অপ্রাপ্য
অপ্রাপ্য
প্রতীক্ কোহারের একটা গান রয়েছে...
"इस दिल को आदत है;
गिर के संभलता नहीं!!"
আমার মতে কেউ যদি প্রেম করো, তবে অবশ্যই নিজের মন প্রাণ দিয়ে কর | ভালোবাসার অর্থটাই হলো ভালবাসার মানুষটাকে নিজের হৃদয় দিয়ে ফেলা | তারপর সে হৃদয়টার খুন করে দিলেও কোন সমস্যা নেই কারণ এই হৃদয় তো তারই | কিন্তু বিভিন্ন ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড এবং তাদের আপব্রিঙ্গিং এর জন্য আলাদা আলাদা মানুষ আলাদা আলাদা ভাবে এই পরিস্থিতিকে সামলে চলেন |
আজও বুকে হাত রেখে বলতে পারি মেয়েটার মনে তার জন্য কিছুটা হলেও অনুশোচনা রয়েছে | এবার প্রশ্ন "তার"
টা কে??
সেটা জানতে হলে আজ থেকে চার বছর আগের মফস্বলের শহর খড়গপুরে পৌঁছে যেতে হবে | এটা সত্যিই যে খড়গপুর শহরের থেকে কম কিছু নয়, তবে অবশ্যই শহর তো বলা যায় না!
কোচিং সেন্টারের দ্বিতীয় ফ্লোরে ফেকুচাঁদ ওরফে রক্তিম সেন স্টুডেন্টদেরকে পড়াচ্ছেন | রুমের এক কোণে জানলার ধারে আনমনাচিত্তে বসে রয়েছে অনিক |
"এই শোনো সবাই কালকে ফিজিক্সটা পড়ে আসবে কাল একটা ছোট করে টেস্ট নেব |"
অনিক উঠে পড়ল বই খাতা গুছিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে বেরোনোর সময় চোখ পড়ল ফার্স্ট বেঞ্চে বসে থাকা ইন্দ্রাণীর ওপর | ইন্দ্রানীর সাথে প্রায়শই কথা হত হোয়াটসঅ্যাপে | খুব অল্প সময়ে দুজন খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে | বাবা-মা আর দাদার খুব আদরের মেয়ে ইন্দ্রানী | ছোট থেকেই পড়াশোনা ভালো, তাছাড়া এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতেও কম না | নাচ গান এমনকি নাটকেও বেশ ভালই পটু ইন্দ্রানী | আর রূপে...... যেন স্বর্গের পথ হারিয়ে ভুল করে ইহলোকে চলে এসেছে!!
আর এই দিকে অনিক; অবশ্যই মা-বাবার অত্যন্ত আদরের ছেলে... পড়াশোনায় একটু ফাঁকিবাজ বাইরে বেরোলে মেয়েবাজ | কানে এসেছিল কোন এক মেয়েকে এতটাই ভালবেসে ছিল যে সেই বিচ্ছেদের দুঃখে জর্জরিত হয়ে অবশেষে ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ নিতে হয়েছিল।
অনিক সবকিছু ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে ফিরছে | ঘড়িতে তখন সাড়ে তিনটা বাজে। ঘর পৌঁছে চান করে ফ্রেশ হয়ে, ফ্রিজ থেকে অল্প একটু ঠান্ডা জল বার করে নিজের গলা ঠান্ডা করে, ফোনটাকে পকেটে করে শুয়ে পড়ল বিছানাতে। আগে নোটিফিকেশনগুলো চেক করল | দেখল ইন্দ্রানী মেসেজ করেছে কিনা!
খানিকটা হতাশা সহ্যর পর কিছুক্ষণ প্রোফাইল টা খুলে দেখলো অনিক |
"কালকে দোষটা ওরই ছিল আমি কোনভাবেই আগে মেসেজ করছি না |"
ফোনটাকে বন্ধ করে দিয়ে অনিক সবটাকে মাথা থেকে বের করে ঘুমানোর চেষ্টা করল কিন্তু সেটা কি সম্ভব?
যাকে গত ১৫-২০ দিন ধরে নিজের মনের প্রত্যেকটা কথা বলতে একবারও ঘুরে ভাবেনি সে, আজকে তাকে হঠাৎ এরকম অজানার মতন ট্রিট করছে?
অনিক নিজেকে একবার প্রশ্ন করল "তাড়াহুড়ো তে কিছু ভুল করলাম না তো??"
অনেকক্ষণ নিজের মন আর মাথার লড়াইয়ের পর অবশেষে ঠিক করল রাত অব্দি অপেক্ষা করবে কিন্তু যদি কোন মেসেজ না আসে ইন্দ্রানী কে প্রথম মেসেজটা সেই করবে |
অপেক্ষার সময় কাটা বড়ই কঠিন | কখনো ফ্যানের ক্যাচ ক্যাচ শব্দে কোন গানের সুর খোঁজার চেষ্টা, কখনো নিজের কথক বন্ধুকে "ভাই ইন্দ্রানির সাথে ঝগড়া হয়ে গেছে" বলে মেসেজ করা | কিন্তু সময়ের একটা মহিমা আছে যে সেটা বেশিক্ষণ টেকে না | অপেক্ষার অবসান হলো | অনিক ইউটিউব শর্টস বন্ধ করে হোয়াটসঅ্যাপে পা দিল | ইন্দ্রানী মেসেজ করেনি | অবশেষে নিজের সেলফ রেস্পেক্ট কে গুলি মেরে অনিক একটা লম্বা গদ্য লিখেই ফেলল!
"দেখ ইনু; তুই আমাকে এইভাবে এড়িয়ে চলিস না | প্লিজ আমার জীবনে ফিরে আয় | আজ কোচিংয়ে একবার আমার দিকে তাকালিও না! কালকে আমি যেটা বলেছিলাম সেটা নেহাত রাগের বসে বলে ফেলেছি | তুই তো জানিস আমি তোকে কতটা ভালোবাসি? আজ সারাটা দিন তুই আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস | তুই প্লিজ আমাকে একটা রিপ্লাই কর।"
দু মিনিট পর মেসেজটা ব্লু টিক এল | অনেক চ্যাট খুলে বসে রয়েছে ব্লু টিক টা দেখে যেন একটা আশার আলো পেল |
ইন্দ্রানী:- "hm"
মুখের হাসিটা যেন কোথায় হারিয়ে গেল কিন্তু কিছু বলতে পারল না অনিক | এমন সময় মা ঘরে ঢুকে খাবার জন্য ডেকে গেলেন | অগত্যা কিছু না বলেই ডিনার টেবিলের দিকে রওনা দিতে হলো |
সময়ের সাথে আমি একটা জিনিস খুব ভালোভাবে বুঝেছি; যে গোলাপের রং যত উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয় তার গায়ে ততো বেশি কাঁটা | ব্যক্তিগত জীবনে বহু গোলাপ ধরতে গিয়ে রক্তাক্ত হাতে ফিরেছি | তাই এই আকর্ষণীয় গোলাপগুলোকে দূর থেকে দেখাই বেশি বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করি | কারণ কাছে গেলে কখনো কাঁটা নয় তো কখনো মধু খাওয়া মৌমাছি শত্রু হয়ে উঠতে পারে।
খাওয়া শেষ করে অনিক গিয়ে ছাদে বসলো, ফোনটা পকেটে | না আর কোন মেসেজ আসে নি |
অনিক ঠিক করল তার একটা উত্তর চাই | সে উত্তরটার জন্য ইন্দ্রানী কে সে ফোন করে ফেলল |
অ-"ইন্দ্রানী তোকে আমি সরি বললাম তো? আর কি সমস্যা আমাকে একটু বল ...... আমরা তো পারফেক্ট! আমাদেরকে বাকিরা আইডল কাপল বলে | তুই যা বলবি আমি তাই করবো কিন্তু তুই আমার সাথে এরকম ব্যবহার করিস না |"
ই-"দেখ অনিক আমি তোকে বন্ধুর মতো মনে করি | এমন কি আমি বলব তুই আমার জন্য বন্ধুর থেকেও বেশি | আমি তোকে আমার জীবনসঙ্গীর মতো মানতে পারব না!"
অ-"তাহলে সেদিন যখন তুই আমাকে ফোন করেছিলি তুই আমাকে কেন প্রপোজ করলি?? ইন্দ্রানী আমি এখন মজা করার মুডে নেই | কি হয়েছে আমাকে খুলে বল!"
ই-"কিছু হয়নি অনিক তুই সিন ক্রিয়েট করছিস |"
অ-"এবার কিন্তু ভালো লাগছে না।"
ই-"আরে আই অলরেডি হ্যাভ এ বয়ফ্রেন্ড!"
অ-"মানে এএ?????????"
ই-"আরে মানে আমি জিনিসটা ক্যাজুয়াল রাখতে চেয়েছিলাম তুই এটাকে নিয়ে হঠাৎ এতটা সিরিয়াস হলি কেন? আমি তোকে কেবল আমার বন্ধুর মতন দেখি তার থেকে বেশি কখনো দেখিনি |"
অ (রাগে)- "আর আমার এত ফিলিংস ইমোশন ওগুলোর কি?"
ই-"আমি বলেছিলাম তোকে মন লাগাতে?"
অ-"শালা আমাকে সবাই বোকা পেয়েছে? তোদের মুড সুইংসের উপর আমার জীবন আমার ইমোশন আমার প্রেম ডিপেন্ড করে?"
ই-"অনিক নাও ইউ আর ক্রসিং দা লিমিট!"
অ-" কিসের লিমিট?
একে অপরকে লিমিট দেখাতে দেখাতে প্রায় এক ঘন্টা সময় কেটে গেল |
অবশেষে অনিকের হাত থেকে রক্ষা নেই দেখে ইন্দ্রানী স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য দিনের মতন কথা বলা শুরু করল | কারণ এর পরের যে ধাক্কাটা ইন্দ্রানী অনিককে দিতে যাচ্ছিল সেটা তুলনামূলকভাবে একটু জোরেই |
সারারাত অনেক গল্প হল আরো অনেক কিছুই হলো যেটা কেবলমাত্র দুটো ** সেন্সর দিয়ে আমি ব্যক্ত করতে পারবো না |
সকালবেলা কথক; সায়নের প্রবচন শুনছে |
"ভাই মিষ্টি সিগারেট গুলো খেলে পেটে কৃমি হয় |"
সকাল থেকে উঠে ফোনটা চেক করতে ভুলে গেছি, এতক্ষণে চেক করতে দেখলাম সাত খানা মিস কল অনিকের থেকে। সাথে সাথে ফোন ঘুরাতে ওই দিকের অবস্থা জানতে পারলাম |
অনিক রাত্রে ইন্দ্রানী সাথে অনেক গল্প করে ঘুমিয়ে ছিল | এবং সকালে উঠে সবার আগে ইন্দ্রানীকে মেসেজ করে গুড মর্নিং | কিন্তু ডবল টিক আর পড়েনি | প্রোফাইলের ছবি দেখা যাচ্ছে না | ফোন করলে কেটে যাচ্ছে |
অ:- কাল তো সবই ঠিক ছিল হঠাৎ কি হল??
নিজেকে আর সামলাতে পারল না অনিক | স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ইন্দ্রানীর ঘরের উদ্দেশ্যে | আর সেই স্কুটিতে আসাকালীন কন্টিনিউয়াস আমাকে ফোন করেছিল | মায়ের শত বারন কে উপেক্ষা করে অবশেষে ইন্দ্রানীর ঘরে এসে পৌঁছলো অনিক | মা অনেকবার বলল ফিজিক্সের পরীক্ষা আছে এখন কোথাও যাস না, কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে অনিকের মন আর মানল না |
কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে হুশ হারিয়ে একটা মেয়ের বাড়িতে দরজা খুলে ঢুকে গেল অনিক | ঢুকেই ইন্দ্রানী ইন্দ্রানী বলে চিৎকার করতে লাগলো | দাদা বাইরের উঠোনে বসে প্রাতঃভ্রমণের পর চায়ের স্বাদে মগ্ন এমন সময় অনিকের ষাঁড়ের মতন গলা তার মগ্নতা ভেঙ্গে ফেলল | দাদার চোখ পড়ল একটা ২০ বছরের ছোকরার ওপর | এখন যেন মামলার গাম্ভীর্য বুঝল দাদা ! চায়ের পেয়ালাটা নামিয়ে আনিকের সামনে গিয়ে দাদা জিজ্ঞেস করল- ইন্দ্রানীকে কেন চাই??
অ:- পার্সোনাল কথা আছে |
দাদার মুখটা দেখলে বলা যায়; লোকটা সর্ট টেম্পারড বা রাগি | কিন্তু তা বলে এতটা তা জানতাম না!!
অনিকের কলারটা দুহাতে চেপে ধরে দাদা এত জোর ধাক্কা দিল হয়েছে অনেক পায়ের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে পড়ে গেল |
"দা ... আ ...... দা"
দুজনের চোখ উপরে গেল | ইন্দ্রানী সবে ঘুম থেকে উঠে দাদা আর তার বন্ধুর এরকম লড়াই দেখে থ | সে চট করে রুম থেকে একটা কাগজ নিয়ে ছুটে গিয়ে অনিকের হাতে ধরিয়ে দিল। দিয়ে বলল মোবাইলটা অফ ছিল sorry | অনিক বুঝতে পারল যে ইন্দ্রানী তাকে এই সিচুয়েশন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তাই সেও বলে ফেলল- ফোনে পাঠিয়ে দিলে আর আসতে হতো না আর দাদাকে বিনা কারণে গায়ে হাত তুলতে হতো না!
ইন্দ্রানী তাকে কটকট করে চোখ দেখালো!! দাদা লজ্জিত হয়ে ফিরে চলে গেল | অনিকের কাগজটা নিয়ে বেরোনোর সময় হঠাৎ চোখে পড়লো কাগজের পেছনে লেখা রয়েছে
"রাত্রেবেলা ফোন করবো আর বিরক্ত করবি না; এক্সাম হলে দেখা হবে | "
অনিকের ঘরে ঢুকতেই প্রবল অশান্তি লাগল | মা রেগে বাড়ি মাথায় তুলল | ভাগ্যিস আজ বাবা তাড়াতাড়ি কাজে বেরিয়েছেন নইলে চাপের শেষ থাকত না |
যা হোক করে পরীক্ষার জন্য অনিক ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল | বেরোনোর সময় কানে এলো " পরীক্ষায় নাম্বার না এলে আর ঘরে আসার দরকার নেই |"
পরীক্ষা দিতে গেলে অনিক | ইন্দ্রাণীরও আসার কথা | অনিক সেই মতন নিজের বেঞ্চের পাশে কিছুটা জায়গা রেখে বসলো | ইন্দ্রানী এলো কিন্তু গিয়ে সেকেন্ড বেঞ্চে অঙ্কুশের কাছে বসলো | অনিকের পায়ের মাটি সরে গেল | ত্রিকোন প্রেমের গল্প? না না অনিক মেনে নিতে পারবে না | এটা সম্ভব না | ইন্দ্রানী কী করতে চাইছে এই ব্যাপারে নিজেকে প্রশ্ন করল অনিক কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ চোখ পড়ল সেকেন্ড বেঞ্চে | অঙ্কুশ একবার ঘাড় ঘুরিয়ে চারদিকে দেখল দিয়ে আলতো করে ইন্দ্রাণীর গলায় একটা চুমু খেলো | ইন্দ্রানী কেঁপে উঠলো |
কাল রাত থেকে এত টা মানসিক চাপ তারপরে আবার এই সব দেখে অনিকের নিজেকে সামলে রাখা সম্ভব হলো না |
"মা---দা---র---চো---দ!!!"
অনিকের হঠাৎ এরকম চেঁচানোর জন্য হল ভর্তি ছেলেমেয়েরা অনিকের দিকে তাকালো |
রক্তিম স্যার হাঁ করে তাকিয়ে আছেন; পুরো কোচিং নিস্তব্ধ | রক্তিম- অভদ্র ছোটলোক কথা বলার ভদ্রতা নেই??
অনিক নিজেকে ধরে রাখতে পারল না | অ- তারা যখন চুম্মা চাটি করছিল তখন আপনি কি করছিলেন?
র- ক্লাসরুমের কোন ভদ্রতা নেই?? বেরিয়ে যাও এক্ষুনি | অনিক রেগে পরীক্ষার খাতাটা হাত দিয়ে তুলে কুচি কুচি করে ছিড়ে দিল। বেরানোর সময় সেই কুচি গুলো ইন্দ্রানী আর অংকুশর ওপর ছুঁড়ে ফেলল | কোচিং থেকে বেরিয়ে অনিক গেটের কাছে দাঁড়াল | আর পরীক্ষা শেষের অপেক্ষা করতে লাগলো | সেই একই কথা বলবো অপেক্ষার সময় কাটা বড়ই কঠিন | অপেক্ষা করাকালীন অঙ্কুশের ব্যাপারে একটু বলি | অঙ্কুশ ছেলেটা অনিকের থেকে বয়সে কিছুটা বড় | পড়াশুনায় অত্যন্ত ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র | টিচারদের মতে এ বছর জয়েন্ট এন্ট্রান্স ক্র্যাক করবেই | অনিক রাস্তায় জমে থাকা জলে নিজের প্রতিচ্ছবিটা দেখল | শূন্যতার মেটে জলে নিজের প্রতিফলন টা যেন ব্যাঙ্গাত্মক | এমন সময় দেখলো ছাত্র-ছাত্রীরা বেরিয়ে আসছে | ইন্দ্রানী ও বেরিয়ে এলো |বাইরে বেরিয়ে ইন্দ্রানী অনিককে দেখতে পেল | ই- এখনো বাড়ি যাসনি? অ:- নারে অঙ্কুশ কোথায়? ই:- ভেতরে স্যার বললেন ওর সাথে কথা আছে |
অ:- প্রতি পরীক্ষার পর স্যারের মুখে নিতে ঠিক চলে যায় হা হা !!
ই:- কি অভদ্র তুই | আগে তো এরকম ছিলিনা !!
অ:- ওসব বাদ দে এই দুপুরে গাড়ি ঘোড়া কিছু পাবি না স্কুটিতে বস বাড়িতে ছেড়ে দেবো |
ই:- না আমি চলে যাব |
অনিক স্কুটি থেকে নেমে ইন্দ্রানী র হাত ধরে নিল | ইন্দ্রানী অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল হাত ছাড় আমি যাব না |
অনিক:- আমি তোকে খেয়ে নেবো না | অনিক আরও শক্ত করে তার হাতটা ধরল |
ইন্দ্রানী:- হাতে লাগছে আমার | ছাড়!! অযথা সিন ক্রিয়েট করিস না রাস্তায় |
অনিক:- প্রতিবারে সিন আমি ক্রিয়েট করি তাই না?? প্রথমে বললি যে তুই আমায় ছাড়া বাঁচবি না এখন.... এই ল্যালপা অঙ্কুশ? জানিস তো ইনু প্রবলেমটা তোর |
রাগের মাথায় মুখে যা আসছে তাই বলে ফেলল অনিক | ইন্দ্রানীর চোখ থেকে টপ টপ করে জল গড়িয়ে পড়ল | আশেপাশের লোকজন জড় হয়ে এসছে |
ইন্দ্রানী কাঁদো কাঁদো গলায় বলল অনিক ছেড়ে দে | আর একবার বলব না | আশেপাশের লোকজন অনিককে যাচ্ছেতাই করে অপমান শুরু করল | একজন বয়স্ক ব্যাক্তি ভিড় থেকে বলে উঠলো " উঠতি বয়সের মেয়ে দেখলেই জিভ দিয়ে জল পড়ে??"
"এদের ধরে জেলে ভরে দেওয়া উচিত | এরাই পরে মলেস্টার হয় |"
"এরকম মানুষজনের জন্য মেয়েরা রাস্তায় বেরোতে পারে না |"
এক মহিলা সমস্ত লিমিট ক্রস করে ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসে বললেন এক্ষুনী এখান থেকে দূর হ!! নইলে সপাটে একটা চড় কষাবো | ইনু ততক্ষনে আধবুড়ো লোকগুলোর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে | তারা মুখে মামনী মামনী করছে আর চোখ দিয়ে ইনুর শরীরের প্রতিটা খাঁজ মেপে চলছে | অনিক মৃদু হাসলো |
এরপর বাড়ি ফিরতেই অনিক বুঝল ঘরে অবস্থা খারাপ | রক্তিম সবটা ঘরে কল করে জানিয়েছে | ঘরে আর ঢুকলনা অনিক | আমি অর্থাৎ কথক কে একটা ফোন করল | আমায় বলল " দুটো হাজার টাকা দরকার রে ভাই .... খুব সমস্যায় আছি |"
আমি বেশী কিছু না বলে তাকে টাকাটা দিয়ে দিলাম | অনিক বলল ভাই বিকেল সাড়ে পাঁচটায় একবার স্টেশন আসিস | আমি রাজি হলাম |
কথা মতো স্টেশনে পৌছলাম | হনুমান মন্দিরের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম অনিক কে | আমাকে বলল কিছু দিন বাড়ি থাকব না | একটু কাজ আছে .....
আমি জিজ্ঞেস করলাম এন্ট্রান্সে মাত্র ৮ দিন | এখন কোথায়...
ও আমার কাঁধে হাত রেখে বলল থাক না | ফিরে এসে বল
ব না হয়?
অনিকের সাথে সেটাই আমার শেষ দেখা |

