেলে।
নিজের ভুল বুঝতে পেরে গৌরব প্রচন্ড ভাবে তাগাদা দিতে থাকে। কিন্তু প্রবীর সেই টাকা ফেরত দিতে পারেনা। দেবেই বা কি করে, প্রবীরের যা দৈন্য দশা, তাতে দুবেলা ভাত জুটলেও হয়। কিন্তু ব্যাবসায়ী মানসিকতা সম্পন্ন গৌরব এসব ভাবেনি। বিগত ছয় বছর ঘুরে বেড়াচ্ছে ও প্রবীরের থেকে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য। আজ দেখা হয়ে ও সেই টাকা ফেরত পায়নি গৌরব।
যদিও আজ দেখা হওয়ার কথা ছিল না তার সাথে প্রবীরের। কলকাতায় একটা ফ্ল্যাট নিয়ে রেখেছে গৌরব। অনেক সময়ই এখানে কাজের জন্য আস্তে হয় তাকে। এখানে এলে এই ফ্ল্যাটে থাকে সে। আজ দুপুরে খাওয়ার পরে ফ্ল্যাটে শুয়ে ছিল, তখন কলিং বেলের আওয়াজ। দরজা খুলতে আকস্মিক ভাবে প্রবীর দত্তের আগমন। "অসময় এসে পরলাম বোধহয়।" গৌরব, তার বন্ধুর এরকম তার ফ্ল্যাটে এই সময় আসা প্রত্যাশা করেনি। এতদিন তো সে নিজেই ওর কাছে উপস্থিত হত, টাকা ফেরত নেওয়ার তাগিদে। আজ হঠাৎ প্রবীরকে তার ফ্ল্যাটের দরজার সামনে দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিল গৌরব। ভেবেছিল এইবার আর সে তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করবে না। দুই মাস আগেই সে একবার বলে এসেছিল টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। তাই এবারে কাজের মধ্যে আর ওইদিকে যায়নি সে। কিন্তু আজ তাহলে কি সে আকাশের চাঁদ হাতে পেল? প্রবীর কি নিজেই এসেছে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য। ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে এইসব কথা ই ভাবছিল গৌরব। আরেকবার প্রবীরের দিকে দেখল গৌরব। নাহ সাথে তো কোনো ব্যাগ নেই। তাহলে কি চেক দেবে? এত কিছু ভাবার মাঝে প্রবীর বলে উঠল, "এক গ্লাস জল দিবি?" গৌরব জল নিয়ে এসে বসল। "তুই এসেছিস বিমল বাবু বললেন। ভাবলাম একটু দেখা করেই আসি!" , মুখে একটা স্মিত হাসি এনে কথা গুলো বলল প্রবীর।
"তা শুধু দেখা করতেই এসেছিস নাকি?"
"না মানে, কিভাবে তোকে বলব বুঝতে পারছিনা। মানে..।" , প্রবীরের কথার মধ্যে জড়তা এবং ইতস্তত হাবভাব।
ওর এরকম আচরন দেখে বুঝল যে নাহ তার অনুমান ভুল। তার বন্ধু কোন টাকা ই আনেনি। সে প্রবীরকে বাধা দিয়ে বলল , "দেখ আমি যখন এবারে এসে তোর সাথে দেখা করিনি, তার মানে এখন আমার টাকাটা লাগছে না। কিন্তু ভেবে নিস না যে পরে চাইব না। যাই হোক এত দূর এসে এসব বলতে হবেনা যে তুই এখনও টাকা জোগাড় করতে পারিসনি। তোর আচরণে আর কথাবার্তা শুনে বুঝে ফেলেছি আমি। মানুষের পাশে দাড়াই তো, আর লোকজনের দুঃসময় কাজে আসি তাই ভগবান আমার প্রতি বিরূপ থাকেন না। একটা বড় ব্যবসার ডিল কনফার্ম হল আজ। মিষ্টি তো নেই ঘরে, চা আছে করে দিচ্ছি বস। "
"চা লাগবে না। একটু বস না।" , বন্ধুর কথায় গৌরব বসে পরল।
"তোর ব্যবসা আরও সাফল্য পাক। দিকে দিকে ছড়িয়ে পরুক এই কামনা করি। তুই সত্যি খুব ভালোরে, মানুষের দরকারে, খারাপ সময় তোকে সব সময় সবাই পায়।"
"কি ব্যাপার? দেখ আমি তো বললাম, এখন আমার টাকা লাগবে না। কিন্তু পরে নিশ্চয়ই নেব।"
"আমি তোর সব টাকা ফেরত করে দেব। এখন আমাকে একটু বাঁচাবি? আমার ভীষণ টাকার প্রয়োজন রে। তুই ছাড়া কেউ নেই। খুব অসহায় অবস্থা। মা..."
এতক্ষনে গৌরবের মুখের প্রসন্ন ভাবটা পুরোপুরি উধাও হয়ে গেল।
"কিছু টাকার দরকার ভাই!একটু সাহায্য করে দে না!"
প্রবীরের এই কথায় নিমেষের মধ্যে গৌরব রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেল। ও জিজ্ঞাসা করল , "কি বাঁচাবো?"
"আমি যে অথৈ জলে পরেছি ভাই! মায়ের প্রচন্ড অসুখ! তুই ছাড়া যে কেউ নেই রে!" , অত্যন্ত করুণ কন্ঠে কথাগুল বলল প্রবীর দত্ত।
"তোর লজ্জা করে না! ব্যাটা কান কাটা! টাকা পয়সার জন্য নিজের মা কেও ছাড়ছিস না!"
"সত্যি বলছি ভাই! মা অনেকদিন ধরে অসুস্থ। ডাক্তার একটা ওষুধ বলেছে সেটা দুই লাখ টাকা দাম! আমি এত টাকা কোথায় পাবো! ওই ওষুধ না হলে মা কে বাঁচান যাবে না!"
এমনি সময় হলে গৌরব যে কাউকে এই পরিস্থিতিতে সাহায্য করত। কিন্তু আজ কেন জানি তার রাগ সমস্ত বিবেচনাকে গ্রাস করে ফেলেছিল। সে বলল , "কিভাবে এরকম নির্লজ্জ বেহায়া হয়ে আছিস! দশ লাখ টাকা পাই তোর থেকে সাত বছর হয়ে গেল। তার এক টাকাও না দিয়ে তুই আবার টাকা চাইছিস! যখন মদ খেয়ে জুয়া খেলে ঘুরে বেড়িয়েছিলি সেই সময় মনে ছিল না যে যদি অসুস্থ হই কে দেখবে! নাকি তখনই ঠিক করেছিলি একটা গৌরব বলে অপদার্থ আছে , বললেই সাহায্য করবে!"
"বিশ্বাস কর আমি এখন সেইসব করিনা অনেক কাল হল! একটা ছোট কাজ করি। তুই তো সব ই জানিস ! আমাদের তো নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। এর মধ্যে কত টাকা ই বা আলাদা করে জমাব!"
গৌরবের রাগের পারদ সময়ের সাথে সাথে উপরে উঠছিল। "খুব কথা বলছিস আজকাল! তোর দুঃসময় কোনোদিন যাবে না! লিখে রাখ। তোর সাহস কি করে হল এটা ভাবার যে আমি আবার তোকে টাকা দেব!"
"ঠিক আছে টাকা লাগবে না রে! বন্ধু মনে করে এই দুঃসময় এসেছিলাম। অকূলে যদি কোন কূল পাওয়া যায় সেই আসায়!"
"বললাম তো ! তোর দুঃসময় কোনোদিন শেষ হবে না! তুই আমার টাকা এক মাসের মধ্যে ফেরত দিয়ে দিবি! অনেকদিন হয়েছে। আর সময় দিতে পারছিনা!"
গৌরবের এই কথায় প্রবীরের মাথায় আকাশ ভেঙে পরল। "কি বলছিস ভাই! আমি যে মরে যাব! আমার সাথে এরকম করিস না!"
"বন্ধু বলে এতদিন কিছু বলিনি! নয়ত খোঁজ নিয়ে দেখিস টাকা উদ্ধার করার জন্যে কি পন্থা নেওয়া হয়! চিন্তা করিস না ! আর তো এক মাস বাদে দেখতেই পাবি! এখন যেতে পারিস! যাতায়াতের টাকা পয়সা নিশ্চই আছে!"
"কিভাবে পাব এত টাকা এইটুকু সময় ভাই! একটু বোঝার চেষ্টা কর!"
"একটু সময়? সাত বছরটা একটু না অনেক সময়!" , গৌরব সিনহার ক্রোধ বেড়েই চলছিল। "তুই চুরি কর, ডাকাতি কর, যা খুশি কর! আমার টাকা ফেরত দিবি! আর এক মাস সময় আছে তোর হাতে!"
"বাবার কটা টাকা জমা ছিল , আর কটা বীমা দেখি ওগুল থেকে যদি কিছু হয়।" , এরপর আর কিছু বলেনি প্রবীর দত্ত। অসহায় নিরুপায় প্রবীর খালি হাতে ফিরে গিয়েছিল। তার হতাশ নিরুপায় অবস্থা গৌরব পুরোপুরি উপেক্ষা করেছিল।
ট্যাক্সি করে টিটাগরের পথে রওনা হল গৌরব। মনের মধ্যে এই সমস্ত চিন্তা ই ঘোরাফেরা করছে । খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিল কি সে! টাকা পয়সা নিয়ে এসব না বললেই পারত । তার তো এই টাকা এখনই দরকার ছিলনা! শুধু শুধু এত কিছু প্রবীরকে সে বলল। শেষে প্রবীর আত্মহত্যা করল! আর কিছু ভাববার অবকাশ পাচ্ছিল না গৌরব। পুলিশ কি তাহলে তাকে ধরে ফেলবে! সে ই কি দায়ী এর জন্য! কিন্তু ওর সাথে যে আজ ঝামেলা হয়েছে সেটা পুলিশ জানবে কি করে!
