Bimalesh Mukherjee

Romance

4.8  

Bimalesh Mukherjee

Romance

ভালোবাসি তোমায়..♥️♥️

ভালোবাসি তোমায়..♥️♥️

4 mins
1.1K



<< ভালোবাসি তোমায় >>


আজ দীর্ঘ ৭ বছর পর দেশে ফিরল শুভ্র। শুভ্রজিৎ সেনগুপ্ত, বয়স ৩৭, রসায়নে P.Hd প্রাপ্ত শুভ্র বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া র নিউ সাউথ ওয়েলস এ অধ্যাপকের ভূমিকায় কর্মরত।প্রতি বছর ছুটি পেলেও কোনো বছরই ওর দেশে ফেরা হয় না।কোনো না কোনো কাজের চাপে তাকে সেখানেই থেকে যেতে হয়।কিন্তু এবার একেবারে নির্লিপ্ত ভাবে ফিরে এসেছে।জলপাইগুড়ির বাসিন্দা সে,এখানেই বড় হয়ে ওঠা,পড়াশোনা,খেলাধুলা।কতই না স্মৃতি জড়িয়ে আছে এখানকার প্রতিটি মাটির কণার সাথে।এই গ্রামের সাথে ওর হৃদয় অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। পূর্বপুরুষের আমলে নির্মিত তিন তলা বিরাট অট্টালিকা গ্রামের মধ্যমণি স্বরূপ দন্ডায়মান। শুভ্রর প্রপিতামহের সময়ে এই ভিটা বানানো হয়।পিতামহ থেকে শুরু করে তার বাবা, কাকু সকলের কৈশোর থেকে যৌবন এখানেই অতিবাহিত হয়েছে,এখানেই তারা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।অবশ্য ওর ভাগ্যে কোন স্থানের মাটি লিখিত আছে, তা তো সেই বিধাতা পুরুষই জানেন। 


সদর দরজা পেরিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করল শুভ্র। দাদা,বৌদি,এক ভাইপো আর কাজের কর্মীবৃন্দ মিলিয়ে বাড়িতে মোট ১০জনের বসবাস। সাবেকিয়ানা রাজত্ব না থাকলেও সেনগুপ্ত পরিবার পরিবার গ্রামে যথেষ্ট প্রতিপত্তিশালী ও সম্মানীয়।বাড়িতে প্রবেশ করে দাদা,বৌদিকে প্রণাম করে নিজের ঘরের দিকে যেই পা বাড়িয়েছে,তখনি একটা মৃদু সুগন্ধ যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।থমকে দাড়িয়ে পড়ল শুভ্র,আরে এ যে তার সেই বহু পরিচিত সুবাস ! একে ও ভুলবে কি করে! তৎক্ষণাৎ দোতলায় উঠে গেল।নজরে এল ডানদিকের তিন নম্বর তালা দেওয়া ঘর খানি।এই ঘরের একটা চাবি ওর কাছে সবসময় থাকে।আর একটা থাকে বৌদির কাছে।এই ঘরটায় ওর অনুপস্থিতে একমাত্র বৌদির প্রবেশাধিকার আছে।

চাবি ঘুরিয়ে তালা খুলে ফেলল শুভ্র।চৌকাঠ পেরিয়ে ভেতরে আসতেই গন্ধটা যেন আরো তীব্র হয়ে ওঠে,সমস্ত ঘরখানা এক অজানা ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ।আরো খানিকটা এগিয়ে যেতেই চোখ পড়ল সম্মুখে থাকা কেদারায়।সেখানে বসে আছে ইন্দ্রানী!! আয়নায় আপন মনে সেজে চলেছে সে,যেন শুভ্রর আগমনের সংবাদ হেতু তার এমন রূপসজ্জা। পরনে লাল পাড় শাড়ি,খোঁপায় রজনীগন্ধার মালা,কাজল কালো নয়নে এক অদ্ভুত চপলতা,ঠোঁটের কোণে সেই পূর্ব পরিচিত অস্থিরতা।সত্যি কি সুন্দরীই না লাগছে ইন্দ্রানী কে। শুভ্র কে দেখে একটু স্মিত হাসল সে।শুভ্রর মন যেন অজানা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল, এগিয়ে গেল ইন্দ্রানী কে আহ্লাদে আলিঙ্গন করার অভিপ্রায়ে..! 


মুহূর্তের মধ্যেই চকিতে সম্বিত ফিরে পেল শুভ্র।এ কি কোথায় গেল সেই আলো ঝলমল পরিবেশ..! কোথায় গেল সেই সুবাস! কোথায় গেল সেই চপলা, চঞ্চলা ইন্দ্রানী!!দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল শুভ্রর নিজের অজান্তেই।স্মৃতি সরণি বেয়ে একে একে মনে উদয় হল অতীতের আলোড়ন।সে যেমন এক সুখস্মৃতি তেমনি বিভীষিকাময়। 


ইন্দ্রানীর সাথে প্রথম পরিচয় কলেজে পড়ার সময় থেকেই।ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব,সেখান থেকে প্রেম।পড়াশোনা শেষ করে দুজনেই সম্পর্কের কথা বাড়িতে জানায়।দুই পক্ষের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের সম্মতিতে মহা সমারোহে বিবাহ পর্ব সম্পন্ন হয়।আজও শুভ্রর মনে আছে সেই দিনটার কথা, যেদিন প্রথম বার ইন্দ্রানীর আলতা রাঙা পদ যুগলের ছাপ এই বাড়ির প্রাঙ্গণে এসে পড়েছিল।