যাই হোক বেশ অনেক চিন্তা মাথায় নিয়ে অবশেষে থানায় পৌঁছোল গৌরব। বড় থানা , ব্যস্ততা চোখে পরছে। ভেতরে ঢুকতে তাকে একজন আটকাল। "কি ব্যাপার?"
"সঞ্জয় বাবু ডেকে পাঠালেন আমাকে।"
"বড়বাবু ডেকেছে? কি নাম?"
"আমি?"
"হ্যা নাম কি আছে?"
"আমি গৌরব সিনহা! ওই প্রবীর দত্ত!.."
"ওহ । স্যার বেরিয়েছে। বসতে হবে।" , বলে চলে গেল কনস্টেবল গোছের পুলিশ অফিসারটি।
থানার লকাপে বেশ কিছু পকেটমার ছিঁচকে চোর ঢুকে আছে। তাদেরকে ধমকিয়ে চলেছে কিছু পুলিশ গার্ড। থানার এই পরিবেশ গৌরবকে আরও নার্ভাস করে তুলছিল। এখানে এসে এক দুইবার ফোন ও বেজেছিল তার। গাড়িতে চলার সময় ও বেশ কয়েকবার তার ফোন রিং হয়েছিল। কিন্তু তার দিকে কোনো হুশ নেই গৌরবের। শিকারক্তির জন্য কি তাকে লকাপে ঢুকিয়ে মারা হবে ? আরও অনেক কিছু ভেবে চলছিল গৌরব দত্ত। এরপর এক সময় জায়গা ছেড়ে উঠল গৌরব। অনেকক্ষন অপেক্ষা করছিল সে। উঠে সামনের এক কনস্টেবলকে জিজ্ঞাসা করতে গেল। সেই সময় কনস্টেবল একজন পুলিশ অফিসারকে স্যালুট করতে গৌরব বুঝল, থানার বড় বাবু ফিরেছেন। তার কাছেই এগিয়ে এসে সঞ্জয় খাঁরা বললেন, " আপনি গৌরব সিনহা? অনেকক্ষন বসে আছেন না?"
গৌরব কেবল মাথা নাড়ল উত্তরে।
"একটা বড় ভুল হয়ে গিয়েছে! কিছু মনে করবেন না!আসলে আপনার নম্বর মাঝে সেভেন থ্রি নাইন,এটা ওয়ান থ্রি নাইন। এক আর সাতের মধ্যে সূক্ষ ফারাক করা যায়নি। হাতে লেখা নম্বর তো। দেখুন এমন কাকতলীয় ব্যাপার! আপনাদের দুইজনের নাম ও সেম। যাই হোক চা বলছি। খেয়ে যান। অদ্ভুত ব্যাপার , প্রবীর দত্ত নামটাও মিলে গেল! আরে একবার ফোন করে দেখে নিলেই তো হত আপনার বন্ধুকে! তাহলে আর আসতে হত না।"
"আমি কল করেছিলাম। ফোনে পাইনি।"
গৌরব বাবুর উত্তর ওসি সাহেব হয়ত না শুনেই নিজের ঘরে ঢুকে পরলেন।
সব শুনে তারপর বুঝতে একটু সময় লাগল গৌরবের। শুনে স্বস্তি পাবে না সময় নষ্ট হওয়ার জন্য ত্রুদ্ধ হবে সেসব ভেবে হতভম্ব হয়ে পরছিল গৌরব। পুলিশের ভুলের খেসারত কি তাকে গুনতে হল? কিন্তু দোষ যে তার নেই তাও তো বলা চলে না! সে যদি আজ তার বন্ধুকে এমন ভাবে অপমান না করত , তাহলে বোধহয় নিজের মধ্যে আত্মদংশন এত প্রকট ভাবে কাজ করত না। এরকম চিন্তা করে চলেছে গৌরব সিনহা তখন আবার আরেকবার ফোনটা বেজে বন্ধ হয়েগেল তার পকেটে থেকে।
"আরে ফোনটা ধরুন! কি হয়েছে ? এখানে কি দরকারে?" থানার আরেক কনস্টেবলের কথায় তার কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভাবটা কাটল। গৌরব ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখল, প্রবীর দত্তের ফোন। কললিস্ট খুলে দেখল, বেশ কয়েকবার তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে সে । হয়ত কোন দরকারে এতবার ফোন করেছে সে। কি দরকার দেখার জন্য কলব্যাক করল গৌরব।