কিন্তু বিধাতা বোধ হয় বড়ই নিষ্ঠুর,সবসময় মানুষের সমস্ত সুখ তিনি হাসি মুখে মেনে নেন না।শুভ্রর আজও মনে পড়ে সাত বছর আগের সেই দিনটার কথা।ওর বিবাহিত জীবনের মেয়াদ তখন ৩ বছর।ছোট্ট সৌম্য তখন মাত্র নয় মাসের শিশু। পূর্ণিমার জ্যোৎস্না আলোকিত রাতে প্রায় ১ টা পর্যন্ত গল্প করার পর শুতে গিয়েছিল দুজনে।কিন্তু কেই বা জানত এই রাত ওদের জীবনে কালরাত্রি হয়ে নেমে আসবে!!পরদিন ভোরে নতুন দিনের সূর্যোদয় হল ঠিকই,কিন্তু ইন্দ্রানীর ঘুম ভাঙ্গল না।অনেক ডাকাডাকির পরও উঠছে না দেখেই শুভ্রর সন্দেহ হয়।নাড়ী পরীক্ষা করেই বুঝতে পারে কোনো স্পন্দন নেই।তৎক্ষণাৎ ডাক্তার বাবুকে খবর দেওয়া হয়।তিনি এসে পরীক্ষা করে বলেন," ইন্দ্রানী আর নেই!"

কথাটা অনেকটাই বিনা মেঘে বজ্রপাতের ন্যায় শুভ্রর কর্ণপটহে ঝঙ্কার তোলে।কম্পিত কণ্ঠে কোনরকমে প্রশ্ন করে," কি নেই মা.. মানে?"

" কাল রাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্দ্রানীর মৃত্যু হয়েছে।এতটাই তীব্রতর ছিল সে আঘাত,যে তোমাকে সাড়া দেবার মত সময় টুকুও পায় নি।",ডেথ সার্টিফিকেট লিখে ডাক্তারবাবু বিদায় নিয়েছিলেন।কিন্তু শুভ্র..! সে তখন দিশাহারা, একটা রাত যে এভাবে ওর জীবনে ঘোর অমানিশার আবির্ভাব ঘটাতে পারে তা যেন বিশ্বাস করতে পারে নি। নয় মাসের ছোট্ট সৌম্যর মুখটা বারবার মনে পড়ছিল,আর ভাবছিল কি ভাবেই বা বোঝাবে তাকে যে তার মা আর এই পৃথিবীতে নেই।পার্থিব সকল মায়া কাটিয়ে সে চিরতরে বিদায় নিয়েছে। 


স্মৃতি পথ অতিক্রম করে বাস্তবের মাটিতে ফিরে এল শুভ্র।সেই ছিল জলপাইগুড়ির মাটিতে তখনকার মত শেষ কিছু দিন।তার এক মাস পরই শুভ্র অস্ট্রেলিয়া রওনা হয়ে যায়।সৌম্যকে নিয়ে যাওয়া ওর পক্ষে অসম্ভব ছিল,কারণ সদ্য মাতৃহারা শিশুর যে মাতৃস্নেহ প্রয়োজন তা দেবার ক্ষমতা ওর নেই।আবার ইন্দ্রানী কে হারিয়ে নতুন করে সংসার শুরু করা ছিল শুভ্রর কাছে এক অলীক কল্পনা মাত্র..!!দাদা বৌদির তত্ত্বাবধানে ছেলেকে রেখে বাধ্য হয়েই শুভ্রকে চলে যেতে হয়েছিল।সৌম্যর দুই বছরের মাথায় দাদা ওকে শুভ্রর কাছে পৌঁছে দিয়ে আসেন। 


আজ শুভ্র দাড়িয়ে আছে ইন্দ্রানীর সবচেয়ে পছন্দের বেনারসী শাড়ি টাকে আঁকড়ে ধরে।

আজ আর চোখের জল বাধা মানল না। অঝোর নয়নে কেঁদে ফেলল শুভ্র।জানে ইন্দ্রানী তার স্মৃতি মেদুরতায় সর্বদা জীবিত থাকবে,কিন্তু আবেগী মন তো কিছুতেই মানতে চায় না সে কথা।এই ঘরটায় ইন্দ্রানীর সমস্ত পছন্দের জিনিস তার স্মৃতি চিহ্ন স্বরূপ সজ্জিত রেখেছে শুভ্র।এখন এই সমস্ত কিছুর মধ্যেই ও প্রেমের সার্থকতা খুঁজে চলে,খুঁজে চলে তার হারিয়ে যাওয়া ইন্দ্রানীর সৌন্দর্য্যকে।

নিজের অজান্তেই শুভ্র আপন মনে বলে উঠল," তুমি তো চলে গেলে আমাকে সম্পূর্ণ একলা করে।তবে নিঃস্ব বলব না।আমাদের অপার প্রেমের সাক্ষী হিসেবে তুমি সৌম্য কে আমায় উপহার দিয়ে গেছো।আমি যে আজও তোমায় ভালোবাসি ইন্দ্রানী,আর সেই স্থান কেউ কোনোদিন নিতে পারবে না।আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসে যাবো আজীবন কাল! শুধু তোমাকেই...!!",

কণ্ঠ অবরুদ্ধ হয়ে এল।আর কথা বলার সামর্থ ওর নেই।

সহসা দমকা বাতাসের প্রাবল্যে শূন্য ঘরের চার দেওয়াল হতে শোনা গেল এক সুরেলা নারী কন্ঠের অনুরণন।মিষ্টি হাসির আলোড়ন তুলে বলে উঠল," আমিও যে তোমায় ভালোবাসি শুভ্র।শুধু তোমাকেই।তোমাতেই নিহিত আমার সকল অভিমান,সমস্ত প্রেমের বন্ধন। আমি আজও ভালোবাসি....ভালোবাসি শুধু তোমায়..."


© বিমলেশ মুখার্জী



( সমাপ্ত ... )


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance